মোকসেদুল ইসলাম

moksedul




বিশ্রামাগারে ভাল নেই বাবা-মা

পাখির ঠোঁটে নতুন স্বপ্নবীজ বুনে নিমপাতা কলহ লিখে রাখত যে বালক বিকেল পর্ব শেষে
আমরা তাঁর কাছে ফিরে আসি কিছু দুঃখ-শোক বিনিময় করবো বলে। আমাদের 
ঘাসের সংসার, হাতের তালুর মতো চেনা মানুষগুলো রাত উড়ে আসলে সমুদ্র মন্থনে
ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তোমাদের শ্রীমুখ দেখে শুধু কৌতুহলই বেড়েছে, আদি জননী ভুল 
বলেনি অমৃত প্রাপ্ত হলে কেউ কেউ নগ্ন সিঁড়ি বেয়ে হয়ে ওঠে রাক্ষসী। বিরল নিদ্রা
যাপনের সুযোগ নিয়ে এসেছে যে আরাধ্য বিশ্রামশালা সেও দেবকন্যা নয়। ভালোবাসার
কতটুকু কমতি হলে কিংবা মনুষ্যত্ত্ব কতমাত্রায় লোপ পেলে নিজের জন্মদাতাকে রেখে 
আসে বিশ্রামাগারে সেটা মাপার থার্মোমিটার আমার কাছে নেই বলে মানুষ আর পশুর 
মধ্যে কোন পার্থক্য করতে পারছি না। পললের ভাঁজে যারা রেখেছিল ভবিষ্যৎ শীতল 
পাটির সুখ আঁধারের উষ্ণতায় তারা আজ ভালো নেই, অপ্রাপ্তি দীর্ঘশ্বাসে ভেসে যায় সব উচ্ছ্বাসী সুখ।



দূরত্ব

ঈর্ষার বিপরীতে তিরস্কার করো আজ
যাযাবর পথ ভোলা নাবিককে অভিযুক্ত করো
তরতাজা অঙ্গুরীর স্পর্শ পেলে আমারও পুড়বার সাধ হয়
ভাবপরশে আগলে রাখি তখন সব সন্ধি প্রস্তাব।

পান্ডুলিপিতে আবদ্ধ থাকুক সেইসব শব্দজাল
যারা বের হয়ে আসতে পারেনি মায়ের উদর ছেড়ে
ফুল চন্দনে মুখরিত হোক তাদের অবসর সময়গুলো
শূন্য হৃদয় নিয়ে নিরুদ্দেশের গতিপথে হাঁটলেই মনে পড়ে
কিশোরী প্রেম, ফাল্গুন দিন, স্বমেহনে তপ্ত চুম্বন।

ইদানিং ভোর ভাঙ্গা ঘুমে ব্যস্ত ইচ্ছের ভেতর
বিনা নোটিশে ভাবনাগুলো এভাবেই ঢুকে পড়ে
যদিও তোমার আমার মাঝে এখন দূরত্ব নক্ষত্র পথ।



নীরব সমুদ্রের ঝুমঝুমি

প্র্র্র্রতীক্ষা এবং দীর্ঘশ্বাসের ভীড়ে কাটছে যে জীবন
সেখানে নেই কোন সুখকর দৃশ্যের অবতারণা
ব্যর্থতায় ক্লান্তি নেই পরিচয়ও জানিনা তাঁর
অদ্ভুত ছায়ার পথে হাটছি অনন্তকাল ধরে
শুধু মৃত্যুর পরিচয়টা নেবো বলে এ পথে এসেছি।

আমি মহৎ নই, শুধু অন্ধকার ঘোঁচাবো বলে শান্তির পক্ষে গাইছি গান
টি-শার্টের গন্ধ পছন্দ হলে যেমন মেয়েরা হাটে পিছু পিছু
সমুদ্র ডাকার আগেই আমিও বুকের সবগুলো বোদাম খুলে রেখেছি
নতজানু প্রার্থনার মতো বোধের উৎসবে ছড়িয়ে দেবো লোবানের ঘ্রাণ।

শরীরে শূন্যতা ভর করলে মীনগন্ধে কাটে বাকিটা সময়
ক্ষুদ্রাকার আলোকের উৎস খুঁজে ফিরি অপরাজেয় নীরব সমুদ্র ঝুমঝুমি।



ছায়াহীন মুখ

স্বাগতম হে গোপন প্রেমিক আমার মধ্যবিত্তের সংসারে
মলিন দু' খন্ড দুঃখবোধ গড়িয়ে এলে নিষ্ফলতায় জন্ম নেয় রূঢ়তা
ঈশ্বরী হাওয়ায় ভেসে যায় যে সুখ সে বড়ই কৃত্রিম
কিছুটা বালুসুখ নিয়ে আমিও বেঁচে থাকি অশরীরী হয়ে।

কি বিচিত্র জীবন আমাদের সময়ের পরমায়ু শেষ হলে
অন্যরকম শিহরণ অনুভবে শ্বাসবায়ু টেনে নিই বুকের ভেতর
তুমি অন্ধকারে যাও কিংবা আলোয়
কিছু পাপবিদ্ধ সুখ রেখে যেও তার রেখায়
জলঘেষা ঢেউয়ের নাচে ভেঙ্গে পড়ছে যে মাটির শরীর
আমি সেখানেই পেয়ে যাই আশ্রয়, নিয়ত ছায়াহীন মুখ।



অযান্ত্রিক দুঃখবোধ

কিছু সময় রেখে এসেছি ভাঁজ করা স্মৃতির পাতার নিকট
নেশাখোর হাওয়ার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে যে অন্ধকার রাত
কঙ্কাবতীর ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি বলে তারও কিছু দুঃখবোধ আছে
আমাদের শিরদাঁড়াকে ঋজু করে রাখে যে রোদ সেও বড় নিষ্ঠুর
পুড়িয়ে ফেলে যাপিত জীবনের সমস্ত সুখ।

ইস্কুলের ব্যস্ত দারোয়ানের মতোই আমাদের প্রাত্যহিক ব্যস্ততা
নিজস্ব স্টাইলে দর্শক ধরে রাখবো বলে মঞ্চে সরব উপস্থিতি
সব দুঃখবোধ গোপন রেখেছি জৌলুস পোশাকের নিচে
টাকা হলে শুধু শরীর কেন বড় বড় ফ্ল্যাটও পাওয়া যায়।

সেসব মাতাল দিন, অযান্ত্রিক সময়, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
ঈর্ষাকাতর আলোর মতোই রহস্যে ঘেরা,
এসো তবে, আমরা সবাই নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের ভেতর ডুবে যাই
ফুলের গন্ধের মতো বিষ ছড়িয়েছে যে নারী তার ভরা বুকে মাথা রাখি।





Previous Post Next Post