শর্মিষ্ঠা ঘোষ



হাইওয়েতে যে পোষাক খোলে
এ কে রামানুজন

আমি একবার হাইওয়ে ধরে
বেড়াতে যাচ্ছিলাম
মেক্সিকোতে
গাড়িটা একসময় নীল ছিল কিন্তু এখন রঙ চটা ধ্যাড়ধেড়ে
একটা ম্যাসটাং
পেছনের কাঁচটা ধূলিধূসরিত
বাতাস সত্যি সত্যিই গাইছিলো
আমার জন্য

যখন আচমকা
দুরন্ত গতির গাড়িটার
পাশ দিয়ে
হাতঘড়ি পড়া
এক মহিলার হাত
আমার সামনে
ছুঁড়ে দিল
কিছু বস্তু
তারা ক্রমান্বয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে
রাস্তায় ঠোক্কর খেয়ে পড়লো

একটা খড়ের
টুপি ,
একপাটি সাদা জুতো
যেন একদম ম্যাজিক ,
তারপর আরেকপাটি ,
একটা কুঁচিওয়ালা স্কার্ট
আর একটা পতপত করে উড়তে থাকা
হাল্কা গোলাপী রঙের সরু লম্বামতন কিছু
আভিজাত্যপূর্ণ এবং কোণায় লেস বসানো ,
এই ই সব
(এমনকি একটা হিশহিশে শব্দও পেলাম )
খাসির মাংসের এর মত লোভনীয় একটা ব্লাউজ
একইভাবে পতপতিয়ে উড়ছিলো ।

আমি যেই পা রাখলাম
গ্যাসব্রেকের ওপর
আমার গাড়িটা দুম করে এগিয়ে গেল খানিকটা
পঞ্চাশ ফুট দূরত্ব
ওদের আর আমার
মাঝখানে ,
একটা তুলনায় সাদামাটা
পুরনো , অফ হোয়াইট রঙের ব্রা
ছোট স্তনেওয়ালা কারুর
জানালা দিয়ে
উড়ে এল
গিয়ে আটকালো
এক চাষির কাঁটাতারের দেওয়ালে
এসব পেরিয়ে
হলদে সবুজ গমের গাছ
ঈগলের মত দু পা ছড়িয়ে
গেঁথে গেল
দমকা বাতাসে ।

এরপর আমি কিছু বোঝার আগেই
সাদা লেস লাগানো
উজ্জ্বল লাল রঙের প্যান্টি
এসে পড়লো
আমার গাড়ির সামনের কাঁচে
আমি হুট বলতে চমকে গেলাম
সরে গেলাম রিফ্লেক্সে
কিন্তু এরপরই
কাটিয়েও উঠলাম সেসব
ওটাকে একপাশে সরিয়ে দি্যে
সোজা হয়ে বসলাম –
সৌভাগ্যক্রমে , কেউ নেই
রাস্তায় :

উত্তেজিত , কৌতূহলী
কে এই পোষাক খুলছে
হাইওয়েতে
সম্ভবত খুব তাড়াহুড়োতে
কোন প্রেমিক একটি হাত দিয়ে
(নাকি আরো কেউ আছে সেখানে ?)
আর একটি তার স্তনের ওপর ,
কিম্বা থাইয়ে ,
আমি আবার হতাশ হয়ে
গ্যাসব্রেকের ওপর পা বাড়ালাম ,
ওদের ধুলো পড়া পেছনের জানালা
আমার থেকে পঞ্চাশ ফূট দূরে ,
আমি ওদের পেরিয়ে গেলাম
সত্তর কিলোমিটার বেগে ।
আর সেই সেকেন্ডের
ভগ্নাংশে ,
সেই একঝলক এবং তারপর
এই কি নরকের ছবি
দর্শকামুক , আমি দেখলাম
চালকের আসনে একজনকেই ,
একটি লোক ,
বছর চল্লিশ বয়স্ ।

একটা চশমা পরা মুখ
একভাবে তাকিয়ে আছে
রাস্তার দিকে
তার ম্যাস্টাং গাড়িটার নাক বরাবর
রেডিও তে ফুটবল চলছে ।

বারে বারে
আমি তাকাচ্ছিলাম
আমার পেছন দেখার আয়নায়
আমার গতি নিয়ন্ত্রণ করে

গাছগুলোকে চক্কর কাটছিলাম
কিন্তু আর কেউ ছিল না
একটি লোক ছাড়া :

সেই কি তবে এসব খুলছিলো
খালি তো টুপি নয়
আরো যেসব ব্লাউজ , জুতো
আর প্যান্টি
সেই কি তবে খুলে ফেলেছে
নিজের ভেতরে থাকা
এমনকি সেই মেয়েলি স্বত্তাকেও ।

নাকি এটা আদতে আমিই
খোলস ছাড়ছি , খসিয়ে ফেলছি
অব্যবহৃত লুপ্তপ্রায় অঙ্গসমুহ ,
পুরনো মূলধন ,
চিরকাল ছুটে চলা
একটা একদম ঠিকঠাক কিছুর দিকে
যুথবদ্ধভাবে
উলঙ্গ একটা শূন্যতার সাথে
এমন একটা দুনিয়ায়
যেখানে স্থান সংকুলান হয় না ?


( আত্তিপাত কৃষ্ণস্বামী রামানুজন এর জন্ম মাইসোরে ১৯২৯ সালে । মৃত্যু ১৯৯৩ এ । তিনি ইংরেজী এবং কন্নড় ভাষায় লিখতেন । এটি ইংরেজীতে লেখা মূল কবিতা ‘Highway Stripper’ এর অনুবাদ । )  



     
Previous Post Next Post