পচাদের পুকুর পাড়ে বাঁশ গাছের ছায়ায় বসেছিলাম । আমার হাতে মোবাইলে ইন্টারনেট খোলা ছিল । একটা বিষয়ে তথ্য সার্চ করছিলাম । হঠাৎ করে হাত ফসকে মোবাইলটা সোজা পুকুরের জলে ।
তারপর শুরু হলো কেলোর কীর্ত্তি । পুকুরের জল মোবাইল ভেদ করে কুলকুল করে ইন্টারনেটে ঢুকতে লাগলো । আমি মোবাইলটাকে পুকুর থেকে পুনরায় আবিস্কার করার আগেই ইন্টারনেটে জলময় কান্ড । এরপর যেই কেউ ইন্টারনেট খোলে, দ্যাখে সবকিছু অপশ্যন্ জলে ভাসছে । কোনোকিছু বিস্তারিত জানতে গেলেই কিংবা ডাউনলোড করতে গেলেই, টুবুক করে জলে ডুবে পড়ছে সব ।
বর্তমান জামানায় এর থেকে বড় কেলেঙ্কারী আর কিই বা হতে পারে ? সব মানুষ ক্ষেপে আগুন । খোঁজ খোঁজ করে সবাই জানতে পারলো, এই কান্ডটি আমার ।
তারপরের দিনই সবাই মিলে জোটবদ্ধ হয়ে আমার ঘর ঘেরাও করলো । আমি ঘ এ ঘাবড়ে যা তা অবস্থা । সবাই একাসাথে হুঙ্কার দিচ্ছে । আমি ভয়ে ভয়ে এক পা এক পা করে বাইরে বেরিয়ে এলাম । সবাই তো আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার উপক্রম ।
আমি চোখে মুখে লোক দ্যাখানো সাহস এনে বললাম – “আমার অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনাটা ঘটেছে । তবুও আমি ক্ষমা চাই না । আমি শুধু দু’চার কথা বলতে চাই । তারপর আপনারা যা ইচ্ছে শাস্তি দেবেন আমাকে ।
সকলে একবাক্যে রাজি হলেন । আমি বেশ ধিক্কারের সাথে কিছু কথা বললাম । সবাই নিঃশব্দে শুনলেন । তারপর বেশ কয়েকজন আমার কাঁধ চাপড়ে বললেন – ‘সাবাস্…’ এবং পরিশেষে দল বল গুটিয়ে সবাই চলে গেলেন । আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও তৎক্ষণাত ডারউইনের ‘অস্তিত্বের জন্য লড়াই’য়ের কথা মনে পড়ল । আমি কি বলেছিলাম জানেন ?
বলেছিলাম- “আমি অজ্ঞানে ইন্টারনেটে জল ঢুকিয়েছি বলে, আপনারা জাতি-ধর্ম ধনী-গরিব নির্বিশেষে সংবদ্ধ হয়ে আমার সর্বনাশ করতে এসেছেন । অথচ আপনাদের প্রত্যেকের ডায়ে বাঁয়ে প্রতিদিন কিছু পিশাচ সজ্ঞানে হাজার হাজার কিউসেক জল আপনাদের কপালে ঢুকিয়ে দিচ্ছে । বানভাসি করছে আপনাদের ভবিষ্যত । কই তার বেলা তো কোনোদিন সংবদ্ধ হননি? একসুরে উচ্চারণ করেননি প্রতিবাদের শব্দ?
মেরে ফেলুন আমাকে । আমি ক্ষমা চাই না । তবে একটাই অনুরোধ এই জোট ভাঙবেন না । আমি ইন্টারনেট ধুয়ে দিয়েছি, আপনারা এবার দেশটা ধুয়ে দিন ।”
সুচিন্তিত মতামত দিন