মৌসুমী মন্ডল

mousumimondal

ডুব

সেই মেয়েটার
লাল বেনারসি,
আর চন্দনে বিয়ে—
গা মুড়ে গয়না দিয়ে।
যজ্ঞের সে কাঠ পুড়ছিলো, পুড়ছিলো
আর হচ্ছিলো ছাই, হচ্ছিলো।
খুশির ছোঁয়ায় ধোঁয়া ধোঁয়া কুণ্ডলিতে
তার, জরির লাল চেলি —
উড়ছিলো আর উড়ছিলো।
জোছনার মেয়ে লজ্জায় রাঙা
হাসছিলো আর হাসছিলো।
নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, নাচে রক্ত।

কপালে সিঁদুর,বিষ্ণুপুরী বালুচরি শাড়ি
অষ্টমঙ্গলায় গয়নায় মুড়ে এসেছিলো বাড়ি
পাড়া পড়শীরা উপচে এলো,
একলা মেয়ে উদাস ছিলো।
নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, নাচে রক্ত।

এই মেয়েটা —
ভালবাসার ঘরটা কেমন?
স্বামী কি তোর দিয়েছে মন
কৃষ্ণা রাতে ফুল বাসরে গা ছমছম্
রুপোর মল কি বাজলো ঝমঝম্?
তুই কেন হলি চুপকথা
উদাস মনে কিসের ব্যথা।
এই মেয়েটা ঘোমটা সরা
মুখটা কেন কষ্টে ভরা।
নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, নাচে রক্ত।

শেষে পণ মেটাতে—
মা, বাবার —মাথার ছাদও বিক্রি হলো
অথৈ জলে জীবন,মেয়ের ডুবে গেলো
তবুও তো মরা হাতি লাখ টাকা
গেলো মেয়ের নাকফুল ও সোনার শাঁখা
নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, নাচে রক্ত।

এই মেয়েটা—
পা কেন তোর কাদায় ভরা
কোথায় কানের ঝুমকো জোড়া
পণ কি এখনও মিটায়নি তোর বাবা
ফুলঝুড়ি তুই হলি কি শেষে বোবা
নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, নাচে রক্ত।

এই মেয়েটা—
নক্ষত্রের সাথে বিয়ে,
চাঁদ দেখতে গিয়েছিলিস
জুঁই ফুলের মালা নিয়ে
কুঞ্জে সাতপাক ঘুরেছিলিস।
বিদেশ গেলি, ফিরলিনা আর
ভাবলো সবাই সৌভাগ্য তোর।
নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, নাচে রক্ত।

এই মেয়েটা —
অতলান্তিকে ডুবলি যে তুই
কফিন বন্দি দেহ এলো।
অবশেষে ফিরলি যে সই
আবার ছাই উড়ছিলো।
খামে ভরে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলো
সেই সন্ধ্যেয় বিচে নাকি, ছিলোনা আলো
সেই তুই শেষে এলি বাড়ি
পুড়লো ব্যথায় ঝুটো শাড়ী ।
নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, নাচে রক্ত।

এই মেয়েটা —
জ্বললো তোর জ্যোৎস্না শরীর
পুড়লো মায়ের অবুঝ আদর।
হারিয়ে গেলি চিতার মাঝে
একলা তারা জ্বললো সাঁঝে।
নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু, নাচে রক্ত।






Previous Post Next Post