ব্যোমকেশের চরিত্র থেকে নীলকণ্ঠ বাগচী,আদিত্য থেকে চিতানন্দ,অমর্ত্য থেকে পার্থ দাশগুপ্ত,ফইসাল ইসলাম থেকে তাস্মিন লুসিয়া খান,রবিশঙ্কর থকে ববি ঘোষ বাঙালীর বিজয়পতাকা পত পত করে দেশে বিদেশে উড়িয়েছে এইসব নামধারী মানুষ। মাৎস্যন্যায় থেকে উদ্ধার পেয়ে প্রথম সার্বভৌম সম্রাট গোপালের হাতে বাংলার রাশ তুলে দেওয়ার পর এভাবেই শানিত হয়েছে বাংলার গৌরব দেশে ও বাইরে। একচ্ছত্র রাজমুকুটের দিন বদলায়। অস্পষ্ট হতে থাকে সব ধারাপাতের হিসেব। মুম্বাই শিল্প জগত থকে বিদায় নিতে থাকে হিট পরিচালক ,সঙ্গীত পরিচালকের বাসা বদল, শহর বদল হতে শুরু করে। বাংলা চলচিত্র জগতে ঠাই পায় রিমেক শিল্প। এক আশ্চর্য্য সামাজিক পরিবর্তনের ঢেউ উপকন্ঠে আছড়ে পড়ে অর্থনৈতিক আন্তর্জাতিকরনের সাথে সাথে। নীতি আদর্শ,সংস্কার,এই সব চোখের আড়ালে অদৃশ্য হতে থাকে। পড়ে থাকে খালি কাঠামো।
পুরানো কাঠামোয় অবয়ব দেবার পথে প্রধান বাধা হয় দেশের রাজনীতি যা মানুষের মনন কে অনেকটায় খেয়ে নেয় বিগত দিনে। এক অলিখত চাপের কাছে মানুষ নত হতে থাকে । এক ধরাধরি ও স্বজনপোষণের কালচার দখল করে বাঙালীর উতকর্ষের জায়গা কে। যে ইংরাজ বাঙালীর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে হাসিল করে আনুগত্য সেই কায়দা অনুকরণীয় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে থাকে। শেষ কয়েক বছরে একটি পরিচিত চিত্র দখল করে বিভিন্ন পদে নি্যোগের দুনিয়া। দুর্ভিক্ষের দিনে নিজে মাংস ছিড়তে উদ্যত বেকার বাঙ্গালী নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে ছুটতে থাকে লোক ধরতে । সামন্তযুগে হারিয়ে যাওয়া ইজারাদারদের মত সৃষ্টি হয় মধ্যস্বত্বভোগীরা যারা লক্ষ্যেপূরনের লাড্ডু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আদায় করতে থাকে দিশেহারা যুব সমাজের সমর্থন। এক আইওয়াশ এর চলন স্থায়ী হয় মানে ঘটনা চাপা দেওয়ার পক্ষ তৈরির এক অপুর্ব কারুকার্য সযত্নে মান্যতা পেতে থাকে।মিথ্যা ভাওতার সমর্থনে দাড়াতে থাকে স্বপক্ষ আর সত্য পরাস্ত হতে থাকে নীরবে।কি কলেজ ,কি বিদ্যালয়,কি আইন কি বিচার দুর্নীতিতে ছেয়ে যায় উত্তরণের দিশা।
স্বাধীনোত্তর যুগে বিশ্বাসঘাতক বিপ্লবীকে জেলবন্দী অবস্থায় প্রান হারাতে হয়েছিল এই দেশে কিন্তু তারপর বেশ কিছু শব্দের সরলীকরন ঘটিয়ে ফেলে বাঙ্গালী। পারস্পরিক সন্দেহ ,বিশাসঘতকতা,ষড়যন্ত্র এত আটপৌরে হয়ে জীবনের সঙ্গে মিশে যায় যে এর কোনো আলাদা রঙ চোখে পড়ে পরে না আজ।বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় একটি শিশু নিয়ম না মেনে। উত্তীর্ন হতে থাকে পরিশ্রম না করে,ভাল ফল করে ফেলে পরীক্ষায় ঢালাও নকল করে তারপর চাকরী জুটিয়ে ফেলে পুর্বপুরুষের শাসক বা বিরোধী দলের প্রতি বংশানুক্রমিক আনুগত্যের পুরষ্কার স্বরুপ। তারপর তার আসল পরীক্ষায় মানে সমাজকে কিছু দেবার প্রকৃত সময় সে এক ক্লাসে তিনবার ফেলের চেয়ে ও ফাকিবাজ ও বোকা ছাত্র হেসেবে নিজের ইমেজ তুলে ধরে। কিন্তু পারিশ্রমিক সে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অনান্যদের মতই পেতে থাকে।
অমেরুদন্ডী সরীসৃপদের মত এক বেনিয়ম আর ব্যাকডোরের আগল সমাজের সামনে এমনি করে খুলে দেওয়া হয়। চাতুরী আর শয়তানির বাজারে শুধু করে খাওয়ার নীতিবাক্য শপথপাঠের মত অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আমি কে তার তুলনায় বড় হয়ে ওঠে আমি কিভাবে আছি। আমার গুন ও দক্ষতার একটি প্যারালাল মিটার তৈরী হয় । আমার সক্ষমতা মানে আমার ব্যাংক ব্যালান্স এর ক্রাইটেরিয়া একটি মানের নির্নায়ক। সেটা অর্জিত যে উপায়েই হোক তা চূড়ান্তভাবে ধিকৃত নাও হতে পারে। অনেক শিক্ষক,ডাক্তার দুই উপায়ে এক কাজের পয়সা সংগ্রহ করে একরকমের চোরা কারবার করছে, প্রমোটাররা গায়ের জোরে জায়গা দখল করছে নিরীহ মানুষদের কাছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নেই বরং তারা সম্মানিত,এলিট ক্লাস দের মধ্যে গণ্য হচ্ছে।
যুবসমাজের হাতে ব্রানেড অয়াইন এর বোতল, ক্লাবে ক্লাবে গুন্ডামীর আসর, পেন ড্রাইভ ভর্তি পর্ন ছবি, প্রযুক্তিভালবাসা, অয়েবসাইটের কান্না, ম্যাট্রিমোনিয়াল ডট কমের হাতছানি অশ্লীল শব্দের লেহাজহীন ব্যাবহার। সবের এক কৃত্রিম ঘর। আটকে পড়ে হাঁস ফাঁস পেনসনভোগী ব্রাত্য বয়স্ক সমাজ।
একটা যুগান্তকারী ভাঙনের সামনে দাঁড়িয়েও মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করছে সেটা তার সিরিয়াল ,সোস্যাল নেটয়ার্ক , এসি র হাওয়া, চারচাকার সুখ। এই বদ্ধ সুখের মাঝে হয়ত কখনো ফোঁস করছে তার পুত্রের চাকরী না পাওয়ার ব্যার্থতা বা তার আলাদা সংসারে পাড়ি দেওয়া বা কন্যার সুখী না হতে পারা যদি ও তাতে এই বিশ্বসংসারের বারো কাহিনীতে তাদের মনের কোন হেলদল নেই। সকালে মাছের বাজার,দুপুরে একটু অফিসে ঘুমঘুম তন্দ্রায় জিরানো তারপর রাতে প্রতিপক্ষ। ম্যাগি নিয়ে উদ্বেগ,কোক নিয়ে চিন্তিত ,মমতা নিয়ে শঙ্কিত,একটুকনি কাদম্বরী,দাদার নতুন দায়িত্ব, নয় রোনাল্ডোর ফ্যাসাদ ব্যাস বাঙালীর কাটল একটি দিন। ক্ষতি কি ! গাছের সব পাতা তো আর আলোর অভিমুখে ধায় না।
![]() |
পরিচিতি |
Tags:
সোজা সাপটা