সকালের স্নিগ্ধ রোদে ভেসে যাচ্ছে চারদিক , মাধবীলতার ফুলগুলো আলগোছে পড়ে আছে বারান্দার গ্রিলে ... যেন আলসে মেয়ে । পাতার ভেতর চড়ুইগুলো কি সুন্দর খেলছে । অনুর ভেতরটা কেমন হু হু করে উঠলো । নিজেকে খুব নিঃস্ব মনে হল তার । জ্বরের কষ্টের চাইতেও বেশী গ্রাস করলো শুন্যতা। এই সকালে সবাই ব্যস্ত। অনু শুধু শুয়ে আছে। অনুর নিঃশব্দ কান্না অসুখ। রুনু ,তপু স্কুলের জন্য তৈরি হচ্ছে ,বাবা অফিসে যাবেন। মা অনুকে নাস্তা খাওয়ানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এক গ্লাস দুধ এনে বললেন্, এটা খেয়ে নে। ওষুধ খেতে হবে । অনু একটু খেয়ে আর খেতে পারলো না প্রায় বমি করে দিচ্ছিল। মা জ্বরের ওষুধ দিলেন। মায়ের মুখে স্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছাপ। আপন মনেই বললেন এখনো এত জ্বর !
অনু একবার ভাবল জিজ্ঞেশ করবে কত জ্বর ? কিন্তু চুপ করে গেল। কারো সাথে কথা বলতে আজকাল ভালো লাগেনা । এইতো গতকাল ওর কলেজের বন্ধুরা দেখতে এসেছিল, ওরা কত কথা বলল , অনুকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করলো কিন্তু অনুর ভালো লাগেনি। আজকাল ওর একা থাকতে খুব ভালো লাগে ,চুপ করে থাকতে ইচ্ছে হয় ।
অনু একবার ভাবল জিজ্ঞেশ করবে কত জ্বর ? কিন্তু চুপ করে গেল। কারো সাথে কথা বলতে আজকাল ভালো লাগেনা । এইতো গতকাল ওর কলেজের বন্ধুরা দেখতে এসেছিল, ওরা কত কথা বলল , অনুকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করলো কিন্তু অনুর ভালো লাগেনি। আজকাল ওর একা থাকতে খুব ভালো লাগে ,চুপ করে থাকতে ইচ্ছে হয় ।
অনুর বেশ কয়দিন ধরেই অসুখ। জ্বর দিন দিন বাড়ছে । অনুর বন্ধু শিল্পির বাবা বেশ বড় ডাক্তার। উনি ওকে দেখছেন বাসায় এসে । ওদের সাথে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক । উনি দেখে ওষুধ দিয়েছেন। কয়েকটা পরীক্ষা করে ওষুধ আবার বদলেও দিয়েছেন। তবুও আজ দশদিন হোল কিন্তু জ্বর কমার কোন লক্ষন নেই বরং বাড়ছে । জামিল সাহেব আর , অনুর মা রাহেলা বেগম বেশ চিন্তিত । বলতে গেলে এ বাড়িতে রান্না বান্না প্রায় বন্ধ হবার যোগার । শুধু রুনু আর তপুর জন্যই রান্না না করে পারা যাচ্ছে না। ওরা ছোট । ওদের তো সুস্থ রাখতে হবে । রাহেলা বেগমের চিন্তা এরাও না অসুস্থ হয়ে পড়ে। উনি মেয়ের চিন্তায় এতোটাই উদ্বিগ্ন যে সময় সময় অনুকেই দোষারোপ করে যাচ্ছেন, কোত্থেকে এই অসুখ বাধিয়ে এসেছে ? এখন সবাইকে না ভুগতে হয় ?
