বারান্দায় এসে দাঁড়ালো পলি। রাত প্রায় শেষ হতে চলল । জীবনানন্দ কি এই রকম ই রাত শেষে অনুভব করেছিলেন কাঁঠালের হিজলের পাতা খসার শব্দ! ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পলি মনে করার চেষ্টা করল একবার শেষ কবে জীবনানন্দের কবিতা পড়েছে...। নাঃ মনে পড়ছে না। গত তিনবছর শুধু কাজ আর কাজ আর কাজ'ই পলির জীবন । ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি তার জীবনের স্বপ্ন ছিল । আজও আছে। স্বপ্নের জন্য কতকিছু ছাড়া যায় ? শান্তি -- নিশ্চিত জীবন ... সুখের সংসার... বা আনন্দ কে--!!
"আনন্দ" পলির জীবনের বেশির ভাগটাই জুড়ে এই নামটা। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার বলতে ভারতীয়দের মধ্যে আনন্দ বর্মা এক বহুল প্রচারিত নাম । একই ইন্সিটিউট থেকে পলি আর আনন্দ ট্রেনিং শেষ করে " কে প্রথম কাছে এসেছি"-থেকে শুরু করে "মেরে স্বপ্ননো কি রানী কব আয়ে গি তু" পার হয়ে দাম্পত্য পর্ব এবং কাজের জগত একসাথে শুরু হতেই প্রথম দমকা বাতাস, তারপর ঝড়ের পূর্বাভাষ তারপর...।
পলি পলি ব্যাগ রেডি?
- উফফ কি ব্যাপার? চিৎকার করছ কেন? কাল সন্ধ্যেবেলা বললে বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দিয়ে ফিরবে । তারপর এই এখন ফিরছ। দায়িত্ব বোধ, কমিটমেন্ট , এগুলো ছেঁটে ফেলেছ তো? আজ আমাদের কানহা তে নতুন অ্যাসাইনমেন্ট এ যাবার কথা। নির্ঘাত ভুলেছ !
- কে বলল পলি ডার্লিং ? আমার ৬০০ এম এল মার্ক -২ লেন্সে ক্যামেরাটা রেডি আছে কানহার জন্য। তুমি আমাদের দুজনের ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো । ফ্রেশ হয়ে আসছি ।
- দাঁড়াও আনন্দ। কোথায় ছিলে সারারাত ?
-ওরে বাবারে...আমার হেডমিসট্রেস বউ রে ! কাল বুলেট টা নিয়ে বেড়িয়েছি , শমিক এর সাথে দেখা। বলল চা খাবি? বললাম খাব। কোথায় ? শমিক বলল বালসোর স্টেশন এর কাছে ভালো চায়ের দোকান আছে। তো চালিয়ে দিলাম বুলেট । চা খেয়ে ভোরবেলা রওনা হয়ে এখন বান্দা হাজির।
- নিউআলিপুর থেকে বালসোর চা খেতে!!!!!
- আরে মুখের হাঁ টা বন্ধ করো ডার্লিং ...
শিষ দিতে দিতে আনন্দ বাথরুমে । এই হল আনন্দ । ফুল অফ লাইফ। সব সময় টগবগ করে ফুটছে। কিন্তু কখন যেন তাদের সম্পর্কের সুতো একটু আলগা হতে শুরু করেছিল।
পলিকে একবার তার অফিস এক জরুরী প্রোজেক্টে গ্রুপ- লিডার করে ব্রাজিল পাঠানো ঠিক করল । পলি তো আনান্দে ফুটছে । এই প্রথম তার বিদেশে অ্যাসাইনমেন্ট । সেদিন ঘুমই হয়নি। এই খবরটা জানবার দুদিন পর বস তাকে ডেকে বললেন কাজটা বেশি রকম রিস্কি। এবার আনন্দ ই যাক। এই প্রোজেক্টে গ্রুপ লিডার হয়ে। কি যে হয়েছিল পলির বুকের মধ্যে!! সমস্ত উত্তেজনা ধীরে ধীরে শেষ হয়ে এক নিস্তেজ ভাব গ্রাস করেছিল তাকে...।।
সেদিন সন্ধ্যেবেলা শিষ দিতে দিতে ঘরে ঢুকল আনন্দ ।
পলির গলায় ব্যাঙ্গের সুর ... " আরে বস এবার তো ব্যাগ রেডি করতে হয় । আনন্দ মুচকি হেসে -- " ও শিওর , গেট রেডি । গাড়িটাতে তেল আছে কিনা দেখে নিতে হবে। এবার তো বুলেট নয়, বোলারো চালিয়ে পাহাড়ে ... বেশ রিস্কি।
- মানে ? জঙ্গল ছেড়ে পাহাড়ে ফোটো শুট?
- না হানিমুন ।
- বাজে কথা বোলো না আনন্দ ।
- যাচ্ছি না ব্রাজিল।
- কেন? সহানুভুতি ? দয়া ?
- না প্রেম...
" তোর মুখ ভার হলে বিষাদজনিত কারনে নিশানগুলো ..." সুমনের গান সিডি তে চালিয়ে দিল আনন্দ । তারপর অনে---ক দিন । বারান্দায় আড়মোড়া ভাঙল পলি । কতদিন কেটে গেল । থাক স্মৃতি রোমন্থন অনেক হল। এবার ঘুমতেই হবে । কাল আবার ব্যাগ গোছানো । সঙ্গে ৬০০ এম এল, মার্ক - ২, এবারের গন্তব্য গির ফরেস্ট । আর সঙ্গী --? মনে প্রানে যে আছে -- অনাবিল আনন্দ।।
Tags:
গল্প