শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়াই একমাত্র বাহন নয় বরং সুস্থ ও সুন্দরভাবে বসবাসের অধিকার দেবার লক্ষ্যে সাহায্য দিয়ে নিউজিল্যান্ডের সমাজ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দেশের কৃষ্টি ও সভ্যতা নিয়ে রেফিউজী বা মাইগ্রেটেড হিসাবে এ’দেশে যারা এসেছেন তাদেরকে আন্তরিকঘণ বরণের মাধ্যমে বিরাট এক আশাজনক মাইলফলক তৈরি করার সাধনা করে যাচ্ছেন তাদের একনিষ্ঠ কর্মকান্ডের দ্বারাই।
বিশেষ করে দ্রুত শিক্ষায় দীক্ষিত করার অভিপ্রায়ে কর্তৃপক্ষ দোভাষীর ( ইংরেজি না জানার সদস্যদের জন্যে ) ব্যাবস্থপনা রেখেছেন যা কিনা প্রশংসার দাবী রাখে। অনেক অজানা তথ্যাদি এই সমস্ত অভিজ্ঞ মানুষের কাছে পাওয়া যেন এক একটা উৎস যা কিনা সমাজকে অন্ধকার থেকে মুক্ত করার সিংহদ্বার খুলে দিচ্ছে, মানুষজন অকপটে জানাতে পারছে তাদের বঞ্চনার কথা। সমাজ যে শুধুই কুসংস্কার বা অজ্ঞতাতেই ডুবে আছে বললে ভুল হবে, সেই সব দেশের সুবিধাবাদীরা এসকল অজ্ঞ মানুষদেরকে সম্বল করে নিজেদের সম্পদ বাড়িয়ে তুলে শোষক শ্রেণীতে ক্রমান্বয়ে পরিগণিত হচ্ছে এবং সমাজকে ঠকিয়ে তারা মানুষের বিরাট ক্ষতি বাড়িয়েই তুলছে। বাড়ছে শ্রেণীগত বৈষম্য । এ বৈষম্য শুধু মাত্র ধনী দরীদ্রতে গিয়ে স্থায়ী আসন নিচ্ছে না, মানসিক পরিমন্ডলে উঁচু ও নিচু তালার মানুষ বলে তারা নিজেদেরকে স্বীকার করে নিচ্ছে । কারণ তারা বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা থেকে, জীবন যাত্রার মানদন্ড নিম্নমানের হচ্ছে অর্থনৈতিক সুবিধা না পাওয়ার ফলে। তাই বাধ্যতা মূলকভাবে অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ে অসাধু ব্যাবসা করে যাচ্ছেন চক্রাকারে বিভিন্ন গুষ্টি বা দল সমুহের মধ্যে। দৈহিক ও মানসিককূলের নানান প্রকার ভগ্নস্বাস্থ্য হুমকি হয়ে তাদেরকে সর্বদা আস্ট্রে-পৃস্টে অক্টোপাসের মত জড়িয়ে রাখছে।
আর এ’সকল দৈনতা অশুভ সরকারেরাই পরিকল্পিত ভাবে তৈরি করেন বলা চলে। কারণ তৃতীয় বিশ্বে আমরা আজো সেই সরকার পাই নাই যারা প্রেমে পরিপূর্ণ হয়ে মানুষদেরকেই সেবা করছে, নিজেদের উদর পূর্তি করা ছাড়া অন্য কোনই লক্ষ্যই যেখানে নাই। এই ছোট্ট জীবনে আমরা দেখি সরকারের উপরেও সরকার আছে আর এবং তারা যে অপশক্তির বাহক সে কথা আজ লুকোচুপির আওতায় নেই। নেংটী ইঁদুরও জানে বিড়াল কক্ষনও তাদের বন্ধু নয়, ওর সামনে গিয়ে পরলে রক্ষা নাই, আড়ালে থাকাটাই সমস্যা মুক্তির একটা দাওয়াই মাত্র। মানুষ আমরা নেংটী ইঁদুরকেও টেক্কা দিয়ে চলি, মার বা কাট যাই কর পায়ে ধরে ভিক্ষা পাই আর পায়ে ধরেই রক্ষা পাই – ফলে ওদের পদোযুগলকে এত বেশি লম্বা করে দিয়েছি যে আমরা আর নিজেদেরকে সামাল দিতে পারছি না ধর্ণা দিতে দিতে । আমরা জাতি হিসাবে পা তো নয় সরীসৃপের মত বুকে হেঁটে চলি –পা দুটো একদিন হারিয়ে যাবেই আশংকা করি। নিজেদের চলার শক্তি যে আছে সে কথা বেমালুন ভুলে গিয়ে পা হারিয়ে গেছে, শুধু চোখ দুটোতে কখনও চক চক করছে লোভ, হিংসা, দ্বেষ আর ভীতু ভালমানুষেরা হরিণীর মত লুকিয়ে রক্ষা পায়। চোখ দুটো কোন রকমে কাজ করছে –একসময় অকেজো শরীরের চোখও তারা উপড়ে নিবে—তারা জানে আমাদের যা আছে তার দাম কম নয়, আমরা কেবল জানি নে আমাদের মূল্য কতখানিতে।
