জয়া চৌধুরী



নিয়ত আনন্দ জোগান দিয়ে যাওয়া খুব কষ্টের। চারপাশে এত বেশি কষ্টের ঘটনা ঘটে চলে যাতে নিজেকে সুখী ভাববো না দুঃখী ভেবেই উঠতে পারি না। একশ বছর আগে স্বামীজি গোটা দেশটাকে পায়ে হেঁটে দেখেছিলেন। মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন এ অভাগা দেশের প্রথম কষ্ট ভাতের। আর তার পরেই বোধহয় জাতের। তা বেচারী যোগী কিই না গালমন্দ করলেন নিজের দেশের মানুষদের। তা দেখে যদি কেউ তাকে শত্রু ভাবেন তা হলে তো নাচার। দেশের মানুষ খেতে পায় না শুতে পায় না পড়তে পায় না ...বিদেশ গিয়ে রাজ ঐশ্বর্যের মধ্যে থেকেও কীই না দুঃখ পেয়েছেন মানুষটি। মানুষই তো? দেবতা নয় তো? দেবতাই হবেন বোধহয়। নইলে তিনি মারা যাবার শত বছর পার করেও এখনো জ্ঞানী ( অনেক তথ্য মুখস্থ রাখেন) মানুষেরা যে কোন প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে কম মন্দ কথা বলেন না। আর যারা তাঁকে পুজো করেন তাদের মধ্যে কজন মানুষ জ্ঞানে আর কজন দেবতা জ্ঞানে সে ব্যাপারটিও ভাববার। মানুষ ভাবলে বুঝি তাঁর সব কথা কিংবা তাঁর সকল বাণীই আমরা পালন করতে চেষ্টা করতাম নিজেদের জীবনে। তা সে যাকগে বলছিলাম আনন্দের কথা। তা চারপাশটায় কী দেখে আনন্দ পাওয়া যায় বলতে পারেন? খবরের কাগজ এসেছে এ বঙ্গে দুশো বছরই হবে কি তার একটু বেশী। সেই ই নাকি উন্নতির চিহ্ন! আমরা আগে গোমুখ্যু ছিলাম, সাহেবরা এসে আমাদের মানুষ বানিয়েছেন। আগে পুরুষেরা নাটমন্ডপ কিংবা চন্ডী মন্ডপ থেকেই রাজ্যির খবর রাখত। আর বিশেষ খবর হলে রাজার দরবার থেকে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে গ্রামে গ্রামে জানান দিত। তা তখন মানুষ দিব্যি সুখে ছিল। তাহলে তখন কি মানুষ খেতে পড়তে চিকিৎসা ইত্যাদি সব কিছুই পেত? গরীব গুরবো ছিল না? তারা তালে কোন ম্যাজিকে সুখ পেত? অজ্ঞানতার ইন্দ্রজাল? জানলেই জ্ঞানী? তাহলে খবরের কাগজ খুললেই ধর্ষণ খুন চুরি বাটপাড়ি ঘুষ ইত্যাদি শতেক অমৃত কথন যে শুনি তা ছাড়া কি কিছুই ঘটছে না? তাহলে সব্বাই অসুখী?

তাহলে আর আনন্দ আসবে কোথা থেকে! আর নিয়ম করে পুজো আসলে কিংবা অন্য সম্প্রদায়ের উৎসব ইত্যাদিতে হাসি মুখে বাপের কোলে চড়ে মায়ের হাত ধরে মার্কেটিং এর যে ছবি দেখি তা আনন্দের নয়? ঢাক ঢোল মাইক গদাম ধাঁই চকলেট দোদোমা চরকি ... গুলো আনন্দের মাপকাঠি নয়?

সুখ তাহলে একপেট খেলেও আসে না নরেন দা। তার জন্য চাই আমি সুখী এই বোধ। তো মজার ব্যাপার হচ্ছে ‘আমি সুখী’ বোধ টা সব সময়ই ক্ষণ মুহূর্তের বিষয়। সে দারুণ সুস্বাদু রান্না হোক কিংবা একটি চূড়ান্ত রতিকর্ম... কিংবা কোন খেলনা গাড়ি বেলুন... সুখ সামান্য কয় পলের জিনিষ। আসল বিষয়টাই হল আনন্দ। আর সেটি প্রাথমিক গন্ডী পার হবার পরে আসে।  মানে খাওন পরনের পরে সেদিকে মন ধায়।

এর পরে এল জাতের কথা। তা জাত পাত যে কি বিষম বস্তু তা গুজ্জুভাই হারদ্যিক প্যাটেল ই জানাচ্ছেন দিন রাত। এত এত টাকা কড়ি রোজগার করে এত এত সামাজিক প্রতিপত্তি পাবার পরেও তাদের নাকি জাতের জন্য প্রদত্ত বিশেষ সুযোগে ঘাটতি পড়ছে। তাই তাদের আরো চাই আন্দোলন! আর বিশেষত উত্তর ভারতে যেভাবে ‘জাত’ চলে যাবার অপরাধে সমানেই ‘অনার কিলিং’ হয়ে চলে সেদেশে কখনো আলো আসবে কি না সে বিষয়ে মনীষীরা আশা রাখতে পারেন। তাদের চওড়া বুক অসীম সহ্য আর অপার আস্থা মানুষের ওপর। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসাবে আমাদের যে বুক ভেঙে যায় নিরাশায়। রইল পড়ে অধমের বাঙালি জন্ম। সে আর এক কিসিমের দুনিয়া। এখানে সব্বাই অন্যের উন্নতিতে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। সেসব পার হয়ে যদি বা কেউ একটু নিজের মতামত দিতে গেছে কোন ব্যাপারে...ব্যস তার ওপরে ভাই বেরাদরেরাই মুখ্যু গোঁড়া একবগগা উপাধি দিয়ে ফেলবে। খাওন পরনের বাইরে সে যদি ধনী দেশের মানুষের দুঃখে দুঃখ প্রকাশ করেছে ব্যস...। তালেই সৃষ্টি রসাতলে গেল। তার ওপরে উড়ুক্কু বাণের মত ঘটঘ্নী কিংবা ব্রহ্মাস্ত্র এসে পড়বে সে কেন সেদিন কামস্কাটকা কিংবা হনলুলুতে গরীব মানুষের ওপরে হওয়া অবিচার দেখে তার আপত্তি কিম্বা পোতিবাদ জানায় নি। এসব গন্ডগোলের মাঝে হাসা যায় ঠিকই কিন্তু আনন্দ পাওয়া যায় কি?

পরিবারের বন্ধন শিথিল হতে হতে ’ঘ কিংবা ’চ আর কমিউনিটি ফিলিং বলেও কিছু নাই।  আনন্দ কোন ফাঁক দিয়ে আসবে তবে?
তবে কি সব ছেড়ে কাঁদতে বসব? যাঃ তাই হয় নাকি? লোকে বলবে কি বুড়ি বয়সে ভ্যা করলে! তাই এই সব পাত কুড়িয়ে যেটুকু আলো পাই, প্রদীপের কোণা দিয়ে যে ছটাক আলো পড়ে তাই গায়ে মেখে নিজেকেই প্রবোধ দেই আনন্দেই আছি। না হলে এ বেচারা পালায় কোথা! কথায় বলে না...

আনন্দাদ্ধেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে।।

পরিচিতি





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.