ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী




প্রথম পর্ব 

শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন। নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী। আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য।

কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হচ্ছে। আজকে শুক্রবার। প্রায় এরকম হয় বিশেষ করে শুক্রবার। বাসে লোকে বাদুড় ঝোলার মতন অফিস ,স্কুল - কলেজ থেকে বাড়ি ফেরে। কি অবস্থা কোলকাতার! লোকগুলো প্রাণ হাতে নিয়ে যাওয়া আসা করে। 

শালিনী কি করে বাড়ি ফিরবে? উল্টো-ডাঙ্গায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। লোকের ভিড়ে ভিড়। বাসের চেয়ে লোকের সংখ্যা ক্রমশ বেশি হচ্ছে। ও এরকম বাদুড় ঝোলার মতন বাসে উঠতে পারবে না। খুব চিন্তায় ছিল। অটো এই রুটে বেশি জায় না আজকাল। তবুও অটোর ভরসায় দাঁড়িয়ে রইল। 

হঠাৎ ‘অয়ন’ এসে ‘শালিনীর’ কাছে দাঁড়াল। 
অয়ন:“ কি ব্যাপার? বাড়ি ফিরবে কি করে? বাসের অবস্থা দেখছ!” 
শালিনী: “তুমি কোন দিকে যাবে?” 
আমি ‘বাঙ্গুর’ , তুমি? 
আমি ‘তেঘোরিয়া!’ 
বাসের আজ খুব বাজে অবস্থা। কেষ্টপুরে এতো রাস্তা জ্যাম থাকে , কি করে যাবে? 
যেতে ত হবেই। 
চল অটো আসছে উঠে পড়ি।  দেরি করনা। 
কিন্তু কিন্তু করে অটোতে উঠলো শালিনী ...।  পার্সের অবস্থা খুব একটা ভালোনা ... দুটো কুড়ি টাকার নোট আছে। তবুও অন্য উপায় নেই দেখে উঠে পডে। বাড়ি পৌঁছতে সেই সাতটা সোয়া সাতটা ত হবেই। গিয়ে স্নান সেরে কালকের ক্লাসের জন্য প্রিপারেসন। হ্যাঁ , শালিনী ‘ফিজিক্স’ পড়ায় ‘স্কটিশে’। ও , পি.এচ.ডির পর ভাবা এটমিক রিসার্চ সেন্টার (BARC) এবং ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্স , ভুবনেশ্বরে এক সঙ্গে দু জায়গায় সাইন্টিস্টের জব পায় , কিন্তু কোলকাতা ছাডবেনা শালিনী! তাই স্কটিশে অধ্যাপিকার অফারটা আপাততঃ একসেপ্ট করল। অয়ন , শালিনীর ক্লাস মেট। ও এম.টেকের পর আই আই এম , কোলকাতা (জোকা) থেকে এম বি এ করে একটা মাল্টি ন্যাশনাল ফার্মে আছে। মাঝে মাঝে দ্যাখা হয় শালিনীর সঙ্গে ব্যাস আর কিছু না। 

কোম্পানির থেকে এই জন্য বলে গাডী কিনতে।  আমি গাড়ীর লোণ নিতে কুণ্ঠা বোধ করছি কারন এই জব ছেডে দেব শিগগিরি।  নতুন চাকরী ..ওই লোণের ঝামেলায় পড়তে চাই না ..... কথাগুলো একসঙ্গে বলে অটোয় উঠে পডে অয়ন। 

শালিনী ও উঠে পডে ওর পেছনে।  রাস্তা ঘাটে একটা পুরুষের প্রয়োজন সঙ্গে থাকা ...তাই বিনা দ্বিধায় উঠে পড়ে শালিনী।  অয়ন বাঙ্গুরে নেবে জায়। বাগুইহাটির কাছে আবার জ্যাম ..... তখন ৭টা বেজে গিয়েছে। আর একটুখানি রাস্তা ... দুর নিজের গাডী থাকলে এসবের ঝামেলা থাকেনা। কিন্তু কোলকাতার রাস্তায় ড্রাইভিং ...! রক্ষে কর! কথাটা ভাবতেই একটা গোলমালের আওয়াজ পেল। 

রে রে করে এক অটো চালক এক ভদ্রলোক এর সঙ্গে বচসা। রাস্তার লোকগুলো বোবার মতন হেঁটে পার হচ্ছে। যেন কিছুই হয় নি! নির্বিকার!! আসলে কোলকাতায় থাকলে চোখ কান মুখ সব বন্ধ রাখা দরকার। কথাগুলো কানে এল ; ৮ টাকা ভাডা ১০০ টাকা দিলে আমি কি টাকার গাছ রেখেছি? কত খুচরো নিয়ে ঘুরবো। শালা সকাল থেকে মাল পডে নি পেটে। 

লোকটিও ছাড়ার পাত্র নয় তিনিও বলছেন , আমরাই বা খুচরো পাই কোথা থেকে? একশো টাকা বার করলেই শেষ। ভদ্রলোক লোকাল বোধ হয় নাহলে এতো সাহস হবে না!সমানে বচসা চালিয়েছেন। 
আপনার কাছে ভাঙ্গানি আছে দাদা?
কত? 
২০ টাকা!
হয়েযাবে দিদি। আপনি কোথায় নাববেন? 
লোকনাথ বাবার মন্দিরের কাছে।
ওখান অবধি ২০ টাকাই ভাডা। 
শালিনী র যেন গা থেকে জ্বর নাবলো। প্রত্যেক দিন অটো আর প্যাসেঞ্জারের মারপিট রক্তা রক্তি কাগজে দেখে ওর রাস্তা ঘাটে ভয় করে। কাল খুচরো সঙ্গে রাখবে। বাসের ওপর ভরসা নেই। বাস মালিকেরা স্ট্রাইক এর ডাক দিয়েছিল। ডিসেলের যা দাম বেড়েছে! ওদের ই বা দোষ কি? তবে ভাড়া বাড়েনি রক্ষা। 