আমাদের মুল্য যে জাতীয়তা বোধের মধ্যে, একতা যার মূল শক্তি সে কথা আমরা ঘুণাক্ষরে গভীর ভাবে চিন্তা করি না। আর আমাদের মধ্যে ভাঙ্গন আর জাতীয় চেহারাতে পচণ ধরিয়ে যে সুবিধা গুলো অপদেবতা হিসাবে নেপথ্যে হাতিয়ে নিচ্ছেন, সে কথা সচেতন হয়ে প্রতিকার বা উদ্ধারের জন্যে ভাবার সময় কোন বুদ্ধিমানেরও হচ্ছে না।
ভূমিকম্প দিয়ে পুরো ঘরবাড়ী মাটিতে তলিয়ে যাচ্ছে – কিন্তু গবেষকেরা এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই , কারণ শক্তিধরের এই অপদেবতা ধরা তলেরই মানুষ , তাকে বাঁচতে হবে দৈব লাটিমের আস্ফালন থেকে –নিয়ন্ত্রণ তাকে করতেই হবে বাঁচার তাগিদে। তারা এমনই মারনাস্ত্রো তৈরি করে ধরাকে নির্দেশ দিয়ে বলবে --দেখ , কাউকে মেরে ফেলার ভার আমাদের একক হাতেই থাকুক আমাদের সুবিধা অনুযায়ী । আর হিরোশিমা থেকে টু -ইন টাওয়ারের গল্প তো জমেই আছে -।
খুব ছোট্ট মাথা আমার, সমাজ বিজ্ঞান পড়িনি, ইতিহাসও তেমন জানি নে, শুধু ধরার আলো- বাতাস- জল সম্বলে ধরা। ও না হলে তো বাঁচার কল্পনা করা নিরর্থক। শুরু করেছিলাম, কিন্তু শুরুটা আমার ঠিক না হয়ে আমার মতন করেই হয়েছে – শুরু যার হয় না সুন্দরভাবে, শেষটা তার সেভাবে মিলেও না। অসাধারণ বলে একটা শব্দ আছে – মেধার বাড়াবাড়ির ফলাফল থেকে জাগ্রত হয়। মানুষ বলে ওর এক বিশেষ মাথা বিধাতা তৈরি করে দিয়েছেন, কাজেই অন্যেরা ওখানে যেতেই পারবে না। আমি বলি ওর মাথাটা ঠিক নয় ওর চলন ওকে ওইভাবে তুখোড় করে গড়ে দিয়েছে। মানুষের ইচ্ছাশক্তি এক ধরণের বীজ যা কিনা প্রাথমিক অবস্থায় জল হাওয়া আলোর ধারায় সুপ্ত বা লুপ্ত থেকে সবুজ হয়ে উত্থিত হয়ে উঠে, কিন্তু যেই দেখবে আলো নাই, বাতাস নাই পানিও নাই , সবুজ হয়ে গেছে হরিদ্রা বর্ণের – আর এক সময় চিহ্ন স্বরূপ কিছুই পাবে না।
আমার গল্পেই আসি আজ। আমার বিজ্ঞান নিয়ে এইচ এস সি পড়া – পাড়া গায়ের কলেজে –কিন্তু দোষ হল এই যে ওই বয়সে পরিণত মানের বুদ্ধি জাগে নি আমার , যে যা বলত তাকেই ঠিক ভাবতাম আর চলতে থাকতাম। আরে কেউ তো ইংরেজি মাধ্যম নিয়ে পড়তে যাই নি সেখানে, আমি কোন পন্ডিত ছিলাম ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে হবে? আমার জন্যে কলেজের টিচার ইংরেজিতে ভাষণ দিতেন দয়া করে, অজ পাড়াগায়ে সে যুগের শিক্ষিত মা- বাবার সন্তান ছিলাম বলেই এই দক্ষিনাটা পেতাম। কিন্তু মাইরি বলছি এক বর্ণ বুঝতাম না , অভিনয় করাটাই