প্রায় পাঁচ ঘণ্টা এক টানা গাড়ি চালানর জন্যই মনে হচ্ছে এরকম হচ্ছে,হাত পা সব অসার হয়ে আছে,তার পর এই পৌষ মাসের ঠাণ্ডা । জানালার ফাঁক দিয়ে অসম্ভব ঠাণ্ডা ঢুকছে,তার সঙ্গে একটা বুনো গন্ধ । আমার জঙ্গল পার্ক ফরেস্ট রিসোর্টে পৌছাতে পৌছাতে ভোর ৪টে বেজে গেল। জঙ্গলের মধ্য এক একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ নারীর মতন দাঁড়িয়ে আছে এক একটা মাটির তৈরি কুড়ে ঘর। দূর থেকে আলো আঁধারির মাঝে তার উপস্থিতি মায়াবী,রহস্যময়ী এক নারীর শরীরের কামুকতাকে আকর্ষণ করছে আমার ক্লান্ত শরীর । ছেলেটি কটেজের দরজা খুলে দিতেই জুঁই ফুলের গন্ধ ভেসে আসল ঘরের ভিতর থেকে । ছেলেটি চলে যেতেই নিজেকে মেলে দিলাম বিছানার মধ্যে । মেলে দিতেই ঢুকে পরলাম নরম তুলতুলে বিছানাটার মধ্যে। ঠিক যেন এক স্বাস্হ্যবতী নারীর শরীরের ওপর আজ আমি রাজত্ব করছি। অদ্ভুত রমণীয় পরিবেশ । এরকম পরিবেশে একটু লিকার না হলে ঠিক চলে না । ব্যাগ থেকে বোতলটা বার করে জানালার সামনের টেবিলের ওপর রাখতেই চোখ পরল কাঁচের জানালার দিকে। বাইরের আকাশ তখন পরিষ্কার হয়ে আসছে, সূর্যের বেগুনি রং এসে পরেছে নদীর বুকে। উচ্ছল পূর্ণ যৌবনবতী দুই নারীর মিলন হয়েছে প্রকৃতির মাঝে,আমার চোখের সামনে তাঁদের শরীরের ভাজে ভাজে আমি সেই উদ্দামতা দেখছি । ডাকিনী আর যোগিনী নদীর যেখানে মিলন হয়েছে তার সামনে ছিন্নমস্তা কালীর মন্দির । মন্দিরটি নদীর মাঝে । তাঁর দীর্ঘ কালো চূড়া কালো মেঘের ফাঁক দিয়ে তীরের মত ঢুকে গেছে আকাশের বুকে ।
আজ বৈজয়ন্তী পাহাড়ের বুকে মেঘের ঘনঘটা। সূর্যের আলো কালো মেঘের মাঝে জঙ্গলে প্রবেশ করার আগে বেগুনি রূপ ধারণ করেছে । ডাকিনী আর যোগিনীর মিলনের সাক্ষী এই ঘন সবুজ বৈজয়ন্তী পাহাড় আর ছিন্নমস্তা মন্দির আর আমি । দু পেগ পেটে পরতেই পৃথিবীটা আরো বেগুনী হয়ে উঠল । বৈজয়ন্তীর বুকে ছোট্ট ছোট্ট আলো,অন্ধকার না কাটায় এখনও পাহাড়ের বুকের আধুনিক কোন কটেজের আলো জ্বলছে । এই আলো গুলো বড় বেশি উজ্জ্বল হয়ে চোখে এসে পরতেই দু বছর আগের ৩১ এ ডিসেম্বর রমটা ডিস্কর কথা মনে পড়ে গেল । অন্ধকার ডিস্কর মধ্যে নানা রং এর আলো জ্বলছে নিভছে । সেখানেই প্রথম দেখা শশীর সাথে । শশী মিত্র, মিত্র ইন্টারন্যাশনালের সূর্য মিত্রের একমাত্র কন্যা। পরিচয় টা না জেনেই প্রথম দেখায় ওর প্রেমে পরে গেছিলাম। ডিস্কর আলো আঁধারির মধ্যে ওর উপস্থিতিটা অনেকটা দীপাবলির রাতের মতন সব কিছু উজ্জ্বল করে দিয়েছিল। শশীর উচ্ছল ব্যক্তিত্ব আমাকে ভয়ঙ্কর আকর্ষণ করত, শুধু আমি কেন ও যেখানেই গিয়ে পৌঁছাত সেখানেই ওর ব্যক্তিত্বে ও সৌন্দর্যর প্রতি সবাই আকর্ষণ অনুভব করত ।