জীবনের পথে কষ্ট থাকুক
দিল্লির রাজপথের সেই হত্যার ঘটনা আমাদের মনে দগদগে ঘায়ের মতো জেগে আছে। একটি ছেলে অস্ত্র নিয়ে মেয়েটির গায়ে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। ছেলেটি মেয়েটির চেনা। প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় মেয়েটির এই পরিণতি। দ্বিতীয় ঘটনাটি বাংলাদেশের। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় ঘটনাটিও একই কারণের জন্য। বদরুল নামের ছেলেটি খাদিজা নামের মেয়েটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে আঘাত করে। প্রথম মেয়েটির ঘটনাস্থলেই মৃত্য হয়েছে। যখন এই লেখা লিখছি তখনও পর্যন্ত খাদিজা জীবিত। চিকিৎসায় সারা দিচ্ছেন। তৃতীয় ঘটনাটিতে আমরা দেখি, ছেলেটি বাবার কাছ থেকে মোটর সাইকেল চেয়ে পায় নি। তাই সে রাগে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই আগুনে পুরে মা বেঁচে গেলেও বাবা শেষ পর্যন্ত মারা যান।
দিল্লির রাজপথের সেই হত্যার ঘটনা আমাদের মনে দগদগে ঘায়ের মতো জেগে আছে। একটি ছেলে অস্ত্র নিয়ে মেয়েটির গায়ে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। ছেলেটি মেয়েটির চেনা। প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় মেয়েটির এই পরিণতি। দ্বিতীয় ঘটনাটি বাংলাদেশের। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় ঘটনাটিও একই কারণের জন্য। বদরুল নামের ছেলেটি খাদিজা নামের মেয়েটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে আঘাত করে। প্রথম মেয়েটির ঘটনাস্থলেই মৃত্য হয়েছে। যখন এই লেখা লিখছি তখনও পর্যন্ত খাদিজা জীবিত। চিকিৎসায় সারা দিচ্ছেন। তৃতীয় ঘটনাটিতে আমরা দেখি, ছেলেটি বাবার কাছ থেকে মোটর সাইকেল চেয়ে পায় নি। তাই সে রাগে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই আগুনে পুরে মা বেঁচে গেলেও বাবা শেষ পর্যন্ত মারা যান।
তিনটি ঘটনা থেকে একটা জিনিস জলের মতো পরিস্কার ----- " আমার যা চাই, এক্ষণি চাই, এইমুহূর্তে চাই।" এই অভ্যাসের জন্য দায়ী কে? অবশ্যই পিতা-মাতা। পিতা-মাতার কাছে সন্তান মানেই আদরের। এটা তো নতুন কিছু নয়। পিতা-মাতার চোখের সামনে তাঁর সন্তান হাসবে, খেলবে, দৌড়-ঝাঁপ করবে ---- এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই চাওয়াগুলোর চেহারা এত বিশাল হয়ে যাচ্ছে যে, সন্তান চাওয়ার আগেই পিতা-মাতা তার আনন্দের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এটাই আজকের সমাজের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি। তাই অপরের দেখাদেখি একটি ছেলে যখন তার পিতার কাছে কোনো জিনিসের আবদার করছে তখন সে তার পিতার ক্ষমতার কথাটা ভুলে যাচ্ছে। একই ছাদের নীচে থাকে অথচ সন্তান তার পিতার অর্থনৈতিক অবস্থার কথা জানে না ---- এ বড় দুঃখের। আসলে আমরা পিতা-মাতারা সন্তানকে সব কথা জানাই না। পিতা-মাতার অর্থনৈতিক অবস্থার কথা সন্তান জানবে না তো কে জানবে? