প্লট
“একটা গল্পের প্লট বল দেখি।”
“গল্পের প্লট! কীরকম!”
“বল না, যেমন ইচ্ছে”
“আহা তাও কিছু একটা বলবে তো, ধরো প্রেমের গল্প, না কি ভূতের...”
“বলছি তো যা হোক কিছু।”
“বেশ, ধরো একটা মেয়ে ছিল আর একটা ছেলে ছিল। দুজনেই খুব কি বলে না... ফ্লারট করতো।”
“প্লিজ, বস্তা পচা বিষয়। অন্য কিছু বল।”
“নাও যেই শুরু করলাম অমনি অন্য কিছু।”
“হ্যাঁ, প্রেমের বাইরে কিছু বুঝিস না। বাংলা সিরিয়াল দেখিস না কি রোজ।”
“দেখি তো দেখি। যাও। প্লটও চাইবে আবার কথাও শোনাবে।”
“আরে রাগ করিস কেন। এমনি বলেছি। নে আর একটা বল।”
“বেশ এটা প্রেমের গল্প নয়। ধরো একটা ছেলে থাকে। খুব একা। ছেলেটা বিবাহিত। কিন্তু অন্য একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়।”
“উফফ আবার তোর বাংলা সিরিয়াল শুরু করেছিস। তোর দেখছি বয়সের সাথে সাথে... যাকগে। শোন, আমি একটা বলি।”
“হ্যাঁ, বলো।”
“ধর তোর কথামতোই একটা ছেলে আর একটা মেয়ে থাকে। মানে একসাথে থাকে না, গল্পে থাকে। বুঝতে পেরেছিস তো!”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ বলে যাও তুমি।”
“ধর ছেলেটা এই চব্বিশ- পঁচিশ, মেয়েটা ধর বাইশ- তেইশ।”
“আচ্ছা!!! চেনাচেনা মনে হচ্ছে যেন!”
“সে মনে হতেই পারে। তারপর ধর ছেলেটা কলেজ পাশ করে একটা সরকারী চাকরি পেয়ে গেছে, ভালোই চাকরি। আর মেয়েটা ধর এই কলেজের ফাইনাল ইয়ার।”
“আচ্ছা! বেশ তারপর।”
“এবার ধর এরা দুজন খুব ভালো বন্ধু। কথা না বলে একদিনও থাকতে পারে না। কিন্তু তার পরে কী হবে।”
“সে তো তুমি বলবে! তোমার প্লট।”
“ধর মেয়েটা ছেলেটাকে মনে মনে বেশ পছন্দই করে। এতো ভালো ছেলে তো চট করে পাওয়া যায় না!”
“ইইস... পছন্দ করে না হাতি। কাঁচকলা করে।”
“আরে আমার গল্পের চরিত্র কাকে পছন্দ করে না করে তুই বলে দিবি!”
“আচ্ছা বেশ! মেয়েটা পছন্দ করে! আর ছেলেটা?”
“ছেলেটা বুঝলি বেজায় মুখচোরা ধরণের। ছেলেটাও পছন্দ করে রীতিমতো, কিন্তু বলে উঠতে পারেনা।”
“কেন বলে উঠতে পারে না কেন? কি অসুবিধে?”
“আরে একে তো মেয়েটা বেজায় বড়লোকের বাড়ির মেয়ে। মানে বাংলা সিনেমায় যেরকম দেখায় আর কি, গরীব ছেলে, আমীর মেয়ে... তার উপর মেয়েটা লেখাপড়ায় ও খুব ভালো। কলেজ শেষ করেই ক’দিন বাদে বিদেশে চলে যাবে হাইয়ার স্টাডির জন্য।”
“কিন্তু গল্পে যে একটা টুইস্ট আছে বস। মেয়েটার বাড়ি যে ভীষণ কনজারভেটিভ! তাঁরা তো মেয়েকে একা বিদেশে ছাড়বে না। বলবে বিদেশ যেতে হলে বিয়ে করে বর যদি সঙ্গে যায় সেখানে চাকরি বাকরি করে, তবেই যেতে পারো।”
“ওঃ তবে তো চিন্তার ব্যাপার!”
“তবেই বলো, সেই মেয়ের কি বিদেশে পড়তে যাওয়া হবে!”
“হতেই পারে!!
“আচ্ছা কীভাবে?!!”
“যদি মেয়েটা সফটওয়্যারে চাকরি করা কোন ছেলেকে বিয়ে করে। মেয়েটার বর অনসাইট নিয়ে মেয়েটার সাথে চলে যাবে।”
“ওঃ!!!”
“কী?”
“না কিছু না, অনেক রাত্তির হল, আমি উঠি!”
“আরে হঠাৎ এভাবে! কী হল! বলবি তো!”
“বললাম তো কিছু হয়নি। অনেক রাত হয়েছে ঘুম পাচ্ছে। গুডনাইট।”
কম্পিউটারটা অফ করে দিলেন অঞ্জলি। ঘড়িতে রাত দুটো। শীতকালে হাঁপানির কষ্টটা বাড়ে, রাতে ঘুমোতে পারেননা। সোমনাথদাও ইনসমনিয়াক। সময় কেটে যায় কথা বলে। অথচ, এখনও একইরকম থেকে গেল মানুষটা, পঁচিশ বছর বয়সে সরকারী চাকরি ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবতে পারেনি, সংসারের অসুবিধার কথা বলেছিল। আজ পঞ্চাশ বছর পরে পঁচাত্তরে পৌঁছেও ভাবতে পারেনা, এমনকি নেহাত গল্পের খাতিরেও। আশ্চর্য!!!