ছন্দপতন
তোমার পায়ের শব্দ শুনব বলে ,
কত রাত আমি জেগে আছি,
কত প্রহর, কত ঘণ্টা কেটে যায় কে জানে !
ঘুমাইনি শুধু তোমারই আসার অপেক্ষায়,
কবে তুমি এসে বলবে শুভদা,
ফিরে এলাম তোমার টানে, তোমার ভালবাসায়।
নিস্তব্ধ রাত্রির প্রহর এড়িয়ে, মেঘ চলে বাতাসের টানে,
অন্তিম লগ্নে চাঁদের কিরনে কাটে নাকো কুজ্ঝটিকার কালি,
রাত্রির অমনিবাস গ্রাস করে পৃথিবীর রস, আছে যত মজুত,
শুষে নেয় এক নিঃশ্বাসে মানুষের প্রেম, যার যা কিছু ছিল,
নিষ্পন্দিত বালুকাচরে বিনা খেয়াঘাটে একলা বসে আমি,
পাটনির আসার অপেক্ষায়।
গভীর রাত্রিতে কালপেঁচা ডেকে যায় মহুয়ার ডালে,
হয়তো নাজানি পেয়েছে খুঁজে আমার জীবনের কোন অশনি সঙ্কেত!
মেঠো ইঁদুরের দল ছুটে ছুটে কুড়িয়ে নেয় সমাজের যত জঞ্জাল,
সোহাগী চাঁদের আলো জানালা বেয়ে গায়ে এসে ঢলে পড়ে,
রাতের মায়াবী আলোয় পাল্টে যায় চেনা অচেনার মুখ,
পাগলীটা শুয়ে আছে স্টাচুটার নীচে,
পৃথিবীর সব শান্তি চুরি করে নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে,
পলকহীন বিনা ঘুমে জেগে থাকি শুধু তোমারই আসার অপেক্ষায়।
তোমার অপমানে এক চুমুকে শেষ করি বিয়ারের শেষ পেগ,
শূন্য বোতল ছুঁড়ে মারি চাঁদের মুখে, গায়ে আছে যত জোর,
অট্টহাস্যে ফেটে পড়ি প্রতিশোধের স্পৃহায় ,
মানি নাই পরাজয় আমি জীবনের অন্তিম ললাট লিখনের।
বেদনার স্মৃতিপটে অনুভব করি তোমার স্পর্শ আজও,
হারিয়ে যাওয়া ক্ষণিকের মুহূর্ত গুলি ছবি হয়ে ধরা দেয় চোখে,
গাছ গাছালি, চেনা পথ আর সবুজের মাঠ হাত নেড়ে ডাকে,
লাল বালি কুবাইয়ের তীরে আমাদের চেনা আশ্রয় খুঁজি,
হারানো সেই কুল চলে গেছে নদীগর্ভে,
যেমনটি ঠিক হারিয়ে গেছে তোমার হৃদয় ।
তোমার কাজলপরা কালো চোখ দিয়েই দেখেছিলাম জীবনের মানে,
বুঝিনি কাজলের দুর্ভেদ্য প্রলেপেই ঢাকা ছিল তোমার অহঙ্কার,
তোমার ঘৃণিত চোখেই দগ্ধ হয়েছে আমার বিশ্বাস বারে বারে্ ,
তোমার দাম্ভিকতা আমার হৃদয় চিরে উপড়ে নিয়েছে রক্তাক্ত ভালবাসাকে,
আর ক্ষত বিক্ষত শরীরটাকে ভাসিয়ে দিয়েছ কাগজের নোকায় খেলাচ্ছলে ।
সুলোচনা, কেঁদে ভিজিয়ে দিও না আমার কবিতাকে,
আমি জানি ব্যর্থ তুমিও তোমার জীবনে ,
রঙিন পৃথিবীর হাতছানিতে তুলি হাতে নিয়ে এঁকেছিলে
ভূলে ভরা জীবনের এক প্রচ্ছদ,
পৃথিবীর রঙ্গীনতার ইতিহাস সেদিন তোমার কাছে ছিল অধরা,
আজ সকালে একমুঠো রদ্দুরের বদলে যখন দেখেছ
পূব আকাশে নিশ কালো এক টুকরো মেঘ,
বুজেছ পৃথিবীটা রঙ্গীন না,রঙ্গীন ছিল তোমার সেদিনের দৃষ্টিটা,
স্বপ্নে দেখা রাজপুত্তুর আজ বাস্তবের সরজামিনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে ।
ওগো নারী,মনের মানুষ ছাড়া কি ঘর কি বাঁধা যায়!
খেয়ালীপনায় ভেঙ্গে দিও না আমার বিশ্বাস,আমার প্রেম,
পারতো আমার কাঁধে হাত রেখে শুরু হোক আবারও তোমার পথচলা,
চোখের কাজল মুছে মুদিত কর তোমার নয়নযুগল,
শুরু কর নারীত্বের একাগ্র সাধনা ।