২১২৫ সালের শীতকাল। খুলনাহেরিটেজ মেগা-সিটির এক ঝুলন্ত অ্যাপার্টমন্টের বেডরুম। পরিশ্রান্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে ২৪ বছরের নীলনয়না বাদামী চামড়ার তরুণী রিঙ্গিত। ইথনিক পরিচয়ে ও বাংরিশ- আইরিশ ও বাঙালির শংকর।
অশোকের সাথে রিঙ্গিতের ব্রেকআপ হয়েছে আজ পনেরোদিন। জিনকোডে বাঙালি উপাদান থাকায় তুলনামূলকভাবে বাংরিশরা একটু ভাবপ্রবণ। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলেও এ পনেরো দিনে দারুণ এক কাজ করে ফেলেছে রিঙ্গিত । গত শতাব্দিতে প্রচলিত অ্যাবস্ট্রাক্ট এবং কিউবিজমের মিশ্রণে আলফি ল্যাংগুয়েজে চতুর্মাত্রিক ফর্মে একটি অ্যানেমেটিক ড্রয়িং করেছে সে। । এ আর্টটির কাছে দাঁড়ালেই হার্টলেস মানুষও বিষণ্ণতায় কাতর হয়ে পড়বে, এ বিষয়ে সে নিশ্চিত। আগামী বছরের কার্ল মার্কস চিত্র প্রদর্শণীতে আর্টটি পাঠানোর কথা ভাবছে।
এখোনো ঘোরের মাঝে আছে সে। অশোক এখন কি করছে! গত শতাব্দিতেও এমন ব্রেকআপ হলে আমৃত্যু প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার স্মৃতি থেকেই যেতো। পুরানো কবিতা, গানের প্রায় সত্তর ভাগই তো নর-নারীর প্রেম-বিরহ-স্মৃতিকে ঘিরেই।
রোমান্টিক বাঙলা ক্লাসিক রিঙ্গিতের খুব পছন্দ। অপ্রচলিত বাংলা হলেও ওর কাছে বেশ লাগে রবীন্দ্রসঙ্গীত। ইথারোগ্রামের ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাডজাস্ট করতে থাকে ও। বাতাসে ভেসে আসতে শুরু করলো গত শতাব্দির নামকরা রবীন্দ্রশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গলা-
তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে।
যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে।
যদি থাকি কাছাকাছি,
দেখিতে না পাও ছায়ার মতন আছি না আছি--
তবু মনে রেখো।
যদি জল আসে আঁখিপাতে,
এক দিন যদি খেলা থেমে যায় মধুরাতে,
তবু মনে রেখো।
এক দিন যদি বাধা পড়ে কাজে শারদ প্রাতে-- মনে রেখো।
যদি পড়িয়া মনে
ছলোছলো জল নাই দেখা দেয় নয়নকোণে--
তবু মনে রেখো।
গান শুনতে শুনতে ইমোশনাল হয়ে পড়ে সে। গাল বেয়ে নামতে শুরু করে চোখের পানি । অবশ্য মূহুর্তেই সামলে নেয় নিজেকে।
এ ইমোশনের কোন মানে হয় না! অশোক নিশ্চয়ই ইতিমধ্যেই নিউরোণ ক্লিন করে মুছে ফেলেছে ওর স্মৃতি! পুরানো প্রেমিকের স্মৃতি নিয়ে নতুন কারো সাথে রিলেশন করা নৈতিকভাবে ঠিক না। রিঙ্গিতও মেমোরি ক্লিনার হাতে নিয়ে মনিটরে সার্চ করতে থাকে ওর ব্রেনের কোন কোন নিউরোণে অশোকের স্মৃতি ধরা আছে।
লেখক পরিচিতি
- ঢাকা -
লেখক পরিচিতি
- ঢাকা -
সুচিন্তিত মতামত দিন