সেদিন ঝিমঝিম করে একঘেয়ে বৃষ্টি পড়ছিল। অস্মিতা বাস থেকে নেমে শুভকে কোথাও দেখতে পেলনা। শুভ রোজ ওকে এই পথটুকু পৌঁছে দেয় । শুধু ওর ইচ্ছেতেই কোলকাতায় ভর্তি হয়েছে সে । নাহলে বাড়ির সবাই চেয়েছিল কাছের কলেজেই পড়ুক অস্মি । শুভর সাথে অস্মির ভালবাসা অনেকদিনের । সামনের ফাল্গুনে ওদের বিয়ে হবার কথা ।
আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হাঁটতে শুরু করল সে। এই পথটা খুব নির্জন। রাস্তায় আলো নেই । আস্মি তাড়াতাড়ি পা চালাল। পথে পড়ে চোলাই মদের ঠেক। ছেলেগুলো রোজ মদ খায় , খিস্তি দেয়। আজ অস্মি একা। আরও জোরে পা চালাল সে । পিছু নিয়েছে ওরা । অস্মি ছুটছে ---পিছনে ওরাও ছুটে আসছে। ধানক্ষেতের আলপথে পড়ে গেল সে । আর সেই মুহূর্তে তিনটে জন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ল ।
অফিস থেকে বেরোতে শুভর দেরি হয়ে গেল সেদিন। বেরিয়ে তার অস্মির কথা মনে পড়ল। একটা ফোন পর্যন্ত করতে পারেনি সে । পকেটে মোবাইল বেজে উঠেছে। বন্ধুর ফোন। কি বলছে নীল ? হাসপাতালে যেতে বলছে এখুনি সারা পৃথিবী দুলে উঠেছে ।
দুদিন পর অস্মির জ্ঞান ফিরেছে । চারিদিক এত অন্ধকার । এত যন্ত্রণা শরীরে। বাড়ির সবাই বাবা মা ভাই বন্ধুরা ঘিরে আছে ওকে । চোখে মুখে উদ্বেগ , কান্না। আর শুভ? সে কোথায় ? দুপাশে প্রবলবেগে মাথা নাড়ছে মেয়েটা । চিৎকার করে বলছে ---''না না আমাকে বাঁচিও না ----আর বাঁচতে চাই না । মরে যাব আমি ---। আবার অজ্ঞান হয়ে গেল মেয়েটা ।
এই দুদিন বাড়ি যায়নি শুভ । খায়ও নি । নিজের ওপর রাগ, অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খেয়েছে ওকে । ছেলেগুলোকে ও কিছুতেই ছাড়বে না ---প্রতিশোধ নেবে সে ,আগুন জ্বলছে চোখে ---মনে ।
এখন সবাই বাড়ি চলে গেছে। অস্মির কাছে গিয়ে দাঁড়ায় সে। আস্তে আস্তে তুলে নেয় অর কেটে ছড়ে যাওয়া রক্তাক্ত হাতটা।কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বলে ---শুনছো সোনা ? তুমি শুনতে পাচ্ছ ? এখনও বিয়ের দেরি আছে। ঐদিনই বিয়ে হবে আমাদের । এই কদিনে আমি সুস্থ করবো তোমায় ! এ শুধু তোমার জীবনের এক দুর্ঘটনা মাত্র । সব ভুলিয়ে দেব ! সব ভুলে যাবে আমার ভাল বাসায় ।
অন্তরের এই ডাক শুনতে পেয়েছে অস্মি। কাতর দুটি চোখ তাকিয়ে আছে শুভর দিকে। এত আলো সেই চোখে -----এত ভালবাসা -----এত প্রত্যয় !
Tags:
অণুগল্প