ঘরে পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয় তারপর সোজা বাথরুমে ঢুকে পডে। শাওয়ার খুলে স্নান। আঃ! রোজ রোজ এই বিচ্ছিরি জার্নি যেন পোষায় না। এর একটা বিহিত করতে হবে। এ মাসে মাইনে পেলে একটা লোণ করবে ... কারের লোণ। বাজেটের পর কারের দাম কমেছে। দেখি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার কি বলেন? শালিনীর জামাই বাবু সল্ট লেক স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। উনি যদি কিছু আডভাইস করেন ত। ওর পে সার্টিফিকেট এর জন্য কাল এপ্লাই করবে প্রিন্সিপাল কে। হয়ে যাবে বোধ হয়। তবে ও তো ইউ জি সি স্কেল পায় নি এখন। এদিকে ৭ম পে কমিশন বসে গিয়েছে। সত্যি গরিব মানুষ গুলো কি খাবে এর পর? হু হু করে যা দাম বাড়বে ইলেকশনের পর .. কি দেশের অবস্থা .. কেউ বোঝার নেই! আশ্চর্য!! 
মা চা নিয়ে হাজির। 
তুমি কেন আনলে মা? আমি নিজে করে নিতাম।
থাক মা। আর ও টুকু করতে হবে না। স্বশুর বাড়ী গিয়ে কর। এখন তোমার মা বেঁচে আছে। 
সন্ধ্যে বেলায় বাজে কথা বোলোনা মা! তুমি কি করে জানলে আমি , তোমার ওই শ্বশুর বাড়িতে যাবো বলে? 
আমার নয়.. তোমার মা , সবাই যায়। তুমিও যাবে। 
আর যদি আমি না যাই। আমি যদি তোমার কাছে থাকি। আপত্তি আছে?
আদিখ্যেতা দেখো মেয়ের! হ্যাঁ আছে মা। সব দিন তো আমি বেঁচে থাকবো না!
তোর সঙ্গে ওই ‘অয়ন’ বলে ছেলেটা পড়তো না! কেমন দেখতেরে ওকে? নিয়ে আয় না এক দিন। 
কেন বলত? আমি ডাকলেই ও আসবে কি করে বুঝলে? ওর সঙ্গে আর দেখা হয় না আমার। আমাকে ও সব বলবে না। আমার এখন কিছুই হলনা ... তোমাদের মেয়েকে বাডী থেকে বিদেই না করলে ভাত হজম হয় না? 
ও মা সে কি কথা? আমি তাই বলেছি নাকি? এই যে বললি অয়ন তোর সঙ্গে এক ই অটোতে এলো বলে!
তাতে কি হয়েছে? অটোতে এলো বলে ওমনি তাকে বাড়িতে ডাকতে হবে? তুমি যে কি না মা! আশ্চর্য! তোমরা পারো বটে!! 
ঠিক আছে , আমি তোর মামাকে বোলব একটা বিঙ্গাপন দিতে আনন্দ বাজার পত্রিকাতে, “পাত্র পাত্রী কলমে”। 
কিসের? 
চা টা খেয়ে নে মা। জুড়িয়ে যাচ্ছে যে। 
তোর বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে কি এসব চিন্তা করতে হত রে মা? সব ই গোবিন্দের ইচ্ছা।
দেখ মা আমাকে ওই বিয়ে ফিয়ের ব্যাপারে বিরক্ত করলে আমি কিন্তু বাইরে চাকরি নিয়ে চলে যাবো। 
তবে কি সারা জীবন আইবুডো মেয়ে বসে থাকবে? 
ওই সব গেঁও কথা শুনতে আমার একদম ভাল লাগেনা। কলেজ থেকে ফিরেছি আমাকে একটু রেষ্ট নিতে দাও। তোমার ওই এক ঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান আমাকে এই ঘর ছাড়তে বাধ্য করবে। আমাকে পরে দোষ দিওনা! কথাটা বলে গট গট করে চায়ের কাপ হাতে নিজের ঘরে চলে গেল শালিনী। 
শালিনীর মা হতবাক হয়ে মেয়ের কথা শুনছিলেন।  মনে মনে ভাবলেন আজকালকার মেয়েরা দুটো লেখা পড়া শিখে নিজেদের কি মনে করে? আমি হলাম গেঁও! কথায় বলে,“সোমত্ত মেয়ে ঘরে থাকলে মায়ের গলায় মাছের কাঁটার মতন আটকে থাকে। না পারবে গিলতে না পারবে ফেলতে।” আমার হয়েছে যতো জ্বালা!! এইবলে রান্না ঘরে চলে জান।
শালিনী র মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠলো। 
হ্যালো। কে বলছেন? 
অয়ন। একটা সুখবর আছে। আমি গাড়ী কিনছি। 
তাই! কংগ্রাচুলেসন। কি গাড়ী?
ভক্স ওয়াগন এর এর ‘পোলো’ মডেলটা আমার প্রিয় ওটাই কিনছি। কোম্পানী ৪% ইন্টারেস্টে লোন দিচ্ছে। বাবা বললেন ,“কিনে নাও। এখন যা কোলকাতার রাস্তার অবস্থা , রাস্তার ধুলো আর পলিউসন থেকে রক্ষ্যা পাবে। পরে ফ্লাই ওভার হয়েগেলে গাড়ী চালাতে অসুবিধে হবে না।” ড্রাইভিং টা জানি তবে আরেকটু হাথ পাকাতে হবে। 
হুম। ঠিক বলেছেন তোমার বাবা। কবে খাওয়াচ্ছো? 
যদি বল কাল। 
কাল আমার একটা ক্লাস আছে। ঠিক আছে বোলব। বাই। 
শালিনী খুব একটা সায় দেয় না অয়ন কে। শালিনী অয়ন দুজনেই পড়া শুনয় ভাল ছিল। শালিনী র ফিজিক্স ভাল লাগতো তাই অনার্স নিয়ে পড়ে। পরে এম এস সি , পি এচ ডি। এখন ও ডক্টর শালিনী সান্যাল। 
অয়ন প্রথম থেকেই আই আই টি র জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। বি টেক এর পর ক্যাট দিয়ে জোকা তেই এম বি এ করে মার্কেটিং এ। ফেলোশিপ করতে পারতো কিন্তু ভালো চাকরির অফার পেয়ে কাজে জএন করে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে। পরে মার্কেটিং ম্যানেজার হয়ে কোলকাতায় পোস্টিং পায় একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে। পে প্যাকেজ ভালো তা ছাডা কোম্পানির ফ্যাসিলিটি অনেক। 
শালিনী কোম্পানি জব একদম পছন্দ করে না। বলে গলায় লেংটি(টাই) বেঁধে কোম্পানির দালালি যা মার্কেটিং তাই। যতই মাইনে পাগ না টিচিং জব শ্রেষ্ঠ। ওতে নিজের সাবজেক্টের সম্পর্কে ছাত্র/ছাত্রী দের আকৃষ্ট করা তাদের ভালো করে বিষয়টা বোঝান। রিসার্চ করা। এ সব সমাজ সেবার কাজ। ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ আছে মার্কেটিং এ আছে? আয়ন খুব ভাল ছেলে জানি কিন্তু ও কি করল? নিজের মাথাটা কোম্পানিকে বিক্রি করে দিল! ভাল সেলস দেখালে উন্নতি নাহলে ...! এরা টাকা ছাডা জীবনে আর কিছুর মূল্য দেয়না। খুব মেটেরিয়ালিসটিক হয়ে যায়। খুব একটা শান্তিতে থাকে না। কাজের প্রেসারে খিট খিটে হয়ে যায়। অকাল বৃধ্য হয়ে চুল উঠে টাক পড়ে জায়। ম্যাগো টাকটা শালিনী একদম পছন্দ করে না। নিজেই নিজের মনে কথাগুলো ভাবতে থাকে , কিন্তু একি তারতো এ সব ভাবার দরকার নেই। মাথাটা ঝাঁকিয়ে নোট টা প্রিপায়ার করছিল বি এস সি পার্ট ওয়ানের থার্মোডাইনামিক্সের ক্লাসের জন্য। 
শালিনীর ক্লাস শেষ না হতেই অয়নের ফোন। অনিচ্ছা সত্যে কল রিসিভ করে “হ্যালো” বলল। 
আসছ ত! 
কোথায়? 
পার্ক হোটেলে। 
ও বাবা আমি ওসব জায়গায় জাইনা। আমি ফুচকা খেতে ভালো বাসি গল্প করতে করতে। 
কি ফুচকা? তুমি কি বাচ্চা? 
হ্যাঁ। তুমি চলে এস আজ আমি খাওয়াচ্ছি তোমায়। দেখবে কিরকম টেস্ট। 
সরি ম্যাডাম আমি রাস্তার জিনিষ খাই না। ওতে হেপাটাইটিস হয়। তোমার টেস্ট টা সেই স্কুল পডুয়া মেয়েদের মতন। একটু মড হও। ডক্টরেট করেও ...।
না না আমি মড কোনদিন হতে পারবো না আয়ন। আমি আমিতে থাকতে চাই। 
তবে তোমার সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রি ঠিক মিলবে না।
আমিত মেলাতে চাইনা। তুমি কল করেছিলে আমি করি নি। আর কেমিস্ট্রি র কথা আসছে কোথা থেকে? আমরা শুধু বন্ধু তাই নয় কি? 
অয়ন অপমানিত মনে করল নিজেকে। ছিঃ একটা অর্ডিনারি শিক্ষিকা সে কিনা এতো ডাঁটের কথা বলে! আর না। ওকে বাই এজ ইউ লাইক। বলে ফোন কেটে দিল। 
শালিনী ওটাই চাইছিল। ও এক দম ওই হোটেলে বসে হ্যা হ্যা করে শস্তা মেয়েদের মত কারুর ঘাডে খাওয়া পছন্দ করে না। নিজের ঘর আর কলেজ ছাডা কোথাউ কারুর সঙ্গে যায়নি। প্রফেসাররা তাই ওকে খুব স্নেহ করতেন ইউনিভার্সিটিতে। 
এদিকে মা , মামাকে দিয়ে এক বিঙ্গাপণ দিয়েছেন। হঠাৎ রবিবারের আনন্দ বাজার পত্রিকায় পাত্র পাত্রী বিঙ্গাপনের পেজটাতে লাল কালি দিয়ে গোল করা দেখে বিস্ময় হয় শালিনীর। পডে দ্যাখে , ওমা এত তার জন্যই ...। আশুক মামা দেখাচ্ছি মজা। আমাকে কি পেয়েছে এরা। একটা কমডিটি না কি? খুব রাগ হয় মা’র ওপর। 
হঠাৎ ল্যান্ড ফোনে রিং হয়। ও ঘর থেকে মা ছুটে আসেন ফোন ধরতে। 
হ্যালো! কে বলছেন? 
আপনি একটা বিঙ্গাপণ দিয়েছেন ...।
হ্যাঁ। 
মায়ের কাছ থেকে ফোনটা ছাডিয়ে ... মেয়ের মাথা খারাপ আছে আর কালো বেঁটে চলবে!! 
ও দিক থেকে লাইন কেটে যায়। 
একি করলি শালু?
ঠিক করেছি। যার বিয়ে তার মতা মত নিয়েছ? কি ভাব তোমরা? আমি গোলাম না বাজারের মাছ? কি ভাবো তোমরা?? এরকম করলে আমি সত্যি ঘর ছেড়ে চলে যাব। রাগে থর থর করে কাঁপে শালু।
মায়ের চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু। মা চায়ের কাপটা শালুর হাতে দিয়ে বলেন আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি না তুই? তোর বাবা আমাকে কি জ্বালা যন্ত্রণায় রেখে গেলেন। 
তুমি শান্ত হও মা।বাবকে কেন টানছ এর মধ্যে। তোমার গলার কাঁটা আমি.. বাবার ছিলাম না! আমার বিয়ের কথা একদম ভেবো না। সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলব। তবে এখন না। শান্ত হও। আমার অনেক কাজ বাকি।
আমি জানি রে সে দিন আসবে না। আমি ত তোর মা আমি জানি তোকে! তুই মা’ হলে বুঝবি।
আমার ওইরকম মা হওয়ার প্রয়োজন নেই যে মা তার সন্তানকে বুঝতে চায় না!
এই কাটা কাটা কথা আমি সহ্য করব কিন্তু পরের ছেলে সহ্য করবে কেন? 
আমিতো কারুর মাথার দিব্বি দি নি আমার কথা সহ্য করতে। তুমি কেন আমাকে বুঝতে চেষ্টা করনা। আমি আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বামী ঘর দোর বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে থাকতে চাই না পৃথিবীতে। পৃথিবীতে আরও অনেক কাজ আছে যা মেয়েরা করতে পারবে। করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। এই বিশাল পৃথিবী তার প্রত্যেক কোনে আছে বিভিন্ন মানুষ তারা সুধু বাচ্চা জন্ম না দিয়ে দেশের অনেক উপকারে আস্তে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ এই জন্য অসফল হচ্ছে আমাদের দেশে। ছেলে মেয়ে চাকরি পেলেই মা বাবাদের মাথা ব্যথা ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করা। এতে কি হচ্ছে? অনেক ভাল ব্রেন নষ্ট হচ্ছে। 
আমি অত পডাশুন করিনি তোর মত। আমি তাই জানিনা মা। আমার ভাবনা চিন্তা তোর সঙ্গে কোন দিন খাপ খায় নি........... 
বেলা বারোটা নাগাদ দিদি জামাই বাবু এলেন। সঙ্গে টুকাই। 
মা রকমারি রান্না করে রেখেছেন। সেকেলে শ্বাশুডিদের মত মাথায় ঘোমটা দিয়ে জামাই বাবু কে বলেন, “এসো বাবা এসো।” 
টুকাই শালিনীকে দেখে দউডে আসে। মাসি আমার ক্যাডবেরি তা দাও। 
দাঁড়া আনছি বলে ফ্রিজের দিকে এগুলো।
শ্রাবন্তি, শালিনীর দিদি আর অর্ক শালিনীর জামাই বাবু। দুজনেই মাকে কিছু জিঙ্গাসা করতে যাচ্ছিল শালিনীকে দেখে চুপসে গেল। 
শালিনী বুঝেও না বোঝার ভান করল। জিজু কি খবর তোমার? অর্ক কে দেখে বলল শালিনী।
তুমি না থাকলে মন উদাস থাকে সখী। 
তাই তবে দিদিকে ছেড়ে এখানেই থাক ঘর জামাই হয়ে। 
তাও আচ্ছা সখী। 
তবেরে দেখাচ্ছি তোমাকে। 
সকলে হেঁসে ফেলে। সত্যি অর্ক-দা খুব মাই ডিয়ার। 
টুকাই বলে ,“ঘর জামাই কি গো মা”? 
গোয়ালে চাষির ঘরের বলদ। গলায় দড়ি বাঁধা থাকে খেতে দিলে খায় আর জোয়াল কাঁধে গরুর গাড়ী টানে। তাকে বলে ঘর জামাই। বুঝলি।
যা: কি সব বাজে কথা বলে মা। একদম বাজে। মিথ্যা কথা বলছ তুমি। 
শালিনী , টুকাইকে ক্যাডবেরি দিয়ে বোঝায় পরের ছেলেকে ঘরে খাইয়ে দাইয়ে রাখাকে ঘর জামাই বলে। এখন এটুকু জান পরে বড হলে পুরোটা জানবি।
অর্ক বলেন, “শালু তোর জন্য তবে তাই দেখি।” 
ভাল হবেনা বলছি অর্ক-দা। 
তোর অয়নের খবর কি? আমাকে ফোন নাম্বারটা দে না! আমি কথা বলে দেখি। 
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে শালিনী। কি? সে খবর ও মা তোমাদের দিয়েছে। 
মা! মা! 
কি হল? অত চ্যাঁচাচ্ছিস কেন?
তুমি কেন এই সব বল আমার নামে। কি পাও? 
কি বলেছি? 
গট গট করে নিজের ঘরে ঢুকে জায় শালিনী।
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে। মনে মনে ভাবে বার্কের কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার এপ্লাই করব। খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা। বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে। এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি? ইউ জি সি পেতে অনেক দেরি। সেই থোড় বডি খাড়া ... খাড়া বডি থোড়!! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হায়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে। বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে। বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে। শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন। নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী। আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য। ওর প্রফেসার বিদেশে অনেক ভালো অফার পেয়েছিলেন কিন্তু উনি ভারতে ফিরে কোলকাতা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাই শ্রেয় মনে করেন। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শালিনী স্কটিশে অধ্যাপিকার চাকরিতে যোগদান করে। কিন্তু ওখানেও মন বসে না কারন ও আরও অনেক রিসার্চ করতে চায়। আমেরিকাতে গেলে সম্ভব। আমেরিকা জাওয়ার টাকা নেই। যেটুকু পুঁজি আছে সেটা ফুরলে চলবে কি করে? তাই কোলকাতা থেকেই রিসার্চ এর চিন্তা করে। 
স্কটিশ থেকে ছুটি নিয়ে নেয় এক মাসের। মনে অনেক স্বপ্ন অনেক আশা উদ্দীপনা আর আবিষ্কারের ব্যগ্রতা ওকে সব পেছনে ফেলে এগিয়ে নিয়েছে। পোষ্ট ডক্টরাল প্রোগ্রাম এর জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে সিলেক্টেড হয়। ফেলোশিপের টাকায় অনায়াসে চলবে। আর শালিনীকে কেউ বিরক্ত করবে না বিয়ের জন্য।

