শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬
জয়িতা দে সরকার
sobdermichil | সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬ |
রূপসী হেঁসেল
| মিছিলে স্বাগত
শব্দের মিছিলের উৎসব সংখ্যায় আবারও রূপসী হেঁসেলের তরফ থেকে আমি জয়িতা দে সরকার আপনাদের সামনে হাজির নানান রকম রেসিপি নিয়ে। আমাদের এবারের পর্বের নাম- “সোমদত্তার হেঁসেলে আমরা।”
উৎসব মানেই তো আনন্দ আর আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায় যদি সাথে থাকে জমজমাট খাওয়া-দাওয়া। আমরা রূপসী হেঁসেলের তরফ থেকে এবার শব্দের মিছিলের পাঠকদের জন্য এনেছি বিশেষ বিশেষ নির্বাচিত পদ। উৎসব সংখ্যায় রেসিপিগুচ্ছ নিয়ে হাজির আমাদের ফেসবুক গ্রুপ রূপসী হেঁসেলের সকলের চেনা এবং খুব প্রিয় দিদিমণি সোমদত্তা কুন্ডু চ্যাটাজ্জী। যদিও নতুন করে সোমদত্তার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবুও একনজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সোমদত্তার পরিচিতি পর্বে -
নাম-সোমদত্তা কুণ্ডু চ্যাটাজ্জী। আদি বাড়ি-বর্ধমান।বর্তমান বাড়ি- বার্গেন, নরওয়ে। পেশা এবং নেশা- পেশায় একাধারে সুগৃহিণী এবং ছাত্রী। ফটোগ্রাফির পাশাপাশি, নেশা অবশ্যই নতুন নতুন রান্না শেখা এবং সেই সাথে বলা ভালো রান্না শেখানো।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক এই উৎসবের মরসুমে সোমদত্তার হেঁসেলে আমাদের জন্য কি কি রেসিপি অপেক্ষা করছে। আজ সোমদত্তা আমাদের শেখাবে-
১-অ্যালমন্ড_বাটার_মিল্কসেক।
২-বাসন্তী পোলাও।
৩-মাশরুম_বাটার_মশালা/ মাশরুম-মাখানি।
৪-শাহি প্রন বিরিয়ানি।
৫-কাঁচামরিচে সাদা মুরগি।
৬-আপেল ক্ষীর।
নাম শুনেই সবার জিভে এক হাঁটু জল জমে গেছে তো? তাহলে আর দেরি কেন? চলুন ঝটপট চোখ শিখে ফেলা যাক রেসিপিগুলো। সাথে থাকছে সোমদত্তার নিজের তোলা প্রতিটি রেসিপির লোভনীয় ছবিও। আজকের প্রথম রেসিপি-
১। অ্যালমন্ড_বাটার_মিল্কসেক
অ্যালমন্ড_বাটার_মিল্কসেক একটি অত্যন্ত সহজ রেসিপি,মাত্র দুই থেকে চার মিনিটেই আপনার অতিথিদের তাক লাগিয়ে দিতে পারেন রেসিপি শিখে। এটি তৈরি করতে আপনার লাগবে-
অ্যালমন্ড বাটার ১/২ কাপ
চিলড্ ফুল ফ্যাট মিল্ক ২কাপ
ভ্যানিলা আইস্ক্রিম ২স্কুপ
অ্যালমন্ড বাদাম ক্রাসড ১টেবিল চামচ
অ্যালমন্ড বাদাম ৪-৮টি গার্নিশিংয়ের জন্য।
কিভাবে বানাবেন-
* সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন, আপনার পছন্দমত যেকোনো গ্লাসে অথবা আইস্ক্রিম পার্লর গ্লাসে সার্ভ করুন চিল্ড অ্যালমন্ড বাটার মিল্কসেক। গার্নিশি করুন অ্যালমন্ড বাদাম ওপরে দিয়ে, চাইলে ১স্কুপ আইস্ক্রিম ও দিতে পারেন ।
৩। বাসন্তী পোলাও।
বাসন্তী পোলাও তৈরিতে যা যা লাগবে- গোবিন্দভোগ চাল- ২৫০ গ্রাম
আদাবাটা-১/২ চা চামচ
কাজু বাদাম- ১২-১৫টি