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দেখে দেখেছি, অনেক পিতা-মাতাই বলছেন ----- " নিজে জীবনে অনেক কষ্ট করেছি, তাই আমি চাই না আমার সন্তান সেই কষ্ট পাক। তাকে আমি সবসময় স্বচ্ছলতার মধ্যে রাখতে চাই। " এর মানে কী? এর মধ্যে আছে একরাশ ভিত্তিহীন আবেগ। এই বক্তব্যের মধ্যে ভাবনা-চিন্তার নামমাত্র কোনো গন্ধ নেই। এই গোত্রের পিতা-মাতারা কেন ভুলে যাচ্ছেন, ওই কষ্টটাই তাঁর জীবনপথের পাথেয়। তাই সন্তান কষ্ট পাক, সন্তান অনুভব করুক, তার পিতা-মাতার উপার্জিত অর্থ কতটা কষ্টের। তবেই তো সে আপনার সংসারের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত হবে।
পরমাণু পরিবারের কারণে পিতা-মাতা তাঁর একমাত্র সন্তানের জন্য যখন খুশি কিছু না কিছু আনছেন। সন্তান মুখ থেকে খসানোর আগেই জিনিস এসে যাচ্ছে। এর ফলে আজকের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে যে জিনিসটার অভাব থেকে যাচ্ছে সেটা হল ধৈর্য্য। এটা আজ মারাত্মক আকার ধারণা করেছে। যে কোনো কিছুর জন্যে একটা অপেক্ষা তো করতেই হয়। মানুষকে তো চিন্তা-ভাবনা করার সময় দিতে হবে। কিন্তু আজকের ছেলে-মেয়েরা এই ভাবনা-চিন্তা থেকে শত হাত দূরে। আর তাই, একটি ছেলে কোনো মেয়েকে আজকে 'ভালোবাসি' বলে কালকেই তার কাছ থেকে উত্তর চাইছে। মেয়েটি উত্তর না দিলেই তাকে খুন করতে যাচ্ছে। আজকের সময়ে এটা একটা রোগের মতো হয়ে গেছে। আইন করে, শাস্তি দিয়ে এর কিছুমাত্র বদল ঘটানো সম্ভব নয়। এর সমাধান আমাদেরই হাতে।
অভিভাবকদের বলি, আপনার সম্পদ আপনার সন্তানই পাবে। কিন্তু তাকে জানতে দিন, অনুভব করতে দিন ---- আপনার উপার্জিত সম্পদের মধ্যে কত কষ্ট আছে। আপনি নিশ্চয় চাইবেন, আপনার উপার্জিত সম্পদ আপনার মৃত্যুর পরেও সন্তান যেন যত্ন করে রাখে। কিন্তু তার জন্য আপনাকে ভাবতেই হবে সন্তানকে কী দেবেন আর কী দেবেন না। সন্তান দশটা জিনিস চাইলে একটা দিন। তাও সাথে সাথে নয়। অনেক অপেক্ষার পরে। সন্তানের ভেতরে ওই চাওয়ার জিনিসটি সম্পর্কে উপযোগিতা তৈরী হোক। তবেই তো জিনিসটি পেয়ে সে তার প্রকৃত মর্যাদা বুঝবে। মাটিটা যতক্ষণ নরম ততক্ষণ পর্যন্তই এটা আপনাকে করতে হবে। তারপর আর নয়। এইভাবেই আপনার সন্তান হয়ে উঠবে আপনার কষ্টার্জিত সম্পদের প্রকৃত রক্ষক।
ফুল পাতা আর নয়
বেশ কিছুদিন ধরেই একটা জিনিস দেখে খুব ভালো লাগছে। অনেক জায়গাতেই এটা আমার নজরে পড়ছে ----- " গাছে হাত দেবেন না। ফুল তুলবেন না। " যাক্ দেরীতে হলেও কিছু মানুষের বোধোদয় হয়েছে। আজ পর্যন্ত ফুল পাতা সমৃদ্ধ গাছের থেকে আর কিছু সুন্দর তো এই দুটো চোখে ধরা পড়ল না। তাই আজও গাছের থেকে ফুল পাতা তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। যখনই কানে আসে --- " বাঙালীর থেকে বেশি রসিক আর কে আছে। " তখনই মনে মনে বলি ---- নিশ্চয়, যে মানুষেরা প্রকৃত সুন্দরকে প্রতিটা মুহূর্তে অসুন্দর করে তোলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাকে প্রকৃত রসিক না বলে আপনি আর কী বলতে পারেন? মনে মনে কামনা করি আমাদের ভক্তিটা এবার একটু কমুক। অনেক ভক্তি হয়েছে। বয়স তো কম হলো না। এবার অন্তত প্রকৃত সুন্দরকে চিনতে শিখুন।