দ্বিতীয় পর্ব
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে। মনে মনে ভাবে বার্কের (ভাবা এটমিক এনার্জি কমিশন) কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার অ্যাপ্লাই করব। খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা।  বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে। এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি? ইউ জি সী পেতে অনেক দেরি। সেই থোড বডি খাডা...খাডা বডি থোড! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হাইয়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে। বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে। বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে। শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্পলায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে আই আই এস সী , বেঙ্গালুরু তে যোগা যোগ করতে চায়। আজ বাবা থাকলে ওকে নিশ্চয় উৎসাহ দিতেন হাইয়ার রিসার্চের জন্য পরের দিন বেঙ্গালুরুর ফ্লাইটে শালিনী চলে-গেল। ওখানে এক বান্ধবীর ফ্ল্যাটে ওঠে। সকালে আই আই এস সী ( Indian Institute of Science) এতে যায়। Carbon Nanotube Based Sensors Funded by: DST, Project no. 563 কাজে সুযোগ পায় প্রফেসর ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর আন্ডারে। শালিনী যা চাইছিল তাই পেল এখানে। 
এরমধ্যে অয়নের সঙ্গে হঠাৎ দেখা একটা শপিং মলের কাছে। শালিনীকে দেখে অয়ন হতভম্ব হয়ে যায়। দুজনে চোখা চোখই হয়। ওরা অপোসিট ফুট ধরে হাঁটছিল পরস্পরকে দেখে দুজনেই দাঁড়ালো। 
“কি ব্যাপার এখানে”? অয়নের প্রশ্নের অপেক্ষায় যেন ছিল শালিনী 
“কেন আমার কি এখানে আস্তে মানা”! ভুরু কুঁচকে শালিনীর জবাব অয়নকে ছুঁড়ে।
তা কেন! 
তবে? 
কৌতূহল! , মানে just inquisitiveness বলতে পারো।
মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee , am I correct! 
Yes Madam! 
কোথায় উঠেছ? 
কেন যাবে নাকি সেখানে?
আবার ওই এক উত্তর just for inquisitiveness!
আমারও এক উত্তর মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee!! 
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে।
কফি খাবে?
তা হলে মন্দ হত না!! তবে পেমেন্ট আমি করবো।
তোমায় নিয়ে পারা মুস্কিল। কেন আমি দিলে ক্ষতি কি? 
না না আমি দিলে তোমার ক্ষতি কি শুনি? 
তর্ক কোর না আজ অন্তত আমার কথা একটু রাখ শালিনী। চল কে এফ সী কাউন্টারে জাই।
অয়নের সান্নিধ্য এই বিদেশ ভুঁইতে খারাপ লাগ-ছিলনা। সত্যি নারীর কাছে পুরুষ মানুষের প্রয়োজন আছে ; নারী যতোই উচ্চ শিক্ষিতা , উচ্চ পদাধিকারী হোক না কেন!এটাই বোধ হয় প্রকৃতির নিয়ম। 
হঠাৎ অয়ন বলে ,“কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেল। কি ভাবছ? ”
কিছু না! বিব্রত বোধ করে শালিনী। কি আবার ভাববো। মা একা আছেন ওনার কথাই মনে হচ্ছিল!! কেমন আছেন কে জানে? 
কেন ফোন করনি? 
হ্যাঁ রাত্তিরে করি কিন্তু কাল করিনি। সত্যি মা’কে ফোন করেনি শালিনী।
অয়নকে ঘুণাক্ষরেও যানতে দি লোনা ওর কথাই ভাবছিল বলে ~! মেয়েরা পারেও বটে!! অয়ন কিছু স্ন্যাক্সের অর্ডার দেয়। কে এফ সী চিকেন আর পিটযা। 
এতোগুলো কেন আনাচ্ছ? আমি অত খাইনা! 
জানি আজ খেতেই হবে। তুমি ত কফি খাওয়ালে আমি মানা করিনি এবার আমি যা খাওয়াবো তুমি প্লিজ মানা করনা। 
আমি ওসব খাইনা অয়ন। আমরা ভেতো বাঙ্গালী ওই সব খাবার খেলে পেটের অসুখ হবে , তখন কে দেখবে?
কেন! আমি , আমি দেখবো!!
আহারে! কি আমার কলির কেষ্ট ~ আমায় করবে তুষ্ট? 
নাইবা হলাম কলির কেষ্ট ~ তোমার জন্য নয় করবো কষ্ট! 
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে। 
খাওয়া শেষ করে অয়ন শালিনীকে ছেড়ে আসে কোরমঙ্গালা অবধি ট্যাক্সিতে।
রাস্তায় অনেক কথা হয়। শালিনীর পোষ্ট ডক্টরেট এর জন্য ফেলোশিপ। রিসার্চ এর স্কোপ ইত্যাদি ইত্যাদি। 
অয়ন এখন বেঙ্গালুরুতেই থাকে নতুন কোম্পানিতে। মাঝে মাঝে চেন্নাই , দিল্লী জায় কোম্পানির কাজে। 
শালিনী এখন আর অয়ন কে অপছন্দ করেনা কেন নিজেই জানেনা। আসলে বন্ধু হিসেবেই ওকে গ্রহণ করেছে। নিজের মনকে বোঝায় বন্ধুত্বতে দোষ কি? 
ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর সব সময় ব্যস্ত থাকেন নিজের রিসার্চ নিয়ে। শালিনীকে গাইড করছেন একটা নতুন বিষয় নিয়ে কার্বন নেনো টিউব বেসড সেন্সার্স। বেশ কিছু তথ্য ভিত্তিক কনফারেন্স এবং সিম্পোজিয়াম এর মধ্যে সময় কাটে সকলের। পরিবেশটা সরস্বতীর আরাধনা ছাড়া কিছু নেই। যে যার রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত। খাওয়ার সময় থাকেনা এদের। এরা এতোই মসগুল হয়ে থাকে রিসার্চ নিয়ে। শালিনী জীবনে অনেক রিসার্চ করলো। নতুন কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টের টাকা এই বছর শেষ। এর পর কি? 
হঠাৎ অয়নের ফোন। হ্যালো! বল অয়ন। 
আজ শনিবার আমার অফিস ছুটি।
কিন্তু আমার নয়। 
জানি , ছুটি নাওনা!
হুম দেখছি। “আমাদের প্রোজেক্ট এর কাজ প্রায় শেষ। এবার বাড়ী যেতে হবে। ফেলোশিপের টাকা আর পাবো না। আবার সেই মায়ের ঘেন ঘেনানি”। কথাগুল্প মনে মনে ভাবে শালিনী। 
কি হল? উত্তর দিচ্ছ না কেন? 
অয়ন তোমাকে একটা কথ বলি। তুমি কিছু মনে করবে না বল। 
ঠিক আছে বল। আচ্ছা কথাটা না হয় দেখা হলেই বলবে। আমি আসছি তোমাকে নিতে। 
মানা করতে পারলো না শালিনী। কিছু একটা অলস আবেগের বসে বলে বসে “ঠিক আছে এস কিন্তু রাত করতে পারবোনা ”। 
কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন এসে হাজির।
চল।
কোথায়?
চলইনা। 
‘আই-নক্স’ এ SANDLER BARRYMORE ‘BLENDED’। 
হলে সিনেমা দেখতে দেখতে পপ কর্ন খাচ্ছিল দুজনে। আজ জেন শালিনী জীবনের সব বাঁধন থেকে মুক্ত। নিজেকে হারিয়ে দিতে চায় অয়নের কাছে। কিন্তু তাতে শালীনতা থাকা প্রয়োজন। 
হঠাৎ বেড় রুম সিন শালিনীকে বিব্রত করে। নায়িকার অনাবৃত বক্ষ যুগল আর ঘন ঘন চুম্বনের দৃশ্য অয়নকেও কিছুটা উত্তেজিত করে ফেলে। 
শালিনীর হাত অজান্তে স্পর্শ করে ফেলে।
শালিনী হাত সরিয়ে নেয় এবং উঠে পড়ে বলে , “চল রাত অনেক হয়েছে আমার আর ভালো লাগছেনা”। 
সেকি! মাঝ খান থেকেই চলে যাবে?
হ্যাঁ যেতেই হবে লোকের সামনে অসভ্যতামি আমি পছন্দ করি না। তোমার জানা উচিত ছিল। চোখথেকে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছিল।
কিছু সিন ক্রিয়েটের আগেই অয়ন বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়ে। 
অয়ন বিব্রত বোধ করে। বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ করে। শেষে শালিনী আর ও উঠে পড়ে একটা ট্যাক্সিতে। কিন্তু একি! শালিনী সামনের সিটে ড্রাইভারের কাছে বসে!! 
রাস্তায় কোন কথাই হয় না। অয়ন অপরাধীর মত পেছনে চুপটি করে বাধ্য ছেলের মত বসে-পড়ে। মনে মনে ভাবে এই মহিলার জেদ ভাঙ্গতেই হবে। এটা তারকাছে চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। কিন্তু এই মহিলা অন্যদের মত সোজা সরল নয়। এরমধ্যে সৌন্দর্যের ছিটে ফোঁটা নেই। রুক্ষ বাস্তব ধর্মী এক অহংকারী মহিলা। এর কাছে কামনা বাসনা প্রাধান্য পায়না। তবে কি সত্যি তাই? আরও ভেতোরে ঢুকতে হবে বুঝতে হবে। সে যে ব্যাপার টা করলো তাতে ভুল থেকে গেল। এখন হয়তো শালিনী আর কথা বলবে না কিছুদিন। 
শালিনীর বাসা এসে-গেল। গাড়ী-থেকে নেবে ড্রাইভারের হাতে ১০০ টাকার নোট দিয়ে বলে “ভাই সাব মিটারে কিত্না হুয়া”? 
৯০ রুপিস মাদাম। ঠিক হ্যায় রখ লিজিয়ে। 
অয়নকে গুড নাইট বলে নেবে গট গট করে হেঁটে যায় উত্তরের অপেক্ষা না রেখে। 
অয়নও ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।