শিখেছিলাম, বেশ বুঝতে পারছি এই বেলায়। কিন্তু ফলাফল শূন্য – আমি থার্ড ডিবিশন পেলাম , না ভাগ্য আমায় সততারই পুরস্কার দিয়েছিল –আমার কর্মের যথার্থ ফলাফল। আরে কথা তো এখানেই শেষ নয় – সেই পাড়াগায়ের মাধ্যমিক স্কুলে আমার পূর্বতন ক্লাসের সবাই একসঙ্গে অংকে ডাব্বা খেল এস এস সি পরীক্ষায় ( ইলেকটীক মেথ সাবটেক্টে)। পরের বছরের এক মাত্র সাইন্স নিয়ে আমি পড়ছি, আবার সেও আমার ইচ্ছা শক্তির উপড়ে নয়। অনুভবে পাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়লে ইজ্জত বেশী, অভিভাবক থেকে, পারিপার্শিক মানুষের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে। তবে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে অংক করতাম, ঘরে বসে অনেক অনেক অংক করে যা মিলাতে পারতাম না বয়েজ স্কুলের সুধীর স্যারকে ধরে আনতেন আমার মামার বন্ধুরা (বিকালের ভ্রমণে যখন সেই শিক্ষক বের হতেন ) , আমি খুব আগ্রহের সাথে উনার কাছে থেকে অংক মিলিয়ে নিতাম।
ততদিনে নিজে নিজে অংক করে জানতে পেরেছিলাম- অংক লাফ দিয়ে গাছে চড়ে না , ওরও একটা চলন আছে। আমার এক ছেলে সহপাঠী ছিল ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন , বললাম ক্যালকুলাস মিলছে না , যদি পারে দেখিয়ে দিক। সে বললে পরীক্ষার আগে এ নিয়ে সে এতশত ভাবতে যায় না , মুখস্ত করে রেখে দিয়েছে, আমি বললাম ঠিক এই সংখ্যার পরিবর্তে অন্যকিছু হলে কি উপায় করবে? –হা হা হা শেষে আমিই ওকে অঙ্কটা মিলিয়ে দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু জীবনের অংক মেলেনি আমার। ওর কিন্তু মিলে গেছে, সরকারী চাকুরী করে সুখেই কাটাচ্ছে। কারণটা পরিস্কার , সে জানত তার দৌড়টা কতখানির মধ্যে হতে হবে, আর আপন বুদ্ধির উপরে তার জোরটা ছিল- মানে কোন বলয়ের উপরে হাঁটলে তার করে খাওয়ার যোগ্যতা হবে। ওই যে বললাম শুরু আর শেষের মধ্যে গণ্ডগোল ছিল যে আমার। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পালা আমার। আমি তো কিছুই জানি নে —কেউ আমায় ভর্তি করে বেঞ্চে ছাত্রী হিসাবে বসিয়ে দিবেন বলে বসে আছি। ভুল আমি করব কেন, করেছেন অভিভাবক - তারা তাদের বন্ধুকে বলে রেখেছিলেন মেয়েটারে ভর্তি করে দিস –তাদের বন্ধু বলেছিলেন তোমার মেয়ের কোন সমস্যা নাই –আমি আছি না। ? শেষে দেখা গেল ভর্তির নির্ধারিত সময় শেষ। মা করলেন ঝগড়া, মার বন্ধু আর সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন মার ক্লাসম্যাট, ছিলেন আইন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান। ধুম করে আইন বিভাগে আমায় ভর্তি করিয়ে দিলেন । আমি পড়লাম সমস্যায়, চুপচাপ স্বভাবের নিরিহ গোবেচারার আমি । বাবা খুব আনন্দে বই কিনে আনলেন, আইন পড়বে মেয়ে, অনেক বড় হব আমি, খুশীতে ডগমগ চোখ তার মনে আছে। কিন্তু আমার ভেতরে আইনের কোন ধারাই