আজ আমরা ‘আত্মার সান্নিধ্যে’ র পক্ষ থেকে মুখোমুখি বিশিষ্ট গল্পকার , ঔপন্যাসিক এবং সম্পাদক শ্রী তপন কিরণ রায় এর । সবার প্রিয় মানিক দা । বয়স হার মানায় না সাহিত্যকে । স্মৃতিকেও । প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতি হয়তো সাময়িক ভ্রূকুটি হানে , কিন্তু একেবারে থেমে যায় না সৃষ্টি । মনে মনে গল্প তৈরী হয় । সবসময় লিখে ওঠা হয় না । শরীরে দেয় না ।
যাদের সাথে একদিন তাঁর নিয়মিত ওঠবোস ছিল , তাদের অনেকেই আর ইহজগতে নেই, তাঁর সম্পাদক জীবনে যারা কাছাকাছি ছিল , অনেকেই জীবন জীবিকার সংগ্রামে সরে গেছে খানিক , কিন্তু পরিপূর্ণ রয়ে গেছে তার গল্পের ঝুলি , রয়ে গেছে তাঁদের লেখা অজস্র চিঠি , কে নেই সেই তালিকায় , শক্তি চট্টোপাধ্যায় , সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , পূর্ণেন্দু পত্রী , রবীন সুর , দেবকুমার বসু , ব্রত চক্রবর্তী , অমিতাভ দাসগুপ্ত , অসিত গুপ্ত , অমিয় ভূষণ মজুমদার , জ্যোছনেব্দু চক্রবর্তী , শৈলেশ দে (‘আমি সুভাষ বলছি’, খ্যাত ) , বিমল ঘোষ , ইনি চোমং লামা নামে লেখেন । তাদের নিজেদের হাতে লিখে দেওয়া পুর্ণাঙ্গ কবিতা তাঁর ডায়েরির পাতায় পাতায় , যেগুলি হয়তো আজও প্রকাশিত হয় নি অন্যকোথাও । এখানে সাহিত্যসভা করতে এসে তাঁর বাড়িতে তাঁরা অগুন্তিবার থেকেছেন , তাঁর মা , প্রভাবতী দেবীর নিজ হাতের রান্না খেয়েছেন , রাতভর আড্ডা হয়েছে । গল্পে গল্পে কিভাবে ঘন্টা তিনেক পেরিয়ে গেল। হুঁশ হোলো আজ আর সন্ধ্যের খাওয়া হয় নি তাঁর , এক কাপ চা খেয়েছেন শুধু আমার সাথে , আমি মিষ্টি খেয়েছি গল্প করতে করতে আর তিনি প্রাণ খুলে বলে গেছেন পুরোনো সেই দিনের কথা । এই প্রথম আমি কোনো হোমওয়ার্ক করে আসিনি , কোন আগে থেকে তৈরী করা প্রশ্নপত্র নেই আমার হাতে । আমি একটা চান্স নিয়েছিলাম , যদি সুস্থ থাকেন , যদি মুড ভালো থাকে , গল্প করবো তাঁর সাথে । ইদানীং প্রায়ই শরীর ভালোথাকে না তাঁর , একা একা বাইরে যাওয়াও প্রায় বন্ধ । স্মৃতি কিন্তু দিব্যি টনটনে । পুরোনো দিনের কথায় , তাঁর ভালোবাসার কথায় চকচক করতে থাকে চোখ দুটো ।
আসলে এ আমারো দায় কম নয় । আজকের প্রজন্মের কাছে আমাদের পথপ্রদর্শকদের তুলে ধরার , মনে করিয়ে দেবার , কি আমাদের উত্তরাধিকার। কোমরে বেল্ট বাঁধা অবস্থাতেই গল্প করছেন বসে বসে , মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে বইএর আলমারি থেকে বের করে আনছেন তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার বান্ডিল , ডায়েরি , চিঠির তাড়া , আমায় বলছেন , ‘নিয়ে যাও সব , তুমি তো আমার নিজের লোক , ভালোবাসার জন, ভালোবেসে এসেছ আমার কাছে, আমার আত্মজ’। প্রায় হাঁ হাঁ করে উঠি , ‘তা কি করে হয় , এই যে তুমি কথা বলছ আমার সাথে , শেয়ার করছ তোমার ফেলে আসা দিনের মণিমাণিক্য , আমায় দেখতে দিচ্ছ, ছুঁতে দিচ্ছ , এই যে আমি ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছি সেসবের , সেই তো অনেক , একদিনে তো এই গল্প ফূরোয় না , একবারে দেখে ওঠা যায় না এই রত্নভান্ডার । তুমি ভালোথাকো, সুস্থ থাকো, আবার আসবো আমি, আবার গল্প করবো তোমার সাথে , আরো কত কি জানার রইল বাকী , তুমিও তো আরো অনেককিছুই বলতে পারো আমাকে , তাই না ?’
