পীযূষ কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়

~ কবি পরিচিতি ~ 

                   




সুরঞ্জনা  


 সুরঞ্জনা, অইখানে যেতে চাও? যাও।
 অই যুবকের সাথে মেঠোপথ ধরে –
 দিগন্তে বিলীন হও।পদচিহ্ন শুধু
 ধান হয়ে ঝরে যাক মাটিতে -পাথরে।
চলে যাও, ফিরে আর তাকিয়ো না তুমি।

বুকের ভিতরে তার তীব্র বিষ-নোখ
ফুঁড়ে চিল কি লিখেছে, জেনে নাই কাজ।
আজ শুধু চলে যাওয়া চিরন্তন হোক।
শুধাবো না আমি আর কে অই যুবক
তার সাথে বাকি আছে কোন কথাগুলো
কেন সে'ই বারবার তোমাকে তাহার দিকে টানে?
এই মাঠ - সোঁদা হাওয়া - মাটি - ঘাস – ধুলো
ফেলে কেন বারেবারে, মিথ্যে আকর্ষণে
অই দুটি আঁখিপানে চাও?
 জানতে চাইনে।যাও..
যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে পালাও।
তুমি কি স্বৈরিনী ছিলে কিংবা সে সংসারী
সুরঞ্জনা, এ প্রশ্নেরা ডুবে যাক নিকষ আঁধারে।
শেষবার - শুধু যদি পারো বলে যেও, সব ছেড়ে
দুচোখ বিছিয়ে পথে সে কি শুধু কবি হতে পারে?

                   
নওরোজ  (দোধক ছন্দে ) 



খাপখোলা রাত সেকি সাপ নাকি অঞ্জন?
রাগ লাগে বাস্তুতে। খতরা না খঞ্জ
কার তৃষা চন্দনচর্চিত পাত্রে?
কোন দেশে চাঁদ যাবে নির্জনে সাঁতরে?
ঘূত্কারে ভয় জাগে, ঘোমটাতে চনমন
কোন চোরা ভুখ ঢেকে চম্পকে জন্ম
দেয় স্মৃত অগ্নিভ শংখিনী বৃক্ষ?
 ঝর্ণাতে ঢেউ তোলে চাঁদকুড়ো নিক্কন।
 অন্তরে জাগ্রত তিক্ত নগন্য
জিন্দেগী ক্ষীনজীবি জলসা, না জন্নত ?
 আজ রাতে কিসমতে এই আছে, ময়লা
জাম, সাকি, আর কিছু শর্মিলি সয়লাব
কার জানাজার সাথে পথ চলে, দশ রথ
রফতারে নিন্দিত কার বুনো হসরত্?
কার তীরে কোন বুকে খাল করে সৈয়দ
আলগোছে কোন খুনে দ্যায় চাপা বইও
কোন সুরে গান কাঁদে অম্বরে চুম্বি
নিন্দিত কার ব্যথা, ইচ্ছারা জুমবিশ

আজ নিশি ভিনদেশি প্রীত্, অপরূপ কেশ
স্বর্ণালী চুমকিতে যায় ঢেকে চুপকে
আজকে কি সঙ্কেতে উথলালো অর্ণব
কোন দুখী পেট হতে জন্মালো কর্ণ
কোন সুত বস্তিতে কান্নারা চঞ্চল

কোন শোকে ঘাম মোছে বিদ্রোহী অঞ্চল?
 আজ মনে জিজ্ঞাসা, আসবে কি মুক্তির
 ডাক দিতে সেই হোতা, সস্নেহে মুখটি
গর্বিত হাত দিয়ে ঠিক তুলে ধরবে
আসবে কি এই ক্ষণে পথ ভুলে দরবেশ?
 ধুম্বলে ঘুম বলে - কোন কথা কও রোজ
 ওই দ্যাখো, আজ সাঁঝে ডাক দিলো নওরোজ।
পশ্চিমে মিশকালো মেঘ ডাকে প্রাণপাত
 চুপ করে থাক, শুধু বৃংহণে কান পাত। …


অপেক্ষা



লুকানো দাগের কথা বলে গেল ভালোবাসাবাসি।
বলে গেল ছোঁয়াই শাশ্বত - বলে গেল
পূন্য নয়, আর্তি আর পাপের আদরে
ভালবাসা জন্ম নেয় - ভালোবাসা মরে।