কিসমিস- ২ টেবিল চামচ
গাজর ১/২কাপ কুচি করা
মটরশুটি-পরিমান মতো
ঘি-২ টেবিল চামচ
তেজপাতা-২ টি
এলাচ ৩টি
লবঙ্গ ৪টি
দারুচিনি ১টা ছোট
হলুদ ১/২ চা চামচ
নুন স্বাদমতো
তেল ২০০ গ্রাম
খোয়া ৫০ গ্রাম চিনি প্রয়োজনমত।
যেভাবে করবেন-
* চাল ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে।
* এবারে চালের মধ্যে হলুদ মাখিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন।
* হাড়িতে ঘি আর তেল দিয়ে গরম হয়ে এলে গোটা গরম মশলা ও তেজপাতা দিয়ে ৫ মিনিট চাল ভেজে নিন।
* আদাবাটা, মটরশুঁটি, গাজর , কাজু ও কিসমিস দিয়ে ভালো করে আবারো কিছুক্ষণ নাড়তে হবে।
* সুন্দর গন্ধ বেরোলে যে পরিমান চাল দিয়েছেন তার দ্বিগুন জল দিয়ে নুন ও চিনি মিশিয়ে হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে দিন।
* অল্প আঁচে রাখতে হবে ২০ মিনিট।
* এরপর খোয়া টা গুড়ো করে ছড়িয়ে দিন ও অল্প নেড়ে আরোও ৫মিনিট রেখে দিন, ব্যাস হয়ে গেল বাসন্তী পোলাও।
ওপর থেকে অ্যালমন্ড বাদাম দিয়ে গার্ণিশ করতে পারেন ।
৩। মাশরুম_বাটার_মশালা/ মাশরুম-মাখানি।
প্রচুর প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরা স্বাস্থ্যকর একটা খাবার মাশরুম। কিন্তু সাধারণ স্যুপ বা পাকোড়া ছাড়া মাশরুম কী করে রান্না করতে হয় তা অনেকেই জানেন না। আর দেশি খাবারের মতো করে রান্না করা যায় না বলে অনেকেই আগ্রহ দেখান না। আজ দেখে নিন মাশরুম দিয়ে তৈরি একটি টেস্টি সবজি রেসিপি।
উপকরণ –
- ২৫০ গ্রাম বাটন মাশরুম(মোটা করে স্লাইস করা)
– ১/২ ইন্চি দারচিনি
– ১ কাপ টমেটো পিউরি
– ২টি ছোটো এলাচ
– ২টি লবঙ্গ
– ১টি কাঁচালঙ্কা
– ১টা মাঝারি পিঁয়াজ মিহি কুচি করা
– ২ চা চামচ ধনে গুঁড়ো
– ৪টা অথবা স্বাদমতো কাঁচামরিচ, মাঝখান থেকে চেরা
– নুন ও চিনি স্বাদমতো
– ১ চা চামচ জিরা
– কয়েকটা কারী পাতা
– ১ চা চামচ ধনেগুড়ো
– ১/২ চা চামচ গরম মশলা
– ২ চা চামচ অথবা স্বাদমতো মরিচ গুঁড়ো
– ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
– ৩ টেবিল চামচ তেল
– কাজুবাদাম ১২-১৪টি
– ২ টেবিল চামচ কুচি করা ধনেপাতা
– ২ চা চামচ আদা-রসুন বাটা
– লেবুর রস ১ চা চামচ
– ১টি তেজপাতা
– শুকনো মেথি পাতা ১/২চামচ ক্রাশ করা
– ১/২ চা চামচ কাশ্মীরি লঙ্কা গুড়ো
– ২ টেবিল চামচ মাখন
– ২ টেবিল চামচ লো ফ্যাট ক্রিম
প্রণালী
* মাশরুম গরম নুন জলে ৩-৪মিনিট সেদ্ধ করে জল ফেলে দিন।
* টমেটো ও কাজু একসাথে বয়েল করে পেস্ট বানিয়ে নিন।
*একটা প্যান গরম করে এতে দিন দুই টেবিলচামচ তেল এবং ১ টেবিল চামচ বাটার, গরম হয়ে এলে এতে দিন গোটা জিরে ও বাকি গরম মশলা ও তেজপাতা ।
* এরপর দিন কাঁচালঙ্কা, আদা-রসুন বাটা এবং অল্প করে নুন ও চিনি।
* ২মিনিট নেড়ে পিঁয়াজ কুচি দিন।
* এগুলোকে কষে নিন যতক্ষণ না আদা-রসুন বাটা ভালো করে রান্না হয়ে যায় এবং কাঁচা গন্ধটা চলে যায়।