এভাবেই এক একটা দিন যাচ্ছে আর দুশ্চিন্তা বাড়ছে । এসময় জামিল সাহেবের ফোন আসে অফিস থেকে। তিনি জানতে চান অনুর জ্বর ছেড়েছে ? রাহেলা বেগম সেই কথাই বলেন ‘’ না’’ যা আজ তেরো দিন ধরে বলে আসছেন । তপু ,রুনু স্কুল থেকে ফিরেই শুকনো মুখে অনুর ঘরের সামনে ঘোরা ফেরা করে আর ভাবে কবে আপু ভালো হবে ? আবার পুতুলের ঘর সাজিয়ে দেবে ,গল্প শোনাবে ওদের । বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনু ওদের দেখে । ওর মনে হয় এ অসুখ বুঝি অনন্ত কালের কোনদিন ভালো হবে না , এক একবার মনে হয় প্রিতম যদি একবার এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিত ও ভালো হয়ে যেত । প্রিতমের দেয়া গল্পের বইটা পড়ার চেষ্টা করে কিন্তু জ্বরের ঘোরে সব লেখা ঝাপসা হয়ে হয়ে আসে । প্রিতমকে দেখলেই অনুর মনটা আনন্দে নেচে উঠত । আর না দেখলে গভীর শূন্যতা ভর করতো। এরকম কত দুপুর ওরা এক সঙ্গে কলেজ থেকে ফিরেছে। প্রিতমের ইউনিভারসিটি ওর কলেজের পাশেই, কাজেই প্রায় দিনই রাস্তায় ওদের দেখা হয়ে যেত । একদিন দেখা না হলে মনে হত হাজার বছর দেখেনি একজন আরেকজনকে । তাই প্রিতম না আসলেও অনু যেত ও বাড়িতে পড়া বুঝে আসার ছুতোয় কিংবা বই আনতে যাবার নাম করে । অনুর মোবাইলে ক্ষণে ক্ষণে এস এম এস আসতো । অনুও উত্তর দিত । সে দিনগুলো কি আর কোনদিন কি ফিরে আসবে ? আর কি দেখা হবে না ? অনু ভাবে সুস্থ হয়ে যেভাবেই হোক সে প্রিতমের সাথে দেখা করবেই ।
ওদিকে প্রিতমও খুব একটা ভালো নেই আচমকা অনুদের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে এরকম বিশ্রী একটা কাণ্ড ঘটে যাওয়ায় তার মনটাও বেশ খারাপ । সকালগুলো কেমন বিবর্ন রঙহীন । দুপুরগুলোয় ভীষণ এক শুন্যতা ভর করে বুকের ভেতর । তার ওপর সেদিন তপুর কাছে শুনেছে অনুর অসখ । তার খুব ইচ্ছে করছে সব নিষেধ অমান্য করে ছুটে যেতে কিন্তু সেদিন রাস্তায় অয়নের সাথে দেখা হলে ও বলেছিল ও বাড়ি যাবার কথা , কিন্তু অয়ন বলেছে খালা খালু রাগ করবে । তাই আর যাওয়া হয়নি ।তাছাড়া অয়ন আজকাল ওকে এড়িয়ে চলে ।
প্রিতম অনুর কাজিন অয়নের বন্ধু , প্রায় আসতো মাঝে মধ্যে। অনুও যেত ওদের বাসায় । এই তো দুটো বাড়ি পড়েই প্রিতমদের বাড়ি। আজ তিন মাস সব যোগাযোগ বন্ধ । অনু এইচ সি তে ভর্তি হবার পর ,এ বাড়িতে প্রিতমের যাতায়াত খুব বেড়ে গিয়েছিল । সময় অসময় আসতো । আর প্রিতম এলে অনেক সময় ধরে দুজন গল্প করত । প্রথমদিকে রাহেলা বেগম তেমন পাত্তা দেননি ব্যপারটা । ভেবেছিলেন ছোট বেলা থেকেই তো এভাবে বড় হচ্ছে দুজন । কিন্তু সেদিন যখন তপুর জন্মদিনে সবার মাঝখান থেকে ওরা চলে গেল ছাদে । প্রায় সবারই চোখে পড়েছিল বিশেষ করে প্রিতমের বাড়ির লোকদের । প্রিতমের মা বলেই বসলেন ...