অনাবিল হাসিতে শিশুর সারল্যে ভরে ওঠে অকৃতদার , সদালাপী , বিরাশি বছরের মুখটি , আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি , পা ছুঁয়ে প্রণাম করি । কথা বলতে বলতেই তাঁর বন্ধু , সহযোদ্ধা প্রখ্যাত কবি নীরদ রায়ের অসুস্থতার খবর জানাই , চোখ ছলছল করে ওঠে , তিনি ডুবে যান স্মৃতি চারণায় , সুদীর্ঘ আটচল্লিশ বছর আগে , তাঁর সম্পাদনাতেই কবি নীরদ রায় এর প্রথম কবিতা প্রকাশ , ‘আমি চলে যাব’ সেই কবিতার নাম ছিল , কিন্তু চলে যাবার জন্য আসেন নি নীরদ রায়, কালে দিনে বিখ্যাত কবি হয়ে উঠেছেন , এভাবেই চলতে থাকে গল্পের রেল গড়গড়িয়ে , তিন ঘন্টার সেই কথোপকথন এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব নয় , আমি কিছুটা রেখে দিচ্ছি পরবর্তী সুযোগের জন্য … এবার একটু সাজিয়ে দি তার ভাষ্য , পাঠকের সুবিধার্থে ।
শর্মিষ্ঠা- কবে প্রথম লেখা শুরু করেছিলে ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি । ভোর বেলা উঠে লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প লিখি । চোদ্দটা গল্প লেখা হয়ে গেছে ততদিনে । একদিন বাবার কাছে ধরা পড়ে গেলাম । আমার বাবা, স্বর্গত সঞ্জীব চন্দ্র রায় ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী মানুষ । তিনি ছিলেন জমিদার । পূর্ব পাকিস্থানে আমাদের আসল বাড়ি । আমার ঠাকুরদার নামে একটি গ্রণ্থাগার ছিল , ‘উমেশ সাহিত্য মন্দির ‘ । আমি সেখানে গিয়ে গিয়ে বই পড়তাম । প্রচুর বই ছিল সেখানে । তো বাবা একদিন রাত জেগে লেখার সময় আমায় ধরে ফেললেন , ‘দেখি তো, মানিক , কি লেখে লুকিয়ে লুকিয়ে’ । আমি তো ভয়ে কাঠ । কিন্তু বাবা খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব পড়লেন । বানান ভুল ছিল কয়েকটা । ঠিক করে দিলেন । অভিধান ধরিয়ে দিলেন আমায় । এভাবেই প্রথম প্রেরণা আর উৎসাহ পেয়েছি বাবার কাছ থেকে । পূর্ব পাকিস্থানে আমাদের সেই বাড়িতে আঠেরোটা ঘর ছিল । আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ওরা । সতেরোদিন ধরে পুড়েছিল আমাদের বাড়ি । তারপর তো রায়গঞ্জ এ চলে আসি , উকিল পাড়ায় । যাইহোক , আমার প্রথম গল্প ,’সায়াণ্হে’। প্রকাশিত হয়েছিল , কোলকাতার বিখ্যাত ‘পুর্বাশা ‘ পত্রিকায় ।