* এই মশলার মাঝে দিন টমেটো ও কাজুবাদাম একসাথে বানানো পিউরি, ভালো করে কষান।
* এর পর দিন ধনে গুঁড়ো, হলুদ গুড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কা গুড়ো একই সাথে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
* কিছুক্ষণ পর দিয়ে দিতে পারেন মাশরুমগুলোও।
* ১/২কাপ জল দিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন যাতে মাশরুমে মশলা ভালো করে লেগে যায়, ঢেকে রান্না হতে দিন।
* এরপর টাটকা লেবুর রস ,বাটার ও গরম মশলা গুড়ো দিন, ১মিনিট রাখুন। নামানোর আগে ওপরে দিয়ে দিতে পারেন ক্রিম। তৈরি হয়ে গেলো মাশরুম বাটার মশালা। পরিবেশন করতে পারেন রুটি, পরোটা এবং নানের সাথে।
৪।শাহি প্রন বিরিয়ানি
উপকরণ ও পদ্ধতি-
পেঁয়াজ বেরেস্তা ১কাপ মত করে রাখুন।
বিরিয়ানির মশলা- ড্রাই রোস্টেড শাহি জিরা ১টেবিলচামচ মৌরি ১টেবিলচামচ ছোটো এলাচ ৪টি লবঙ্গ ৫টি দারচিনি ৪টি(১/২ ইন্চিকরে) একসাথে মিশিয়ে পাউডার বানিয়ে নিতে হবে।
চিংড়ি মাছ ম্যারিনেশন- বড় চিংড়ি ৪০০গ্রাম নুন প্রয়োজনমত হলুদ ১/২চা চামচ লেবুর রস ১টেবিলচামচ কাশ্মীরি লঙ্কা গুড়ো ১/২চা চামচ আদা-রসুন বাটা ১,১/২ টেবিলচামচ বিরিয়ানি মশলা ২ টেবিল চামচ বেরেস্তা ৩টেবিলচামচ কাঁচালঙ্কা ২ টেবিলচামচ পুদিনা পাতা ৩টেবিলচামচ দই ৫ -৬ টেবিলচামচ ১/২ঘন্টা ম্যারিনেট করে রাখুন।
বিরিয়ানির রাইস প্রস্তুত প্রণালি- বাসমতি চাল ১,১/২কাপ পুদিনা পাতা ১টেবিল চামচ গোটা গরম মশলা শাহি জিরা ১টেবিল চামচ মৌরি ১/২ টেবিলচামচ তেজপাতা ২টি নুন ১-২চা চামচ চাল ১ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
এরপর হাড়িতে জল দিয়ে সব মশলা ও উপকরণ গুলি দিয়ে জল ফোটান , ফুটতে শুরু করলে চাল দিয়ে দিন। চাল মোটামুটি সেদ্ধ হলে জল ঝরিয়ে নিন।
লেবুর রস ১টেবিল চামচ ধনেপাতা ২টেবিলচামচ – এইবার অন্য কড়াই বা হাড়িতে ম্যারিনেটেড চিংড়ি ভালো করে ভাজুন।
কষা হয়ে এলে স্তরে স্তরে রাইস দিয়ে দিন।
এবার লেবুর রস ও ধনেপাতা দিয়ে ১০-১৫ মিনিট দমে রাখুন।
আমি ওপর থেকে ১/২ কাপ ক্যাপ্সিকাম দিয়ে গার্নিশ করেছি কালারফুল করার জন্য , আপনারা না দিতেও পারেন। এবার গরম গরম শাহি প্রন বিরিয়ানি পরিবেশন করুন।
৫। কাঁচামরিচে সাদা মুরগি
উপকরণঃ-
মুরগীর মাংস – ১কেজি
আদা বাটা - ১ টে.চামচ
জিরা বাটা – ১/২ চাচামচ
মৌরি বাটা- ১টে চামচ
ধনে গুঁড়ো – ১ চা চামচ
পেঁয়াজ বাটা – ১ কাপ
কাঁচালঙ্কা গোটা – ৩/৪ টা
কাঁচালঙ্কা বাটা – ১টে.চামচ
পোস্ত বাটা- ১,১/২ টে.চামচ
কাজুবাটা- ১টে.চামচ
নুন – স্বাদমতো
সাদা তেল – ৫-৬ টেবিল চামচ
গোলমরিচ গুড়ো- ১/২ চা চামচ
দারুচিনি – ২টি (১ ইঞ্চি সাইজের)
এলাচ – ৩টি
লবঙ্গ- ২টি
গরম মশলা- ১/২চা চামচ
তেজপাতা – ১টি
চিনি – ১/২ চা চামচ