খেলছেনা । আমি এই এত ব্যাখ্যা মুলক আইনের চক্রান্তকে প্রথম উপলব্ধি করলাম – কোনটার বেড়াজাল থেকে কিভাবে বেড়িয়ে আসতে হয় – বেশ বেশ, পড়তেই যখন হবে, সকলের বাধ্য তো আমি। কিন্তু আবার ইংরেজি --? দেখা গেল যারা মফস্বল থেকে এসেছে তারা বাংলায় পড়ছে—আর যারা হলি ক্রোশ কলেজ বা ইংরেজী মাধ্যম থেকে এসেছে তারা ইংরেজিতে পড়ছে, কথা বার্তাও বলে তারা চৌকশ ইংরেজিতেই। প্রথম বৎসরে ইংরেজি মাধ্যমেই পড়েছিলাম । শেষে বাঙলায় পড়লেও কেমন জানি হীনমন্যতায় ভূগতাম --। কিন্তু জ্ঞান কোন নির্দিস্ট ভাষার মধ্যে গড়াগড়ি করে না, জ্ঞান যে কোন মধ্যমে আলোবাতাসের মত বিস্তৃত যে সেকথা ভুলে যাই, আমরা মরেছি আমাদের মানসিকভারে। তবে আমার মেধাবী মা আমাকে সাহায্য করতে ইংরেজি থেকে বংলায় অনুবাদ করে দিতেন – মার পরিশ্রম বলে বন্ধুদেরকে মার লেখা নোটগুলো চাইলেই অকাতরে বিলিয়েয়ে দিয়ে দিতাম। পাশ করলাম –দ্বিতীয় বিভাগ নিয়েই। কি আশ্চর্জ মানুষ বেঙের ছাতার মত গজে উঠা আইনকলেজের ছাত্র-ছাত্রী হয়ে আইন পাশ করেও ফেলেন। আমার মাকে আমার শিক্ষক ( যিনি মার বন্ধু) বলেলেন তুমিও ল সাব্জেক্ট নিয়ে পাশ করে ফেল। মা পরীক্ষার হলে বসেছেন , মুসলিম আইনের সম্পত্তি নিয়ে ভাগ বাঁটোইয়ারার অংক মিলিয়ে ফেললেন— পরীক্ষার হল তো মাছের বাজার, নকল করার ধুম সেখানে। পাহাড়াদার টিচারের কাছেই ছাত্ররা অংক মিলিয়ে নিতে চাচ্ছেন । টিচার তাদেরকে আমার মার কাছে থেকে অংক দেখে নিতে বললেন- ওরা মার চতুর্দিকে বসে অংক মিলিয়ে নিলেন। মা অবশ্য টিচার মানুষ – আমাকে আইনের বই পড়াতে গিয়ে সখের বশে ওই প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছিলেন মাত্র। এই তো ছিল আমাদের সমাজের ধারা। কিন্তু কি সর্বনাশের কথা, সব সময় মনে হত আমি নই, অন্য কেউ আমার হয়ে পরীক্ষায় পাশ দিল , কারণ আরও বলি এল, এল, এম- বলে কত বড় ডিগ্রী সেও কিনা ১০ টা প্রশ্নে সীমাবদ্ধ ছিল । টিচার বলে দিলেন , যাও এই দশটা প্রশ্নের নোট জোগাড় কর –আমরা হুমড়ি খেয়ে সেই অল্প সময়ের মধ্যে পুরাতন ছাত্রের কাছে থেকে নোট জুগিয়ে পাশ করে ফেললাম --। অথচ, এক একটা বই এর ভেতরের জ্ঞান গর্ভের কথা দু পাতাতে বা এক রাত্রীর পরীক্ষায় কি শেষ হবার কথা ? তারপর শুনলাম ভাল পরিবারের মেয়েরা সদর কোর্টে যায় না, অভিভাবকেরা নাকি মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে হবে বলে উচ্চ শিক্ষা দিয়ে থাকেন- আয় করার উদ্দেশ্যে নয়। অবশ্য প্রকৃত জ্ঞান সন্ধানীরা এর বাইরে পরেন, তারা নিজেরাই নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষিত হয়ে থাকেন সেটা প্রাতিষ্ঠানিক মারফতেই হোক বা নিজের মেধার কারণেই হোক।
