-
নয় বছরের মেয়ে রেহানা স্কুলবাসে করে স্কুলে যায়, ওর বাড়ি থেকে স্কুলটা প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের পথ। ওর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার পর কিছুক্ষণ গাড়িতে ও একাই থাকে, সঙ্গে গাড়িকাকু আর ড্রাইভারকাকু। কিছুটা যাওয়ার পর ওর প্রিয় বন্ধু সুশ্মিতা ওঠে গাড়িতে ... তারপর একে-একে অন্যান্য বন্ধুরা উঠতে থাকে। ওরা সবাই গাড়িকাকুকে খুব ভালবাসে কারন গাড়িকাকু ওদের প্রত্যেকদিন অনেক অনেক ভুতের গল্প বলে। ওরা প্রত্যেকে গাড়িকাকুর ভুতের গল্প গুলো খুব উপভোগ করে, প্রত্যেকদিন গাড়িতে ওঠার পর রেহানা অধীর অপেক্ষায় থাকে কখন গাড়িকাকুর মুখ থেকে ভুতের গল্প শুনতে পাবে। আসলে সবাই গাড়িতে না উঠলে গাড়িকাকু আবার ভুতের গল্প বলবে না, অর্থাৎ গাড়িতে ওঠার পর জানলার কাছের সিটে বসে অপেক্ষায় থাকে সে ...
একদিন গাড়িকাকু ওদের সকলকে ভুতের গল্প বলতে বলতে জিজ্ঞেস করলেন, “হা রে, তোরা কেও অন্ধকার ভুতের ঘরে থাকতে পারবি? জানিস তো অন্ধকার ঘরে ভুত থাকে, ”
রেহানা বলল, “মা বলে অন্ধকার ঘরে ভুত না ভুতের রাজা থাকে, আমি তো ঘরে একাই শুই। যখন লোড শেডিং হয় তখন ঘর অন্ধকার হয়ে গেলেও আমি ভুতের ভয় পাই না, কারন আমার সঙ্গে ভুতের রাজা থাকে।
- তাহলে আমার চেনা একটা অন্ধকার ঘরে শুধু ভুত থাকে, সেই ঘরে তোকে নিয়ে যাব, থাকতে পারবি ?”
- ভুতের রাজা থাকবে তো, আমি অনায়াসে থাকতে পারবো, ভুতের রাজাই তো সব ভুতকে মেরে ফেলবে।” রেহানা হাসতে হাসতে বলল ...
সুশ্মিতা বলে উঠলো, “ভুতের রাজাকে কি ভয়ঙ্কর দেখতে গাড়িকাকু? ভয়ঙ্কর দেখতে না হলে আমিও যাব রেহানার সঙ্গে।”
গাড়িকাকু চোখদুটো বড় বড় করে বলল, “খুব ভয়ঙ্কর দেখতে, ভুতের থেকেও ভয়ঙ্কর!”
রেহানা গাড়িকাকুর কথা থামিয়ে দিয়ে বলল, “ভুতের রাজা বর দেয়, তুই যা চাইবি ঠিক তেমন তা পাবি, একদিন আমি অন্ধকারে ভয় পেয়ে ভুতের রাজার কাছে বলেছিলাম মাকে এখুনি আমার কাছে পাঠিয়ে দাও, তারপরেই দেখি মা মোমবাতি নিয়ে আমার ঘরে ঢুকছে। কিন্তু ভুতের রাজাকে আমি নিজের চোখে দেখিনি কখনও, মা বলে ভুতের রাজা শব্দটা কাগজে বড় বড় করে লিখে কাছে রেখে দিলেই উনি সব সময়ই তোর কাছে থাকবেন ।
সুশ্মিতা ভয় পেয়ে বলল, “তাহলে আমি যাবনা, যদি আমাকে দেখা দেয়!”
গাড়িকাকু হা হা হা করে হাসতে হাসতে বলল, “তাহলে কাওকে যেতে হবে না, রেহানাই যাবে ওই অন্ধকার বাড়িতে। কিরে রেহানা, যাবি তো?”
রেহানা বড় করে ঘাড় টা দুলিয়ে তার কথায় সায় দিল ...
