তৈমুর মল্লিক

toimur








পঞ্চতটের বাঁশরি 



নিশিবনে মধুরতায় আহামরি শ্লেষ
পদব্রজে নাব্যতটে বালুকার রেশ
বৃক্ষরাজি কবিতায় বেঁধেছিল ঘর
পাঁথরের কুঞ্জবনে আলাপনি নর
সোহাগের চাদরের বুনায়নে চর
বিভীষিকা আচ্ছাদনে কৃচ্ছতায় পর
নিশিদিন জেগেথাকা চঞ্চলার পথ
নাব্যতটে বালুকার জাগানিয়া রথ
নিশিবন হাসবেই সময়ের রনে
পাঁথরের কুঞ্জবন বিগলিত ক্ষণে
জীবনের মর্যাদায় পদযাত্রা হবে
জনাকির্ন পরবাস সুলক্ষণা রবে
এসেছিল যৌবনের পরাক্রমি বল
সৌখিনতা জরাজির্ন আস্তাবলে ছল ।।


প্রকৃতি আমি





প্রকৃতি আমি –
সুচনার একতারায় কথা বলি
এখনও পায়নি ক্ষমা অনেক রাতের কান্না
চুলের কাঁটার ক্ষত রয়ে গেছে বংশ ধারায়
চন্দ্রিমা সেদিন হেসে বলেছিল
রঙ আমার মন্দ নয়
বলবে কথা আমার সনে
চেয়ে থেকে ঐ ধ্রুব তারায়
বিগলিত অশ্রুর নির্লিপ্ততায় ?
ক্ষমাকরো – ক্ষমাকরো শকুন্তলা –
দুইতিরে চেয়ে দেখো ধুধু বালুকাময়
ভালোবাসা এখন সপ্তর্ষি নদী
অন্তর্ধানে তুমি থেকো সহায় ।
আজ হাসিতে কদম ফুটেছে
গোলাপ বেঁধেছে ঘর –
বেসেছি ভালো ভাবিনি কভু
আমি কার কে আমার ।।


আশার খেলাঘর 





সুখের কাব্য রচনার আশে
কতনা পথ দিয়েছি পাড়ি
অচেনা স্কন্ধে তোমার ছন্দে
গড়েছি শেষে আপন বাড়ি ।।

মন্থর নয় অচিন্ত পথে
সোহাগী তিথি হাঁসবে বলে
চামেলি বনে চলতে গিয়ে
পৃথক মনে বলগা চলে ।।

নির্বোধ পালা সুরেলা মনে
হয়তো বসে গাইবে গান
তোমাতে এই পবন কাব্য
সারথি হবে রাখবে মাণ ।।

আমার হেলা লালিত সুখে
যাপিত হবে রাতের বেলা
যামিনী রবে সূর্যের সাথে
কামিনী হবে চন্দ্রের খেলা ।।



দেখেছি আমি 





সূর্যদয় দেখেছি আমি -
হেঁটেছিলে যখন আঁশে
ডুবন্ত গোধূলির অক্ষি -
বলেছিল অধরার সাথে
কিঞ্চিৎ পরিক্রমায় -
আসবেই নীলিমার পাশে ।

নৌকার পালে বাতাস –
দেখেছি নীল প্রনয়া সবে
কুয়াশায় ঢাকা পৃথ্বী –
হেসেছিল শিশিরের সাথে  
চন্দ্রের রুপের ঘটা –
বাতায়নে ভুলন্ঠিত রবে ।

তোমার হাসির লগ্ন –
দেখেছি সবুজ চাঁদরে দাঁড়ি
শাপলা শালুক মগ্ন –
হয়েছিল ডাহুকের সাথে
রেখেছিল স্বপ্নের ওলি –
পতঙ্গ কুলক্ষণায় ছাড়ি ।

পবনের হুঙ্কারে –
দেখেছি অনেক রবি রব
ললাটের লিপি ক্ষণ –
এসেছিল সাথে নিয়ে পণ
বীণায় বাজবে সূর –
বিশ্বাস ভালোবাসার সব ।।


মনের আকুতি 





ছোট সেই ঘরে তনূ মন
রাত জাগা পাখী ক্লান্ত পণ
তবু খুঁজে ফেরে নব দিন
পাবে কিনা পাবে লব্দ বীণ
এসো সবে যাই চলে তটে
লক্ষ হারা রাতে যদি জোটে
সুক্ষ মরু বক্ষ হল লীন
কুঞ্জ বনে চক্ষু রবে ক্ষীণ
মন বলে রবে তুমি পাশে
মিষ্টি করে যদি পাংশু হাসে
আজ বুঝি হবে দেখা সবে
নগ্ন হেলা কোথা কবে যাবে
গান হলো সঙ্গী পণ করে
জানি রবে পংতি ঝরো ঝরে
বলি শোন ওরে রতি দাও
কবে হবে বড় ছোট নাও
হবে যবে দিন রাত সনে
ছোট সেই ঘর রবে মনে ।।

অসময়ে একটা রুটি ?