আপা মেয়ে বড় হয়েছে এখন একটু নযরে রাখবেন, না হলে কোন দিন কি করে বসবে ।
রাহেলা বেগমের খুব রাগ হল। উনি শুধু অন্যের মেয়ের দোষটাই দেখলেন নিজের ছেলের দোষটা দেখলেন না ।মনে মনে ভাবলেন এবার মেয়েকে একটা শিক্ষা দিতে হবে ।
অয়নও সেদিন বলেছিল খালা অনুকে সামলাও খুব বাড় বেড়েছে। এই রাত্তিরে একটা অন্য ছেলের সাথে ছাদে গল্প করছে কত সাহস দেখ !আসলে ছাদে শুধু ওরা দুজন ছিল না ছোটরা অনেকেই ছিল । অয়নের রাগ ছিল অন্যখানে ... অয়ন বেশ কয়দিন ধরেই অনুকে তার ভালোলাগার কথা বলে আসছিল কিন্তু অনু পাত্তা দেয়নি ।উল্টে বলেছিল আমাকে তোমার ভালো লাগলেই যে তোমাকে আমার ভালো লাগতে হবে এমন তো কোন কথা নেই ।
অয়ন বলেছিল তুমি প্রিতমের সাথে কথা বলবে না ওর সামনেও যাবে না ... কিন্তু আমি জানি , প্রিতমের প্রতি তোমার দুর্বলতা আছে । অনু বলেছিল ... আছে থাকবে তুমি কি করবে ? সেইদিন থেকেই অয়ন ভাবছিল অনুকে একটা শাস্তি দিতে হবে
বেশ কিছুদিন ধরেই রাহেলা বেগম ভাবছিলেন অনুকে শাসন করবেন কিন্তু ওকে একা পাচ্ছিলেন না। এসব কথাত আর ছোটদের সামনে বলা যাবে না । সেদিন কি কারণে যেন অনু কলেজে যায়নি একা পেয়ে গেলেন । ওকে , দরজা আটকে বেশ শাসালেন । খুব বকাবোকি করলেন । বললেন তোর একা বাইরে যাওয়া বন্ধ , কোনও ফোন রিসিভ করবি না , মোবাইলটা আমাকে দে প্রিতম ছাড়া যে কারো ফোন এলে তোকে ডেকে দেবো । আর ছাদেও যাবি না । আজ থেকে তোকে কোচিং এ আমি বা অয়ন নিয়ে যাব নিয়ে আসবো, কলেজেও তাই । সেদিন অনু রাগে অপমানে খুব কেঁদেছিল । আরও খারাপ লাগলো যখন প্রিতম এসেছিল ... জামিলা বেগম অয়নকে দিয়ে অপমান করে বের করে দিলেন । সে সময় ওর ইচ্ছে হয়েছিল মরে যেতে । এতসব ঘটনা ঘটে গেল কিন্তু একটা কথাও জামিল সাহেবের কানে যায়নি ।সেদিন থেকেই অনু নিজেকে ঘরে বন্দী করে রাখল ,কারো সাথেই প্রয়োজন ছাড়া কথা বলত না ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করত না ,মাঝে মাঝে জ্বরে ভুগতে লাগলো । রাহেলা বেগম বকাবকি করতেন নিজের যত্ন নিচ্ছে না বলে । জামিল সাহেব অনুযোগ করতেন যে রাহেলা বেগম মেয়েকে ঠিকমতো দেখাশুনা করছেন না ,বলতেন ও যা যা খেতে পছন্দ করে তাই রেঁধে দাও না ? তাহলে মেয়ে ঠিক খাবে । রাহেলা বেগম ঝাঁঝ দেখিয়ে সরে যেতেন ।
অয়নের সাথে কলেজ বা কোচিং এ যেতে ওর ভালো লাগতনা কখনোই । তাই না পারতে বাইরেই বের হতো না । কিন্তু সেদিন অনুর পরীক্ষা ছিল কলেজে না গেলেই নয়। সে বলল ‘’মা যেতে হয় তুমি চল ,নয়ত আমি একা যাব ‘’ কিন্তু মা ধমক দিয়ে অয়নের সাথেই যেতে বলে তিনি চলে গেলেন তপু আর রুনুকে আনতে কেননা তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসে রান্না করতে হবে । কথাটা ঠিক । অনু কলেজ যাবার জন্য তৈরি হয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘর থেকে বের হতেই দেখল অয়ন দাঁড়িয়ে আছে ঠিক দরজার সামনে। অনুকে বের হতে দেখে চমকে উঠলো । ওর বিরক্তি সীমা অতিক্রম করে গেল ...
