ঝিলিমিলি





দীর্ঘ শ্বাস 

দারগাবাবু আর এক ঘা লাগিয়ে দিল চোরকে – বলল সত্য করে বল কেন এত চুরি করিস ? চোর বলল, বাবু মজুরী খেঁটে যা পাই ভাত- তরকারী ঠিকমতন জূটে না ,তাই মওকা পেলেই চুরি করতে হয় আমার।  দারোগা বলল তোর কত টাকা মজুত আছে ঠিক ঠাক বল ।  চোর বলল মাত্র একশ টাকা আছে। দারোগা বলল ওই টাকা এখানে এনে দিয়ে যা, আপাতত ছেড়ে দিলাম। খবরদার! এত কম টাকা নিয়ে আমাদের সাথে কারবার করতে আসিস না, শালা ছিঁচকে চোর।

চোর মনে মনে বলল , দারোগা তোর ওই লাঠি আর বন্দুক চুরি করতে পারলে আমাদের এমন দুর্ভাগ্যকে পোহাতে হত না ।  তবে দারোগার জন্যে একটু মায়াই হল চোর বেচারার, চোর-পুলিশের সম্পর্কটাকে সমানে সমান মনে হয়ে তার! কোথায় যেন মিল আছে তাদের ,কেউ যেন সুখি নয়— মানুষ নামক জীবের একটা মূল্যবান দীর্ঘশ্বাস চোরের হৃদপিণ্ড থেকে অলক্ষ্যে বেরিয়ে এল । 


সম্পর্ক

লুকিয়ে রেখে সম্পর্ককে টানা আর বুক ফুলিয়ে বলে সম্পর্ককে টানার মধ্যে পার্থক্য কিছু আছে কি ?  সম্পর্ক রাখার মধ্যে একটা গতি আছে যা তার বর্তমান পরিস্থিতি আর পারিপার্শ্বিক অবস্থানকে বিচার করে প্রতিষ্ঠিত হয় ।  সে সম্পর্ক রাখার ব্যপারে যদি সৎ হয় তবে কখনও হয় তো কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে শান্তি ভঙ্গ না করে – সেখানে সে নিজের  স্বার্থকে  ত্যাগ করতে পারে ভারসাম্যকে ধরে রাখার কারণে। ধরা যাক ক এর খ এর প্রতি অনুরাগ আছে কিন্তু ক এর গ নামক একজন আছে যেখানে খ না হলেও চলে। কিন্তু খকে সে অস্বীকার করার কথা ভাবতে পারে না। তাই সে নীরবে সে সম্পর্ককে টানে ,হয় তো খও সেই সম্পর্কে স্বীকার করে বা  জানে। কিন্তু গ যদি তাদের সম্পর্কে অশান্তির কারণ বলে মেনে নেয় তখন তারা দুজনে (ক,খ) নীরব ভাষার অনুকরণ করে থাকে, হয় তো তারা অধিক যোজন দূরে থাকবে- কিন্তু মনের গহণে সম্পর্ক ঠিকই থেকে যাবেই।  কিন্তু নির্মলের করে হয়  তখনই যখন  ক খ গ এই তিনজনেই ব্যপারটাকে সহজ ভাবে নিয়ে থাকে ।  একে অপরকে দখল করে যখন বন্দী করতে চায় তখনি মানুষ মুক্তির জন্যে আড়াল খুঁজে --- এই আড়াল থেকেই  অশান্তির কারণ ঘটে --- আসে যত কূটিল কলহ ।  তবে  শুধুমাত্র দুজনের মধ্যে সম্পর্ককে জন সমক্ষ্যে আড়াল করার প্রয়োজন কদাচিৎ ঘটে থাকে বিভিন্ন কারণ বশত।  সম্পর্ক ভালোবাসার টানে হয় – অবৈধ ভাবে ব্যবহার করা হলে সেই ব্যক্তি অসৎ পর্যায়ের চারত্রিক বৈশিষ্টে ভূষিত হয় , তবে সম্পর্ক নিজেই স্বয়ং সম্পূর্ণ তার কোন ক্ষতি হয় না, সম্পর্ক যেন স্বচ্ছ পেয়ালা তুমি তাকে যত্নে ব্যবহার করলে বহুকাল টিকবে, আর যদি ছুড়ে ফেল মুহুর্তেই ভেঙে যায় সেই পাত্রটি ।              

নিজেকেই পর করে দিচ্ছি 

সৌভাগ্যের নাম্বার নাকি এক এক জনার এক এক রকম হয়ে থাকে ---- আর কারনটা হল কারও সংগে  কারও মিল মহব্বত নাই বলেই --- ! এক হয়ে মিলে গেলে হাজার প্রশ্নের সমাধান দেবার সম্ভাবনা থাকত না ! আর ঠিক এই মিলঝিল না থাকার সুযোগটাই তো চাই --কতক মানুষেরা তাই অলস নয়, অন্তত পরের ব্যাপারে নাক গলাতে তৎপর -- এক একজন তাই দায়িত্ব নিয়ে নেয় কে বা কারা সৌভাগ্যবান হবেন বলে দিতে , তবে বিনিময়ে দুপয়সা কামিয়ে নেন বটেই ---! আহা অমন মানুষও আমাদের মতন হয় , আমরা নিজের দায়িত্বকে নিজে নিতে পারলাম না, নিজের পা দুটোকে নিজের ভাবলাম না -- পরকে বলছি আমার পা দুটো তোমাকে দিলাম, তোমাদেরকে নাক চোখ কান সবকিছুর মালিকানা দিলাম -আমাদের হাটা চলাচল হোক তাই তোমাদের ইচ্ছা নির্ভর।  আপনাকে আর চেনা হয় না---পরের ভরসাতেই দিন যায় -- আর আপন স্বত্বাকে আসলে আমরা এভাবেই পর করে দেই কর্ম বিমূখের হয়ে  ।  মানুষ আমরা নিজেরাই নিজেদের দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্যের কারণ ---সেটা বুঝাটা কত যে জরুরী ছিল --- দিন তো চলেই যাচ্ছে সেই  হেলায় ফেলায়।

পরিচিতি



Previous Post Next Post