জয়দীপ চক্রবর্তী

joydip

যে শব্দস্রোতে ও নিরুত্তাপ

১।

ভাষাকে চিরদিন শব্দ ভেবে উপেক্ষা ক্যানভাসে লিখে ভুল
লোকালয় গৃহস্থালি সম্পর্ক শব্দহীন ভাসায় মেঘলা সুদূর
শব্দেরও থাকেনা দোষ বোকাকথা জেনে রাখো এক বেহাগ
সুর এসে মুহূর্তে আবেশ ছড়িয়ে হারায় চেতনার খানাখন্দ,বাঁক

ভাষা আর শব্দের আলোআঁধারি ধ্যান জন্মগত প্রার্থনা সঙ্গীত
রক্ত প্রবাহ থেকে প্রবাহে ওম ভরে দেয় জীবনেরও অতীত
যেখানে ছিপের সাথে মাছের সম্পর্কের ধারণায় থাকে ওজন
সেই ধুলোরঙের লোকালয় জানে দৃশ্যতই নেই কান্নার প্রযোজন

যদিও উচ্চারণ থাকে আর আছে নৈঃশব্দ্য কোথাও কোথাও
যেভাবে শব্দ চয়নের ভুল আছে সঙ্গে সমুচিত চেতনাও
শব্দ নক্ষত্রের রাত জাগা অভিমান ধুইয়ে কোথাও ঝলমল রোদ্দুর
ঋণ শেখায় নি বিলীন নতজানু উচ্চারণে অগ্নিশিখা রাখা জীবন যতদূর

ভাষার শস্যক্ষেত সবুজপত্র মাতৃত্বের মৃত্তিকার রক্তনদীর দান
জীবনের সমূহ অস্তিত্বের দাড়িঁপাল্লা নয় ঘাসফড়িং'র সমান
শব্দ উচ্চারণ ছুঁয়ে যাবেই তুমি শুধু ভাবো ভাষার রতন
আজ নয় অন্যদিন এক শ্রাবণের রাতে তোমারে পাঠাবো নিমন্ত্রণ

২।

এভাবেই শব্দহীন তবুও ঋদ্ধ মনপুর জমাট ঋণ
এভাবেই প্রতিদিন তবুও আপোসহীন হোক অন্তহীন
এভাবেই আমাদের একা'একাই একা হওয়া
এভাবেই জানা অজানায় হুঁশ হারিয়ে যাওয়া

এভাবেই আমার অনন্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিন্দুতে সিন্ধু
এভাবেই আমার একটাই ইচ্ছা নীরবেই চন্দ্রবিন্দু
এভাবেই বৈশাখ রোদ্দুর ধুইয়ে জলরং চিলেকোঠা
এভাবেই একাকার ভাবনায় ধুকপুক স্কুলের ঘন্টা

এভাবেই হারিয়ে যাওয়া ইচ্ছেমতির জোনাক রাত
এভাবেই ভোরের ঘুম স্বপ্নে ভাঙার তীব্র আঘাত।

এভাবেই আমার বেবাক শেখা খোলাচোখে অন্ধ থাকা
এভাবেই চোরাবালির পতন রুখে জাপটে ধরা বিকেল বেলা
এভাবেই আশ্রয় আর আশ্রম অন্তরপুর আশ্বস্ত বিস্তর ঋণ
এভাবেই শর্ত স্বার্থ বাজার সর্বস্ব বেঁচে থাকাটাই সঙ্গীন

এভাবেই দুচোখ দৃশ্যতই অবিরল রঙ পাল্টানো সময়
এভাবেই দুচোখ জুড়ে অবনমন হাত তুললেই সহজ অভয়

                     
৩।

যাপনের ফাঁকে ফাঁকে তুমি
কতটা কৌশলী হয়েছো,অন্যমনস্ক ক্রান্তদর্শী মেপে নিই।
দেখেও রাখি ছিন্নমূল দাবিদাওয়াতে...
একাত্মতার কিশলয় বেলার শিশির সিক্ত ঘাসে,তোমার কাছে...
একবিংশ শতাব্দীর ধুলোমেঘের ঝরা পাতার কাছে...
আমার কিংবা আমাদের
কিছুই কি বলার থাকতে পারে?
শূন্যতারও নিজস্ব অন্ধকার থাকে...
তুমি আপাতত তোমার মন ওখানেই রাখো।
তোমার মনের দাউদাউ অনুভবে যে একাকিত্বের অঙ্কুর ফুটবে-
জানবে পরজন্মের জন্য আমাদের আলাপনের উন্মুখ উত্তরণ....

                 
৪।

অবহেলা দেখো উদাসীনতার মত    
             অমনোযোগ!
দশচক্রে রাখা সাদা কাগজের পর যতো
               অভিযোগ।

অসামান্য দার্শনিকতা,তাত্ত্বিক চাতুরি
                ধন্যযোগ!
মরু ক্যাকটাসে অবাঞ্ছিত,হঠকারী
                 থাপ্পড়!

লিখি যতো লাল,নীল,সাদা,কালো...
অশেষ হলুদ রয়ে দেখো বয়ে
                                           সময়।
            উপহাস অকাতরে!

অর্বাচীন ভেদাভেদ, আলো জ্বালো...
পরিশ্রান্ত সব শ্রম আর অর্জিত সহজ
                                           নির্ণয়!
             সঞ্চয় পিছুটানে...



