কোয়েলী ঘোষ





প্রিয়,
রবিঠাকুর --

" তব জন্মদিনখানি
বিস্তীর্ণ করেছ তুমি কত দিকে কত দূরে টানি !
দিয়েছ আতিথ্য তুমি তাহে

অবিরাম দাক্ষিণ্য প্রবাহে।''

আজ তোমায় চিঠি লিখতে বসেছি । আজ চারিদিকে শুধু তোমার গান । কত সুরে ,কত ভাবে ... কত শিল্পী কত কবি ... আমি হারিয়ে গেছি ... কোথায় ... ঠিক কত বছর আগে ... মনে নেই। আমাদের বাড়ীর লম্বা বারান্দা ,  যেখানে রিহার্সাল চলছে। আমার মা হারমনিয়মে গেয়ে চলেছেন গান ।

শ্যামা ,চিত্রাঙ্গদা ,সামান্য ক্ষতি ,মালিনী ঠিক কোনটার কথা বলব? তোমার উৎসব তো রোজ ,একের পর এক দৃশ্য বদলে যায় , এক এক করে রবির কিরণের ছটায় উজ্জ্বল হয়ে উঠি আমি ।

দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না '' ... তাই বলে আজ দুঃখ করতে বসিনি । ''কি পাইনি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী ... কি পাইনি '' ----

বহু দিন পর একটা সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। '''বেহালার করুন সুরে যখন বাজছিল ... ''তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম '' । কত কথা নীরবে বলা যায় ,কত কথা যে মুখে বললে বেশি বলা হয়ে যায় ।

রবিঠাকুর,তুমি স্বতন্ত্র, তোমার গানের ভাবটি ঠিক যেমন করে মোহরদি ,সুচিত্রাদি গেয়েছেন ... ঠিক তেমনি করে আর গাওয়া হয় না।সেখানেও এসেছে নতুনত্ব। কত কিছুই তো বদলে যায় । শুধু দেবতার আসন থেকে তোমায় যেন মাটিতে নামিয়ে না আনে। তোমার জীবনে কবে কোন নারী এসেছে , তার চুল চেরা বিশ্লেষণ চাই না। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কোন ভুল বার্তা যেন না পৌছয়। তুমি কবি সারা বিশ্বের । হৃদয়ে সেই আসনখানি চিরদিনের জন্য পাতা আছে ।'' ''ধায় যেন মোর সকল ভালবাসা ..........''

এই সকালের আলোর পবিত্রতা তোমায় দিলাম , দিলাম জুঁই ফুলের মালার সুগন্ধ , দিলাম অজশ্র গানের ডালি , আর তোমারই গানে প্রাণের শ্রদ্ধাঞ্জলি । জানলার ধারে বসে আমি যেন লিখতে পারি দিও সেই আশীর্বাদ ,ধুলি কণা ।

''ওই আসনতলের মাটির পরে লুটিয়ে রব ......তোমার চরন-ধুলায় ধূলায় ধূসর হবো ..........''

ইতি - 
''কোয়েলী ''


Previous Post Next Post