পলাশ কুমার পাল



                                                     
মনময়ূরী,

       দখিনা সমীরণে তোর কাঁচ বসানো ওড়না আজও ছুঁয়ে যায়। নিত্যদিনের সিঁড়ি বেয়ে দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন কেটে যাওয়ার মধ্যেও নতুনত্ব তুই! ঋতুচক্রের মতো তুই কখনো ফাল্গুনী, কখনো চৈতালি, কখনো বৈশাখী চাঁদ বা কখনো কোজাগরী... তোর চারপাশে আমার স্বপ্নগুলো সব শৈশব, নক্ষত্রের মতো দীপ্ দীপ্ করে এখন! দেয়ালহীন বাড়ির কাঠামোর বামের সিঁড়িটায় উঠলে বাঁশের পাতার দোদুল্যতার শৈল্পিক ভঙ্গিমায় তুই মিঠে রঙে হেসে উঠিস...  গ্রাম্যতার জানলায় বসে কুহু কুহু বোলে মরমিয়ার দরিয়ায় ছলাত্ছল্ করে ওঠা ঢেউ তুই আজও!

      তুই বলবি এ বসন্তের উতলতা, গল্পের শেষে সারমর্মে কিছু অজুহাতপূর্ণ শব্দের দৃশ্যাঙ্কণ। কিন্তু বিশ্বাস কর- এ কেবল বসন্ত নয়, সাগরের কিনারে নিত্যদিনের ঢেউ! বালির মাঝে আছড়ায়... বালি ভাবে এই তো একবুক সমুদ্র পেলাম! তারপর নেই। আবারও...

   অনেকটা চিরবসন্তের মতো চার অক্ষরের শব্দটা আজও যৌবনা। জীর্ণতা কখনো পাতা ঝরায়; আবার কখনো নতুন আশার কিশলয় ডালে ডালে পরিচয় দেয় বা না-বলতে পারা শিমূল-পলাশের বুকচেরা শ্বাস আবীরগুঁড়োর মতো মাতাল বাতাসে বসন্তোত্সব ঘোষণা করে। ঘোষকের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে শান্তিনিকেতনের রতনপল্লীতে এক রিক্সাওয়ালার বাঁশির আওয়াজ। যে আওয়াজের অনুসন্ধানে রাত ভেদ করে ছুটেছিলাম একদিন... নিত্যদিনের কর্মের ক্লান্তি তার সবুজ মনটাকে ক্লান্ত করতে পারেনি। নিত্যদিন সে একইভাবে সেই বাঁশি বাজাত। আজও হয়তো বাজায়! সেই বাঁশির সুরে যেন কৃষ্ণের ঠোঁট ছুঁয়েছিল! তোকেও শোনাবার ইচ্ছা ছিল। বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি।

      আসলে বাস্তব আর মনসিজ -দুইই তো ভিন্ন অর্থের দুটি বর্ণসমষ্টি। বাস্তব যদি ঋতু হয়, মনসিজ বসন্ত। আর এই মনসিজে অবিরত তুই সদ্যোজাত কিশলয়! সদাই হেসে উঠিস... সে হাসির প্রত্যুত্তর কি আবীর? জানি না। তবু ছুঁড়ে দিলাম আমার সাতরঙ। সেই রঙে পেখমে তুই নেচে উঠিস বুকের শ্রাবণ-বসন্তে। আর ইচ্ছাও রাখলাম সেই রিক্সাওয়ালার বাঁশি শোনাবার; যদি কোনোদিন অন্ধকারে হাতে হাত রাখার সাহস করিস একবার!

ইতি
অ-বন্ধু


# ক্রমিক সংখ্যা ২৩

Previous Post Next Post