সোনালি



খাজাঞ্চি 


যথেষ্ট ব্যথার দেনমোহর দিয়ে তোমার ঋণ চুকিয়েছি কি?
কত অশ্রুর মুক্তো দানা গুনে গুনে বটুয়াতে ভরতে হয় খাজানা দিতে হে মহাকাল?
তবুও পরোয়া নেই।  তুমি বল। বলতে থাকো। হাঁকো নীলামের দস্তুর।
আমি সব কর্জ, পাই পাই চুকিয়ে দেব।
আনা,দু আনা, অর্থ, অনর্থের মূলে। শুধে দেবো ধার।
পাতো হাত। অঞ্জলিতে পান্না চুনি রক্তের ফোঁটায়।  ছোট বড় ক্ষুদ্র জড়োয়ার খণ্ড ফেলতে থাকবো -----এক দুই চার।
একটুকু ও বাকি থাকবে না দেনা। সমস্ত মেটাবো।
এসো হাত পাততে শেখো।


সংগী


যদি চলে যাই পথে
শ্যাম চলে সাথে সাথে চরণে চরণ ঠেকাইয়ে
আমার সাথে সাথে চলে গো
ছোট বেলায় বড়রা তার ভরসায় রেখে কাজে গেছেন রোজ
শিশু কৈশোর কাল পেরিয়ে প্রেম অজান্তে হাত ধরলে এসে
প্রেম বুঝি? হবে তাই
আমি শুধু পথে পথে দেখি পায়ে পায়ে জড়িয়ে রয়েছে
শ্যামলা নূপুর পড়া আরামের দাগ
সংসার ঢেউয়ের তালে তালেবর
স্কুবা প্যারা গ্লাইডার ডিপ সি ডাইভিং
দড়ি হাতে বসে আছে সাথে সাথে চলা
বন্ধুরা আড্ডায় কেউ নাস্তিক কেউ বা অস্তিতে
আমি চুপটি  হয়ে থাকি
জানিনা তো আমি কোন দিকে
শুধু রাস্তা পার হতে টের পাই
পায়ে পায়ে বাজে ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা
চরণে চরণ ছুঁয়ে ছুঁই।


মেসায়া


কত শিশুখুলি ফেটে ঘিলু ছিটকে গেলে
তবে তুমি আসো?
কত কংস হিরণ্যকশিপু কেটে পিশে চিরে গেল
বন্দী বাবা মার সামনে কোমল আত্মজ
এখনো এলে না?
কারো কান্না পৌঁছয়নি তোমার আসনে
চিরে দেওয়া অপাপ কিশোরী
অসম্মানে দীর্ণ বধু মাতা
হে মানুষ হে জাগ্রত মন
আরো কত ঝিমোবে গুহায়
কত বলি চায় যুগ
কিসে বল ভর্তি হয় থালি
শব সাধনের অর্ঘ্য নানাবিধ নীতিজ্ঞ হেয়ালি
আহা ষাট কুম্ভীরাশ্রু ঘরে গিয়ে লম্বা সিগারেট
কাল সভা আজ রাতে দুটো মেয়ে ওই রুমে ভেট
খুব লেখালিখি হবে উত্তেজিত মস্ত আলোচনা
ছুতোর বা গয়লার ছেলে একটাও এখনো এলো না
ডাক কবি হাহাকারে চিরে ফেল ভাংগা কণ্ঠ নালি
যদি জাগে অভ্যুত্থান খেটে খাওয়া মানুষের ঘর থেকে
দেওয়াল ফাটিয়ে আসে নরসিংহ যিশু বনমালী।


পাখি


যে পাখি আমার গাছের ছায়ায়
শিষ দিয়ে সুর ছড়িয়েছে
কাল এসে বলে গেলো
সে আমার কেউ ছিলো না
আমি ঘাড় নেড়ে বললাম
বেশ তো।
নীল আকাশ হলুদ রোদ মেঘের ছায়ানট
চারপাশে ঝুরঝুর ঝিরঝির করে
ঝরে পড়তে থাকলো।
রাশি রাশি ঝরা পাতার বৃষ্টি
শিরশিরে হাওয়া হয়ে
জড়িয়ে গেলো গায়ে।
ছোট্ট পাখি আমার গয়নার বাক্সে
আটকে পড়ে বলল
" আমি নেই কিন্তু, নেই কিন্তু, নেই
আমি কক্ষনো ছিলাম না------"
তখন সব জায়গায় ঝিকমিক
চিকমিক কুচি কুচি হাসির হীরে
গড়িয়ে পড়তে পড়তে বলল
নেই কিন্তু নেই কিন্তু নেই কিন্তু
কলমের বাক্সে ময়ুরকন্ঠি রেশমি আঁচলে
কাজলের টানে, গুঁড়ো হয়ে থাকা চুলের গোছায়
চন্দনি গন্ধ ছড়িয়ে
হাসিরা ফুরফুর করে মাথা  নাড়তে নাড়তে
বলল
বটেই তো, ঠিক কথাই তো,নেই কিন্তু
উঁহু কোত্থাও নেই। নেই কিন্তু।


Previous Post Next Post