যুগ পরিবর্তন হয়েছে। তলিয়ে সবকিছু দেখতে হবে, আমদের দেশের শিক্ষা নীতির একটা দারুণ অবহেলা সুপ্ত ভাবে আজো রয়ে গেছে। ছাত্র বা ছাত্রী যে শিক্ষায় দীক্ষিত হতে যাচ্ছে আর জীবনে করে খাওয়ার মত একটা পরিমণ্ডল শিক্ষাঙ্গন থেকেই ব্যাবস্থাদী থাকা বাঞ্ছনীয়, বিদেশে ছাত্রদের পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভাল কোন সংস্থায় যোগাযোগ করিয়ে দেয় ছাত্রদের উপদেষ্টার মারফতেই যাতে করে চাকুরীর বিভিন্ন উৎসগুলো সম্পর্কে সম্যোক জ্ঞান রাখতে পারে। ছেলে –মেয়ে হয় তো আমাদের কিন্তু ওদেরকে তৈরি করে দিতে হবে এই বলে ওরা যেন ওদের নিজেদেরকে পরিচালনার ভার নিতে পারে, নিজের অস্তিত্বের বিস্তর খোঁজ যেন তারা রাখতে পারে । তাহলে তারা তাদের গতিতে চলার আনন্দ পাবে, আর ওরা ভুল করলে সে ভুল শুধরানোর দায়টুকু ওরাই যাতে বহন করতে পারে পরিশুদ্ধ হয়ে। আমরা নেপথ্যে তাদেরকে সাহায্য করতে পারি পথ বাতলে দিয়ে। তবে পথ নির্বাচন করার পূর্ণ স্বাধীনতা তাদেরকে দিতে হবে।
সমাজের মানুষের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ইতি বা নেতিবাচক কাহিনী থাকে । মুষ্টিমেয় মানুষের ভুল থেকেই নির্বাচন করতে হবে কিভাবে ভুল এড়িয়ে সঠিক পথের কিনারা করতে হবে। একটি সুস্থ সমাজ গড়তে হলে জেনে নিতে হবে প্রতিটি মানুষের ব্যর্থতার সমুদয় কারণকে । তাই দেখি উন্নত দেশে প্রতিটি মানুষকে মুল্যায়ন করা হয় সমাজ গঠনের স্বার্থে, তাদের প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসের কথা অধিক গুরুত্ব দিয়েই তারা শুনে থাকেন । শিশু নির্যাতন আমাদের দেশের এক প্রাত্যহিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় পাঠশালা আর পরিবারে শিশুদেরকে কড়া শাসনে পালন করা হত। এ যুগে যদিও উচ্চ বা মধ্য বিত্ত মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন হয়েছে শিশুদের প্রতি সদয় দৃষ্টিপাত করে, কিন্তু দেখা গেছে খেটে খাওয়া অতি নিম্ন শ্রেণীদের শিশুরা রেহাই পাচ্ছে না বর্বর নির্যাতনের হাত থেকে, শিশু শ্রমের সাথে সাথে শিশু নির্যাতন অতোপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে। শিশুদেরকে স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার ভার কোন সমাজপতি এসেও নিচ্ছে না।
আমাদের শিক্ষার আঙিনায় মানবিক বোধ তৈরী করার অবকাশ নাই যাতে করে সুস্থ সমাজের বিকাশ লাভ করতে পারে। যদিও চিকিৎসক , আইনবিদ বা বিভিন্ন পেশাগত চাকুরী জীবিদের বাধ্যতামূলক ইথিক্স আছে কিন্ত ঠিক তার উল্টা করেই প্রতিষ্ঠানাদিতে মানা হয়। বড় লোকের সঙ্গে বড় লোকের কাধে কাধে মিল হচ্ছে আর মূলত গরীব হিসাবে যাদের অধিকার আছে তারা তাদের অধিকার সমর্কে ধারণাই রাখছে না ফলাফল না পাবার প্রতিশ্রুতিতে।