শর্মিষ্ঠা - আর সম্পাদনা শুরু হল কিভাবে ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- দাদার বিয়েতে কোলকাতায় গেছি । বৌদিকে নিয়ে আসার সময় পথে আলাপ হল সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক কবিরুল ইসলামের সাথে । তিনি আমাকে নিয়ে যান সঞ্জয় ভট্টাচার্যের কাছে , তিনি ই ‘পুর্বাশা’ পত্রিকার সম্পাদক । এনার তাগিদেই আমার সম্পাদনায় আসা । উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন , ‘রায়গঞ্জে পত্রিকা আছে ?’, আমি বললাম , ‘না তো , এঈ মুহূর্তে পত্রিকা নেই । আগে কয়েকটা বের হোতো । সাতবছর হোলো বন্ধ । ‘। তো আমি ভাবলাম , এমন একটা পত্রিকা করবো , নতুনরা লিখবে । তখন আমি আর জয় নারায়ণ সাহা মহাশয় রায়গঞ্জে নতুন যারা লিখছে তাদের সাথে যোগাযোগ করি । রায়গঞ্জ রেল স্টেশনে ছিল আমাদের আড্ডা । আমি , নীরদ , কমল টকিজের মালিক ঝন্টু নাগ এরা সবাই মিলে ঠিক করলাম , আমাদের পত্রিকা বের হবে । প্রেমেন্দ্র মিত্র দিলেন নাম , পত্রিকা পরিচিত হোলো ‘অভিযান’ নামে । এই পত্রিকা চলেছিল পনেরো বছর । আমার আর জয় নারায়ণ সাহার যুগ্ম সম্পাদনায় । তারপর বন্ধ হয়ে যায় । আমার বয়স হচ্ছিল । জয় নারায়ণকে পাচ্ছিলাম না সেভাবে । তারপর আমার একক সম্পাদনায় দের হোলো ‘মধুস্বর’, ‘অভিযান পত্রিকার মুখপত্র’ হিসেবে, সেটা চলল একবছর । আমরা এটার রেজিস্ট্রেশান ও পেয়ে গিয়েছিলাম । কিন্তু চালাতে পারলাম না । কিছুদিন চুপচাপ । একদিন নীরদের বাড়ি গেছি । ওর স্ত্রী ছায়া রায় সাহিত্যানুরাগী , বলল , ‘কি, কিছু করুন’। তখন ঠিক হলো , ‘প্রগতি’, বের করবো । ছায়া প্রচুর সাহায্য করেছে । প্রগতি নীরদের মেয়ের নাম । তো সেই নামেই পত্রিকা বের হোলো । এটাও চলেছে পনেরো বছর , আমার সম্পাদনায় ।
শর্মিষ্ঠা - কারা কারা ছিলেন সেই লেখক গোষ্ঠীতে ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- অনেকেই ছিলেন । সুতপা ব্যানার্জী , নীরদ রায়ের প্রথম কবিতা আমার পত্রিকায় , নিমাই শঙ্কর রুদ্র , ইনি রায়গঞ্জ ইন্সটিটিউটের জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন , সুশান্ত আচার্য , এনাক্ষী আচার্য , জীবেশ দাস , শান্তনু প্রামাণিক , জয় নারায়ণ সাহা , হরি নারায়ণ রায় , আমি নিজে , ব্রততী ঘোষ রায় , সুনন্দা গোস্বামী , প্রায় একশো জন তরুণ কবি সাহিত্যিক এসেছেন আমার বাড়িতে । থেকেছেন , আড্ডা দিয়েছেন । তোমার বাবা , মৃন্ময় ঘোষও প্রথম লিখেছিল আমার পত্রিকায় । খুব ভালোছেলে । আর আমার খুব প্রিয় ছিল সমীর ঘোষ । তোমার জেঠু । সে তো সংসারের জন্য অনেক স্ট্রাগল করেছে । একসাথে সাহিত্য নিয়ে আড্ডা মারতাম আমরা ।
