সন্ধ্যা বেলাতেই বৃষ্টিটা এলো ঝাঁপিয়ে। কদিন ধরেই চলছে। ইলা আজ বাধ্য হয়েই বেড়িয়েছিল। দোলতলা থেকে এক নম্বর গেট আর কত সময় লাগবে? বৃষ্টিটা আসতেই দৌড়ে গিয়ে একটা শেড এর নীচে দাঁড়ালো। ও দাঁড়াতেই তিনজন যুবক ও এসে দাঁড়ালো। এবার ইলা খেয়াল করল জায়গাটা অন্ধকার মতো। আলো বেশ কম। বৃষ্টি বেশ জোরে এল। রাস্তায় গাড়ী বা অটো ও জায়গায়টায় দাড়ায় না । কিন্তু গাড়ীর আলো একটা স্বপ্নময়তা তৈরি করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই। রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে গেছে। ইলা যখন এখানে দাঁড়ায় তখন ও ভিজে গিয়েছিল। তিনটি ছেলে সিগারেট খাচ্ছে আর ওর দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল ওরা। ইলা আজ শাড়ী না পড়ে একটা চুড়িদার পড়ে এসেছে। এটাই ওকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। ওড়নাটা বুকের উপর দিয়ে দাঁড়িয়ে ও। কিন্তু ও জানে ওর ভারী বুক , পাতলা কোমর , পায়ের সালোয়ার সবই ওদের দৃষ্টির মধ্যে আছে। কিছু কিছু কথা কানে আসছিল ওরা বেড়াতে যাবার প্ল্যান করেছে।
বিভু , সৈকত আর গৌতম তিনজনেই সামান্য একটা কোম্পানিতে চাকরী করে। বেতন খুবই কম কিন্তু কমিশন ভালো আসে সেলস এর ওপর। বিভু ঠিক করে ফেলেছে সে বিয়ে করবে না । বাড়ীতে একমাত্র দিদি স্প্যাস্টিক। সৈকত আর গৌতমের বয়স বিয়ে করার অবস্থায় নেই। কিন্তু ওরা স্বপ্ন দেখে। বিভু বলে দীঘাতে যাবো লক্ষী পূজোর পর।
- তোর সাথে আমি যাব না আর , গৌতম বলল।
- বিভু বলল কেন ? তুই তো অন্য ঘরে ছিলি ? তোর এত অসুবিধা হবার তো কথা নয়।
- দূর শালা! সন্ধ্যার পর আমাদের আর পাত্তা দিয়েছিলি? সেই যে ঘরে ঢুকলি ! এক খাবার সময় ......
- সৈকত বলে , সে কি রে? কি করেছিল বিভু ?
- আবার কি? ওর বাইরে যাওয়া মানেই তো কোন টেম্পোরারী বান্ধবী যোগাড় করে নিয়ে যাওয়া।
- গৌতম বিভুকে বলল – এই ব্যাটা বিয়ে করে নে না । তাহলে তো কোন প্রশ্ন ওঠেনা । যেদিন ঝামেলায় পড়বি সে দিন বুঝবি।
- বিভু বলল ‘শোন জ্ঞান দিস না’। আমার শরীর , আমার মন , আমার ইচ্ছে । জ্ঞানী পুলিশদের আমি পরোয়া করি না। আমি তো কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না । এমনিতে তো চাকরী নেই বাকরী নেই , ইনকাম নেই , বিয়ে করে সংসার পাতার কোন উপায় নেই। শালা মেয়ের বিয়ে দিতে লক্ষ টাকার পণ দিতে হয় , না হলে মেয়েরা ঘরে পচবে। সে সমাজে বানচোত্ তোরা নীতি পুলিশ হয়েছিস?
- আরে শালা , বড়ো হলে বুঝবি। এক গ্লাস জল দেবার কেউ থাকবে না ।
- দৈনিক পত্রিকা গুলো দেখ । প্রতিদিন বান্ধবীদের বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পাতা ভরে যাচ্ছে। কেন জানিস ? মেয়েরা এখন অনেক স্মার্ট শুধু টাকার জন্য নয়। যৌনতা কে খোলা মেলা ব্যবহার করছে কারন বিয়ে করলে পিঠে সিগারেটের ছ্যাকা লাগতে পারে ভেবে।
ওরা দুজনে হেসে উঠল ।
- সৈকত বলল , তাহলে তোর কিছুক্ষনের বান্ধবীই ভাল তাই না ?
