মুখবন্ধ: (ছেলেবেলায় শোনা মিথ) দুই দেবদূত পৃথিবীতে এসেছিলেন। তারা ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, মানবজাতির মতন পৃথিবী এবং নারীর মোহে পা দেবেন না। নিস্কলুস হয়ে স্বর্গে ফিরবেন। যদি কলুষিত হন, তবে ঈশ্বরের দেয়া শাস্তি মাথা পেতে নেবেন। মুচকি হেসে ঈশ্বর তাদের তিনরাত্রি, চারদিন অমর্ত্যলোক পরিক্রমণের সূযোগ দিয়েছিলেন। অতঃপর…….
ঈশ্বর ও দেবদূত
(কথোপকথন)
ঈশ্বর: আমারই সৃষ্টি, তবু আমি তার উপাসনা করি , দানিয়ুস…
দানিয়ুস (প্রথম দেবদূত): সে কি প্রভু! সে কোন সৃজন?
ঈশ্বর: নারী, বহুবর্ণ - রহস্যের দ্বীপ, পাহাড় ও নদীর মত অচেনা কোরকে এক হৈম পদ্মমধু, মেঘমন্দ্র - নৃত্যপটু, নিমতেতো ধার!
উরসান (দ্বিতীয় দেবদূত): এমন কি নষ্টরূহ নারীর সিনায় গতিমান! আমার নুরের জেল্লা সুলক্ষণ বাণমন্ত্র, নারীর সকল ছলা নিমিষে ভস্ম হবে, কলামন্ত্র ভুলে, নারী আমারই দাসী ।
ঈশ্বর: নারীসঙ্গ পেয়েছো কখনও?
উরসান: না প্রভু, তথাপি প্রশ্ন মনে, স্রষ্টা হায় আপনার কেন এত ভয় ঐ নগণ্য সৃষ্টিকে ?
ঈশ্বর: দেখো তবে নিজ চোখে, উপলব্ধি কর, মাটির মানবরূপে প্রবিষ্ট হও মদিরা ধরায় । জেনে রাখ, তিন রাত্রি চার দিন, নারীর নষ্টমন্ত্রে হয়ো না আপ্লুত, অন্যথায় শাস্তি কঠোর...
দেবদূতদ্বয়: যথা আজ্ঞা প্রভু, স্বর্গনূরের তেজ চিরকাল জয়ী ।
(প্রথম দিবস, নীলনদের মেম্ফিসে)
দানিয়ুস: উর্বরা নগরী ।
উরসান: স্বর্গের চেয়ে অতি মনোরম নয় ।
দানিয়ুস: অফুরান নীলনদ, পিতা রামেনসিসের ভূমি...
উরসান: মূর্খ দেবদূত, মাটির মানবে তুই কেন নতজানু! আমাদের সৃষ্টিরূপ ঈশ্বর আলোয়!
দানিয়ুস: ঈশ্বর স্বর্গমোহী, মাটিকে লেহণ করে মত্ত স্বমেহণে ।
উরসান: পাপের অতল ডাকে ডুব দিবি? একা চল, আমার মোহন পূন্য ঈশ্বরের দান, তাঁর বুলি মুখে নিয়ে শিরে আমি জড়াবই নূরের মুকুট ।
(প্রথম রাত, প্রাচীন কায়রো )
উরসান; বাতাসে মদিরা সুবাস...
দানিয়ুস: তবে কি ধরণীদোলা তোমার বুকেও!
উরসান: ঈশ্বর মার্জনা কর, এই ভূস্বর্গরূপ তোমারি দূর্লভ সৃষ্টি, তুমি তার পিতা
দানিয়ুস: রাতের নগরী যেন নারীর বিভঙ্গ, সুরমা জড়ানো চোখ, ঠোঁটের লালিমা!
উরসান: পাতক হয়ো না সখা, পিতামন্ত্র জপো, নারীর ঘাগরা ছোঁয় সন্ধি পায়েল ।
দানিয়ুস: বৃথা এই রাত, হাঁটি নগরীর পথে, মিশে যাই চলো ঐ পানশালা রঙে, নারীর পেলব বুকে ছুঁড়ে দেই জরির রুমাল, জিপসী নাচের তালে পান করি দ্রাক্ষালহরী ।
উরসান: ঈশ্বর করুণা করো, এ কেমন ঘোর! নারীর সুডৌল বাহু - সোনার কংকণ, চোখের মদিরা জলে কুলহীন নেশা, অমর বিভঙ্গে আমি ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাই ।
(পূন্য ও পাপ)
ঈশ্বর: হায় মূঢ়, বলিনি গন্ধমরসে সিক্ত তার দেহ! লীলায় জৈতুন ঘ্রাণ, স্পর্শ তার আঙুরের লতা! এবার প্রস্তুত হও, কঠোর শাস্তি বর্তমান ।
উরসান: কাটেনি ঘোরের ফাঁদ, একরাত্রিকাল! পিতা, নিঃশ্বাসে এখনও পাই জায়ফল 'বাস । সে নারীর অঙ্গশোভা বর্ণাঢ্য নগর, তথাপি পাতক আমি হীন পাপাচারী, ধর্মের প্রজ্ঞা নিয়ে অধর্মের কীট । শিরোধার্য দণ্ডবাক্য, পিতার শপথ ।
দানিয়ুস: পাপ - পূন্য কারে বলে বোঝাও ঈশ্বর! তোমার শেখানো জ্ঞানে যাচি পূণ্য –পাপ, অন্তরের হাওয়াঘরে নিত্য যে রূহ, তার চক্ষে দেখি আমি,, হৃদয়ের ভাষা দিয়ে পাপ পূন্য করি গো বিচার । আমিই অন্তর্যামী; আমাতেই ঈশ্বর ও শয়তান ।
Tags:
দীর্ঘ কবিতা