প্রথম পর্ব:
স্নেহা,
মেঘে মেঘে এ চিঠি পৌঁচ্ছে যাবে তোর কাছে আমি জানি।
তোকে লিখা এটা আমার প্রথম চিঠি তাই এ চিঠি জুড়ে থাকবে ফুল ঝর্না পাখিদের কথা অবশ্য
তোর নদী ও বন্ধুদের কথাও থাকবে।তুই ঢাকা ছেড়ে যাবার পর যে শূন্যতার হাহাকার তার কথা আর না বলি আজ!
আজ তোর জন্মদিন এই দিনেই তুই পৃথিবী দেখেছিলি চুরি যাওয়া আলোয় তাই তোকে শুভেচ্ছা।
অবাধ্য ঢেউয়ে ঢেউয়ে নদীর বুকে ক্ষত কেউ গাইছে গান বিষন্নতার সমান নদীতীরে আর গোধুলী বিকেলের প্রযোজনায় স্বল্পদৈর্ঘ্য পাখিরা খবঙ ঝরায় উল্কির উড়ানে।
আচমকা নিভে গেল বাতি
সন্ধ্যা নেমেছে আমাদের পৃথিবীতে,এই লোডসেডিং এ নার্গিসের কথা মনে পড়ছে,মনে পড়ছে মম,রাত্রি আর দোলার কথা তোর কথার বাহক ওদের উষ্ণ রুমালের কাছে নদীর কালের ভেলায় ভাসচ্ছে আজ!
তোর মনে আছে গত জন্মদিনে নাকি কি যেন এক উপলক্ষ্যে তোরা সারারাত জেগেছিলি শুধু আমি ছিলাম না সেইদিন।তোদের বলিনি খুব রাগ হয়েছিলো আমার মনে হয়েছিলো নীলের অবাধ ভেঙে আমি উড়ে গেছি কাছ থেকে চলে গেছে মেঘ।তখন আমি দেখার ভেতরে যাই,দেখার বাইরে যাই।সুর বলি স্বপ্ন বলি
নিজেকে বোঝাই শব্দের গুপ্তধন স্তবকে ঢেকে আমি ও কবিতা ঘুরবো অরণ্যে একা তখনই তোর ফোন এক নিমিষে শব্দহীন আমার ঝরে যাওয়া।
মুক্তদৈর্ঘ্যের আকাশের খোঁজে তুই পরিচয়ের পল্লীতে ঘুমহীন ভাগচাষী।
পাওয়ার এলো টিকটিক করে জ্বলে উঠলো টিউবলাইট তুহিন,জয়,আমুদা,কিংবা আমাদের জুলিয়াট ওদের গোটা মানচিত্রজুড়ে কেবল তুই।আমাদের সাথে তোর বনের প্রান্তরে দেখা,যেতে যেতে নদীতীর আজ তুই বিদেশী নদীর পাশে বিকেল এসে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালের কাছে। তাতে কি আমরা এখন মৃত্যুকেও রুখে দিতে পারি তোর নির্দেশে সেটা কি তুই জানিস?
একটু কফির বিরতি নিচ্ছি তার পর লিখছি।তোর ল্যাপটপটা আমায় দিবি বলে তোর জেদ ব্ল্যাক কফি দেখে তাই মনে হলো । দাঁড়া একটা চুমুক দিয়ে নিই।একটা জোকস শুনবি কিংবা একটা কবিতা?কবিতাই শোন।
৩০। ০১। ২০১২
জলচিঠি...... স্নেহা
জলচিঠি...... স্নেহা
দাদা,
দেশ ছাড়ার মুহূর্তেও আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়িয়েছে হাসপাতালের গন্ধ......বিদেশের বৈরি বাতাসেও আমার পিছু ছারেনি। আমি কি পাগোল হয়ে যাচ্ছি...??? আমার চারপাশ জুড়ে শুধুই হাসপাতালের গন্ধ...
মরন আমার...
এতো কষ্ট ভরে, নষ্ট করে
শর্ত নিলাম কিছু...
তবু সেই কষ্টই নিল পিছু...