দই- ৪-৫ চামচ
লেবুর রস - ১চা চামচ
জল- ১,১/২ কাপ
ধনেপাতার পেস্ট- ৩ চামচ
প্রস্তুত প্রণালীঃ-
* মুরগীর মাংস ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন।
* মাংস ম্যারিনেট করে নিন সব উপকরণ দিয়ে ( দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতা, লবঙ্গ, পোস্ত, কাজুবাটা, গোটা কাঁচালঙ্কা, তেল, গরম মশলা এবং জল) ও ১/২ ঘন্টা রেখে দিন।
* এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতা, লবঙ্গ দিয়ে হালকা নেড়ে পেঁয়াজ বাটা, নুন দিয়ে কষে নিন ২-৩ মিনিট, এরপর মসলা মাখানো মাংসগুলো দিয়ে নেড়ে দিন।
* তারপর ঢাকা দিয়ে মাংসটা ২০ মিনিট রান্না করুন (কষান) মাঝারি আঁচে।
* মাংস কষানো হলে পোস্তবাটা ও কাজুবাটা দিয়ে ৩-৪মিনিট নাড়িয়ে চাড়িয়ে কষিয়ে ১,১/২ কাপ জল দিন।
* নুন ও চিনি দেখে নিন, প্রয়োজন থাকলে দিন।
* ঝোল ফুটে উঠলে অল্প আঁচে ঢেকে রান্না করুন।
মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে হালকাভাবে নেড়ে দিন। ঝোল ঘন হয়ে এলে গরম মশলা, কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে গ্যাস অফ করে আরো ৩-৪ মিনিট দমে রাখুন। হয়ে গেল কাঁচামরিচে সাদা মুরগী। এবার নামিয়ে পোলাও/ জিরা রাইসের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন। (জিরা রাইস অন্য পর্বে শেখানো হবে।)
৬। আপেল ক্ষীর
উপকরণ :
মিস্টি আপেল ২টি( খোসা ছাড়ানো ও গ্রেট করা)
ফুল ফ্যাট দুধ ১লিটার ফুটিয়ে ঘন করুন
কনডেন্সড মিল্ক ৪টেবিলচামচ
এলাচ গুড়ো ১/৪ চা চামচ
গোটা এলাচ ২টি
আলমন্ড ২টি টেবিলচামচ(কুচি করা)
জাফরান ১চিমটি
কিশমিশ পছন্দ মতো
ঘি ১টেবিল চামচ
প্রণালি :
* ফ্রাইং প্যানে ঘি দিয়ে অল্প আঁচে গ্রেটেড আপেল দিয়ে ভালো করে নাড়ুন, হাল্কা বাদামি রঙ হলে ও সেমি ড্রাই হলে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন।
* একটি ডেকচিতে দুধ ও এলাচ দিয়ে জ্বাল দিন।
* দুধ যখন ক্ষীরের মত ঘন হবে তখন তাকে সারাক্ষণ নাড়তে থাকুন।
* ক্ষীর ঘন হয়ে এলে আঁচ কমিয়ে কনডেন্সড মিল্ক দিন। জাফরান অল্প উষ্ণ দুধে গুলে মিশিয়ে দিন, আলমন্ড ও কিশমিশ ও এলাচ গুড়ো দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ওভেনে রেখে নামিয়ে নিন।
* ক্ষীর রুম টেম্পারেচারে এলে রান্না করা আপেল দিয়ে ভালো করে নেড়ে দিন।
* ফ্রিজে রেখে দিন ২-৩ঘন্টা, ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
উৎসব সংখ্যার রেসিপিগুচ্ছ আপনাদের সাথে শেয়ার করে রূপসী হেঁসেলের তরফ থেকে আমি এবং সোমদত্তা খুব খুশি। আপনাদের কেমন লাগল জানতে পারলে আমাদের খুশিও অনেক বেড়ে যাবে। অপেক্ষায় রইলাম। সবশেষে বলি, আগামী উৎসবের প্রতিটা দিন সকলের খুব খুব খুব ভালো কাটুক। পরিবারের সকলকে নিয়ে মেতে উঠুন উৎসবের দিনগুলিতে।