কিন্তু উন্নত বিশ্বের সরকারেরই দায়িত্ব বর্তায় কি করে বঞ্চিত জনেরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জেনে নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে পারে। সেই সূত্র ধরেই আয়োজন বিভিন্ন সরকারী বা বেসরকারী সংস্থা সমূহের, যাতে করে এক জন মানুষেরও যেন নজর না এড়ায় সরকার তাদের জন্যে কি কলা কৌশলের ব্যাবস্থা রেখেছেন। নিউজিল্যান্ড থেকে উন্নত দেশের একটি চেহারা পাচ্ছি এখানকার সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়ার সুযোগ পেয়ে। “উমা ট্রাস্ট কমিউনিটি” বিশেষত রেফুউজীদের দেখাশুনার ব্যাপারে নিয়োজিত। সকল স্তরের মানুষের প্রতি কমিউমিটির সম্মাননা বোধ সব চেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার, বিভিন্ন সংস্কৃতি আর ভিন্ন ধর্মানুসারী মানুষের মতবাদের ভিন্নতা সত্ত্বেও শান্তিকামী হয়ে এক মোহনায় দাঁড়াবার মত প্রাণবন্ত মানুষের সমাবেশ এই উমা ট্রাষ্টে ঘটছে। ইংরেজি শিক্ষার জন্যে অবৈতনিক ব্যাবস্থা রাখা আছে, ড্রাইভিং শিক্ষা থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়েও স্কুল কলেজ থেকেও যাতে তারা বিশেষ ব্যাবস্থাপণার মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা পেতে পারে সরকারীর অবদান সূত্রে- তারও হিসাব তাদের নোখ দর্পণে আছে। রিফিজিরা যাতে উপযুক্ত চাকুরী করে নিউজিল্যান্ডবাসী হয়েই সমান অধিকার পেয়ে মান উন্নত জীবনে সমৃদ্ধ হতে পারে উজ্জ্বল দৃস্টান্তের হয়ে সে দিকে বিশেষ খেয়াল রেখে এই কমিউনিটি কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবেই। নিউজিল্যান্ডের সমগ্র এলাকায় কি পরিমান বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি বা ধর্মালম্বীদের গোত্র বা পারিবার আছে তারও একটা গাণিতিক চিত্র বের করে জরীপ করে মিলিয়ে নিচ্ছেন এই সংস্থার ইনচার্জ এবং কনসালটেন্ট মিলে , গত পাঁচ বছরের হিসাব থেকে আগামী পাঁচ বছরে নতুন আগত সংখ্যা কত হতে পারে তাদের নতুন প্রজন্মের শিশুদেরকেসহ আর কিভাবে তারা এদেরকে আর্থ কাঠামোর মধ্যে নিয়ে শামাল দিতে পারবেন তারও পরিকল্পনা একই বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন । আর প্রচুর সংখ্যায় রিফুজি অধিক সুযোগ প্রাপ্তিতে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে তারও একটা চিত্র তারা সদস্য তালিকা থেকে পাচ্ছেন । আর যারা সদস্য নয় বা সমাজ কল্যাণ মূলক সংস্থায় আসছেন না তাদের সংখ্যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উৎস থেকে তালিকা গুলো গ্রথিত রাখছেন। অনেক দায় দায়িত্বের মধ্যে প্রধান দায়িত্ব হল অপরের উপকার করার মানসিকতা। আমি সেই ছবি আমার সামনে বসেই পেলাম, এক ৩৫ বছরের সুমালিয়ান মহিলা এসেছে যাতে একটা থাকার জায়গা পেতে পারে। তার অভিভাবক পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছে, সে ছিল ফ্রেন্ডের বাসায় , সেও অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে – কাজেই গাড়ীতেই তার আবাস। শুনলাম কোন মানুষের গেরেজের