ডঃ কাকলি ভট্টাচার্য্য

চশমাটা নাকের ডগা থেকে আবার তুলে খাতা দেখায় মন দিলেন... বরদাসুন্দরি হাই ইস্কুলের ইতিহাসের দিদিমনি মনিকা ।  উচ্চমাধ্যমিকের খাতার পাহাড় নিয়ে বসে মনিকা একবার জানলার দিকে তাকালো । এই ছুটির দিন আসলেই বিরক্তি আসে মনিকার । অন্যদিন বেশ মেয়েগুলোর উপর শাসন ফলানো যায়।  শুধু ছুটির দিন এলেই ভালো লাগে না, ভালো লাগে না, আর ভালো লাগে না ।  

বিশাল বাড়িতে একা একা ভালো লাগে কারও ? সেই যে কলেজে পড়বার সময় প্রানহরন শিকদার নামে কোন একটা গ্রাম থেকে পড়তে আসা সদ্দ্য যুবকের সলজ্জ চাহনি এখনও যে মনিকা রানীর মনে জ্বলজ্বল... তারপর একদিন কলেজের সবাই মিলে  বেড়াতে গিয়ে বৃষ্টি এল ... আর কবিতা এল ... যখন হটাত করে বৃষ্টি নামে - আর সাথে মাত্র তার ছাতাটি ...  তখন আমার গা ঘেসে যায় / হাতের পরে হাত ছুঁয়ে যায় / চুলের মাদক গন্ধে ভরা / সংযত মন উদাস করা তার কি তখন সাজায় ?"

কিন্তু না...।  একদিন সেই সরল মুখের ছেলেটি তার অপাপবিধধ চোখ নিয়ে ক্লাসে বন্ধুদের বলল , আমার স্ত্রীর খুব অসুখ বাড়ি যেতে হবে। বিস্ফোরিত অনেক গুলো চোখকে সামনে রেখে বলল , সেই কবে আমাদের গ্রামদেশে বাড়ির নিয়মে ছোটবেলায় বিয়ে হয়ছিল মনেও নেই । নিজে ইচ্ছে করে জোড় করে পড়াশুনা করেছি।  তবে বাড়ি থেকে খবর এসেছে এবার কিছুদিনের জন্য বাড়ি যেতে হবে।  তোমরা নোট গুলো সব পরে আমাকে দিও।  আমি একেবারে  ফাইনাল  দিতে আসব ।

যাবার আগে মনিকার দিকে তাকিয়ে বলল একবার আসব কিন্তু।

তারপর অনেকদিন ... ।  বরদাসুন্দরি হাই ইস্কুলের দিদিমনি আর দেখতে পাননি অমন সরল, মালিন্যহীন কোন পুরুষের মুখ বা দেখতে চাননি বলা চলে।  কিন্তু আজ কি হল! দুপুর পেরিয়ে যাওয়া বাইরে কোকিল ডেকে উঠলো যখন, কৃষ্ণচূড়ার শরীর যখন রক্তবর্ণ ,  তখন কি হল মনিকা দিদিমনির ... কবিতা এলো কেন শরীর আর মন জুড়ে...

" আমার যত চাওয়ার পাওয়া ... /  যা পেয়েছি, আর কি আমি চাইতে পারি?/ টুপ টুপ টুপ বৃষ্টি বৃষ্টি ...  কষ্ট মাখা ব্যাথার কাছে ? /  তাই তো আমি বলি ডেকে ... ভালো বাসা গো ভালোবাসা ...  তোমায় আমার নাম না জানা / বুনো ফুলের বুক ভরা মন - কেমন করা স্মৃতি- গন্ধী সেলাম "

আবার খাতায় চোখ রাখলেন মনিকা দিদিমনি ।  মন রাখলেন কিনা জানা নেই ...।

পরিচিতি


Previous Post Next Post