স্ব অধীনতা
যতবার মনে মনে স্বস্তির শ্বাস ফেলে স্বাধীন হই, ততবার পিকুলিয়ার ধরণে আসে
নতুন শেকল ... একজন্মেই কতবার যে হাত পা ছুঁড়ে ইউরেকা আর কতবার মুখ
ভ্যাটকানো হা কপাল ইয়ত্তা নেই ... জন্ম মৃত্যুর বিস্তীর্ণ মুক্তাঞ্চলে
সেই যে প্রথম নাড়ি ছেঁড়া জন্ম চিৎকার... অন্ধকার মাতৃগর্ভমুক্ত প্রথম
স্বাধীন নিঃশ্বাস আর আম্বিলিকাল কর্ডএর সাপোর্ট ছাড়াই একলা চেষ্টার
বেঁচেথাকা, স্তন্যপানের তাগিদ ওষ্ঠকুঞ্চন আর সুতীব্র কান্নায় নিজের খিদে
ঘুম রাগ বিরক্তি ভালোবাসার চাহিদা বোঝাতে পারা এটাই তো জন্মপরবর্তী প্রথম
স্বাধীনতার আস্বাদ ... নিজ ক্যালিতে হামাগুড়ি ছেড়ে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে
প্রথম টালমাটাল পদক্ষেপ এটাই তো দ্বিতীয় মুক্তি ... এই যে দেখ , আমি
বাড়ছি মাম্মি ... ক্রমশ ছোট মনে হওয়া আপন চৌহদ্দি দেয়াল ঘর মায়ের কোলের
নিরাপদ গণ্ডীকে ছাড়ানোর আর উন্মুক্ত অঙ্গনে আত্ম কে ছড়ানোর আনন্দ যেন
আকাশে বাতাসে নতুন দূর থেকে আসা সুবাস ... তারপর দশে মিলে করি কাজ আর
সেভাবেই আস্তে আস্তে একার চেষ্টায় সামাজিক হয়ে ওঠা , বুঝতে শেখা , স্কাই
ইজ দ লিমিট, স্বাধীনতা তুমি তুমি তুমি আমার কি ভীষণ প্রিয় হয়ে ওঠো , কি
নিদারুণ এই অমোঘ সন্তরণবেলা ... তখন বয়ঃসন্ধি ... তখন ডানা গজাচ্ছে পিঠে
... তখন মনের মধ্যে অলি বার বার ফিরে আসে , অলি বার বার ফিরে যায় ... তখন
বাবার চেয়ে স্মার্ট ছেলের জামার কলার মায়ের বকুনি ন্যাগিং ... তখন বা
হাতে ফোঁকা প্রথম সিগারেট , বাড়ি ঢোকার আগে মুখে চিনি- মৌরি , তখন
বান্ধবীর দিদির বিয়েতে গিয়ে বান্ধবীর বোনকে দেখে ডায়নার মত সুন্দরী লাগে
, পাড়াতুতো দাদাদের সাথে প্রথম একা একা শহরের বাইরে পিকনিক ,
কোল্ডড্রিঙ্কস এর বোতলে চাখা টিচারস চয়েস , কলেজ এ গিয়ে পাক্কা হিরো
হিরোইন , তখন রেখার আর অপর্ণা সেনের তুলনা করে ক্যান্টিনের টেবিল ফাটিয়ে
ফেলা , তখন মায়ের শাড়ি পরে মেয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালে মায়ের মনে পড়ে নিজের
যুবতী বেলা , তখন মায়ের পরামর্শদাত্রী হিসেবে প্রমোশান ঘটছে মেয়ের , তখন
মাকে কথায় কথায় মনে করিয়ে দেওয়া , ‘উফফ , সময়টা অনেক এগিয়ে গ্যাছে , মা
!’ রাস্তায় মা বাবার হাত ধরে হাঁটি না , বরং মা বাবাকেই রাস্তাঘাটে
সাম্লে সুম্লে রাখি ... তখন বন্ধু মানে সব পেয়েছির দেশ ... কম বয়সী
লেকচারার এর ক্লাসে প্রায় ডিরোজিওর ভূমিকায় ... আহা , জীবন কি সুন্দর ...
