ঝিলিমিলি




সেই সকাল ন’টায় বেড়িয়ে গেছে অর্নব আর ফিরে আসছে না। ঘরটা থমথম করছে তার উপরে আকাশে মেঘ জমে আছে। পুঞ্জিভুত হচ্ছে স্মৃতির আবেশ, এরই মধ্যে উনুনে রান্না চড়াতে হবে। শীতের প্রকোপ কম নয়, বুদ্ধি করে পায়ের মোজা জোড়া পরে নিতে হয় অর্পিতাকে। সে যাই হোক মনের ভেতরে হাজার ঝড় বয়ে গেলেও অফিসের সময়টাকে ধরে রাখতেই হবে। আগামীকালের খাবার ব্যাবস্থাপণা আজই খানিকটা করে নেওয়া রুটিন মাফিকমত। হ্যাঁ দু’তিনবার টেলিফোন করেও পেটের ছেলেকে ধরা গেল না, অর্পিতা জানে এর জের চলবে আরও সপ্তা তিনেক।

ছেলেটা ভূগছে আর তাকে ভূগতেই হবে বাস্তব বিবর্জিত হয়ে যতদিন সে থাকবে আর বিশেষ করে মনের ভেতরের শিশু অবস্থা যতদিন তার থাকবে। অর্নবকে তার বাবার দূরত্বকে কাছে টানে কিন্তু তদুপরি মনের মত করে তার বাবাকে পায় না। ভাবছিল মাকে নিয়েই সময় তার নির্বিবাদে চলে যাবে। অর্পিতা এইদিকে অনেকখানি তার একাকীত্ব সময়কে গুছিয়ে নিয়েছে আজকাল বন্ধুর সংগে গোল মিটিংএ বসে। তারা ঘরে এসে আন্তরিকতা নিয়ে আড্ডা দেয়, ঘরের ভেতরের সূর্যের আলো ভিটামিন ডিএর অভাব মিটিয়ে যায় যেন।

অর্পিতা তার ছেলের সংগকে আশা করছিল সেই সাথে, কিন্তু দেখা গেল ছেলেটা ক্রমশ দূরের হয়ে যাচ্ছে তাতে। অর্পিতার উপরে দুঃখের ক্ষীণ ছায়া এসে পরে। সেদিন যখন টেলিফোনে অর্পিতার কথা হচ্ছিল অফিসের কোন জরুরী খবরের কারণে, দেখল ছেলেটি ক্ষুব্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আর শেষটায় বলেই ফেলল, মা আমি তোমার এসব আচরণগুলো মোটেই পছন্দ করছি না, কেন তিনি ঘণঘণ তোমায় টেলিফোন দিবে? প্রথম দিকে মাতৃত্বের অধিকার নিয়ে অর্নবকে ধমক দিলেও পরে অর্পিতা নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছিল নিজের ভেতরে বুঝাপড়া করে। ছেলে হয় তো ভাবে,  মায়ের ডিভোর্স হয়েছে কিন্তু মা কি বুঝে না সে যে ছেলেটির মা হয়েই গেছে পাকাপোক্ত ভাবে। অর্পিতা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় কারও সঙ্গে হাসিমুখে সুখের কথায় বিভোর হবে না, ছেলের মনে শোক চাপিয়ে দিলে ক্ষতি বৃদ্ধি হবে যে তার নিজেরই আর সেই ক্ষতি সামলিয়ে আর উঠা হবে না। অর্পিতার স্মৃতির পৃষ্ঠাই বেড়ে যায়।
- নিউজিল্যান্ড - 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.