শর্মিষ্ঠা - আর টাকার যোগাড় হল কিভাবে ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- বিভিন্ন বইএর দোকানে আমরা যেতাম । সাহিত্য প্রেমী মানুষেরা দিতেন । বিজ্ঞাপন ছিল পনেরো টাকা , ফুল পেজ পঁচিশ টাকা । নীরদ চাকরি করতো । সে দিত কিছু । বাকিটা নিজেরা দিয়ে পত্রিকা বের হত । আমরা দোরে দোরে পত্রিকা বিক্রি করেছি । প্রথমবার পত্রিকা ছেপেছিল রায়গঞ্জ কোওপারেটিভ সোসাইটি । সে আর বই দেয় না, দেয় না, বারোমাস লাগিয়ে দিয়েছিল পত্রিকা ছাপতে ।
শর্মিষ্ঠা - এখনো কি বের হয় পত্রিকাটা ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- না , আর পারি না । অসুস্থ হয়ে পড়লাম । লোকবল নেই । বন্ধ করে দিতে হোলো । আমারো নানাদিক থেকে লেখার তাগাদা আসতে লাগলো । ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ।
শ্রী তপন কিরণ রায়- না , আর পারি না । অসুস্থ হয়ে পড়লাম । লোকবল নেই । বন্ধ করে দিতে হোলো । আমারো নানাদিক থেকে লেখার তাগাদা আসতে লাগলো । ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ।
শর্মিষ্ঠা - খারাপ লাগে না ? এতবছর ধরে চালাবার পর বন্ধ করে দিতে ? ধর , যদি কেউ এগিয়ে আসে , দ্বায়িত্ব নেয় …
শ্রী তপন কিরণ রায়- খারাপ তো অবশ্যই লাগে। কিন্তু এত দায় কে নেবে ? এতো অনেক সময় আর দ্বায়িত্বের কাজ । লেখা যোগাড় করা , প্রুফ কারেকশান , দৌড়াদৌড়ি , অনেক অর্থেরও ব্যাপার । কে এতকিছু করবে ? এখন লিখি আপন মনে । এমুহূর্তেও চারটে গল্প রেডি আছে , কাউকে দিই নি ।
শর্মিষ্ঠা - কেন ? না দিলে আমরা কিভাবে পাবো ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- সম্মান দক্ষিণা না পেলে দেব না ।
শ্রী তপন কিরণ রায়- সম্মান দক্ষিণা না পেলে দেব না ।
শর্মিষ্ঠা - কিন্তু কোনো লিটিল ম্যাগ ই তো পয়সা দেয় না , কয়েকটি বাণিজ্যিক পত্রিকা ছাড়া ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- শোনো , এটা আসলে অভিমানের কথা । আমার কাছে এসে না চাইলে কাউকে দেব না ।