- তুমি কি করছ আমার রুমের সামনে ? অয়ন ভালোমানুষ সেজে বলল
- দেরী হয়ে যাচ্ছে তাই তোমাকে ডাকতে এসেছি ।
অনু বুঝল এটা মিথ্যে কথা , অয়ন নিশ্চয় ঘরে উঁকি ঝুঁকি দেয়ার চেষ্টা করছিল । অনু আবার ঘরে ঢুকল টাকা নিতে। ড্রয়ার খুলে টাকা নিয়ে ব্যাগে ভরতেই দেখল অয়ন ওর খুব কাছে চলে এসেছে। কিছু বলার আগেই অতর্কিতে অয়ন ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো ঠোঁটে । অনু আর পারলো না ,ওকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল। একাই কলেজে গেল ।
পরীক্ষা দিয়ে যখন বাসায় ফিরল তখন মা যেন রুদ্র মুর্তিতে আবির্ভুত হলেন খুব করে বকলেন ওকে , ও যতবার সত্যি ঘটনা বলতে চাইল তিনি কিছুই শুনলেন না । বার বার বলতে লাগলেন অয়ন ছোটবেলা থেকে এখানে আছে ওদের আপন ভাইয়ের মতো ও এরকম করতেই পারেনা । হা অয়ন এখানেই আছে সেই নয় বছর বয়স থেকে খালা খালু দেশের বাড়িতে থাকেন । ওরা তাকে নিজের ভাইই ভেবে এসেছে এতকাল । অনু আরেকবার বলার চেষ্টা করতেই তিনি কষে চড় মারলেন । ও চুপ করে গেল । ঘরে ঢুকে বেশ কয়বার ভাবল আত্মহত্যা কথা আর সেটা বলেও ফেলল কিন্তু ছোটবোন রুনু তাকে নিবৃত্ত করলো । সে রাতেই কাঁপিয়ে জ্বর এলো অনুর ।সেই জ্বর ছাড়ছেই না । এক এক করে কেটে গেল আরও কয়টা দিন ।
আজ পনেরো দিন মেয়েটার অসুখ, মেয়েটা কবে আবার আগের মত সুস্থ স্বাভাবিক হবে ? অফিসে বসে ভাবতে থাকেন জামিল সাহেব । চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালায় দাঁড়ান। দেখেন মানুষের ভিড়ে অনুর বয়সী কত ছেলে মেয়ে , হাসছে আনন্দ করছে ।আর তাঁর মেয়েটা ! ভাবতে গিয়ে বুকটা হু হু করে ওঠে অজানা আশংকায় । তারপর ভাবেন নাহ অন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন আজই । কিন্তু বাসায় ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেল অফিসে অনেক কাজে ব্যস্ত থাকায়। ভাবলেন কাল নিয়ে যাবেন ,আজকের দিনটাতো এভাবেই গেল । কিন্তু সে রাতে জ্বর বেশ বাড়ল। অনু প্রলাপ বকছিলো। বাবা বললেন এবার অন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো আমি। মা বললেন তাই চল আজ পনেরো দিন জ্বর ছাড়ার নাম নেই আরও বাড়ছে । রাতে কিছু করার নেই তাই আগের ডাক্তার এলেন বললেন এতদিন তো টাইফয়েড ভেবে ওষুধ দিলাম কিন্তু কিছু হল না । দেখি আরও কিছু টেস্ট করে , তিনি বেশ কিছু টেস্ট করতে দিলেন বললেন এগুলো দেখে কাল একটা সিধান্ত নিতে হবে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে ।
পরদিন রিপোর্ট নিয়ে মা গেলেন ডাক্তার আঙ্কেল এর কাছে। বাবা অনুর মাথার কাছে বসে ছিলেন । মা ফিরে এসে কি যেন বললেন ,মায়ের চোখ মুখ ফোলা যেন খুব কেঁদেছে । ডাক্তার আঙ্কেলও এলেন সন্ধায়। বললেন ভয়ের কিছু নেই ,বেশ কিছুদিন ওষুধ খেতে হবে । ভালো করে খাওয়া দাওয়া করতে হবে । বাবা জানতে চাইলেন আপনি শিউর যে আমার মেয়ের টিবি হয়েছে ? রোগের নামটা শুনে অনুর সারা শরীর অবসাদে জড়িয়ে এল । এ অসুখ কি করে হল তার?