আঙিনায় নিরাপদ কোথাও থাকলেও ভোরে উঠেই সেই জায়গা ছেড়ে দিতে হয় গাড়ী সমেত, পাবলিক টয়লেট বা স্নানাগার ব্যবহার করলেও রান্নার ব্যাবস্থা নাই। ছোট খাটো চাকুরী করে দিন গুজরান করছে । কাজেই এই সংস্থার অফিস থেকে চাউল ডাইল তেল চিনি ইত্যাদি দেবার কথা বললেও সে নিল না ঘরের অভাবে। এপোয়েন্টমেন্ট ছাড়া হঠাত করে এলেও তাকে বসিয়ে রাখা হল যদিও সে ডাক্তারের কাছে যাবে বলেছিল –বলা হল যিনি এ ব্যাপারে ব্যাবস্থাপনা করে থাকেন তিনি এখনি আসছেন, কিছুতেই যেন মেয়েটি সুযোগ না হারায়, কায়দা করে আপ্যায়ন করা হল চা কফি দিয়ে। যাহোক একটু পরে দেখি মেয়েটি যাতে বিনা পয়সায় সাঁতার কাটতে পারে বা কম পয়সায় জিম করতে পারে তারই লিফলেট দিলেন সংস্থার প্রধান কর্মী এসে - বললেন ইয়াং লেডী তার দরকার এঞ্জয় করার। যাহোক এডভাইজার এসে কতগুলো পথ বাতলে দিলেন মাত্র, বাকী মেয়েটির ইচ্ছা । সরকারী পদ্ধতিতে ক্যাটাগুরি আছে হাউজিং নিউজিল্যান্ডের ঘর পাবার ব্যাপারে। যারা অতি বৃদ্ধ বা কোন পরিবার ছেলে মেয়ে নিয়ে দূর্দশায় আছে তাদের কে আগে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যেহেতু মেয়েটির চাকুরী আছে আর বয়স কম তাই তাকে অধিক সময় অপেক্ষা করতে হবে। কম মাইনার চাকুরী হলে ঘর ভাড়ার ব্যাপারে সরকারই বাকী পয়সার ব্যাবস্থা করে অনুদান দিয়ে থাকে ।
দেখলাম (কম্পিউটার থেকে) ইনচার্জে যিনি আছেন তিনি কম ভারার সুন্দর ছিমছাম বাড়ীর খোঁজ তাকে দিলেন, এবং ভেবে দেখার বিবেচনা মেয়েটির। সে চলে গেল সন্তোষচিত্তে। আমার কথাগুলো গল্পের আকারে বড় হল আমার চোখে দেখার হিসাব দিতে গিয়ে। নিউজিল্যান্ডে সম্প্রতিকালে কিছু সংখ্যক সিরিয়ার রিফুজি ক্যাম্পিং করে আছে। ওদের জন্যে ফান্ড রাইজিং করা হল উমা ট্রাষ্টের তরফ থেকে। এবার আবার ফিরে আসি যে সকল আলোচনার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে তার উপরে। উন্নত দেশেগুলোর মাঝে নিউজিল্যান্ডেই অধিক সংখ্যায় ডমেস্টিক ভায়ল্যান্স ঘটছে সমাজ নিরিখে দেখা যাচ্ছে। ঘরে ঘরে যে সকল অপরাধ সমূহ ঘটে থাকে শিশু থেকে নারী বা পুরুষের বেলায় তা যেন শিক্ষাগত আলো পেয়ে নিরাপদ আলয় হতে পারে, সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই শিক্ষামূলক আলোচনা সভা খুব সতর্কতার সাথে করা হয়ে থাকে। প্রয়োজনে দুভাষীর মাধ্যমে যুক্তিতর্কের বিনিময় করে সঠিক পথ বাতলে দেওয়া হয়। তারা জানতে সক্ষম হয় তাদের অধিকার সমূহকে যাহা সরকার থেকে তারা পেয়ে থাকবে। কুসংস্কার এমনি মর্মে গিয়ে পৌঁছে আছে যে একজন নারী বলছেন পুরুষের অধিকার আছে নারীকে মারধর করার, নিশ্চয় আমরা তাদের মতের বিরুদ্ধে এমন কিছু করে থাকি। কেউ বলছেন তাদের দেশে শিশুরা অভিভাবকের কড়া শাসনেই মানুষ হয়ে থাকে মারধর খেয়ে –সমাজে এটাকে অপরাধ বলে না। কিন্তু কিছু সচেতন মা আছেন নিজেদের শিশু অবস্থার অসহায় অবস্থাকে ভুলতে পারে না , তারা তাদের সন্তানদেরকে আদরে মানুষ করার প্রতিজ্ঞা করেন। ইথিওপিয়ান ইন্টারপ্রিটার তার সন্তানদের সামান্য শাসন করতে গিয়ে না কেঁদে পারেন না ।