শর্মিষ্ঠা - তোমার পত্রিকায় তো মণিমুক্তোর ছড়াছড়ি , কে নেই সেই তালিকায় ? প্রেমেন্দ্র মিত্র, শক্তি চট্টোপাধ্যায় , সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , পূর্ণেন্দু পত্রী , রবীন সুর , দেবকুমার বসু , ব্রত চক্রবর্তী , অমিতাভ দাসগুপ্ত , অসিত গুপ্ত , অমিয় ভূষণ মজুমদার , জ্যোছনেব্দু চক্রবর্তী , শৈলেশ দাশ, বিমল ঘোষ , শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় , পূণ্যশ্লোক দাসগুপ্ত … কত আর বলবো , তুমি কি তাদের পয়সা দিতে পেরেছ ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- না, তারা লিখেছেন স্রেফ ভালোবাসার টানে । তাদের অনেকের সাথেই আমৃত্যু বন্ধুত্ব ছিল, শ্রদ্ধা করতাম তাদের , ভালোবাসতাম , বদলে আমিও ভালোবাসা পেয়েছি তাদের । এই যে তুমি এসেছ আজ , সেও তো ভালোবেসেই । তোমাকেই শোনাবো সেই নতুন লেখা গল্প ।
শর্মিষ্ঠা - তোমার কি কি গল্প সংগ্রহ আছে ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- আমার প্রথম বই এর নাম ‘মুখ’ । এটি হিন্দীতে অনুদিত হয়েছে । দ্বিতীয়টি , ‘তোমার জন্য’। তুহিন চন্দ বের করেছিল । আমি সারা জীবনে একটাই কবিতা লিখেছি ।
শ্রী তপন কিরণ রায়- আমার প্রথম বই এর নাম ‘মুখ’ । এটি হিন্দীতে অনুদিত হয়েছে । দ্বিতীয়টি , ‘তোমার জন্য’। তুহিন চন্দ বের করেছিল । আমি সারা জীবনে একটাই কবিতা লিখেছি ।
শর্মিষ্ঠা - উপন্যাস আছে তো তোমার ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- উপন্যাস আছে তিনটে । প্রথমটি , ‘যাযাবরী ছন্দ’, সার্কাসের লোকেদের জীবন নিয়ে লেখা । আমাদের বাড়ির পাশের মাঠে সার্কাস আসত । বারোখানা সার্কাসের লোকের জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে দেখার পর এই উপন্যাস লিখি । অটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘অভিযান’ এ । দ্বিতীয়টি , ‘একটি জিজ্ঞাসা’। আর তিন নম্বরটির নাম, ‘রজনীগন্ধা’, প্রকাশিত হয়েছিল একটি লিটিল ম্যাগাজিনে ।
শর্মিষ্ঠা - প্রাতিষ্ঠানিক সম্মান কি কি পেয়েছ ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- সেও তো অনেকই পেয়েছি । আমাকে প্রথম সম্মান দিয়েছেন অরুণ চক্রবর্তী । তার আগে অনেক বঞ্চনা অবহেলার ইতিহাসও আছে । আমি মোট একুশবার পুরস্কার পেয়েছি, তার মধ্যে ‘সমগ্র উত্তরবঙ্গ ‘ হয়েছি তিনবার ।
শ্রী তপন কিরণ রায়- সেও তো অনেকই পেয়েছি । আমাকে প্রথম সম্মান দিয়েছেন অরুণ চক্রবর্তী । তার আগে অনেক বঞ্চনা অবহেলার ইতিহাসও আছে । আমি মোট একুশবার পুরস্কার পেয়েছি, তার মধ্যে ‘সমগ্র উত্তরবঙ্গ ‘ হয়েছি তিনবার ।
শর্মিষ্ঠা - ‘কৃত্তিবাস’ আর ‘নতুন কৃত্তিবাসের’ আদালতের লড়াই সম্পর্কে কিছু বলবে ?