বেশ কিছুদিন ধরেই একটা জিনিস দেখে খুব ভালো লাগছে। অনেক জায়গাতেই এটা আমার নজরে পড়ছে ----- " গাছে হাত দেবেন না। ফুল তুলবেন না। " যাক্ দেরীতে হলেও কিছু মানুষের বোধোদয় হয়েছে। আজ পর্যন্ত ফুল পাতা সমৃদ্ধ গাছের থেকে আর কিছু সুন্দর তো এই দুটো চোখে ধরা পড়ল না। তাই আজও গাছের থেকে ফুল পাতা তোলার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। যখনই কানে আসে --- " বাঙালীর থেকে বেশি রসিক আর কে আছে। " তখনই মনে মনে বলি ---- নিশ্চয়, যে মানুষেরা প্রকৃত সুন্দরকে প্রতিটা মুহূর্তে অসুন্দর করে তোলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাকে প্রকৃত রসিক না বলে আপনি আর কী বলতে পারেন? মনে মনে কামনা করি আমাদের ভক্তিটা এবার একটু কমুক। অনেক ভক্তি হয়েছে। বয়স তো কম হলো না। এবার অন্তত প্রকৃত সুন্দরকে চিনতে শিখুন।
রং নয়, গুণ
শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ ---- এই ভাগ এখনও আমাদের মধ্যে ভীষণভাবে বহমান। কয়েকদিন আগে বিনোদনের একটি চ্যানেলে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে চরম বিরক্ত অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে তাঁকে চামড়ার রং নিয়ে ভীষণভাবেই হেনস্থা করা হয়েছে। তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন যে, অনুষ্ঠানের মাঝখানে তিনি বেরিয়েও যান। বিতর্কের ঝড় উঠছে দেখে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আগেই তন্নিষ্ঠার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।
শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ ---- এই ভাগ এখনও আমাদের মধ্যে ভীষণভাবে বহমান। কয়েকদিন আগে বিনোদনের একটি চ্যানেলে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে চরম বিরক্ত অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে তাঁকে চামড়ার রং নিয়ে ভীষণভাবেই হেনস্থা করা হয়েছে। তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন যে, অনুষ্ঠানের মাঝখানে তিনি বেরিয়েও যান। বিতর্কের ঝড় উঠছে দেখে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আগেই তন্নিষ্ঠার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।
আমরা আর কবে শিক্ষিত হবো? টিভি উপস্থাপকদের বোধ-চেতনা একটু উন্নততর হবে ---- এটা নিশ্চয় ভাবা অন্যায় নয়। তাই তারা যদি কালো সাদার এইভাবে ফারাক করেন তাহলে সাধারণ মানুষকে কী বলে সচেতন করা হবে? সাদার প্রতি এই স্বভাবজাত দুর্বলতা আর কতদিন চলবে? বাইরে তো অনেক ঘোরাঘুরি হলো, এবার একটু ভেতর পানে তাকান। যেখানের জন্য মানুষকে প্রকৃত মানুষ বলে চেনা যায়। সব রং তো একদিন শুকিয়ে যাবে। তখন কে গান ধরবে? এই ভেতরের মানুষটা। তাই তাকে একটু সময় নিয়ে জল হাওয়া দিয়ে বাঁচিয়ে রাখুন। তা না হলে তো একদিন নিজের আচরণের জন্য গায়ে 'মানুষ' লেবেল সেঁটে ঘুরতে হবে।
সুচিন্তিত মতামত দিন