- আচ্ছা গৌতম তোর তো বাড়ীর অবস্থা ভাল তুই কেন বিয়ে করছিস না ? বিভু জিজ্ঞাসা করল ।
- গৌতম বলল , ভালো মেয়ে পেলে নিশ্চয়ই করব।
- বিভু বলল , বয়স তো সাইত্রিশ আটত্রিশ হ্ল। এখন বিয়ে করলে ছেলে মেয়ে মানুষ করতে পারবি না । অথচ সেটা জেনেও বিয়ের স্বপ্ন দেখিস ।
এসব কথার কিছুটা ইলা শুনছিল অথবা শুনছিল না। এতক্ষন দাঁড়িয়ে আছে ওদের সাথে কিন্তু ওকে ওরা অভব্য কোন ইঙ্গিত বা অশ্লীল কোন খিস্তি ওরা করেনি এখনও। এটাই ইলার স্বস্তির কারন। না বৃষ্টিটা হচ্ছেই। আধো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ওদের কথাগুলো শোনবার চেস্টা করছিল আর ভাবছিল বাড়ীর কথা ।
বৃষ্টি একবার জোরে আসছে আর একবার কমছে। ইলা দেখলো বৃষ্টিটা প্রায় কমে এসেছে। ও রাস্তায় নামলো । ব্যস এমন সময় জোরে বৃষ্টিটা এলো। ও খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিল জলের মধ্যে দিয়ে। ছপ ছপ করে দৌড়ে আসতে আসতেই আবার ভুজে গেল। একটা গাড়ীর হেডলাইট পরাতে দেখলো তিনজনেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে , দেখছে ওর বুক , শরীর সব কিছু ... হয়তো কিছুটা কল্পময়।
- সৈকত জিজ্ঞাসা করল কতদূর যাবেন?
- ইলা কাঁপা গলায় উত্তর দিল এই তো আধঘন্টা লাগবে হেটে যেতে । একটাও অটো পাচ্ছি না।
- গৌতম বলল , দাঁড়ান আমরাও ওদিকে যাব । একা যাবেন না । রাত এখন সাড়ে দশটা।
- বিভু বলল , আমাদের সাথে যাবেন।
ওরা রাস্তায় নামলো। বৃষ্টি ধরেছে কিন্তু রাস্তায় জল। ইলা হাঁটছে অস্বস্তিতে অশান্তিতে। বৃষ্টিতে ভিজে ওর জামা শরীরে লেপ্টে গেছে। বুক , পাছা , উরু সব দৃশ্যমান। বাধ্য হয়ে তিন যুবক এক যুবতী রাস্তার নোংরা জলে নেমে হাঁটছে।
- গৌতম জিজ্ঞাসা করল , একসাথে পথে হাঁটলে নাকি বন্ধু হয়। আপনি এতো গম্ভীর কেন ? কেন চুপ চাপ ?
- না , আপনারা গল্প করছিলেন । আমি কি বলব ?
বিভু অন্যমনস্ক। চুপচাপ। কিছুই বলছে না ।
- সৈকত ইলাকে জিজ্ঞাসা করল , আপনি কি করেন ?
- একটা কল সেন্টারে কাজ করি। শেয়ার মার্কেটের কিছু কাজ করি কমিশনের ভিত্তিতে। আবার কখনো বিঊটি পার্লারে কাজ করি।
- বিভু এবার বলল , ও তাই আপনাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে।
সবাই হেসে ফেলল । ইলাও।
- গৌতম বলল , তুই বিঊটি পার্লারে যাস নাকি?
ইলা প্রতিবাদ করে উঠল । শুনুন ওখানে শুধু মেয়েরাই আসে।
- কিন্তু আপনাকে আমার খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। নাম কি ইলা ...।
- হতে পারে একই রকম দেখতে তো অনেক মানুষ হয়।
সৈকত এবার বলে বসল , বিভু তোর পুরনো কোন বান্ধবী নয় তো ? দেখ ভাল করে। কথাগুলি সৈকত বিভুকে হাল্কা গলায় শোনালো।
ইলা চমকে উঠল । বিভুকে এতক্ষন খেয়াল করেনি – তাকায়নি । বিভুও তাই। গতবছর পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপন দেখে বিভু এক জায়গায় ফোন করেছিল। একহাজার টাকা দিয়ে ও পাঁচটি বান্ধবীর ফোন নম্বর পেয়েও একজনের সাথে দেখা করে। নাম বলেছিল রাখী। রাখী কি করে ইলা হল? কথাগুলি বলতে বলতে ওরা রাখীর বাড়ির কাছে এসে গেল।
- বিভুই বলল , যান ঐ গলিতে তো ?
- রাখী বলল , হ্যা। আপনারা আমার খুব উপকার করলেন। ধন্য।
- গৌতম বলল , পথে কুড়িয়ে পাওয়া বন্ধুর জন্য এটুকু তো করতেই হয়।
- সৈকত জিজ্ঞাসা করল , যেতে পারবেন তো?
- ইলা বলল , হ্যাঁ। হ্যাঁ। ঐ বাড়ীটা । একটা বাড়ীর পরে।
বিভু বলল শোন এবার ছুটিটা জমবে ভালো। দুজনেরই জমবে। ভাবছি বাইরে নয় কলকাতাতেই থাকব। আমি এক বান্ধবীকে পেয়ে গেছি। ফোন নম্বর ও আমার কাছে আছে।
অন্যরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বোকার মত হাসল ...
![]() |
পরিচিতি |
Tags:
গল্প