এরকম এক সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে আমার প্রেমিকা ভেবেই আমার গর্ব বোধ হত । অন্তরঙ্গ মূহুর্তে শশীর চুম্বনে অপটুতা বার বার ওর সৎ চরিত্রের প্রমাণ আমাকে দিতো । সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকল। আমার ওর ফ্ল্যাটে যাতায়াত ও বারতে থাকল। কেরলের মতন রাজ্যে দুটি বাঙ্গালী ছেলেমেয়ের এই ভাবেই কাছাকাছি আসাটাই তো স্বাভাবিক । কোজিকোরে তখন আমরা দুজনই এক সাথে IIM এ পড়ছি। আমি থাকতাম মেস বাড়ীতে আর শশী থাকত একটা ফ্ল্যাটে । ওকে দেখাশোনা করার জন্য মাঝ বয়সী এক মহিলা থাকত ওর সাথে। এই ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগত ,একটা রক্ষণশীল পরিবারের সভ্য মেয়েরা তো এরকমই হয় ।
আমার চোখের সামনের জানালার রং গুলো আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বাইরে মেঘ করেছে বজ্র পাতের আলো আমার সামনের জানালার চিত্রপটে প্রতিফলিত হল । তার আবছা আওয়াজ আমার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কটেজে প্রবেশ করতেই বুকের বা দিকটা কনকন করে উঠল । আরেক পেগ গলায় ঢেলে চোখ বন্ধ করলাম । দিনটা ছিল টেডি বিয়ার ডে । অল্প বয়সের ছেলেমানুষিতে গা ভাসিয়ে ওকে আগাম কিছু না জানিয়ে আমি পৌঁছে গেলাম শশীর ফ্ল্যাট । বাইরে থেকেই ওর হাসির আওয়াজ কানে এলো,সঙ্গে আরো দুটো পুরুষের গলার শব্দ পেলাম । বেল বাজাতেই মাসি এসে দরজাটা খুলে দিলো ।যাও,শশী ভেতরের ঘরে আছে ।
ভেতরের ঘর মানে তো বেড রুম । শশীর মতন মেয়ের সাথে বাস্তব চিত্রটা ঠিক মেলাতে পারলাম না। নানা রকম দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাঝে দুলতে দুলতে আমি এগোচ্ছিলাম বেড রুমের দিকে,কিন্তু ঢুকতে গিয়েই হোঁচট খেলাম সোফাটা খালি দেখে । আর ঢুকতে ইচ্ছে করছিল না ।কিন্তু মাসি পেছন থেকে বলল, কি হল যাও,যাও কিচ্ছু হবেনা । মাসি হাসতে হাসতে রান্নাঘরে চলে গেল ।
কোনক্রমে ঢুকলাম বেডরুমে । দেখলাম শশী উপুড় হয়ে শুয়ে আছে বেড রুমে আর শশীদের ব্যাচের দুটি ছেলে অজিত আর রোহণ বসে আছে বিছানায় । শশী পরনে জিনস আর স্লিপলেস টপ । আমাকে দেখে অজিত বলল, দেখ আরেকজন টেডিবিয়ার এসে গেছে । শশী চট করে উঠে বসে আমাকে দেখে অসভ্যের মতন হেসে উঠল ও বলল, He is my sweetest teddy bear. দেখ আমি কত লাকি,আজ তিন তিনটে টেডিবিয়ার আমার বাড়ী চলে এসেছে ।
আমি এই শশীর সাথে আমার চেনা শশীকে মেলাতে পারছিলাম না । এই শশীকে মনে হচ্ছে একটা রাস্তার মেয়ের চেয়েও নোংরা, এই শশীর মন বলে কিছু নেই । নিজের সুখের জন্য যেকোনো মানুষেরই মন ভেঙ্গে দিতে পারে । আমি নিজের মান সম্মান ভুলে গিয়ে ওখানে পাথরের মতন বসে থাকলাম । মনে মনে বুঝতে পারলাম ও আমাকে ওর হাতের পুতুল বানিয়ে ফেলেছে । এমনই তার মোহ যাকে অস্বীকার করা যায় না । রাতের খাওয়া শেষে রোহণ অজিত চলে গেল,আমি থেকে গেলাম । থেকে গেলাম মানে শশী যেতে দিল না । এ আকর্ষণ তো অস্বীকার করা যায় না । ও রাতে আমাকে পুরুষদের একটা নাইট ড্রেস বার করে দিলো । আমি জানতে চাইলাম এ পোশাক তোমার কাছে ?