কতক্ষন ঘোরের মধ্যে ছিলাম জানিনা......হঠাৎ মেঘের ডাকে আমন্ত্রন এলো, আমার জন্য লেখা তোমার প্রথম জলপত্র...প্রতিলেখা আমারও এই প্রথম তোমার ডাকবাক্সে...হয়তো লেখা শুরু হল.........জন্মদিনের শুভেচ্ছায় আমি আপ্লুত...ভালোবাসা দিয়েও এই ভালোবাসা কিনার সাধ্য আমার নেই...তবে আমার নিজস্ব ঐ নদীটা দিয়ে দিলাম...কারন আমি ঠোকতে চাই তোমাদের ভালোবাসার কাছে.........
অনেক কথা জমে আছে দাদা, কথারা সব জমাট বেঁধে ডুকরে ডুকরে.........হাসছে......
খানিকক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল, ঠিক বৃষ্টি নয়...তুষারপাত হালকা নরমে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হবার কথা, কিন্তু নরমে গরমে রুমটার অনুভূতিটাই পাল্টে দিয়েছে। নাকি আমার অনুভুতিটাই বিকল হতে চলেছে। বিজ্ঞানের প্রতিভা মানুষের জীবনের অনেক সুফলতা এনে দিয়েছে মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে...শুধু মৃত্যুকে নয়......
বিজ্ঞানের এমন মেকি মেকি ভালোলাগা, আমার এসব একদম ভাল্লাগেনা দাদা।
এখানকার মানুষগুলো কেমন যেন অন্যরকম... এরা হাঁসতে জানেনা, কাঁদতে জানেনা, নিতে জানেনা, দিতে জানেনা, ভালোবাসতে জানেনা,
স্নেহা,
গতরাত তোর চিঠি পেলাম। সময় অনুক্ষণ হাঁটে তার পায়ে ধুলো উড়ে না ঘুম নেই ক্লান্তি নেই তার!
আজ এখানে মেঘলাকাশ তোর চিঠি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল মেঘ হয়ে উড়ে যাই তোর কাছে তোর ক্ষানিক বৃষ্টি কিংবা তুষার পাতের বুকে।তুই বল তাই কি হয়?ফাগুন আসি আসি করছে এমন সময় টিউলিপ রোদে ফুলের ঘ্রাণ আর তুই কিনা লিখলি হাসপাতালের গন্ধ!বিটু তুই না রজনীগন্ধা ভালবাসতি?বাঁচতে না তুই ই আমায় শিখিয়েছিলি ফুলের গন্ধে আজ তুইই বলছিস অন্যকথা?
প্রেমভালবাসা কিছু নয় তার আছে দুঃখ সময়।আকাশের দিকে তাকা একটিও পাখি নেই বলে সে ফিকে হয়ে যায়নি বরং আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে অচেনা পাখিদের ভালবাসা পেতে।দুরাত ঘুমাইনি হিমশীতলায় দেখলাম ভালবাসার চাঁদটিকে ডুবে যেতে ভোরের সূর্য হতে এটাই বোধ হয় জীবন।
জন্মদিন কেমন কাটলো?৮তারিখ কবিতার বই আসচ্ছে মেলায় তার পরই তোর বই।
হাসপাতালের গন্ধের বদলে তোকে পাঠালাম নতুন বইয়ের গন্ধ...
এই প্রথম বসন্ত উত্সবে আমি ঢাকায় থাকবো তাই তাবত বসন্ত পাঠিয়ে দিলাম।যদি পারিস তুষারপাতে কুড়িয়ে নিস আমায় ও আমাদের।
শেষ করার আগে একটা ছোট্টকথা
'মিলিয়ে যায় সাদামাটা আলো আকাশ হাসে তোর সাথে,তোর আনন্দে রঙধনু আসে আর যায় বাতাস আসে ঘুম ভরা মাঠ থেকে
প্রফুল্ল সারা পৃথিবীতে ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে দিতে দিতে হাসপাতালে আজ আমি মালি মুক্তসত্য-সকলের ই জানা আর তাতেই সুখ হাসপাতালে এখন হাসনাহেনার গন্ধ বিলাই আমি'
প্যানজি ফুল আর গোলাপ ঘিরে থাক তোকে ভাল থাকিস কুয়াশার মত মুগ্ধতায়..
দাদা