৩য় পর্ব
এখানকার কাজ শেষ। বাড়ী ফেরার তাড়া। ইয়শোওন্তপুর হাওড়া সুপারফাষ্ট এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে। শালিনী একাই ফিরছে ২ এসি কোচে। সঙ্গে একটা ট্রলি ব্যাগ আর কিছু ছোট খাটো জিনিষ। খুব ব্যস্ত লাগছিলো। অনেকটা পথ কোরমঙ্গালা থেকে ইয়শোওন্তপুর ষ্টেশন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বগিতে উঠে। জিনিষ পত্র ঠিক জায়গায় রেখে একটা টাইম ম্যাগাজিন নিয়ে বসলো। যে যার বার্থ এ উঠে বসছে। সামনের বার্থের এক ভদ্রমহিলা শালিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন “কোলকাতা যাবে বুঝি?”
হ্যাঁ। আপনি?
আমিও। সঙ্গে কেউ নেই? 
‘না’ ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে ওলটাতে। 
ও! আমিও একলা যাচ্ছি মা। তাই ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু কথা বলে সময় কাটাবো। 
হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়। বলুন না। 
আমি এখানে আমার ছেলে বৌ এর কাছে এসেছিলাম। 
আপনার ছেলে কি করেন? 
ছেলে বৌমা দুজনেই ইনফোসিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। 
ও তাই! ভালো। 
তুমি?
আমি! আমি আপাতত কিছু করিনা। 
তোমার বিয়ে হয়েছে? 
কথাটা শুনেই শালিনী বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে। আমায় কি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিবাহিতা? 
না মা। জিগ্যেস করলাম বলে কিছু মনে করনা। 
না না। আচ্ছা মাসিমা বিয়ে ছাড়া কি মেয়েদের কিছু কাজ নেই! বিয়ে না করে কি মেয়েরা সমাজের অন্য কোন ভালো কাজ করতে পারে না! আপনার কি মনে হয়। 
কাজ তো অনেক আছে মা। কেউ এভারেস্ট অভিযানে যাচ্ছে , কেউ ক্রিকেট খেলছে , কেউ সাঁতার কাটছে , কেউ সিনেমা করছে ....... 
এগুলো সমাজের মঙ্গলের কাজ কিনা জানিনা তবে হ্যাঁ নাম যশের জন্য ঠিক আছে। 
তুমি কি কিছুই কর না মা?
দেখে কি মনে হচ্ছে আপনার? ... উল্টো প্রশ্ন শালিনীর।
কিছু একটা কর নিশ্চয়। কি কর মা? 
কলেজে পড়াতাম এখন পড়াইনা। বেকার বলতে পারেন।.... ইচ্ছে করেই কিছু খুলে বলল না , আবার বিয়ের কথা না পেড়ে বসেন মহিলা। ম্যাগাজিনটায় চোখ বুলতে লাগলো। প্রত্যেক বয়স্কা মহিলাদের এই এক প্রশ্ন ; বিয়ে , ছেলে মেয়ে বিরক্ত লাগে এক ঘেয়ে কথা শুনতে। অন্য কোন প্রশ্ন নেই?
মহিলা , মনের মতন উত্তর না পেয়ে চুপসে গেলেন। উনিও একটা বোই বার করে মুখের সামনে ধরলেন। 
খুব অলস লাগছিল শালিনীর। অনেকটা পথ এক টানা অটো তে। সেই সকালে বেরুন। ট্রেনে এসির ঠাণ্ডাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা। টি টি র ডাকে উঠে পড়ে। 
টিকিট চেকিং এর পর আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সামনের মহিলাও ঘুমিয়ে পড়েন। 
রাতে ট্রেনের জঘন্য খাবার খেতে রুচিতে বাধলেও উপায় নেই। ডিনারে , ভেজ খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে। আসলে জেগে থাকলেই ভদ্রমহিলার প্রশ্ন বাণে জর্জরিত হতে হবে। অহেতুক কথা বাড়বে তার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়।