তার সন্তানেরা ভাবে নিশ্চয় মাকে তারা আঘাত দিয়েছে বলে কাঁদছে , তারা সরি বলে মাফ চাইতে থাকে। আসলে এই মহিলাকে তার অভিভাবক বেধে তো মারতই, চোখের ভেতরে মরীচের গুড়া ঢেলে দিত নাকি। কত না কাহিনী আড়ালে আবডালে কত না দেশে ছড়িয়ে আছে। আমি এক রাশিয়ান বইয়ে পড়েছিলাম কিভাবে তাদের পরিবারে শিশুরা অন্যায় করলেও ক্ষমা পেত না পুলিশি ধরণের নির্যাতন চালাত সেখানও। সমাজ কর্মীরা কম শিক্ষিত রেফুউজীদেরকে আলো দেখাতে পর্যাপ্ত ট্রেইন প্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগ করছেন তাদের মূল্যবান বক্তব্য পেশ করার জন্যে যাতে করে অভিভাবকের সাথে সন্তানদের সম্পর্ক সুস্থ ও সুন্দর হয়ে পরিবারিক বন্ধন নিরাপত্তা পায়। তারপরেও মহিলাদের সমাবেশে মহিলা পুলিশকে ডাকা হয় । ডমেস্টিক ভায়লেন্সের ব্যাপারে পুলিশ কি ভাবে অভিযোগকারীদের সুবিধা দিয়ে থাকেন সেই কথাগুলো পর্যায়ক্রমে জানান এবং পুলিশদের কর্তব্য ও অধিকার কতদূর পর্যন্ত ন্যাস্ত থাকতে পারে তার একটি নমুনা বক্তব্যে রাখেন যাতে স্বচ্ছন্দে পুলিশের সাথে জনগণের মনে একটা ভরসা পাবার সন্ধিক্ষণ ঘটে।
ইয়থ গ্রুপের কয়েদীদের সাথে পুলিশ যেন ভাল ব্যবহার করে ইয়থ জেনারেশনের কাছে সুন্দর দৃস্টান্ত রাখতে পারে সেই ব্যাপারে পুলিশ শ্রেণীকে সজাগ করার জন্যে সুন্দর আলোচনা সভার আয়োজন রাখেন তারা – সেখানে পুলিশ ও এই কমিউনিটির সদস্যদের মধ্যে একটি সুসম্পর্কও সেইসাথে গঠিত হয়।
এ দেশে প্রতিটি মানুষের জীবন থেকে অভিজ্ঞতালব্ধ গল্পগুলো সমাজকর্মীরা সংগ্রহ করে থাকেন এবং সমাধানের জন্যে তাদের পরামর্শগুলোকেও তথ্যের আকারে সরকারের দপ্তরে পরিবেশন করেন, সমাজবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে মানুষের জন্যে পরিপূরক সমাধানের পথ বাতলে দেন এই ভাবেও।
আমাদের দেশের চেহারার যতটুকু কুসংস্কার আর অনুন্নোত দিক আছে এখানে আমরা আসলে সেগুলকেই বর্জন করে নতুন আলোকে জীবনটাকে অর্থবহ করে তোলার প্রয়াস করি । এখানে সকল সদস্যের আলোচনা মূলে একদিন মুসলিম ধর্ম গ্রন্থের শরিয়া আইন সম্বন্ধেও প্রশ্ন তোলা হয় যা কিনা এ যুগেরর মাপ কাঠিতে অচল, অন্যথায় যা কিছু সমাজের মানুষের ক্ষতি না করে তার গ্রহণ যোগ্যতা রয়ে গেছে ।
জীবনের প্রতি ধাপে চলার ক্ষেত্রে পৃথিবীর যাবতীয় যত সুন্দর যুক্তির নিরিখে হতে পারে, মানুষের কল্যাণের স্বার্থে তা ব্যাবহার করলেই জাতির উন্নয়ন সম্ভব। নারী পুরুষের শিক্ষার আলোকের সাথে সঠিক অর্থ সমাগম হলে প্রতিটি জীবন পরিপূরক রূপ ধারণ করবে সুস্থ আর সবল হয়েই।
![]() |
পরিচিতি |
Tags:
প্রবন্ধ