হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মনোবিজ্ঞান শিক্ষা বাধ্যতামূলক হোক






 মনোবিজ্ঞান শিক্ষা বাধ্যতামূলক হোক 

বালুরঘাটের ললিতমোহন আদর্শ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র রোহিত মার্ডির কান কেটে গেল শিক্ষকের মারে। কী দোষ করেছিল রোহিত? লাইব্রেরীর বই চেয়েছিল। প্রথমবার চেয়ে পায় নি। শিক্ষক পুলক সরকার তাকে পরে আসতে বলেন। সেইমতো রোহিত স্কুল ছুটির আগে পুনরায় লাইব্রেরীতে যায়। এরপর আচমকাই মারমুখী হয়ে ওঠেন ওই শিক্ষক। রোহিতকে তিনি এত মারেন যে, তার কান কেটে রক্ত বের হতে থাকে। 

এইরকম ঘটনা নতুন নয়। যতদিন যাচ্ছে শিক্ষকদের অসুস্থতা তো মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে যেটা অবাক করে, এই ব্যাপারে কারও কোনো তাপ উত্তাপ নেই। যেন এটাই স্বাভাবিক। নিজে আঠাশ বছর এই পেশায় (গৃহশিক্ষক) থেকে দেখেছি, দিন বদলের সাথে সাথে শিক্ষকের সংজ্ঞাটাও এখন অনেকখানি বদলে গেছে। আমাদের দাদু বাবাদের আমলে কী হয়েছে তা ভুলে যেতে হবে। অনেক শিক্ষকই এখনও সেই মান্ধাতার আমলের শিক্ষকের সংজ্ঞাকে মেনে চলেন। এই ধারণাকে তাদের বদলাতেই হবে। তাঁরা কেন ভুলে যান ----- এটা অন্যান্য পেশার মতো টাকা উপায়ের একটা ক্ষেত্র নয়। এটা শিক্ষকতা। ছাত্রকে সন্তান ভেবে তাকে সৎ শিক্ষা দেওয়া। পরিশেষে আরও একটি দরকারী বিষয়ের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। সরকার থেকে শিক্ষকদের মনোবিজ্ঞান শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হোক। এতে শিক্ষকদের মানসিক অসুস্থতা অনেকটাই কমে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

 তেজ বাহাদুরের সাহসকে সম্মান জানানো হোক 

সেই কোন ভোরে ওঠা। তারপর সন্ধ্যে পর্যন্ত ডিউটি। চারিদিকে বরফ। শত্রু শিবিরের বন্দুকের নলের সামনে কাজ করা। মৃত্যু যেন এসব জায়গায় ওত পেতে আছে। সে যে কখন কার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে কেউ জানে না। হ্যাঁ, সীমান্তে লড়াই করা সৈনিকদের কথাই বলছি। জীবন মৃত্যুকে বাজি রেখে যে সমস্ত জওয়ানেরা বিদেশী শত্রুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখেন তারা কী খেতে পায় জানেন? না, আমার আপনার মতো কোনো পছন্দের রান্না নয়। খাবার বলতে একটা পোড়া পরোটা। তার মধ্যে না আছে সবজি, না আছে আচার। দুপুরে যে ডাল দেওয়া হয় তা হলুদ গোলা জলের থেকে বেশি কিছু নয়। কখনও আবার খাবারের অভাবে খালি পেটেই দিন কাটাতে হয়। জওয়ানদের সংসারকে কে এইভাবে উলঙ্গ করে দিল? একটাই নাম তেজ বাহাদুর যাদব। 

খবরটা পড়তে পড়তে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারি নি। এও কী সম্ভব! নিজের জীবন দিয়ে যারা আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে তাদের কথাই কেউ ভাবে না। সরকার টাকা বরাদ্দ করলেও ওপরতলার অফিসারের এই টাকা আত্মসাৎ করে নিচ্ছেন। আমরা চাই সরকার এব্যাপারে বিশেষ নজর দিক এবং যাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক। মোদির সংস্কার তালিকা থেকে এটি যেন কোনোভাবেই বাদ না পড়ে। আর একটা ব্যাপারও মাথায় রাখতে হবে তেজ বাহাদুর যাদবের জীবনের নিরাপত্তা। কারণ সেনাবাহিনীর ওপরতলার অফিসারেরা তেজ বাহাদুরকে ছেড়ে কথা বলবে না। তাই তেজ বাহাদুর যে সাহসের পরিচয় দিয়েছে আমরা সবাই যেন তাকে সম্মান জানাতে পারি।

 পাথরেও ফুল ফোটে 

পাথরে ফুল ফোটার মতো অসম্ভব ঘটনাও ঘটে। যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে উত্তরপ্রদেশের মেরঠের এক ক্ষুদ্র আখ চাষীর ছেলে বাইশ বছরের নিশান্ত চৌধুরীর মুখ, যিনি এবারের ক্যাট পরীক্ষায় ৯৮.৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন, যা এবছর মেরঠের সেরা। তিনি প্রতিদিন ৬০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পড়াশোনা করেছেন। আরও এক মানুষ চেন্নাইয়ের যুবক জয়ভেল। একসময় রাস্তায় ভিক্ষা করেছেন কিন্তু তবুও নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাননি। আজ তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। শত ভাঙনের মধ্যেও এই নামগুলোই আমাদের আবার জেগে উঠতে সাহায্য করে। আজকের প্রজন্মের কাছে এই নাম দুটো বীজমন্ত্রের মতো সর্বক্ষণ উচ্চারিত হোক। তারা দেখুক মানুষ সব পারে। মতি নন্দীর "কোনি" উপন্যাসের ক্ষিদ্দার কথা মনে পড়ে যায়, "মানুষের না পারা কিছু নেই রে।"



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

নবীনতর পূর্বতন