বন্ধু তুমি বসুধার কোলে নয়কো দৃষ্টিহীন
পাতাবাহার , কলমিলতা – লজ্জাবতীর
মাতৃহারা কান্নায় চর্মরজ্জু হলো বিলীন ।

শাসকের শাসনে আদম শুমারির নীতি
সার্সি বসানো দিকচক্রবাল – চক্রাকারে
কিছুটা শান্ত কিঞ্চিৎ নৃত্যে যাবে অবসরে ।

আচ্ছাদিত চর্মরোগে কিসের পরিপাটী
উদর পূর্ণতার চোরা পথে একজোটে
অসময়ে একটা রুটি ?


হৃদয়ের গোপন কথা 





শেষ পর্যন্ত যখন আসবে ছুটে সকল গৃষ্মের উজ্জ্বলতা
জীবনের উষ্ণ দিনগুলি দ্রুত পাড়ি দেবে
তোমার সুন্দর আঙ্গুলগুলো তাদের জাপটে ধরবে
ধরবেই শেষ পর্যন্ত ।
নীল পাখীটা যখন পাতাহীন গাছে
ছোট সেই নীড় তৈরিতে আর আসবে না
শীতের নিষ্পাপ শিশুপুত্র যখন চড়ে বেড়াবে এদিক সেদিক
কিন্তু তুমি, তোমার হৃদয় ঠিক তখন আমায় ভালোবাসবে ।

যদি আমার ললাটে- আমার কপলে – আমার জমিতে
ঘনীভূত ছায়া দেখতে পাও, বিশ্বাস করো –
অনুতাপের লাঙল আমি চালিয়ে যাবো
ভেঙ্গে ফেলতে সকল কিছু – জন্মাতে
ফুলে ভরা ঘাসের আস্তরণ ।
ধারন করো ভালোবাসার সংকল্প প্রতাপের সাথে
আমার কষ্ট, কুয়াশায় ঢাকা অবয়ব
অন্ধকারে আচ্ছাদিত হৃদয় থাকা সত্ত্বেও
তুমি আমাকে ভালোবাসবে ।

আমি আমার নষ্ট হয়ে যাওয়া চোখের জল
আর গণনা করবো না –
তারা তাদের পতিত ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে

শোক প্রকাশের নির্জন বছর আমি ভুলে যেতে চাই
যার প্রতিটা ঘন্টায় আমার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেছে
দেরিতে হলেও আমার ভালোবাসা শক্তিতে বলীয়ান
আমার আত্মা ঠিক এটা ধরে রাখবে ।।

বাজারটা মন্দা 





সাহেব বলেন ঈদের দিনটি কবে ?
মোসাহেব বলেন –হুজুর আপনি বলবেন যবে
ঈদ না হয় সেদিনটায় হবে ।
বিদ্রীহি কবি নজরুল তুলে ছিলেন আঙুল,
সাহেব আর মোসাহেব বলে
সেটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ।
চলো যাই জলসায় -
যে ভাবেই হোক ব্যাবসা আমার চাই ,
মোসাহেব বলেন হুজুর এই ছাড়া যে
আর কোন গতি নেই ।
উতকোষ হারিয়ে গেছে , কাজে কর্মে মন্দা ,
মোসাহেব বলেন হুজুর -
আমি কি চির বন্ধ্যা ?
হে হে হে মোসাহেব তুমি যে ভারী মজার
পদক চাও – পেয়ে যাবে ,
তাহলে যে আমার জন্য কানটা চুলকে দিতে হবে ।
মোসাহেব বলে- এ আর এমন কি
ধরে আনতে লক্ষি
যাব আমি তেপান্তরে - থাকুক যতই অলক্ষি ।
সাহেব মিয়া বেজায় খুশি –
মোসাহেব হোক পরবাসী –
কি যায় আসে ? আমিতো হয়ে নেই জৌলুসি ।
মন্দা আমার কাটাতে চাই,
বাঘের গাল আর ছাগলের পাল
চেটে খেতে আমার কোন মানা নাই –
কারণ আমি যে চির গোঁসাই ।।


