মৌমিতা দে


পরকীয়া শব্দটা শুনলেই গায়ে যেন ফোস্কা পড়লো- এটা অন্যকে দেখিয়ে দিতে পারলেই বেশির ভাগ মানুষের বেশ নিশ্চিন্তি লাগে ৷ শুভদা, আপনারও কি? আচ্ছা কেন বলুন তো আপনার চামড়াটা এতোটা স্পর্শকাতর ? নাকি সব লোকদেখানো ? ডুবে ডুবে আপনি নিজেই আবার... ! জানি বলবেন না সত্যি কথাটা ৷ কারণ সেটা বলতে নেই ৷ না বলুন ক্ষতি নেই কিন্তু প্লিজ একবার আয়নার সামনে দাঁড়ান ৷ আচ্ছা ডোরিনা-বৌদিকে নিশ্চয়ই আপনি চেনেন না, বলবেন না ?

অফিস ছুটির পরে মাঝে মাঝে আপনাদের দুজনকে দেখেছি ৷ কালও আপনারা ছুটির পরে গঙ্গার পাড়ে বসে ছিলেন কিছু সময়- দক্ষিণেশ্বরে৷ না, পুরোটা বলছি না ৷ তবে ডোরিনাবৌদি এপার থেকে ওপারে বেলুড়মঠের দিকে আনমনে তাকিয়ে থেকে আপনাকে বলছিলেন সংসারে মানিয়ে চলতে ৷ বলছিলেন স্ত্রী আর আপনার সন্তানদের প্রতি আপনার একটা দায়িত্ব আছে , সেটা আপনার ঠিক মতো পালন করা উচিত ৷ আপনার হাতের মধ্যে তখন ডোরিনাবৌদির হাত ৷ কারুর কিন্তু আঙুল নড়ছিল না ৷ শুধু হাত ছিল অন্য একটি হাতের মধ্যে ৷ আপনাদের কারুরই হাতের শরীর দেখিনি তখন আমি ৷ আচ্ছা- হাতের শরীর দুটো এভাবে সরিয়ে রেখে... ৷ কী করে পারলেন আপনি? আপনি ডোরিনাবৌদিকে ভালোবাসেন- সেটা মানুন আর নাই মানুন ৷ ডোরিনাবৌদিও আপনার জন্য পাগল ৷

রবিবারের রবীন্দ্রসদন ! আপনি সেদিন ডোরিনাবৌদিকে বললেন,  তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও বাচ্চাদুটো একা একা আছে ৷ দেরী হলে আদিত্য আবার অকথ্য ভাষায় .......... যা আপনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না । আপনারা নিজেদের বাড়িতে ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পারছেন না কিছুতেই ৷ কিন্তু কী আশ্চর্য দেখুন আপনি চাইছেন ডোরিনাবৌদি সংসারে ঠিক মতো মানিয়ে নিক ৷ ডোরিনাবৌদি চাইছেন আপনিও ঠিক মতো পালন করুন সংসারের সমস্ত দায়িত্ব ৷ আপনারা দুজন পাশাপাশি বসে আপনাদের আঙুলে শরীর এনেছিলেন কিনা সেই কথা এখানে কাউকে বলছি না ৷ তবে আমার মনেহয় সেরকম কিছু ঘটলেও- আমার তো চোখে পড়লেই হাতে তালি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠতাম- বাহ্ ৷
শুভদা, আপনার সংসারটাকে কিন্তু ডোরিনাবৌদিই নিরাপত্তা দিয়ে চলেছেন ৷ আপনিও তো সব সময়ে খেয়াল রাখেন ডোরিনাবৌদির ৷ আপনাদের দুজনেরই সাংসারিক জীবনে কিছুটা দূরত্ব এসেছে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে । সমাজের চোখে সুখী দাম্পত্যের ধুলো দিয়ে চলেছেন বহুদিন থেকে । অথচ শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে আপনারা দুজনেই অবসাদে ভূগছেন ৷ সেই কারণেই কি আপনাদের দুজনের এই বন্ধুত্ব ? কিন্তু যেহেতু আপনারা বিবাহিত তাই আপনাদের বন্ধুত্বে পরকীয়া নামক একটা তকমা লাগিয়ে দেওয়া হতে পারে, এই ভয়ে আপনারা আপনাদের বন্ধুত্বের পরিচয়টাকে খুব যত্নে ঢাকা দিয়ে রেখেছেন ?

হয়তো .......... অবসাদের বিকারে কেউ কেউ শুঁড়িখানায় গিয়ে আকন্ঠ মদ্যপান করে মাতলামো করেন- তাতে দোষ নেই , অবসাদ কাটিয়ে ওঠার অছিলায় নাইটক্লাবে গিয়ে বেলাল্লাপনায় রাত্রি কাবার করে দেন প্রায়শই, রঙিন জলের গ্লাস হাতে পরপুরুষের বক্ষলগ্না হয়ে নাচেন কেউ কেউ- তাতে দোষ নেই ৷ কারণ এইসব ক্ষেত্রে মানসিক দেনাপাওনা নেই- যা আছে তা হল সম্ভোগ ৷ কিন্তু কোনো বিবাহিত পুরুষ অথবা মহিলা যদি পরস্ত্রী বা পরপুরুষের সঙ্গে মানসিক দেনাপাওনায় বন্ধুত্ব করতে যান- সেখানে পরকীয়ার গ্লানি ৷ কী অদ্ভুত তাই না শুভদা ? রাত্রিতে নির্ঘুম বসে অপেক্ষা করেন যতোক্ষণ না ডোরিনাবৌদির শুভরাত্রি আসে । আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে ডোরিনাবৌদিকে যখন ইনবক্স করেন - তখন ডোরিনাবৌদি বলেন- বেলা হলো অনেক- বাজারে যাও আগে- দেরী হলে সুমনা রেগে যাবে- এক হাতেই তো ওকে রান্নাটা সামলাতে হয় ! সুমনাবৌদি আপনার স্ত্রী ৷ ডোরিনাবৌদি কখনও তাকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখেন না ৷ বাজারে যাওয়ার কথা বললেই আপনি ডোরিনাবৌদিকে বলেন- বিট্টুকে তাড়াতাড়ি তৈরী করে দাও- স্কুলবাস আসার সময় হয়ে গেছে ৷ বিট্টু আপনার কেউ নয়- ডোরিনাবৌদির ছেলে ৷

কী আশ্চর্য- তাই না শুভদা ? পরকীয়া কতো হতভাগ্য বলুন তো ? ভালোবাসে- কিন্তু কাউকে বলতে পারে না ৷ পরকীয়া কৃচ্ছ্রসাধন করে অন্যের সংসারে নিরাপত্তা দিতে কিন্তু তারই কপালে কেচ্ছার গ্লানি। জানি শুভদা- কোনো কোনো পরকিয়ায় শুধুমাত্র শরীর থাকে। কিন্তু শুভদা একটি ডোবা দেখেই কি সমুদ্রের মহিমা বিচার করবো? মাটি মানেই কি শুধু মৃত্তিকা? তার মধ্যে বসুন্ধরার অস্তিত্বকে অস্বীকার করবো? রাধাকৃষ্ণের পরকীয়াকে চন্দন করে নামাবলিতে মাখিয়ে নেব ধর্মীয় লেবেল এঁটে- আর ডোরিনাবৌদির সঙ্গে আপনাকে একটু অন্য রকমের বন্ধুত্বে দেখলে গায়ে ফোস্কা পড়বে? এতে দ্বিচারিতা নেই শুভদা?


Previous Post Next Post