রিয়া চক্রবর্তী

বসন্তের তারাখসা 
এমন একটা সময়ে তুমি এসেছিলে
যখন একটা কালো অন্ধকারের মেঘ
থামিয়ে দিয়েছিলো আমার ট্রেন।
মৃত্যুকে পিছিয়ে দিয়ে উঠে এসেছিলাম,
বিশল্যকরণীর মতো তোমার স্পর্শে।

তোমার জন্যই বসন্ত এসেছিলো
শুকিয়ে যাওয়া হলুদ ঘাসে।
তোমার জন্যই শিমূল, পলাশে
খেলেছিলো হাসির ঝিলিক।
রাতজাগা ক্লান্ত পাখিটা গেয়ে উঠেছিল
সারি, ভাটিয়ালী সুরে জীবনের গান।
ফাগুনের ফাগ লেগেছিলো কৃষ্ণচূড়ার
কোলে, বাতাসে মাখানো ছিলো পরাগ
মাখা স্নেহের প্রাণেরস্পন্দন।

পৃথিবীর মাতাল গন্ধে গুমোট মেঘেও
খেলেছিলো পালতোলা পানসি।
তোমার চোখের থেকে স্বপ্ন আবীর
মেখেছিলো আমার ধুসর মন।
সাতটি রংয়ের রামধনু রং সেজে
উঠেছিল আমার চোখের আকাশে।

বারবার শত শব্দের কাঁটায়
বিদ্ধ হয়েও, ও কিছু নয় বলে
চুপ থেকেছি, ভেঙেছি ভীষণ ভয়ের ভঙ্গিল
ভাঙা ভাঁজ। অথচ তোমাকেই
দিয়েছিলাম এক সাগর ভালোবাসা
কবোষ্ণ বুকের তরলের মতো।
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন  জীবনের টুকরো গুলো
গোছাতে গোছাতে ভীষণ ক্লান্ত।

একদিন নিঝুম বাসন্তি রাতের ধূমকেতুর মতো
নয়তো রাতজাগা কোনো রাতের তারাখসার মতো,
কিংবা দাবানলে ঝলসে যাওয়া কোনো
শুকনো পাতার মতোই ঝরে যাবো।
কোনো ডাকেই আর ফেরাতে পারবে না।
আমার মৃত্যুর চূড়ান্ত আনন্দে, নয়তো
পৃথিবীর উতলা আবেগে জীবনের নৌকা
ভাসাবে অচেনা কোনো নতুন ঠিকানায়।

জানি  শুধু পড়ে থাকবে অন্য গ্রহের লাল সমুদ্রে
আমার পুরনো পৃথিবী ক্ষত বিক্ষত, রক্তাক্ত।
ইতিহাসের পটে আঁকা বিবর্ণ জলছবি মতোই।


Previous Post Next Post