একটি পাখী ও একটি পেন্সিল 






স্বরলিপি ছন্দে কাঁদে বেঁধে রাখতে মন
উড়ে যাওয়া পাখীর পালক ঝরা ক্ষণ
ঝরেছে যখন কৃষ্টি অলস রাত কাঁদে
স্বরলিপি রয়েযায় বয়সন্ধির ফাঁদে ।

নীড়ে ফেরা আহ্বান লেখনীর সীমায়
ধূপের মৃত্যুর দিন রবেই অনিদ্রায়
মন্থর হাসি মরুর জীবন সাথী খোঁজে
স্বরলিপি আসবেই নীলাভ পদব্রজে ।

লিখে চলা পেন্সিলের শিষ্টাচার আশু
চলার পথে মিষ্টতা রবে সঞ্চিতা বসু
কল্লোল রবে চঞ্চল দুর্জয়ে হবে অসি
জয়ের ধারায় লগ্ন নির্বাসিত হবে মসী ।।


স্মৃতিতে অম্লান 





আজ হতে আলোক বর্ষ পরে
পিছে যদি ফিরে  দেখো –
পাবে কি তোমায় তোমার মত করে ,
নিতম্বে পাবে অষ্ট ক্ষত –
হৃদয়ে পাবে কুৎসিত কালো আঁধার ।
এরপর ?
এরপর শুধুই শূন্যতা ।
কি চেয়েছিলে – পেয়েছিলে কি
অজানা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে শুধুই ফিরে দেখা ।
হটাত একটা বিন্দু –
সিন্ধুর পাড়ে কুহেলিকার অন্তর্ধানে
প্রসবিত অক্টোপাসের সেই চিত্র –
কপালকুণ্ডলার মতো বিচিত্র –
আর কি দেখতে পাও ?
যেদিন আহারের পাত্রে পড়েছিল লাথি
উদর পূর্তিতে ছিল শুধু অবজ্ঞা অবহেলা
আর ছিল ?
আর ছিল ছোট একটা না ফোঁটা গোলাপ ।
জীবন ছিল, দর্শন ছিল, ছিল – ছিল – ছিল
শুধু তোমার জন্য ভালোবাসা ।
আলোক বর্ষতেও তুমি –
শতকষ্টের মাঝে শুধুই তুমি –
যাছিল আমার প্রথম যাত্রার প্রত্যাশা ।।


অবশেষে শেষ বিচার 





শোক শোকাহত
আত্মহননের একফোঁটা রক্তের দামে
নৈশর্গের প্রাচীর পিচ্ছিল হলো কবে ?
যবনিকার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে উৎসুক জনতার
রুগ্ন চক্ষু কখন ঘুমিয়ে যাবে ?
মশালের আলোতে দিব্যময় একটা ছবির
রূপ রাঙা উপখ্যানে ইতিহাস কথা বলে –
পৌরনিক উপকথার রসালো ভালোবাসায়
সিক্ত এ হৃদয় মন্থর থেকে মন্থর –
তবুও চাঁদ ওঠে সূর্য হাসে –
মেঘমালা বিছিয়ে দেয়  বহুরূপি রূপের চাঁদর ।
কেঁদে কেঁদে উর্মিমালা বলে –
ওরে শকুন্তলা বাতাসে কিসের গন্ধ ?
আন্তঃশক্তির উৎস রচনায় তোর আঁচলে কিসের ফুল ?
লক্ষভ্রস্ট কর্পুরের চেতনা কি করে
বাতায়নের কথা বলবে ?
বাতাসে যদি হারিয়ে যায় অন্ধকারে -
সে যে চির অতীত ।
আজ শতাব্দীর হস্তরেখা
গতির সাথে পাল্লা দিয়ে বিপরিদ মুখী -
সমমেরুতে বিকর্ষন রীতি হয়ে গেছে
তবে কি চুম্বক পাহাড় গ্রাস করেছে সভ্যতাকে ?
উষ্ণতায় ভর করেছে কিছুটা আদ্রতার
রংপাল্টাবে এটাই স্বাভাবিক ।
অস্বাভাবিক হবে সেটাই
যেখানে একমুঠো আলো তুলে নিতে পারবো
নীলিমার ছত্রছায়ায় ।।



Previous Post Next Post