![]() |
মহাশ্বেতা দেবী (জন্ম ১৪ জানুয়ারি, ১৯২৬ - মৃত্যু ২৮ জুলাই, ২০১৬) এক বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলন কর্মী। তিনি ১৯২৬ সালে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন । তিনি সাঁওতাল ইত্যাদি উপজাতিদের ওপর কাজ এবং লেখার জন্য বিখ্যাত ।
শুধু বাংলায় নয়, বর্তমান সময়ে ভারতের সবচেয়ে প্রবীণ সাহিত্যিকদের অন্যতম ছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। গোটা দেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে সমসাময়িক কালে সবচেয়ে সম্মানিত নামগুলির অন্যতমও ছিলেন তিনি। সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে পদ্মবিভূষণ ( ভারত সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার ২০০৬), রামন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৯৭), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (সাহিত্য একাডেমির সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান), সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭) প্রদান করা হয়। তাঁর লেখা শতাধিক বইয়ের মধ্যে হাজার চুরাশির মা অন্যতম।
মহাশ্বেতা দেবী একটি মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তাঁর পিতা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল যুগের প্রখ্যাত সাহিত্যিক এবং তাঁর কাকা ছিলেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটক। প্রখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তাদের সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্যও একজন সাহিত্যিক ছিলেন।
মহাশ্বেতা দেবী শিক্ষালাভের জন্য শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন । তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন । পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন । ১৯৬৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি বিজয়গড় কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন । এই সময়েই তিনি একজন সাংবাদিক এবং লেখিকা হিসাবে কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত হন মূলত পশ্চিম বাংলার উপজাতি এবং নারীদের ওপর তাঁর কাজের জন্য । তিনি বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন উপজাতি এবং মেয়েদের উপর শোষণ এবং বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। সাম্প্রতিক কালে মহাশ্বেতা দেবী শিল্পনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সরকার কর্তৃক বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি অধিগ্রহণ এবং স্বল্পমূল্যে তা শিল্পপতিদের কাছে বিতরণের নীতির তিনি কড়া সমালোচক ।
রাজনীতি ও ইতিহাসের মিশেলে মহাশ্বেতা ঝাঁসির রানীর স্বাধীনতা সংগ্রামের গল্প লিখেছেন ‘ঝাঁসী কি রানী’ উপন্যাসে। নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে তার লেখাগুলো সে সময় দুই বাংলায় দারুণ সাড়া ফেলে। ঝাঁসির রাণী লক্ষীবাইকে নিয়ে প্রথম লিখে সকলের নজরে আসেন। এরপরে তিনি অসংখ্য গল্প উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর উল্লেযোগ্য গ্রন্থ : অরণ্যের অধিকার, নৈঋতে মেঘ, অগ্নিগর্ভ, গণেশ মহিমা, চোট্টি মুণ্ডা, তীর, শালগিরার ডাকে, নীল ছবি, বন্দোবস্তী, আই সি পি ৩৭৫, সাম্প্রতিক, প্রতি চুয়ান্ন মিনিটে, মুখ, কৃষ্ণা দ্বাদশী, ৬ ডিসেম্বরের পর, বেনে বৌ, মিলুর জন্য, ঘোরানো সিঁড়ি, স্তনদায়িনী, লায়লী আশমানের আয়না, আঁধার মানিক, যাবজ্জীবন, শিকার পর্ব, অগ্নিগর্ভ, ব্রেস্ট গিভার, ডাস্ট অন দ্য রোড, আওয়ার ননভেজ কাউ, বাসাই টুডু, তিতু মীর, রুদালী, ঊনত্রিশ নম্বর ধারার আসামী, প্রস্থানপর্ব, ব্যাধখণ্ড।
পরবর্তী জীবনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পনীতি এবং কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে কারখানা করার পরিকল্পনা নিয়েও লেখার মধ্য দিয়ে সরব ছিলেন তিনি। বাম ঘরানার এই লেখক মুণ্ডা ও সাঁতালদের সংগ্রামী জীবন নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি লোধা, শবরসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য জীবনভর সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।
Tags:
গুণীজন জীবনী