সেকথা শুনিনি আমি। শুধু তার খানিক আভাস
আমার অন্তরতম নাম নিয়ে গেছে।
ছুঁয়ে দিয়ে গোপণ বোতাম
লিপ্সা আর সান্ত্বনার জারিত নির্যাসে
আমার সামনে থেকে সে আমাকে
তুলে নিয়ে যাবে
যাবতীয় ধারদেনাসহ। এই জেদ
প্রতিশ্রুতি হতে পারে , কিংবা শুধু কাম
কিংবা ঘুন, পুতিগন্ধময় কোন গোপণ আরাম
হতে পারে!
তবু নামহীন, অবয়বহীনা,
কি স্পর্ধাই নিলি গান, কোন মন্ত্রবলে
জেনে গেলি, আমি তোকে ভুলতে পারিনা।
অজ্ঞাতবাসের মেকি অভ্যর্থনা মুছে
আমি শুধু চেয়ে থাকি পূর্বে পশ্চিমে।
অপেক্ষার শেষপ্রান্ত হতে নিষিদ্ধ কিঞ্জলগান
 এসে যদি মিশে যায় জীবনের অর্থহীনতায় ,
 লাগে যদি বন্যতায় দাসত্বের জরাজীর্ণ ঘোর
যদি মিথ্যে স্বপ্নে ফুল হয় পাথর
যদি না পাওয়াতে সর্বাঙ্গীণ হয় সে বিরহ …
তবে আশাহীনতার সেই নিরংকুশ ক্ষণে –
অপেক্ষার ভোর হবো। দেখা হবে পরের স্টেশনে।
 কানা আধুলির মত - মৃতপ্রায় কুষ্ঠরোগীটার
 ভিক্ষাপাত্র থেকে কে আমাকে তুলে নেবে কবে?
এ আশাতে বেঁচে আছি। এভাবেই মরে যেতে হবে।


সনেট -৮১ 


বিস্তীর্ণ কংকাল হয়ে ইতিহাস বসে থাকে যদি
ব্যাকুলতা কিংবা চেনা অর্ধমৃত জামীরের গাছে
অথচ ফাগুন'মাসে বয়ে যাওয়া প্রশ্রয়ে ক্রমশঃ
সে ফারাক ঝুনো হয়ে দুজনারই ওষ্ঠে রাখা আছে।
কতখানি রাত্রি ছিল বিগলিত – যৌথকামনায়
 যেটুকু হলুদ ছিল বিয়ারের মত রোদে দিন
কতটা বিষণ্নে ছিল আলগোছে ধরেরাখা হাত
কতটা পথের গন্ধে সম্মিলিত হোঁচট উদাসীন
সে কথা শহর জানে।অতর্কিত জ্যামিতিক ফাঁদ
লৌকিক ম্যাপল'বনে আরো বেশী ধুলোঝড়ে যদি
একাকীত্বে ভিন্ন করে - দলছাড়া বুদবুদের মত।
আসন্ন বন্যার গন্ধে পেশাদার হতে চায় নদী
ভ্রুভঙ্গিতে মূর্ত হয় প্লেটোনিক ধূর্ত অক্টোপাস…
তবে ফের গল্পে হবে পাড়ি দেওয়া ফাগুনের মাস।


মাথার মধ্যে শ্রীজাত আর …


আজকে মাথায় শ্রীজাত আর হাতে শীতল বিয়ার
হাড়হারামি হাফবসন্তে বাতাসও ঈশকিয়া
 কিন্তু আমার ঘিঞ্জি ঘরে হাওয়ার প্রবেশ নিষেধ
তোমার বিয়ের ম্যারাপ সাজছে, কষ্ট লুকাই কিসে?
কান্না ভাসছে আয়না হয়ে, খাসির গলায় কসাই
পোঁচ দিয়েছে। আতসবাজি কিংবা তারাখসা
আকাশজুড়ে, অন্ধকারে মুচড়ে ভাঙা ডানা
বক্সে তখন কাঁদছে সুরে খানসাহেবের সানাই।
ফ্লাশব্যাকে আজ গোঁত্তা খাচ্ছে ভোকাট্টা সিম্ফোণী
পেরিয়ে আসা সে স্কুলবেলা, গ্রামার, পাটিগণিত
আধমরা রোদ পিচরাস্তায়, টিউশনহীন বিকেল
 ড্রপ খেয়ে প্রেম প্যাঁচ লাগাতো আমার চতুর্দিকে।
 ড্রপ খেত বল বুকেও তোমার নরম ফেদার উলের
 দেখব বলেও পাশ কেটেছি, ক্লাস কেটেছি স্কুলে।
জানলা তখন চাঁদের মায়া, ছাদেও খুশীর লহর
আমি তখন চড়কিপাকে তোমার উপগ্রহ।
আমার দেওয়া হাতচিঠিটা তোমার বাড়ির গ্রীলে
আটকে গেলে আমার মা আর তোমার বাবা ভিলেন
আমি সেদিন ভাত খাইনি, তুমিও চঞ্চল
সেদিন তুমি বৃষ্টি হলে, আমি ফটিকজল।
সেই চিঠিটাই ভিজছে জলে, ভাবছি চেয়েচেয়ে
তুমিও শেষে আমার ফেলে কালটি নিলে , মেয়ে।
 অর্ধসিক্ত চিঠির ভাঁজে লাখ শ্রীজাত'র পোকা,
বুকের ভেতর ভাসান, নাচছে -"উড়ন্ত সব জোকার।"



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.