৪র্থ পর্ব
হাওড়া ষ্টেশন এ গাড়ী ইন করে প্রায় আধ ঘণ্টা লেটে। নিজের লাগেজ গুছিয়ে প্ল্যাট ফর্মে হাঁটা দেয়। 
প্রি পেড ট্যাক্সির লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে। 
বাড়ি পৌঁছে শান্তি। সোজা বাথ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়। 
মা’ জল খাবার নিয়ে মুখের সামনে , সঙ্গে চা।
চলে এলি ভালো হল। বাবা আমার চিন্তা গেল। মেয়টা কোথায় রইলো কি খেল!
প্রত্যেক দিন ত তোমায় ফোন করতাম। তবু চিন্তা! 
হবেনা? 
কেন?
ও তুই বুঝবিনা। বই ছাড়া ত কিছু জানিশনা। নে খেয়ে নে। পরে কথা হবে।
সত্যি খিধে পাচ্ছিল। ট্রেনের যা খাবার! গা গুলোয় খেলে। লোকে বাধ্য হয় তাই খায়। 
বিকেলে দিদি এলো। 
কিরে শালু ফিরে এলি?
কি করতাম তাহলে?
কেন তোর রিসার্চ! 
শেষ করেই ত এলাম। ছোট প্রোজেক্ট। এবার দেখি কি করি। নাইজারে (NISER) সাইন্টিস্ট চায় দেখি পাই কিনা। ওটা ভালো ইন্সটিটিউট , মাইনে ভালো। পেলে চলে যাবো। আমাকে আমার রিসার্চ চালিয়ে যেতে হবে , আমার টার্গেটে না পৌঁছন পর্যন্ত।
সারা জীবন টা কি এই করেই কাটাবি?
এ ছাড়া আর কি করবো বল? আমি ত তোদের মত গুছিয়ে ঘর সংসার করতে পারবো না।
কেন পারবি না! আমারা কি পারতাম? পারতে হবে সংসারের সেই নিয়ম।
এই খানেই তোর আমার মধ্যে মত ভেদ! “ওই সংসারের সেই নিয়ম” কথাটা আমি মানতে রাজি নই। 
অফিস থেকে জিজু এসে হাজির। টুকাই আগে থেকেই এসে গিয়েছে। মাসির কাছে বেঙ্গালুরুর গল্প শুনছে। 
হঠাৎ বাইরে রাস্তায় একটা প্রাইভেট কার আমাদের বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালো। 
কার থেকে সু-টেড বুটেড এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক এবং সঙ্গে এক ভদ্রমহিলা। হাতে মিষ্টি। 
শালিনী কিছুই বুঝলোনা। ও নিজের ঘরে চলে গেল। এনাকে ত কোন দিন আমাদের বাড়ী দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। ইনি কে? হঠাৎ মাথায় কারেন্ট লাগার মত একটা শক পেল। অজ্ঞান হয়ে গেল শালিনী। ভাগ্যিস বিছানায় পড়ে গিয়েছিল নাহলে কি হত কে জানে। 
টুকাই ঘরে ঢুকে মাসিকে বিছানায় ও ভাবে পড়ে যেতে দেখে তার মাকে ডাকে। টুকাইয়ের ডাকে দিদি গিয়ে দ্যাখে শালিনী বিছানায় অস্বাভাবিক ভাবে পডে গিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ডাক্তার আসেন। অর্ক নিয়ে আসে সঙ্গে করে। 
যারা এসেছিলেন তারা হতভম্ব। বাড়ী সুধু সকলের হৈ চৈ। কি হল কি হল? 
ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা বৈঠক খানায় বসে আছেন। কেউ কাছে নেই অথচ যেতেও পারছেন না ওনারা। 
শেষে ভদ্রমহিলা ভেতরের ঘরে গিয়ে দেখলেন শালিনী বিছানায় শুয়ে। ডাক্তার , প্রেশার পালস দেখে জ্ঞান ফেরানোর জন্য চিকিৎসা সুরু করেন। 
শালিনীর মা কপালে হাত জোড় করে ঠাকুর কে ডাকতে শুরু করেন।
কিছুক্ষণ পরে শালিনীর জ্ঞান ফেরে। ডাক্তার বাবু অর্ক কে কিছু প্রেসক্রিপশন দিয়ে চলে যান। অর্ক সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ নিয়ে আসে।
শালিনীর মা’র এতক্ষণ খেয়াল ই ছিল না ঘরের অতিথিদের কথা। কাছে গিয়ে হাত জোড় করে বলেন মেয়েটা বেঙ্গালুর থেকে এসে খুব দুর্বল লাগছিল। আজ কি যে হল আপনারা আসার সঙ্গে সঙ্গে এরকম অজ্ঞান হয়ে জাওয়া এই প্রথম বার .... 
না না আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। এটা তো অপ্রত্যাশিত। কেউ কি জানতো এরকম হবে বলে। আমরা বরং আরেক দিন আসবো কেমন! 
শালিনীর দিদি ও ঘর থেকে আসে চা জলখাবার নিয়ে। 
মা বলেন বসুন না এসেছেন এতো কষ্ট করে। আমাদের ভাগ্য আপনারা নিজে এসেছেন। আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। একটু মিষ্টি মুখ করে জান। 
আপনি ব্যস্ত হবেন না। ও কি আস্তে পারবে? আমরা অন্য কোন দিন আসবো। আজ চলি। আমাদের টেলিফোন নাম্বার দিয়ে যাচ্ছি। সুস্থ হলে খবর দেবেন। কেমন! আজ আসি তাহলে!! 
আচ্ছা! আপনারা যা ভালো বোঝেন। ঠাকুরের যা ইচ্ছা। কিছুই খেলেন না। 
খাওয়া কি পালাচ্ছে বোন। আবার আসবো আপনি চিন্তা করছেন কেন? ভদ্রমহিলার মুখে ‘বোন’ শব্দ টা শুনে ‘মা’ ধাতস্থ হলেন। 
শালিনীকে দেখতে এসেছিলেন ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা। তবে কে ওনারা? ব্যাপার টা কিছুই জানা গেলো না।