ডাক্তার আঙ্কেল বললেন দেখুন একশো ভাগ নিশ্চিত আমি । শুধু বুঝতে পারছিনা কি করে হ্ল ? কেন হল ? আপনাদের মত পরিবারে এ অসুখ সহজে হবার কথা নয় । অসুখের ওষুধ লিখে দিয়ে কি কি করনীয় সব বুঝিয়ে বললেন তিনি। তারপর বললেন , আচ্ছা আমি ওর সাথে কিছু কথা বলব ।
সবাই ঘর ছেড়ে চলে গেলে আঙ্কেল বললেন, মা তুমি আজকাল খেতে চাইতে না কেন ? অনু বলল খেতে ইচ্ছে করত না । আমার কিছু ভালো লাগতো না । ডাক্তার আঙ্কেল ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন , দেখ মা শিল্পি আমাকে কিছু কিছু কথা বলেছে বাকিটা তুমি বল কেন ইদানিং কলেজেও ঠিকমতো যেতে না, কেন খাওয়া দাওয়া করতে না ? ডাক্তার আঙ্কেল এর কথায় অনু কেঁদে ফেলল ... মনে হল বহুদিন কেউ এভাবে আদর করে ওর সঙ্গে কথা বলেনি । আঙ্কেল বললেন আমি শিল্পির বাবা মানে তোমারও বাবা তুমি বল তোমার কি হয়েছে ? যে কথাগুলো এতকাল অনু কাউকে বলতে পারেনি সেইসব আঙ্কেল ডাক্তারকে বলল ।
কিছুক্ষন পর ওর ঘর থেকে বের হয়ে আঙ্কেল কথাগুলো আলোচনা করলেন জামিল সাহেব আর রাহেলা বেগমের সাথে । বললেন ,আপনারা খেয়ালই করেন নি ও যে মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছিল তাই না ? ও প্রায় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল ,আর প্রায়ই জ্বরে ভুগতো ।এসব দেখেও আপনারা ওর প্রতি দৃষ্টি দেননি । কেন এমন করছে তাও জানার প্রয়োজন মনে করেন নি , প্রতিকারের কথাও ভাবেন নি ।
জামিল সাহেব মাথা নিচু করে থাকলেন ,কেননা খেয়াল তিনি করেছিলেন কিন্তু ব্যাবস্থা নেননি ওর মন ভাল করার , এমন কি জানতেও চাননি কেন অনু এত চুপ করে গেল ? রাহেলা বেগম চুপ করে থাকলেন শুধু । সত্যিতো তিনি জানার চেষ্টাও করেন নি কেন উচ্ছল মেয়েটা এত চুপ হয়ে গেল ? পড়াশুনা ,গান সব ছেড়ে দিল ইদানিং তো টি ভি ও দেখত না ।
ডাক্তার সাহেব বলতে লাগলেন ওর বয়সী মেয়েতো আমারও আছে , এ সময় ওদের বন্ধু হয়ে কাছে থাকতে হয় । ওরা বড় হচ্ছে ওকে মানসিক কষ্ট না দিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারতেন । আর ওর কথা আপনাদের বিশ্বাস করা উচিত ছিল । এ কথাটা তিনি রাহেলা বেগমকে উদ্দেশ্য করেই বললেন । এই বয়সের ছেলে মেয়েরা খুব ইমোশনাল হয় । তখন বাবা মা কে বন্ধুর মত পাশে থাকতে হয় ওদের দুর্বল মুহূর্তে ওদের সাহস যোগাতে হয় । বাবা মা যদি বিপদের আশ্রয় না হয়ে ভয়ের কারণ হয় তাহলে কে ওদের আপন হবে বলুন? আজ একটু অবহেলার কারণে দেখুন মেয়েটা কত বড় অসুখে পড়েছে , অসুখত সেরে যাবে ওষুধ খেলেই কিন্তু এই কড়া ওষুধ খাওয়ার পরও এ বছর পরীক্ষা দিতে পারবে কি না আমি জানিনা। পারত যদি ওর মনের জোর থাকতো । আমি কথা বলে দেখেছি ও খুব ভেঙ্গে পড়েছে । অয়নের ঘটনাটা মেনে নিতে পারছে না। তার ওপর ওকে আপনারা বিশ্বাসই করেন নি । অয়ন যা করেছে তা জঘন্য ।
সব শুনে বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন সব আমার দোষ । আমি এতোটা উদাসীন না হলে এমন ঘটতে পারত না ।অয়ন যেন আজই বাসা ছেড়ে চলে যায় । আমি ওর মেসের টাকা দেব তবুও সে যাবে । আর আমার মেয়েরা স্বাধীন , ওরা ওদের মত থাকবে । প্রিতম আসতে চাইলে এসে অনুকে দেখে যাবে । আমি ওকেও বোঝাবো কিছু কিছু সম্পর্কের পরিনতির জন্য সময়ের অপেক্ষা করতে হয় । এখন শুধু বন্ধুত্ব হতে পারে ।
অনু সব শুনছিল। ওর মনে হল ওকে ভালো হতেই হবে। আজ খুব আনন্দের দিন ওর । রাহেলা বেগম নিজের ঘরে বসে ভাবতে লাগলেন কত ভুল তিনি করেছেন অনুর সাথে ।
Tags:
গল্প