পরের দিন গাড়িতে ওঠার পর আর রেহানা কে অপেক্ষা করে জানলার ধারে বসে থাকতে হয়নি, গাড়িকাকু নিজেই ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছিল, কিরে রেহানা, অন্ধকার বাড়িতে যাবি তো? রেহানা বলল, “আমি যাবই গাড়িকাকু, তবে প্রতিদিন আমি গাড়িতে ওঠার পর থেকেই তোমাকে ভুতের গল্প বলতে হবে।
- আরে পাগলা মেয়ে, আমি তো তোকে ভুতের গল্প বলতেই এলাম, আজ এখুনি থেকেই তোকে গল্প বলব, ওরা পরে আসুকগে। আচ্ছা, তুই আজ ওখানে যাবি বাড়িতে বলে এসেছিস?” গাড়িকাকু বলল ...
- না গো গাড়িকাকু একদম মনে ছিল না, তুমি একবার মাকে ফোন করে জানিয়ে দাও।
- ভুল করলি, জানিয়েই আসতে পারতিস... আচ্ছা আমি ঠিক সময়ে জানিয়ে দেবো, স্কুল থেকে ফেরার সময় যখন ওখানে নিয়ে যাব তখন।
স্কুল থেকে ফেরার পথে সাড়ে তিনটের পর সকলে গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিল। এবার রেহানা সেই অন্ধকার বাড়িতে যাবে গাড়িকাকুর সঙ্গে, প্রচণ্ড রকম উৎসাহ আর উত্তেজনা কাজ করছিল তার মধ্যে , ভুতের রাজা আর ভুতের মধ্যে যুদ্ধ দেখবে সে, স্কুলে গিয়েই সে বড় বড় হরফে ভুতের রাজা শব্দটা একটা কাগজে লিখে নিজের সঙ্গে এনেছিল ... কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়িটা একটা অচেনা নিরিবিলি জায়গায় এসে থামল, গাড়ি কাকু ওকে ইশারা করে ডাকল ... ও কাগজটাকে হাতমুঠো করে গাড়ি থেকে নামল ...
গাড়িকাকু ওকে বলল, আমার সঙ্গে আয়। ভুতেরা তোর জন্য রেডি হয়ে আছে, ভুতের রাজাকে সঙ্গে এনেছিস তো?
রেহানা হাসতে হাসতে বলল, দেখবে সব ভুতকেই আজকে আমার ভুতের রাজা মেরেই ফেলবে। দেখতে দেখতে রেহানা বাড়িটার ভেতরে প্রবেশ করল। রাজবাড়ি একটা, ফাটা দেওয়ালে এটা-ওটা গাছ বেরিয়েছে। গাড়িকাকু তাকে একটা অন্ধকার ঘরের সামনে নিয়ে গেল ... দরজাটা খোলাই ছিল, ওর হাতটা ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে গেল। অন্ধকারে রেহানা গাড়িকাকুর মুখটাও ঠিক করে দেখতে পেল না, কিছুটা যাওয়ার পর গাড়িকাকু তার হাতটা ছেড়ে দিল। অন্ধকারে হঠাৎ গাড়িকাকুকে না দেখতে পেয়ে খুব ভয় পেয়ে গেল... সে হাতে মুঠো করে ধরা কাগজটা বুকের কাছে ধরে প্রানপনে ভুতের রাজাকে ডাকতে লাগলো ... কিন্তু কিচ্ছু হল না, সে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, গাড়িকাকু, তুমি আমায় এই অন্ধকার থেকে বের করে নিয়ে চল না, আমার খুব ভয় করছে।
তার এই কান্নাটা মুহূর্তের মধ্যে ভয়ার্ত চিৎকারে পরিনত হল, তবে স্থায়ী হল না। কিছুক্ষণ পর মুখে রুমাল বাঁধা অবস্থায় চিৎকার করলে যেমন শব্দ হয়, ঠিক তেমন টা শোনা গেল বাইরে থেকে ... মিনিট দশ-এগারো পরে একটা গোঙানি শোনা যাওয়ার পর ভুতের বাড়ির পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। হয়ত অবশেষে ভুতেরাই জিতে গেল ভুত আর ভুতের রাজার যুদ্ধে ...
-
পরেরদিন সংবাদপত্রের শিরোনামে, “ধর্ষণের পর খুন নয় বছরের ছাত্রীকে, ধৃত স্কুলগাড়ির চালক ও হেল্পার।
Tags:
গল্প