৫ম পর্ব
শালিনীর জ্ঞান ফিরতে দেরি হলনা। খুব দুর্বল এবং মানসিক চিন্তায় প্রেশার লো। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে গেলেন। অর্ক ; সমস্ত ওষুধ, হেলথ ড্রিংক , তাজা ফল বাজার থেকে সঙ্গে সঙ্গে কিনে আনল। কিন্তু শালিনীর ওই এক প্রশ্ন , “ওনারা কেন এসেছিলেন?” 
বোঝ ঠ্যালা!
মা বলেন , “ঘরে কি লোক আসবেনা মা! তুই কেন ও নিয়ে চিন্তা করছিস?”
না তা আসবে না কেন মা , তবে এনাদের ত আগে কখন দেখি নি , তাই!  
ও পরে শুনবি। এখন একটু ফ্রুট জুস খা দেখিনি। কিচ্ছুটি ত মুখে দি-সনা। শরীরের কি হাল করেছিস বেঙ্গালোরে গিয়ে। খেতিস না নিশ্চয়! 
কোন উত্তর না দিয়ে বাধ্য মেয়ের মত সব খেয়ে নেয়। সত্যি ও একটু দুর্বল হয়ে গিয়েছে। সেটা যে কারনেই হোক না কেন। 
পরের রবিবার অয়নের বাবা মা আসবেন কথা বলতে।
এরমধ্যে অয়নের ফোন এসে গিয়েছে মায়ের উদ্দেশে। ওই এক কথা , শালিনীর বাড়ী গিয়ে বিয়ের কথা পাড়তে।
অয়নের মা বাবা সময় মত রবিবার আবার আসেন। সঙ্গে মিষ্টির বাক্স। শালিনীকে বৌমা বানিয়েই ছাড়বেন। অয়নের পছন্দই ওনাদের পছন্দ। এটাই এখনকার রীতি নিয়ম। 
যথা রীতি কথো প কথনের পর ... শালিনী , মায়ের ডাকে ঘরে ঢোকে। পরনে শালোয়ার। দিদি , জিজু আর টুকাই। 
আজ খুব একটা রুক্ষ ভাব না করে সিচুএশন স্টাডি করছিল।
তুমি ত শালিনী না? অয়নের মায়ের প্রশ্ন।
আগে থেকে আট ঘাট বেঁধে এসেছেন মহিলা .... শালু ভাবে। হ্যাঁ আমি শালিনী।
আপনাদের ..... বলার আগেই দিদি বলে ,“ইনি অয়নের মা! আর উনি অয়নের বাবা”
নমস্কার। অয়ন আসে নি কেন? শালিনীর উল্টো প্রশ্ন।
না মা ও বেঙ্গালুরু তে থাকে।
আমি জানি।
ভদ্র মহিলা সাদা মাটা আর ভদ্রলোক , মানে অয়নের বাবা এখন খুব স্মার্ট আছেন।
তুমি কি অয়ন কে চেন মা? অয়নের বাবার প্রশ্ন।
হ্যাঁ ও আমার ক্লাস মেট। কেন বলুন তো! 
মা এসে বলেন ওনারা তোকে দেখতে এসেছেন।
আমায় দেখতে এসেছেন? মানে! আমাকে ত কিছু বল নি মা। অয়ন আমার ক্লাস মেট। ও , আমার বন্ধু তার চেয়ে বেশি কিছু না। এই বলে চলে জায় ঘর ছেড়ে।
মেয়ের রাগ জানেন মা। কিছু অঘটন ঘটার আগেই আগন্তুকদের চা জল খাবার এগিয়ে দেন।
এবার অয়নের বাবা মা সত্যি অপমানিত বোধ করেন। মাপ করবেন বোন , অনেক আপ্যায়িত হলাম এবার আমরা উঠি। এই বলে ওনারা উঠে পড়েন।
অর্ক দা , দিদি কিছু বলার আগেই ওনারা ঘর ছেড়ে চলে জান। ওদিকে মা মুখে কাপড় চেপে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। ঘরে একটা গম্ভীর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শালিনীর ঘর ভেতর থেকে বন্দ।
তুই কি আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি শালু! তুই কি চাস মা!! দরজায় কড়া নাড়েন মা। দরজা খোল। কথা শোন আমার মা। 
অর্ক , দিদি , টুকাই স্তব্ধ। গোটা ব্যাপারটা একটা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। কারুর মুখে কোন সাড়া শব্দ নেই। অর্ক খুব অপ্রস্তুত মনে করছিল। এই পরিস্থিতিতে মাকে ছেড়ে জাওয়া যাচ্ছেনা আবার থাকাও যাচ্ছেনা। টুকাই ও গিয়ে মাসির ঘরের দরজা ধাক্কায়। ও মাসি দরজা খোলনা। আমি ত এসেছি তোমার সঙ্গে কথা বলতে।
দরজা খুলে শালিনী টুকাইকে কোলে তুলে নেয়। আজ প্রথম তার চোখে জল। কেউ কিছু বলার আগেই শালিনী ঘরে ঢ়ুকে পড়ে। দিদি ঘরে গিয়ে শালিনীকে বোঝাতে চেষ্টা করে। কোন ফল হয়না। 
মাসির চোখে জল দেখে টুকাই কেঁদে ফেলে। ও মাসি কি হয়েছে? তুমি কেন কাঁদছ? 
কোই না ত। আমি কম্প্যুটারে বসেছিলাম তাই। তুই ক্যাডবেরি খাবি? 
না আমি কিচ্ছু খাবোনা। আগে বল তুমি কেন কাঁদছিলে?
তোর নতুন জামা কেনা না হলে তুই কাঁদি-সনা! আমার নতুন শাড়ী কেনা হয়নি তাই আমি কাঁদছিলাম। 
আমি বাবাকে বলব তোমায় নতুন শাড়ী কিনে দেবে। 
দুর বাবা কেন কিনে দেবে আমার মা কিনে দেবে। আমার মা আছে না! মা বাবা ছাড়া অন্য কারুর কাছথেকে কিছু নিতে নেই। ঠাকুর রাগ করেন। 
তবে যে তুমি আমায় পূজোতে , জন্ম দিনে নতুন ড্রেস কিনে দাও। 
আমি ত তোর মা’সি! মানে , মা’ দেখ। ‘মা’ মানে ‘মা’। ‘সি’ মানে কি? 
দেখ।
তাহলে কি হল, “মা দেখ” তাই না। তাই আমি তোকে ড্রেস কিনে দি। তুই ত আমার সোনাই মা। আজ তুই আমার কাছে থাকবি? 
হ্যাঁ।
তাহলে মা বাবা কি করবে? 
মা আমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবে না! 
তুই থাকতে পারবিনা বল। কিরে ঠিক না! 
হ্যাঁ , মা আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়ায়। তুমি গল্প জানো। 
খুব জানি। শুনবি গল্প। আজ আমার কাছে থাকলে তোকে গল্প শোনাবো। 
তাহলে থাকবো। কিন্তু আমার স্কুল? 
ও তাইতো। না স্কুল বন্দ করা চলবেনা। 
তাহলে কি করে থাকবো?
তাইতো! কি করে থাকবি! 
মা আসেন ঘরে চায়ের কাপ নিয়ে। 
আমায় ডাকলে পারতে। আমি নিজে যেতাম।
থাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। বাড়ী হেস্ত নেস্ত করে ছাড়লে। আমার মরন না হওয়া ওবধি তোমার শান্তি নেই। নেই নেই করে ২৯ বছর বয়েস হল তোমার। এর পর কি হবে? 
ঠিক উল্টো টা মা। আমি না মরলে তোমার শান্তি নেই। তুমি ভালোকরে জানো আমার পছন্দ অপছন্দ। তবুও তুমি আমাকে জোর করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করতে চাও। কখন খেয়াল রেখেছ তোমার মেয়ের মনের কথা। কি মা তুমি? 
আর কত খেয়াল রাখতাম তোর। সকাল থেকে সন্ধ্যে ওভধি তোর সেবা করাই আমার কাজ। তুই আমার খেয়াল রাখিস? 

এবার শালিনী গলা নামিয়ে বলে, মা তুমি আমার কথা ভেবোনা। আমি ঠিক আছি। আমার লখ্যে পৌঁছতে দাও। আমার পড়াশুনা শেষ হয়নি। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই। কেন তুমি বোঝনা। আমাকে না জিগ্যাসা করে ঘরে লোক ডাকো! এটা কি ঠিক বল! আমি ত বলেছি আমার সময় হলে আমি নিজে তোমাকে জানাবো। 
সে দিন আর আসবে না রে। তার আগেই আমি মরে যাবো।
অমন করনা মা। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনা। 
মা মেয়ের ঝগড়ার মধ্যে দিদি নাক গলায়না। দিদি খুব শান্ত স্বভাবের। শালিনী ঠিক উল্টো। ওর বাবার মত এক রোখা , এক গুয়েঁ , জেদি মেয়ে। তাই বাবার খুব প্রিয় ছিল শালিনী। 
এর কোন সমাধান হবে বলে মনে হয়না। জিজু, দিদিকে টুকাইকে নিয়ে ফিরে জান। জিজুকে আজ খুব গম্ভীর মনে হচ্ছিল। শালিনীকে কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনা। ও আলাদা ধাতে গড়া। ওর চিন্তা ধারা সম্পুর্ণ আলাদা। এর পর ও কি এ বাড়ীতে কেউ আসবে শালিনীকে দেখতে? 
মা মেয়ের মধ্যে কথা নেই। শালিনী নিজের ঘরে। মা রান্না ঘর আর পূজোর ঘর এই করে দিন কাটাচ্ছেন।
শালিনী , নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না। ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা। এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল। আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে , “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে? 
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না? সত্যি বল। যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই!! 
উত্তর: মোটে না। ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না। ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে। আমি অপমানিত হয়েছি। তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে যানে। তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে। সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই। 
না। আমি কোন প্রশ্রয় দি নি। ওটা ওর বোঝার ভুল। আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে। পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি , শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না। খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে। প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি। তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ। 
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী। ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে। তোমার চাওয়া পাওয়া , ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে! তোমার বলা উচিত ছিল। 
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না। 
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে। তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা? 
তা তো বলিনি। হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট , স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয়। বাহ্য চাক চিক্যকে নয়। মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয়। 
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই!
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না। প্রসঙ্গ বদলাও। আমি “মা শারদা মায়ের” আশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে। সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা , সন্ন্যাসিনী। তারা কর্মে বিশ্বাস করে। তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয়। তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা , অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা। এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায়। কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ। শান্ত সুন্দর। 
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে? 
বলা মুস্কিল। আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব। 
কিন্তু তোমার অয়ন! 
আমার অয়ন কেন বলছ? ও কেবল ই বন্ধু। আর কিছু না। 
মন থেকে বলছ! 
একদম। 
কিন্তু আমি মানি না। তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই। 
কেন থাকবে না? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে ব্যাবহারে, কাজে কর্মে , চাল চলনে। 
তবে তুমি মা’ কে সেটা বলছ না কেন? 
আমি মেয়ে , মা.. আমার দোষ দেবেন!
নাও হতে পারে। বলে দেখ। 
সম্ভব নয়।

