সোমবার, আগস্ট ১৫, ২০১৬
ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়
sobdermichil | আগস্ট ১৫, ২০১৬ |
অণুগল্প
| মিছিলে স্বাগত
ওভেনে কড়া বসিয়ে সাদা তেল আর ঘি আধাআধি মিশিয়ে ঢালল প্রমিতা। রবিবারের স্পেশাল শুক্তো রান্না হবে। বড়িগুলো সোনালি করে ভেজে তুলল। ভাজা বড়ির গন্ধে যখন ম’ ম’ করছে রান্নাঘর তখনই তার হাউস কোটের পকেট থেকে পাখির কিচিরমিচির শোনা গেল। তার মোবাইলের মেসেজ টোন। ফ্লেম কমিয়ে আরও একটু তেল ঢালল কড়ায়। তারপর মোবাইলটা বের করল। যা ভেবেছিল তাই। উত্তরণ।
- খুব মন কেমন করছে সোনা! বিকেলে কি একবারটি আসবে না?
তেল গরম হয়ে গেছে। ধোঁয়া উঠছে। কেটে রাখা করলার টুকরোগুলো ছাড়ল কড়ায়। রবিবার বিকেলে ছেলেকে নিয়ে ক্যারাটে ক্লাসে যায় উত্তরণের বউ। সেখান থেকে সোজা বাপের বাড়ি। উত্তরণ যায় একটু রাত করে। রাতের খাওয়া সেরে বউ-ছেলেকে নিয়ে ফেরে। তাই রবিবার বিকেলে ঘণ্টাতিনেক একেবারে ফাঁকা থাকে উত্তরণের ফ্ল্যাট। অনেকবার একান্তে তাকে ডেকেছে উত্তরণ। রবিবার হলেই সকাল থেকে মনখারাপের মেসেজ। অনেকবার ভেবেছে যাবে, যাবে। কেন যাবে না? কিন্তু গিয়ে ওঠা হয়নি।
করলাভাজা তেল থেকে তুলে বেগুনগুলো ছেড়ে দিল কড়ায়।
- মা, অঙ্কগুলো হয়ে গেছে। এবার কি পড়বো?
- বউদি, দেখ তো! এই আদাতে হবে, নাকি আর একটু লাগবে?
- আজ ভালো মাছ ওঠেনি বাজারে। এই আনলাম অল্প করে। দেখ তো?
বেগুনগুলো তুলে আলুগুলো ছাড়ল তেলে। মশলা দিয়ে কষতে লাগলো। পাখি আবার ডেকে উঠলো কিচিরমিচির।
- ওই চাঁপা রঙ ঢাকাইটা পরে এস আজ। ..... তোমার জন্য একরাশ গন্ধরাজ ফুটেছে আমার বাগানের গাছটায়।
কোথাও যেন বৃষ্টি এল। কোথাও যেন রুক্ষ মাটি ভিজে যাচ্ছে জলে। সোঁদা সোঁদা গন্ধ! এই গন্ধটাই কি প্রেম? এই ভিজে যাওয়াটা? ...কতদিন, কতদিন ভালবাসেনি কেউ তাকে! কতদিন সে এই সোঁদা গন্ধ শরীরে মাখেনি!
বাকি সবজিগুলো কড়ায় দিয়ে নুন ছড়িয়ে ঢেকে দিল প্রমিতা। আবার পাখি কিচিরমিচির।
- প্লিজ কিছু বল!
- আমার ভয় করে!
- আমাকে?
- নাঃ নিজেকে।
- কিসের ভয়?
- যদি আর ফিরতে না পারি?
শুক্তো তৈরি। বড়ি ভেঙে ছড়িয়ে দিল। ভাজা মশলা আর একটু ঘি। গন্ধটা বেশ ছেড়েছে। কড়াটা ঢাকা দিল প্রমিতা। আরও একটা গন্ধ সন্তর্পণে লুকিয়ে নিল বুকের ভেতর। শুখা মাটির ভিজে যাওয়ার গন্ধ।
- মা, আমার সবুজ মার্কার পেনটা দেখেছ কোথাও?
- বউমা, আমার মালিশের তেলটা?
মেসেজগুলো ডিলিট করে মোবাইলটা বন্ধ করে দেয় প্রমিতা, আজ সারাদিনের মত।
......প্রতিটি রবিবারের মতই।