শ্রী তপন কিরণ রায়- আমি অত্যন্ত ব্যাথিত এসবে । আমার কাছে যারা এসেছে , সবাই এসেছে রাজনীতির তকমাটা ফেলে দিয়ে । টোটালি সাহিত্যের জন্য , তাদের মধ্যে নকশাল ছেলেরা ছিল , কংগ্রেস ছিল , আমি কোনদিন সাহিত্যে এটাকে প্রশ্রয় দিই নি ।
শর্মিষ্ঠা - সাহিত্যে যৌনতা বিষয়ে কিছু …
শ্রী তপন কিরণ রায়- মজার গল্প বলি তবে । আমার আসল নাম কিন্তু ছিল তপন কুমার রায় । আমার প্রথম দু তিনটে গল্প তখন ছাপা হয়েছে । আর একজন তপন কুমার রায় ও গল্প লিখছেন। একদিন আমার বৌদি বললেন , ‘কি মানিক , তুমি এসব কি লিখছ , সেক্স টেক্স নিয়ে’? আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম । বাবাকে বললাম , আমার গুরু শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হরিশ দেবনাথ আমাকে খুব স্নেহ করতেন , তাঁকে বললাম , তারপর তিনি সমাধান করে দিলেন , তিনি আমাকে নাম দিলেন তপন কিরণ রায় । তাঁর নিজের ছেলের নাম ছিল , প্রখর কিরণ রায় । আমি অশ্লীলতাকে আনতে চাই না সাহিত্যে । একবার সমরেশ বসু এসেছিলেন আমাদের ডাকে , রায়গঞ্জ ইন্সটীটিউটে ভাষন দিয়েছিলেন , সাহিত্যের শ্লীল অশ্লীল নিয়ে । তিনিও থেকে গেছেন আমাদের বাড়িতে । শীত কাল । আঠেরোজন কবি সাহিত্যিক এসেছেন বাইরে থেকে , নয়জন আমাদের বাড়ি , নয়জন নীরদের বাড়ি, লেপ ভাগাভাগি করে , আড্ডা মেরে কেটেছে , শক্তি চলে যাবার পর এক সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কি, রাত্রিটা কেমন কাটলো ‘? কিন্তু শক্তি যেখানে যাই করুক , এখানে এসে একটুও মাতলামী করে নি ।
শ্রী তপন কিরণ রায়- মজার গল্প বলি তবে । আমার আসল নাম কিন্তু ছিল তপন কুমার রায় । আমার প্রথম দু তিনটে গল্প তখন ছাপা হয়েছে । আর একজন তপন কুমার রায় ও গল্প লিখছেন। একদিন আমার বৌদি বললেন , ‘কি মানিক , তুমি এসব কি লিখছ , সেক্স টেক্স নিয়ে’? আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম । বাবাকে বললাম , আমার গুরু শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হরিশ দেবনাথ আমাকে খুব স্নেহ করতেন , তাঁকে বললাম , তারপর তিনি সমাধান করে দিলেন , তিনি আমাকে নাম দিলেন তপন কিরণ রায় । তাঁর নিজের ছেলের নাম ছিল , প্রখর কিরণ রায় । আমি অশ্লীলতাকে আনতে চাই না সাহিত্যে । একবার সমরেশ বসু এসেছিলেন আমাদের ডাকে , রায়গঞ্জ ইন্সটীটিউটে ভাষন দিয়েছিলেন , সাহিত্যের শ্লীল অশ্লীল নিয়ে । তিনিও থেকে গেছেন আমাদের বাড়িতে । শীত কাল । আঠেরোজন কবি সাহিত্যিক এসেছেন বাইরে থেকে , নয়জন আমাদের বাড়ি , নয়জন নীরদের বাড়ি, লেপ ভাগাভাগি করে , আড্ডা মেরে কেটেছে , শক্তি চলে যাবার পর এক সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কি, রাত্রিটা কেমন কাটলো ‘? কিন্তু শক্তি যেখানে যাই করুক , এখানে এসে একটুও মাতলামী করে নি ।
সুধী পাঠক - এই আড্ডা ছেড়ে আসতে মন চাইছিল না , কিন্তু ওনার খাবার সময় পার হয়ে গেছে অনেক্ষণ । একনাগাড়ে বসে আছেন । আমাকে লোভ সামলাতেই হবে এবার । কথা দিলাম আবার আসবো । গল্প শুনতে , নতুন লেখা , ভালোথেকো বটবৃক্ষ , লতাগুল্মের দেশে , আমাদের আরো চাই তোমার ছায়া । প্রণাম । ভালোবাসা ।
Tags:
একমুঠো প্রলাপ