মৌসুমী মন্ডল

mousumi


বৃষ্টির চিঠি

প্রভাতী পাখি হয়ে ওড়েনা যে মেঘলা কবিতাটি—
কতোবার উষ্ণতা দিতে চেয়েও একবারও ছোঁয়াইনি আমার পরশমণি আলো তোমাকে।
গোপনে বলে গেছি ধূপছায়া প্রেমের কথা বাঁশির কোমল গান্ধারে।
যদি বলেই ফেলতাম রূপোর চাবিকাঠিটা রেখেছি কোথায় —
বললেই কি পাল্টে যেতো পৃথিবীর সব
না ছোঁয়া হৈমন্তী রাত?
ব্যথা হয়ে নিভে যেতো ধ্রুবতারার স্নিগ্ধ আলোর মায়া
তবে কি অনুতাপে ফিরিয়ে নিতো মুখ,  স্মৃতিকথার দুষ্মন্তের মতো
বেদনার সুরঙ্গ পেরিয়ে পেরিয়ে
কবেই তুমি পৌঁছে গেছো
কৃষ্ণপক্ষের রাতঘরে
যদি স্পর্শ করতে রামধনু রঙা শাড়ির
উড়ন্ত আঁচল—
কান পেতে শুনতে অরণ্যের  সালোকসংশ্লেষে উদ্ভিদ হৃদয়ের ওঠানামা,
কিংবা বৃন্দাবনী সকালের ধানক্ষেতে শিশিরের পতন ধ্বনি
তবে শুধুই অপার্থিব গীতিকবিতায়
কুড়াতেনা দিনভর, ভেজা বকুলের গন্ধ লেগে থাকা শব্দ।
নৃত্যের সব তাল সমে এসে চাইতোনা ছন্দপতনের যৌতুক।
বৃষ্টি ভেজা মাটির সোঁদা ঘ্রাণ নিতে নিতে বলেছিলে, আসবে
আলোর ঝরনাধারার কাছে।
আমলকী বনের ছায়ারাও শোনাবে
অম্ল শৈশবের মেঘমল্লার সপ্তসুর।

পলকহীন ক্রুশবিদ্ধ যীশুর শান্ত গভীর   চোখে দেখে যেতাম,  প্রস্ফুটিত পারিজাত
তোমার ভিতরে।
কলেজের নোটখাতার ভাঁজে চেপ্টে থাকে
লাল বসরাই গোলাপের মরে যাওয়া
সুগন্ধি মমি
রাধাচূড়ার হলুদ রেনুতে মাখামাখি
তুমি যেতে থাকো, অবেলার দিকে
আমি ভাঙতে ভাঙতে মেঘ হয়ে জমে
থাকি পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে
অমল শরীর নিয়ে।
বৃষ্টির লেখা চিঠি বুঝিনি আমি,
রোদ্দুরের মেয়ে।
এখনও পাইনি খুঁজে আকাশ ,
বসতি গড়ার।



যোদ্ধা 

স্বপ্নভঙ্গের বৈশাখী রাত।
নক্ষত্রের দীর্ঘশ্বাসে উদভ্রান্ত,
মাকে খুঁজতে বেরোনো
জোনাকি ছেলের দল।
কালপুরুষ তুলে নিয়ে গেছে সুজলা,
সুফলা রম্যানি মাকে
সত্তর দশকেও এমনি উদভ্রান্ত ছিলো
জোনাকি ছেলের দল
আতসবাজির গুলি ঝাঁঝরা
করেছে তাদের।
আজো ছুটে চলেছে,
বীরপুরুষ বিভাস ছেলেরা।
সব অতীত মধ্যযামে রেখে
তারার নুড়িপথে হেঁটে যায়
ছায়া ছায়া শরীরে রানী লছমী, অরুণা, প্রীতিলতা, ম্যাডাম কামা, হজরত, কস্তুরবা, সরোজিনীদের
রঙমশাল মিছিল
চাষীর  ঘামগন্ধ মাখা
লিঙ্গহীন অঙ্কুর জন্ম নেয়
সবুজের আঁতুরঘরে
এ রাতের সব বাঁকে বাঁকে
তৈরী হতে থাকে বাঁধ ভাঙার
ডিনামাইট প্রান্তর
চাঁদবুড়ি নির্দ্বিধায় পেরিয়ে আসে
জ্যোৎস্নার ধারালো ক্রিস্টাল
আইলিন রেখা
নতুন রেশমের খোঁজে হারায়
তুঁতফল বনে
এবার প্রতিটি দিনের খাঁজে খাঁজে
জন্মাবে অমৃতের ছেলেমেয়েরা।




Previous Post Next Post