একাত্তর দিন পর তিনি দাড়ি কাটলেন । দেখা গেলো, তার মেছতা উঠছে, বিষয়টা তাকে ভাবিয়ে তুললো । প্রথমে মিলমোহাব্বাত সেলুন থেকে ফেসিয়াল করালেন, তারপর গেলেন ডাক্তারের কাছে । সেখানেও বিপত্তি, ডাক্তার সাহেব তার বর্ণনার অনুমাত্র শোনার পর বললেন, 'আমি তো একজন অর্থপেডিক সার্জন! এই সমস্যার সমাধান আমার কাছে নেই!! আপনি একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান ।' আমাদের তিনি অর্থাৎ দিলদার গুলগুল্লা ভগ্ন মনোরথে, একরাশ লজ্জা নিয়ে ফিরলেন । তার বয়স মাত্র উনচল্লিশ, এখনও সাদি করেননি । মেচতার দাগ দেখলে কেউ তো মেয়ে বিয়ে দেবে না!! এইসময় দিলদার সাহেব ডাঃ মনচেরি পরাভীনের সন্ধান পেলেন ।
মনচেরী চর্ম এবং যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ । দিলদার সাহেব একটু গুলগুল্লা গড়ানো ধাক্কা খেলেন । তার তো যৌনরোগ নেই! তিনি সরাসরি বিবাহে বিশ্বাসী, এত বয়স হলো, তবুও, কোন নারীর সংসর্গে তিনি যাননি । তবে কি চর্মরোগ কোনো যৌনরোগের সাথে সম্পর্কিত! এইসব কু-ভাবনা মাথায় রেখে অ্যাপয়েনমেন্ট দিয়েই ফেললেন । দুরু দুরু বুকে ডাক্তার সাহেবার সামনে এসে বসলেন । 'মেচতা একটা সাধারণ রোগ, হজমশক্তির দূর্বলতা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য এর মূল কারণ ।' দিলদার সাহেব বলেই ফেললেন, কোষ্ঠকাঠিন্য নয়; মহা কোষ্ঠকাঠিন্য । তার পাইলস আছে । এহেন তথ্যের পরে মনচেরী পরাভীন তাকে একজন মেডিসিনের ডাক্তারের কার্ড দিয়ে বললেন, 'একে দেখান, পাইলসের অপারেশন করিয়ে ফেলেন, বাজে রোগ ।'
ভারাক্রান্ত মন, পাবলিক বাসে গাদাগাদি করে ফিরছেন আদি ও অকৃতিম বিউটি মেসে । হঠাৎ একটু বসার জায়গা মিললো, তারপর বাসের জানালা দিয়ে উড়ে এলো একটা লিফলেট । "এখানে সম্মানিত জ্বিন দ্বারা চিকিৎসা করানো হয় । অর্শ, ভগন্দর, একশিরা, শ্বেতপ্রদর, মেহ.... যৌনমিলনে অসুখী? একসপ্তাহের মধ্যে সমাধান, বিফলে মূল্য ফেরত ।" দিলদার গুলগুল্লার বুকে জোশ এলো । সৃষ্টিকর্তা মিলিয়ে দিয়েছেন এই বার্তা, এবার মেচতার খেল খতম । জ্বিনচিকিৎসার ওপর দাওয়াই নাই ।
মোঃ ফিরুজুলহাস নদভী বাহারুল জ্বিনসম্রাট । আহা কি নূরানী ঝলক! দিলদার গুলগুল্লা পুরাই ফিদা । কিন্তু ,হুজুরের কাছে সহজে পৌঁছুনো গেলো না । ভীড়, তার ওপর সিরিয়াল লাইন । দিলদারের সূযোগ এলো বিকেলে । জ্বিনসম্রাটের কাছে বসেই প্রথমে সে তার পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে রইলো । প্রসন্ন ফিরজুলহাস বাহারুল সাহেব তার বাহারী দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন, সমস্যা বল বেটা । একখাবলা মেচতার কাহিনী বলতে বলতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো দিলদার, :আমারে বাঁচান হুজুর... সম্রাটের তাবেদার সবিস্তার লিখে নিলো । সেই কাগজ হুজুর পাঠালেন হুজরার মধ্যে । কিছুক্ষণ পর এক কৌটা সুগন্ধি মলম এলো । :নে, কোহকাফ নগরীর বনাজি থেকে তৈরি । আমি কোন টাকা নেবো না কিন্তু জ্বিনসম্রাটের সম্মানি দুইহাজার । প্রতিরাতে সারামুখে গাঢ় প্রলেপ দেয়ার মত করে মাখাবি । মাখানোর পূর্বে অজু করে নফল নামাজ পড়বি দুইরাকাত, তারপর দু'চামচ জমজমের পানি কিবলামুখি হয়ে খাবি ।
মেসের অখাদ্য নয়, আজ খুশিতে কাচ্চি বিরিয়ানী খেয়ে নিজের জোড়াতালি দেয়া কামরায় ঢুকলো গুলগুল্লা । এই রুমের ভাড়া দুই হাজার টাকা! শেয়ারে থাকলে পাচশ কিন্তু দিলদার গুলগুল্লার দিল আসমানের চাইতেও বড় । সে যৌথ কামরায় থাকবে না । আজ তার মন ফুরফুরে, স্নান সেরে অনেক আগেই রুমের ঘুনে খাওয়া দরজা বন্ধ করেছে সে । চোখে দিয়েছে কুদরতি সুর্মা, ঘরে আতর নাই, মশা মারার স্প্রে শরীরে মেরে নামাজ আদায় করেছে । তারপর? সুগন্ধি মলমের গাঢ় প্রলেপ দিয়ে, বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে । আহা কি সৌরভ! মুখের ত্বকে ঝিমঝিমে ভাব, একটু হাল্কা চুলবুল করছে নাকি? করুক, কুদরতি জিনিস । ঘুমটা না জানিয়েই এলো ।
সকালে মেসের বাথরুম মানেই নরক গুলজার অবস্থা । দিলদার গুলগুল্লা ফজরের আজানের আগেই সেখানে অবস্থান নিয়েছে সাবান শ্যাম্পু সহ । আজ যুবরাজ হওয়ার দিন । অল্পক্ষণ নাকি অনেকক্ষণ? যখন সে বেরুলো, বাথরুম দফতরের সামনে লম্বা লাইন! হট্টগোল শুনে মেসমালিক ও হাজির । প্রথমে দিলদার কে কেউ চিনতে পারেনি, চিনলো মেসমালিক । অবাক বিস্ময়ে সে দিলদারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বলে উঠলো, 'ভাইজানরে দেহি জলপরীর মত লাগতাছে!' কেউ একজন দাড়ি কামানোর আয়না বাড়িয়ে দিলো দিলদার কে । ঘুরঘুট্টি বাথরুমের আয়নার পারা বহুকাল আগে ঝরে গেছে বলে নিজেকে দেখতে পারেনি সে । এখন এই ঝকঝকে হ্যাণ্ডমিররের দিকে তাকিয়ে চোখ কপালে উঠলো দিলদার গুলগুল্লার । একরাতের মধ্যে, মাত্র একরাতের মধ্যে তার সমস্ত মুখ ভরে গেছে কালো কালো দাগে! মাঝে মাঝে শ্বেতি রোগীর মত সাদা ফুটকি!! মূর্ছা যাওয়ার আগে তার লুঙ্গির গিঠ ঢিলা হয়ে গেলো ।
Tags:
গল্প