ট্রেন
শীতের ট্রেন চলে যাচ্ছে
আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠছে সব কুলি-মজুর
চায়ের দোকান, ঘাসেরা সব হাসছে মিটিমিটি
সারা রাতের ক্লান্তি ঝেড়ে এই মাত্র উড়ে গেল যে চড়ুই
তারও আজ ভীষণ তাড়া, কিছুটা খাবার সংগ্রহের,
চার নম্বর প্লাটফর্মে দাড়িয়ে যে যাত্রী শুধু তারই ব্যস্ততা নেই
দূরের ট্রেন আসবে বলে শূন্য নীলের পরিচিত পাতায় আঁকে স্বপ্ন খেরো খাতা।
এ প্রতীক্ষা যেন মহাপৃথিবীর অভিশাপের বলয়
অন্ধ পৃথিবীর জংশনে পড়ে তবু কেউ কেউ হাসে ঈশ্বরীয় হাসি।
ও আমার ঘুম পাড়ানি ট্রেন,
দাবানলের মতো উদ্দামতা নিয়ে কোথায় চলেছো?
যার চোখে ফুটছে বিষন্ন ফুল তাকে শুনিয়ে যাও কিছু ঝিকঝিক গান।
শীতজন্ম
শীতের জানালাটা এবার খুলে দাও
সকালের হলুদ রোদটুকু তোমার নরম শরীরে পড়ুক,
সারারাত গুহায় থেকে যে মানচিত্র একেঁছো মনের ভেতর
এবার তাকে পৃথিবীর বাইরে ছেড়ে দাও দলছুট পিঁপড়ার মতো।
তৃতীয় চোখে মেলে তাকিয়ে দেখ দিগন্তের ওপারে
শিশির ভেজা কম্পিত ঠোঁটদুটো তোমার ঠোঁটে রাখবে বলে
বুক খোলা শার্টে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে সীমান্তের শেষ দাগে
শীতের আগুনে বুক পুড়িয়ে হেটে এসেছে এতোটা পথ।
শীতকে হারিয়ে এবার উন্মত্ত সমুদ্র স্নানে চলো
এই শীতে এবার আমাদের মানুষজন্ম হোক।
শৈশব জ্ঞান
নেশাময় দিনে শিক্ষকেরা সব ঘুমিয়ে পড়েছে বলে
মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়েই আমি বসে আছি ধর্মতলায়
মহাজনের নায়ে বসে কিছু শিক্ষা আমিও বিলিয়ে দিতে পারি
শীত প্রেমিকারা কাছে আসলেই আগুন রাতে
ভূগোল বই নিয়ে বসে যাবো শ্রেণীকক্ষে।
শোক মিছিলে যাইতে পারিনি বলে দুঃখ করোনা বন্ধু
মাটির পাত্র হাতে আমিতো বসে আছি পথের ধারে
কষ্টধূলোর কিছুটা কণা নিয়ে যাও কালের গর্ভে ভাসিয়ে দিও।
কিশোরী নক্ষত্ররাতে যারা হেসেছিল আত্মহত্যার হাসি
তাদের ক্যালেন্ডারের পাতায় দীর্ঘ করে দিও আরও একটা দিন।
এসো তবে এবার চেতনা শেখাই,
যে ভুল স্বপ্ন দেখে দেখে জোনাক পোকারা হারিয়ে ফেলেছে পথ
সেখানে আগুনে পুড়িয়ে দিই সব শৈশব জ্ঞান।
শিল্পিত পান্ডুলিপির কথা
রাতের বাতি নিভিয়ে দিয়ে যে আয়নায় মুখ দেখি
সেতো আমি নই, দেখি ঈশ্বরীর মুখোচ্ছবি,
কাঠঠোকরার ঠোঁট থেকে সুখ কেড়ে নিয়ে লিখি
উজ্জ্বল নাগরিক জীবনের মৃত্যু চিঠি।
আমাদের চারদিকে সমান তালে বেড়ে উঠছে শূন্যতা
বিষাদের ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে সব অঙ্কুরিত সুখ,
জানালার কার্নিশে বসে যে পাখি গায় ভালোবাসার গান
সেকি আসলেই ভালোবাসা বোঝে, বোঝে খয়েরী রোদের কষ্টগাঁথা?
কচি ডগার মতো উর্ধ্বাকাশে এবার হাতদুটো তোল
নিষিদ্ধ আগুনে পুড়িয়ে দেবো সুগন্ধি লোবান।
উপেক্ষার রাতে তুমুল আঁধারে পুড়ে যাচ্ছে যে মানবিক ঠোঁট
তার ছোঁয়াতেও রচিত হতে পারে আজ শিল্পিত পান্ডুলিপি।
পরিবর্তনের ইতিহাস
কোন মন্ত্র নয়, গোপন সাধনায় আমূল পাল্টে ফেলেছো জীবন
বাকশূন্য ভেলকি দিয়ে মরুভূমি হৃদয়ে উঠাও আদিম উৎসবের ঝড়,
যৌবন যে ভাবায়নি কখনো তা নয়, কুহক মোহ চোখে ভাসলে
সামনে দেখি লাল শাড়ি পরনে হলদেটে নারী।
বিচিত্র শব্দ দ্যোতনায় জন্মলাভ করেছে যে নিজস্ব ভাবনা
আবেগের চিহ্ন ছড়িয়ে দিয়ে দেখি সেও স্বাধীন নয়
সমকালীন সব শূন্যতা ভীড় করলে বুকের ভেতর কষ্ট বাজে
কালের যাত্রার ধ্বনি এসে থেমে যায় এক থালা অন্ধকারে।
শূন্য অবয়ব ভেসে উঠলে শুধু জলকেই ধরতে পারিনা
দেয়ালজুড়ে কোন চিত্রকর্ম নেই, কাটাছেঁড়া পান্ডুলিপি
আর মৃৎপাত্র পড়ে আছে চরম অবহেলায়,
এসো তবে উপেক্ষিত প্রশ্নমালাগুলো সব একসাথে করি
পাখিচিন্তার মতো করে আহরণ করি বোধগত সব অর্থ
ঈশ্বরীর ইশারায় নয় জীবনবোধের রোজনামচায় পাল্টে দিই জলদেবীর দেহ।
Tags:
একক কবিতা