৫।

শব্দের মোহিতে অক্ষর বুনে, পথ হারিয়ে ভীষন ফিরে আসা!
মুছে গেছে অনেক রঙ, মুহূর্ত লতা, সরল সহজ ভাজ-
তোমার সাদা পাতায় এক নয় হাজার স্বাক্ষর পারি ভালোবাসা।
আমার কোনও সংশয়, দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই আজও জেনো পরিস্কার...

শুনলাম তুমি গোপনে রোদ্দুর মেখেছো,সে মেখে হাসতেই পারো !
সে হাসির অন্তরপুর,অক্ষরমালা হয় যদি শব্দ আর ছবি-
তবে আজ থেকেই অবিশ্বাস বাঁধা গিট, তুমি হেসে,হেসেই হত্যা করো !!
কি আশ্চর্য ভুল শব্দে ভোরবেলায় তোমার মুখোমুখি তুচ্ছ কবি ??

এ আষাঢ়ের মাস, মেঘলা আকাশ, মনে মন দুর্বার দরবার।
স্বাদ আর স্বাদ্ধ্য উপবৃত্তিয় টলোমলো, আমার আনন্দিত আকাশ।
সব প্রতিশ্রুতি বল্গাহীন মেঘে মেঘে বয়স আরো, আর তোমার অবসান...
নবীন আলোর অবয়ব,জানি ছক সাজায় তবুও ভালো থাক বারোমাস...

সব শব্দের দোষগুণ, আমার ক্ষয়, তবুও ভালোবাসা তুমি হও অক্ষয়;
মৃত্যুর আলপথে,তিনপ্রহরের বিল, জীবনের নাক্ষত্রিক জয় পরাজয়...


৬।

ছাইরঙা মাঠঘাট, আলপথ হেঁটে একসাথে
যদি বলি তুই একটা যাচ্ছেতাই,আজ থেকে আড়ি
শুনে তুই আর তোর নীরব শূন্যতার ক্যানভাস রঙে রঙে,
সত্যি করে বলনা মেয়ে কাজল চোখে কি লুকালি?

কত রাতভর ভীষন কান্না, মধ্যকার বিন্দু বিন্দু সম্পর্কিত অভয়,
এ-ফোঁড়,ও-ফোঁড় শর্ত রোহিত বিশ্বাসের জখম মাশুল!
যে সম্পর্ক নিষ্কৃতি প্রবণ,অধিকারই হোক সহজিয়া বরাভয়।
বন্ধুর বন্দুক জানা,বিচ্ছেদ শব্দে যে বন্ধন দৃশ্যতই নিশ্চুপ!

হেমন্তর কুসুম বিকেলে যে আবছায়া মনে মন কাগজের নৌকা,
তোকে বললাম আজ থেকে প্রার্থিব অনন্ত হোক নৌকাটা আলাদা।
আহত মুখ নয় হাজার প্রশ্নে বিব্রত, সম্পর্কে হয়না সওদা-
সামান্যই অনুভব অধিকার হীন সম্পর্কে বিচ্ছেদেই হোক সার্থকতা।

যেকোনো পরিচয় ফুল আর কাঁটা সামাল চলাচলেই নিয়তি!
বিপন্নতা,শর্ত,স্বার্থের সরণি তবুও মর্যাদা আর বিশ্বাসই আমার সংহতি।


৭।

তুই যখন পায়ে পায়ে যৌথবেলা
কিছু শব্দ নীরবতার ইচ্ছেমত
আলোছায়া মন খেলনাবাটি একা একা
মনে ধুম পুড়ে পুড়ে কান্নাই সতত

মেঘে মন শব্দ যখন আজন্মই গোপন
ইঙ্গিতও জানো?ধৈর্যই ব্যাকুল আবর্তন
এ জন্মের গ্লানি জন্মান্তরেই সমর্পণ
সব সবই যুক্তিগ্রাহ্য নয় যা যা বিবর্তন

তুইও উফ্ ইচ্ছেনদী অন্ত্যমিলে আমি পাহাড়
তবুও কোথাও কোথাও বাসন্তিক ত্রুটিবিচ্যুতি
সব স্বপ্নময় হয় না রে সহজিয়া অঙ্গীকার
ক্যানভাসে উত্তাল গমরঙা পোড়াবেলা বিষাদ বিস্মৃতি

স্বপ্নের জখম ছিন্নভিন্ন খুঁটে খাই বাবুই
বহুদিন পরে মুখোমুখি ভালো আছিস তুই......


৮।

পথচলা তন্নতন্ন যে আলোর প্রযোজন-
সীমান্তের মৃত্তিকা জানে ভুল শব্দের লগন।
যে জীবন সহজ, মোহিত অথচ আকাঙ্খা বিহীন!
ফাঁস ফাঁদ ছিঁড়ে জীবন রোহিত প্রতিদিন...

ইচ্ছা উথলেই অনিচ্ছার থরথর ছায়া!
মাঝিও জানে বিরুদ্ধতার নৌকা বাওয়া।
যে শব্দ বাতাস ছুঁলেই ঝাঁক ঝাঁক ভুল...
শপথ ভেঙেছো জানে ইচ্ছামতির দুকুল!

সত্য মিথ্যার দাড়িপাল্লা ভর ও ভার...
এর চেয়ে মল্লার নির্জন যে ভীষন দরকার!
আসলে সব শব্দ নয় কিছু কথার কথা।
সব কান্না, আঁধার সাঁতরেও ব্যথার উপকথা!

যদিও যা কিছু অভিমান ধুইয়ে দিলাম ভুল।
শুধুই তোর যেন না হারায় সুখের উপকূল!




Previous Post Next Post