ও বলল,আমার অনেক বন্ধু, কেউ রাতে থেকে গেলে এর প্রয়োজন হয় । তাই কিনে রেখেছি ।
আমি নাইট ড্রেসটা পরার সময় একটা পুরুষালি গন্ধ পাচ্ছিলাম । তাও আমি পড়লাম । সারা রাত শশীর ভালোবাসায় আমি সব কিছু ভুলে গেলাম । মনে মনে ভাবলাম এসব আমার মনের ভুল । পরেরদিন যাবার আগে আমি চালাকি করে শশীর ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবিটা আমার কাছে নিয়ে নিলাম । এর পেছনে আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না । আম ওকে চমক দিতে চেয়েছিলাম । দেখতে দেখতে ভ্যালেন্টাইন ডের রাত এলো । আমি এক গোছা লাল গোলাপ আর একটা হার্ট সেপের বাক্সে চকলেট কিনে,ওর ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে শশীকে ফোন করলাম । শশী বলল, আমি আর মাসি একটু শপিং এ এসেছি তুমি রাত দশটার পর এসো ।
ওর গলার আওয়াজই বলে দিচ্ছিল ও ঘরের মধ্যেই আছে । আমার সন্দেহ হল । আমি ডুপ্লিকেট চাবিটা বার করে দরজাটা খুললাম । ঘরে ঢুকে দেখলাম বসার ঘরের আলো বন্ধ, কিন্তু বেড রুমে এ সি চলছে বুঝতে পারলাম । পুরনো এসি তো,একটা শব্দ হয়, তাই মনে হয় ও বুঝতে পারেনি ভেতরে কেউ ঢুকেছে। আমি বেডরুমের দরজার কি হোলে চোখ রাখতেই নগ্ন শশীকে দেখতে পেলাম । শোফার মধ্যে নিজের শরীরটা মেলে রেখেছে ও । শোফার নিচে বসে তেঁতুলের আচারের মতন জিভে চটপট করে আওয়াজ করে ওকে খাচ্ছে দীর্ঘ কেশী আরেক মহিলা। চুল দিয়ে মুখের একদিক ঢাকা থাকায় মুখটা দেখা যাচ্ছে না। আমার ঘেন্না হল , আমার রাগ হল। মনে হল ঘরের মধ্যে ঢুকে শশীকে খুন করে দি। আমি বেডরুমের দরজা খুলে ঢুকে পরতেই শশীর দুটো চোখ বন্ধ থাকলেও আরেকজন মহিলা চটপট আওয়াজ বন্ধকরে আমার দিকে তাকাল ।
ওর গলার আওয়াজই বলে দিচ্ছিল ও ঘরের মধ্যেই আছে । আমার সন্দেহ হল । আমি ডুপ্লিকেট চাবিটা বার করে দরজাটা খুললাম । ঘরে ঢুকে দেখলাম বসার ঘরের আলো বন্ধ, কিন্তু বেড রুমে এ সি চলছে বুঝতে পারলাম । পুরনো এসি তো,একটা শব্দ হয়, তাই মনে হয় ও বুঝতে পারেনি ভেতরে কেউ ঢুকেছে। আমি বেডরুমের দরজার কি হোলে চোখ রাখতেই নগ্ন শশীকে দেখতে পেলাম । শোফার মধ্যে নিজের শরীরটা মেলে রেখেছে ও । শোফার নিচে বসে তেঁতুলের আচারের মতন জিভে চটপট করে আওয়াজ করে ওকে খাচ্ছে দীর্ঘ কেশী আরেক মহিলা। চুল দিয়ে মুখের একদিক ঢাকা থাকায় মুখটা দেখা যাচ্ছে না। আমার ঘেন্না হল , আমার রাগ হল। মনে হল ঘরের মধ্যে ঢুকে শশীকে খুন করে দি। আমি বেডরুমের দরজা খুলে ঢুকে পরতেই শশীর দুটো চোখ বন্ধ থাকলেও আরেকজন মহিলা চটপট আওয়াজ বন্ধকরে আমার দিকে তাকাল ।
আমি যা দেখলাম,তা আমার এতদিনের সব বিশ্বাসকে মাটি করে দিলো । আলো আঁধারির মধ্যে মাসির মুখটা ভয়ঙ্কর রকম কুৎসিত লাগছিল ।
মাঝে দু বছর কেটে গেছে । আমি আমার কোর্স শেষ না করে রায়গঞ্জে ফিরে এসেছি । সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি শশীর সাথে আর কোন যোগাযোগ না রাখলেও ওর ভয়ঙ্কর এক প্রভাব আমার ওপর পরেছে । আমি আর কোন নারীকে বিশ্বাস করতে পারি না । আমি নারীকে পণ্য ছাড়া আর কিছু ভাবি না । আমার ঘুম ভাঙ্গল ডোর বেলের শব্দে । দরজা খুলতেই সাইক্রিয়াটিক বিনায়ক নন্দার দীর্ঘ শরীর চোখে পরল । Good morning Mr Rudra . আমার মনরোগ বিশেষজ্ঞ আমার ঘরে প্রবেশ করল ।
Tags:
গল্প