শুভ্রদীপ চৌধুরী

suvrodip



প্রলয় বাবু তার ঘরে এসে দেখলেন, এতক্ষণ যা ভেবে ছুটে আসছিলেন ঠিক তাই হয়েছে! জানালা খোলা থাকায় বৃষ্টির ছাঁট এসে শুধু তার বিছানা নয়, বিছানার উপরে থাকা বইপত্রের ভাল রকম ভিজিয়ে গেছে। কে জানতো এমন দুম করে বৃষ্টি নামবে? অথচ বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় কাঠফাটা রদ্দুর রাস্তা ঘাট পুড়িয়ে যেন মজা দেখছিল! পেনশন তুলে সবে মিত্তিরের চায়ের দোকানে গিয়ে বসবেন এমন সময় এল বৃষ্টি। তখনই মনে পড়েছিল তার খোলা জানলাটার কথা!

এখন জ্যৈষ্ট মাস, জানলার বাইরে ঝকঝকে আকাশ। কালো মেঘের চিহ্ন মাত্র নেই। ভেজা বই গুলো বিছানা থেকে সরাতেই বেরিয়ে পড়ল চিঠিটা! হাতে তুলে দেখলেন বৃষ্টির ছাট চিঠিটাকেও ছুঁয়ে গেছে। কালি কলমের লেখা বলে খানিকটা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায়, বই পত্র তেমনি ফেলে চিঠি খানা নিয়ে ছুটে গেলেন রান্না ঘরে। কেরোসিন কুকারটা জ্বালিয়ে অনেক উপরে দুহাতে ধরে থাকলেন চিঠিটা। সাবধানে শুকিয়ে আনলেন... তবে শান্তি। লাইনটানা পাতায় লেখা লাইন গুলোর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। 

সন্ধের দিকে তীব্র বেগে পুনরায় ঝড়। জানলার খোলা পাল্লা গুলো পাগলের মতো মাথা দোলাতে লাগল। সন্ধের রুটিন মাফিক হাঁটা থেকে ছুটে ঘরে এসে এবার প্রলয় বাবু দেখলেন, শুকিয়ে যাওয়া পুরনো বই এর হলদে পাতা থেকে ঘরময় উড়ছে কাগজ পত্র। আলো জ্বাললেন। শুধু টেবিলের উপরে ঠায়, যেন চুপ করে বসে আছে সেই চিঠিখানা। এগিয়ে এলেন চিঠিটার কাছে, লেখাগুলো যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে! চশমা ছাড়াই পড়তে লাগলেন বহু চেনা, বহু বার পড়া লাইন...

- তুমি যা জানতে চেয়েছ তা বলবো না, বলবো না, বলবো না।
ইতি, তোমার বর্না।

তিনি অবাক হলেন। কাগজটা একটুও নড়ছে না, তবে কি এই পুরনো এক টুকরো কাগজে প্রেম এসে দাঁড়িয়েছে!






Previous Post Next Post