সেখ সাদ্দাম হোসেন






মেয়েটির লগ্ন



আজ মেয়েটির লগ্ন …

আজ সারাদিন
জানালার ওপারে বৃষ্টির মজলিস
অথচ ঘোরের কোনে একলা পুড়ছে ছেলেটি …

এমন-ই বৃষ্টি দিনে
দুজনে
একই ছাতার বাঁসরে
আলো মাটির গন্ধে বিভোর
জল-ছবির মতো মোলায়েম
একটি প্রেম ।।

তারপর পেরিয়েছে দুটি বছর
শ্রুতি প্রতিশ্রুতি
সাংকেতিক রূঢ়
তরল বায়বীয়
অবস্থার পরিবর্তন ঘটে
আজ মেয়েটির লগ্ন ….


মুক্তি




বৃষ্টির ফোঁটা স্পর্শ করলো যখন পাতার উড়ো চুল
কি যেন কি বলে গেলো কানে কানে !
ওদের ভাষার শব্দ নির্বাক
কিন্তু রহস্যময় …..
আমিও নির্বাক হবো একদিন ।
শিল্পীর ক্যানভাসে পালক খসিয়ে রেখে যাবো রঙ
ধানের জাঙির গায়ে ফুটফুটে রোদ
পরিত্যক্ত বাড়ির পিছনে তুলসীর ফুল
সদ্যোজাতের প্রথম কান্নায় বানভাসি বুক
প্রতিটি শব্দের খোসায় সাঁওতালী প্রেম ।
আর আমার নামের বাঁদিকে
একটা বড় শূন্য
যার চরপাশে বিবর্ণ বাষ্প হয়ে ঘুরপাক খাবো আমি ।।


 ঠিকানা



ও বাতাস আমাকে একটু ধান-ফুলের ঘ্রান এনে দিতে পারো
আজ ভীষন ইচ্ছে করে গ্রামে নির্বাসিত হতে ।
হয়তো দুপুরের রোদ উঠানে এসে ঘুমিয়ে আছে এখন
পাড়ার ছেলে গুলোর মারবেল নিয়ে ছুটোছুটি….
কেনই বা বড় হলাম !
অথচ প্রথম যেদিন মায়ের সম-পরিমান ভাত খেলাম
দাদুকে সাড়ম্বরে বলেছিলাম,`আমি বড় হয়ে গেছি’ ।
দাদু হেঁসেছিল তখন, আমি আজ ….

মেঘ করলে মা বলতো, মেঝেতে হাঁড়িগুলো ঠিকমতো বসিয়ে দে
খড়ের ছাউনি থেকে টুপুক টুপুক শব্দে বৃষ্টি পড়তো মাটির হাঁড়িতে
আমি সেই খয়েরী বৃষ্টিতে হাত ডুবিয়ে মায়ের জন্য রাজপ্রাসাদ খুঁজতাম।
আমি আজ সেই রাজপ্রাসাদেই থাকি
মা থাকে গ্রামের কবরস্থানে….
ও বাতাস আমাকে একটু জোনাকির আলো এনে দিতে পারো
আজ ভীষন ইচ্ছে করে মায়ের সোহাগে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে ।।

এ আধুনিক পৃথিবী আমার ঠিকানা নয় ……
খাস্ ধানের শিস কুড়িয়ে গোটা পঞ্চাশেক টাকা জোগাড়, তারপর
গরুর গাড়ি চড়ে মৈদাড়া-র মেলা
মায়ের জন্য কাঁচের চুড়ি আর আমার রঙিন ঘুড়ি ।
আর একটু বড় হতেই কাঁপা কাঁপা অক্ষরে প্রথম চিঠি
উথাল পাতাল প্রেম
কয়েক বছর বাদেই তাঁর বিয়ে, আমার নিকোটিনে হাত ।
তিল ফুলের মতো সেইসব স্মৃতিগুলো ছেড়ে, এত দূরে আমি
আমার নিঃশ্বাসের কষ্ট হয় এখানে ….
ও বাতাস আমাকে একটু বাল্যকাল এনে দিতে পারো
আজ ভীষন ইচ্ছে করে মোল্লা খামারে হা-ডু-ডু খেলতে ।।



- কাইতি / বর্ধমান - 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.