৬ষ্ঠ পর্ব
শালিনী, নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না। ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা। এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল। আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে, “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে? 
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না? সত্যি বল। যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই!! 
উত্তর: মোটে না। ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না। ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে। আমি অপমানিত হয়েছি। তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে যানে। তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে। সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই। 
না। আমি কোন প্রশ্রয় দি নি। ওটা ওর বোঝার ভুল। আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে। পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি, শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না। খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে। প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি। তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ। 
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী। ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে। তোমার চাওয়া পাওয়া, ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে! তোমার বলা উচিত ছিল। 
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না। 
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে। তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা?
তা তো বলিনি। হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট, স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয়। বাহ্য চাক চিক্যকে নয়। মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয়। 
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই!
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না। প্রসঙ্গ বদলাও। আমি “মা শারদা মায়ের” আশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে। সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা, সন্ন্যাসিনী। তারা কর্মে বিশ্বাস করে। তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয়। তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা, অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা। এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায়। কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ। শান্ত সুন্দর। 
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে? 
বলা মুস্কিল। আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব। 
কিন্তু তোমার অয়ন! 
আমার অয়ন কেন বলছ? ও কেবল ই বন্ধু। আর কিছু না। 
মন থেকে বলছ! 
একদম। 
কিন্তু আমি মানি না। তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই। 
কেন থাকবে না? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে ব্যাবহারে, কাজে কর্মে, চাল চলনে। 
তবে তুমি মা’ কে সেটা বলছ না কেন? 
আমি মেয়ে, মা.. আমার দোষ দেবেন! 
নাও হতে পারে। বলে দেখ। 
সম্ভব নয়।

পাসের বাড়ী থেকে গানের সুর ভেসে এলো--
কি করে ভুলিব তোমারে 
আঁখি জল ঝরে, বারে বারে 
বসেছি একাকী হায় 
তোমা বিনা অসহায়।
দিবস রজনী গুনি 
কবে তুমি আসিবে শুনি? ...(১)
এ মন মানে না আর 
মনে পড়ে বার বার 
তোমা বিনা মন লাগে না 
এ ফাগুন রাতে এসো না 
কিছুতে কিছু মন লাগে না 
ও প্রিয়ে তুমি কি বোঝ না!...(২)
আমার হৃদয় জুড়ে বসে আছে,
পাইনা কেন তারে কাছে।
নিশুতি রাত গেল,
তারাগুলো নিভে গেল, 
আকাশে চাঁদ ছিল,
এ শুভ লগনে কে এলো। ...(৩)

ঠিক সেই সময় ফোনটা বেজে উঠলো। এই সময় কার ফোন এলো! 
হ্যালো! কে? 
কে বলত! 
অয়ন?
তবে আমার কথাই ভাবছিলে বল! 
বাজে কথা রাখ, কবে আসছ কোলকাতা?
কি মনে হচ্ছে?
হেঁয়ালি কর না প্লিজ। 
এখানেই এসেছি ৭ দিনের ছুটিতে। তোমার বাড়ীতে-ত আমার জাওয়া নিষেধ তাই তোমাকে কোথায় দেখা করব .........? 
খুব বাজে লাগছে আমার। আসলে তোমার ওপর রাগটা ওনাদের ওপর ঝাড়লাম। আমি অনুতপ্ত। আজ আমাদের বাড়ী আসবে? 
কে? আমি! রক্ষে কর আমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বিদেই করে দেবে তুমি। 
যাহ্। তা কখন হয়! রাগ করেছিলাম ঠিক ই তবে তুমিও ত কিছু বলনি আমায়। তোমার উচিৎ ছিলনা আমাকে বোঝানোর! 
তা ছিল। আসলে আমি নিজেও কি করতে কি করে বসে ছিলাম সে জন্য অনুতপ্ত। কোন মুখে তোমায় কিছু বলতাম।
আচ্ছা বাবা আচ্ছা। ঠিক আছে তুমি আজ এসো আমাদের বাড়ী। আমি অপেক্ষা করবো কিন্তু। 
ডন। 
ডন।। Bye . Sincerely I will wait for you .
বিকেলে সত্যি অয়ন এলো শালিনীদের বাড়ী। 
আয়না টা যতো নষ্টের গোঁড়া। ওই আয়নাই মেয়েদের ভাবুক করে আর নিজের রূপ সম্বন্ধে সচেতন করে। যতো অনা-ছিষ্টির কথা ওই আয়নাই বলে। নিজেকে খুঁটিয়ে দ্যাখে আর ভাবনার দুনিয়ায় বিচরণ করে। 
হটাত তার মোবাইল টা বেজে উঠলো।
অসময়ে কার ফোন এলো? শালিনীকে অপ্রস্তুত মনে হল। 
হ্যালো! কে? 
আমি অয়ন। তুমি কি আমার নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছ?
ও। না না। একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। 
কার কথা ভাবছিলে?
কেন বলবো? 
বলই না শুনি!
শালিনী সাধারণত সাজ গোছ করে না। আজ সামান্য প্রসাধন করাতে সুন্দর লাগছিল তাকে।
মা দেখে বলেন কিরে শালু কি হল বলতো? 
কেন কি আবার হবে? তোমার সবেতেই আমাকে ছুঁড়ে প্রশ্ন! 
না মা, আমি ত জানি তোকে। মা আমার কি সুন্দর দেখতে লাগছে আজ। অনেক দিন দেখিনি তোকে রে। শুধু বকেছি। চোখ পুঁছে ফেলেন মা!
ওই! ওমনি কান্না কাটি!! কেন তুমি আমার জন্য এতো ভাবো বলত!
তুই কি করে বুঝবি মা? মা হলে বুঝবি। 
ওই এক কথা ‘মা’ হলে বুঝবি! 
বিকেলে একজন আসবে মা, বলে লজ্জায় শালু মাকে জড়িয়ে ধরে। 
কে সে শুনি? আমি কি সত্যি শুনছি। হে ঠাকুর, আমার ডাক শোন তুমি। 
মা তুমি না সবেতে উতলা হও।
অয়ন কে ডেকেছি। ও আসবে। ভালো কিছু খাবার কর ত। 
কি বলিস শালু সত্যি! দাঁড়া তোর দিদি জামাই বাবুকে ডাকি তবে। 
না ওদের এখন ডাকতে হবে না। পরে। আমার কিছু কথা আছে ওর সঙ্গে তারপর।
ঠিক আছে তাই হবে। মা রান্না ঘরে চলে জান হাঁসি হাঁসি মুখে।
এতদিন পর মাকে খুশি দেখে শালিনী নিজে বেশ খুশি। মাকে দুঃখ দেওয়া উচিৎ হয়নি। রিসার্চ করার সুযোগ দিলে অয়নকে তার বিয়ে করতে আপত্তি নেই। সত্যি ত সে সন্ন্যাসিনী হবে না। সংসার জখন করতেই হবে তবে দেরি করে লাভ নেই। তবে অয়নের মতা মত জানতে হবে। আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা চলবে না। আমাকে আমার মত থাকতে দিতে হবে। 
বিকেলে অয়ন সত্যি এলো শালিনী র বাড়ী। বাড়ীর সামনেটাতে একটা সরু রাস্তা আছে তাই অয়নের নতুন পোলো গাড়ীটা পার্ক করতে অসুবিধে হচ্ছিল। 
শালিনী, আজ ফুলদানিতে সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।ঘরটা খুব অগোছালো লাগছিল। অনেকটা নিজেই গুছিয়েছে। দরজায় নতুন পর্দা লাগিয়েছে। মা উঁকি মেরে মেয়ের সব কান্ড কারখানা দেখে মুখটিপে হাসছিলেন। যাগ ঠাকুর শুনলেন। বাবা লোকনাথ তোমার পূজো দেব দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর পূজো দেব .... আমার শালুর বিয়ে হয়ে জাগ সব ঠাকুরের মানত অনুযায়ী পূজো দেব। 
ঘরে নক করাতে শালিনী আসে ঘরের দোর খুলতে।
অয়ন শালিনীকে দেখে অবাক হয়। সত্যি আজ শালিনী কে সুন্দর দেখাচ্ছিল। খুব স্মার্ট মেয়ে শালিনী। তাই সামান্য প্রসাধনে ওর ব্যক্তিত্য ফুটে ওঠে চোখে মুখে। 
‘এসো’শালিনী অয়নের উদ্যেশ্যে বলে। 
ঘরে ঢুকে অয়ন, নতুন সাজে ঘর দেখে মনে মনে খুসি হয়। এজে তার শালিনীর হাতের ছোঁয়া দেখেই বুঝতে পারে। 
কি দেখছ হাঁ করে! 
তোমাকে আর তোমার টেষ্ট কে দেখে। অপুর্ব। 
Thanks a lot . কি খাবে বল। 
তুমি দেবে?
আবার অসভ্যতামি! 
যা বাব্বা! তুমি কি এই রকম ভাবে আমাকে শাসন করবে? 
হ্যাঁ দরকার হলে তাই করবো। না করার কি আছে? তোমাদের মতন পুরুষদের আমি চিনি। সুধু খাই খাই ভাব। 
মা ঘরে ঢোকেন চা জলখাবার নিয়ে। মাথায় ঘোমটা দেখে শালিনী হেঁসে ফেলে। তোমার ভাসুর নাকি গো মা? ও আমার বয়সি! আমরা এক ক্লাসে পোড়তাম। আমার বন্ধু অয়ন। 
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে অয়ন। 
থাক থাক বাবা। তুমি কত দিনের জন্য এসেছ?
এক সপ্তাহ থেকে চলে যাবো। 
ও মাত্র এক সপ্তাহ। 
তোমার বাবা মা কেমন আছেন? 
ভালো। 
তোমরা গল্প কর আমি আসি, কেমন! আজ এখানে খেয়ে জাবে বাবা। 
মায়ের, এই ‘বাবা’, ‘মা’ ডাকগুলো খুব সেকেলে লাগে শালিনীর। 
তোমার মা খুব স্নেহ ময়ি। 
হ্যাঁ সত্যি তাই। আমার মা খুব স্নেহ ময়ি। এখন থেকে হাত করে রাখ পরে কাজে লাগবে। 
কেন? 
কেন আবার। আমার নামে নালিশ করবে। মা তোমার পক্ষ নেবেন সর্বদা। 
তা তুমি জদি আমার কথা না শোন তবে ........ বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ হল। 
কে এল? শালিনী বাইরে গিয়ে অবাক জিজু, দিদি, টুকাই সব এসে হাজির।
আমরা আর থাকতে পারলামনারে, দিদি বলে উঠলো।
বেশ করেছিস। আয়না। কি জিজু তোমার খবর?
আমার খবর ভালো না।
কেন?
আমার ওই গানটার কথা মনে পড়ছে, “মেরা পিয়া ঘর আয়া ও রাম জি” বলে হেঁসে ওঠেন। 
যাঃ। সব সময় আমার পেছনে লাগা। কোন কাজ নেই তোমার না! টুকাইকে কে কোলে নিয়ে ঘরে ঢোকে শালু। আলাপ করিয়ে দি ....
‘অয়ন’ আমার বন্ধু সেই কলেজ থেকে। ইনি আমার দিদি জামাইবাবু ...
নমস্কার। বুঝতেই পাচ্ছি। শালি না থাকলে, “ঘর লাগে শুনা শুনা, জামাইবাবু না থাকলে, দিল হুম হুম করে ঘবরায়ে...”
হা হা করে হেঁসে ওঠে সবাই।
মা সকলের জন্য চা জলখাবার নিয়ে আসেন। দিদি, জিজু ; সেন মহাশয়ের সন্দেশ মিষ্টি আর গরম ক্লাব কচুড়ি এনেছেন। 
আজ মা, দিদি,জিজু সকলে খুশি। টুকাই শালুর কানে কানে বলে নতুন মেসোর ওটা কি গাড়িগো? খুব সুন্দর গাড়ীটা। 
তুই মায়ের কাছে যা । এখানে বড়দের কাছে থাকতে নেই। পরে আসিস আমার কাছে। 
আচ্ছা বলে চলে যায় টুকাই।

