যে ভারতবর্ষে আমি বাস করি; সেখানকার কোনও নাগরিককে যদি প্রশ্ন করা হয়, বলও তো “গণতন্ত্র কাহারে কয় ?” মানুষগুলো হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে। যদি প্রশ্ন করা হয়, “ভারতবর্ষ কাহারে কয় ?”হাঁ মুখ বড় হবে। মার্কসবাদ ! সমাজতন্ত্র ! সাম্রাজ্যবাদ ! পুঁজিবাদ ! সাহস হয় না। তবে তারা সিপিএম বোঝে। তৃণমূল বোঝে। পতাকা চেনে ।
মেঘ চেনে ?? চেনে না । তবে মেঘদের গল্প জানে। রাষ্ট্র যখন বলে, “ ওই দ্যাখো । আকাশের পশ্চিম কোনে একটা কালো মেঘ । সেই মেঘে বারুদের গন্ধ ! মানুষগুলো আকাশের দিকে তাকায় । মেঘ খোঁজে । কোনও মেঘ দেখতে পায় না । তারপর । তারপরে প্রতিবেশী “মুবারকের’ বাড়ির দিকে তাকিয়ে দ্যাখে । মনে মনে ভাবে মেঘটা নিশ্চয়ই “মুবারক” তার বাড়ির আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে ।
“মুবারক” আবার তার প্রতিবেশী “ইসমাইলের” বাড়ির দাওয়াতে রাতের বেলা গিয়ে বসে। দুজনই বিড়ি টানতে টানতে ফিসফিস করে একে ওপরকে জিগায়,“ মেঘ দ্যাখছোস না কি ? মেঘ !! ইসমাইল উদাস ভাবে রাতের কালো আকাশ দেখে। তারা দেখে। তারপরে মুখের বিড়িতে শেষ টান দিয়ে, চরম ঘৃণায় তেতো মুখে বিড়ির টুকরোটা দূরে ছুঁড়ে দেয় । মেঘ দেখার চাইতে তার এক থালা ভাত দেখতে পাওয়াটা তার কাছে অনেক প্রয়োজনীয় । ভাতের অভাব তার মনে মেঘের জন্ম দেয় । এই ভাবে অলীক মেঘ এক বাড়ি থেকে ওপর বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে ।
আমি যে ভারতবর্ষে বাস করি সেখানকার নাগরিকরা জানে না কাকে বলে ‘সেন-সেক্স’, ? কাকে বলে ‘ফ্রি সেক্স’ ? তাদের কয়েকজনকে যদি চোখে কাপড় বেঁধে ‘লখণ্ডওয়ালা-তে’ নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে চোখের কাপড়টা খুলে দিয়ে প্রশ্ন করা হয়, “ বলও তো এটা কোথায় ?” তারা অনেকক্ষণ দেখার পরে নিশ্চিত বলবে, “ এটা সেই না দেখা অথচ বহুবার শোনা দেশ যার নাম “আমেরিকা” !”
আমি এ রকম এক ভারতবর্ষের নাগরিক । আমার দেশের নাগরিক সমাজ ! সেই সমাজে জন্ম আছে । আছে মৃত্যু । শিশু জন্ম গ্রহণ করলে সেই বাড়িতে চোলাই উৎসব হয়। আবার চোলাই খেয়ে মৃত মানুষটির শবদেহ দাহ করার সময় তারাই আকণ্ঠ চোলাই খায় !
উত্তরপ্রদেশ-এর কোনও অজ গ্রামে গুজবের জেরে কোনও মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করার খবর আমার সমাজে প্রবেশ করে খুব গোপনে । আমার প্রতিবেশীরা যখন নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যায়, অজু করে তখন তাদের পাশে গুঞ্জরিত হয় অ-সহিষ্ণু কিছু শব্দ । তারা আতঙ্কিত হয় । তারপরে ভুলে যায় । ভুলে যায়, কারণ তাদের এই দেশে থাকতে হয় । থাকতে হবে ।
এরা জানে না ‘শিনা-ইন্দ্রাণী’ । এরা জানে না ‘নিঠারী’। জানেনা নির্ভয়া । কামদুনি শুনেছে আর বুঝেছে “চুপ” করে থাকাটাই ভালো। কন্যা যায় যাক ‘কন্যাশ্রী’ থাকলেই হল। এরা ‘সাইকেল’ চেনে। ভোটের আগের রাতে ‘মাংস-ভাত’ চেনে। ৫০০/-টাকার নোট চেনে । চেনার গণ্ডীটা সীমাবদ্ধ । এমন এক ভারতবর্ষে আমি থাকি ।
আর এই সীমাবদ্ধ গণ্ডীটা অতিক্রম করে যদি কেউ প্রশ্ন করে , “এটা চলতে পারে না । মানছি না ।” রাষ্ট্র তখন তার বুকে না পেরেক নয়, একটা গরম সীসা পুঁতে দিয়ে বোঝায়, পোষ মানতে হয় না হলে পস্তাতে হয় ।
Tags:
সোজা সাপটা