৭ম পর্ব 
অয়নকে নিয়ে শালিনী ওর নিজের ঘরে বসে। খুব ই অন্তরঙ্গ বন্ধু ওরা দুজনে মনে হচ্ছিল। একে অপরকে নাহলে চলবেনা মনে হচ্ছিল। হাঁসি ঠাট্টার মধ্যে সময় কেটে যাচ্ছিল। মা এতদিনে নিশ্চিন্ত। বোধহয় লোকনাথ বাবার পূজাটা আজই দেবেন। কাল মঙ্গল বার হয়তো কাল-ই দক্ষিণেশ্বরে পূজা দিতে যাবেন।
শালিনীঃ- তুমি বিয়ের পর আমাকে নিজের স্বাধীন মত কাজ করতে দেবে?
অয়নঃ- কেন তুমি কি পরাধীন দেশের নাগরিক নাকি যে আমায় এই কথা বলছ!
বাঃ যাচাই করবোনা। পরে আমাকে যদি বাধা দাও। মুচকি হাঁসে শালিনী।
কি হবে না হবে সে সিচুএসন অনুযায়ী ঠিক হবে। তবে তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় আমি কে হস্তক্ষেপ করার!
ঠিক আছে আমি কিন্তু রিসার্চ চালিয়ে যাবো। চাকরি পেলে তাও করবো।
আজকাল এসব কেউ বলেনা শালু।
শালু! গ্রেট!! আবার বল। ভাগ্যিস শালি বলে বসেনি!!
কেন খারাপ লাগছে শুনতে?
না না। আমার মা ওই নামে ডাকে আমায়। তুমি ত আমার মায়ের দলে তাই ডাকতে পার। ও কে। ইটস ওকে।
আমাকে একটা গুড নাইট কিস্ দেবে?
আবার বাজে কথা!
দাও না।
শালু উঠে পালাতে যাবে, অয়ন হাত ধরে নিজের দিকে টেনে আনে।
কি হচ্ছে মা দেখলে কি ভাববেন। উম উম.... না ছাড়ো।
খুব অসভ্য তুমি। কলেজে ত এরকম ছিলে না।

অয়ন ঘোরে ছিল শালুর সান্নিধ্য তাকে মাতাল করেছে। একটা গান মনে পড়ে গেল ঃ
চাঁদ তুমি কেন এতো সুন্দর হলে:
চাঁদ তুমি কেন এতো সুন্দর হলে
তোমায় দেখে আমি মনের জানলা খুলে
পূর্ণিমাতে তুমি জেন অপরূপ লাগো
আমার প্রেয়সী বলে তুমি ভাল লাগো...(১)
একমুঠো আকাশে ভরা জ্যোৎস্না দিলে
অবাক হয়ে দেখি তোমায় সব ভুলে
রাত্রির অন্ধকার যেন যাতনা ভরা
ভুলে আছি আমি দেখে জোছনা ভরা...(২)
তারা ভরা আকাশে মেঘ ছিল বেশ
আমার কথাটা-তো হয়নিক শেষ
চাঁদের আলো এলো আমার দ্বারে
মনের জানালা খুলে এলো মোর ঘরে...(৩)
চাঁদ তুমি কেন এতো সুন্দর হলে
তোমায় দেখে আমি মনের জানলা খুলে
পূর্ণিমাতে তুমি জেন অপরূপ লাগো
আমার প্রেয়সী বলে তুমি ভাল লাগো...

শালিনী গান শুনছিল। খুব সুন্দর গানটা।
রাত অনেক হল শালু, ডাইনিং টেবিলে তোরা চলে আয় মা।
অয়ন অপ্রস্তুত হয়ে বলে, ‘আজ আসি’। বাকিটা কাল পাওনা রইলো, কেমন!
এই বলে উঠে পড়ে।
শালু অয়নকে দোর অব্ধি এগিয়ে দিল সঙ্গে মা। মা বলেন তুমি রাতের ডিনারটা এখানে সেরে জেতে বাবা!
না মাসিমা আবার একদিন আসবো। আজ অনেক খেয়েছি শালুর দিকে তাকিয়ে বলল।
আচ্ছা এসো বাবা। সাবধানে যেও কেমন।
আচ্ছা। আসি তবে।
এসো।
শালিনীর আজ দিনটা অন্য রকম কাটল। এরকম ওর কোনদিন হয়নি। আজ পর্যন্ত মন খুলে কারুর সঙ্গে কথা ব্যকন্ত, এক বাবা ছাড়া। বাবার জন্য মনটা খুব উতলা হয় মাঝে মাঝে। চোখে জল আসে। নিজেকে বোঝায়। সবাই ত সব সময় থাকবেনা পৃথিবীতে। যার যতদিন পরমায়ু সে তত দিন থাকবে। এটাই নিয়তির নিয়ম।
আয়নার সামনে শালু দাঁড়িয়ে।
আয়নার ভেতোরের শালু র প্রশ্নঃ কি আজ যে বেশ খুশি খুশি লাগছে। তোমার রিসার্চ তোমার পড়াশুনো সব জলাঞ্জলি দিলে ওই ছেলেটির জন্য! বাঃ শালিনী বাঃ!!
আমিও মানুষ আমার ও ইচ্ছা আছে। এতো দিন শুধু পড়াশুনো করেছি আর পড়িয়েছি। আজ নিজে পড়ছি।
কি?
ভালোবাসার পড়া। ওটাও দরকার।
তাইনাকি? তবে তোমার মা সারদামনির আশ্রম?
না ওটা আমার দ্বারা হবেনা। আমি অত কঠোর হতে পারবোনা। আমাকে জীবনের স্বাদ নিতে হবে। তা ছাড়া আমি চাইনা মাকে দুঃখ দিতে। মা দিন দিন আমার জন্য যা চিন্তা করছিলেন তাতে মায়ের অসুখ হত। আমি তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারতামনা। আমার দিদি জামাইবাবু সকলে আমার ওপর অখুশি ছিলেন। আমার নিজের জন্য আমি অন্যদের আর মনে কষ্ট দিতে রাজি নই। দেখা যাগ কি হয়।
ও আচ্ছা। তা বেশ। তবে তুমি অয়নকে ভালবেসে ফেলেছ।
বিয়ে জখন করতেই হবে তখন জাকে চিনি জানি তাকেই না হয় করলাম তাতে ক্ষতি কি!
হ্যাঁ তাও ঠিক।
তবে আর কেন এবার এসো। আমার ঘুম পেয়েছে। 



আগামী সংখ্যায় সমাপ্য । 



পরিচিতি 




Previous Post Next Post