আহা , বড় হয়ে গেছি , আহা , নিজের ও একটা মতামত আছে না আমার ! তারপর যেদিন
নিজের কামাই ধান্দা শুরু হল , নিজের ঠ্যাঙের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেকে অন টপ অফ
দ ওয়ার্ল্ড মনে হল , বাবামায়ের দেওয়া পকেট মানির তোয়াক্কা না করে মায়ের
হাতেই বরং তুলে দেওয়া গ্যাল মায়ের গোপন কোন আকাঙ্ক্ষিত জিনিস , বাবার
পেনশানের টাকায় গোটা সংসার আর চালাতে হবে না এই ভরসার কথা শুনিয়ে দেওয়া
গ্যাল , বিশেষ বন্ধু বা বান্ধবীকে আকাশের চাঁদ আর তারার গল্প না শুনিয়ে
এবার দোকা হবার কথা ভাবা গ্যাল , স্বাধীনতা তো এটাও , দুনিয়ায় আর বেশী
কিছু কে চায় ... সুখের দিন যে কেন এত স্পীডে ভোকাট্টা হয় তাকে পেয়েছি এটা
ঠিকঠাক বুঝে ওঠার আগেই , কে জানে । ফুরফুরিয়ে উড়তে উড়তে যেই ‘যদিদং
হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব’ হয়ে গ্যাল তো অমনি খেলা শুরু ... তখন ডাইনে
বাঁয়ে উপর নীচে এটা করবে আর সেটা করবেনা এর বিনি পয়সার বিজ্ঞাপন । একা
রামে রক্ষা নেই , তায় আবার সুগ্রীব দোসর ... ঘরে যদি পতিপ্রবর আর বেটার
হাফ বাইরে বস । তুমি তখন দম দেওয়া কাঠ পুতলি ... ইয়েস ম্যান কিম্বা সনাতন
রমণী ... হ্যাঁ হ্যাঁ বলা সং ... ঘরে বাইরে শান্তি রক্ষা করার সুমহান
দ্বায়িত্ব একার কাঁধে নিয়ে এবং এর জন্য কোন নোবেল জুটবে না জেনেও সংসারের
হাঁড়িকাঠে যেমন খুশি চলার বলার করার স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে জাস্ট দেবদাস
আর পারোর মডার্ন ভারসান । সামাজিক পরিসরেও তথৈবচ । সমাজগুরুরা ঠিক করে
দেবেন ঠিক ভুল , রাজনীতি আর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করবে ব্যষ্টির মতামত , ঘাড়
ধরে তুমি নিয়ে চল সখা , আমি কি একলা চিনি পথ ? মন নেই চাওয়া নেই কাঙ্ক্ষা
নেই দৃষ্টি নেই যুক্তি নেই ... আছে অঙ্গুলি হেলন , পাপেট শো , রক্ত
চক্ষু... আত্মত্যাগ তিতিক্ষা সহনশীলতা ছাড়া অভিধানে যেন কিছু আর নেই ...
সংসার এত ডিমান্ডিং , সংসার এত স্বার্থপর , সংসার এত উদাসীন , জাস্ট
ভালোলাগে না । ঘরে ঘরে কান পাতলে একই দীর্ঘশ্বাস ... নানান মোড়কে , নানান
খোলসে একই গল্পের সারাৎসার । কখনো উদ্বেলিত উৎসবে আনন্দে সাফল্যে
দেখানেপনায় অর্জনে দানে ধ্যানে , আবার কখনো চূড়ান্ত নেগেটিভিটি পলায়ন
স্পৃহা হার মানা হার পরানো গলায় ... মন্দলাগাকে সয়ে সয়ে ঘানি ঠেলে চলা ,
জীবন ভর কেবল কর্তব্য আর দ্বায়িত্ব , সন্তান ধারণ পালন তার ডাঁটো হওয়া
ডানা গজানো অব্ধি অপেক্ষা , কখন কুলায় রিক্ত হবে ... খালি দিন যাপন ,
খালি কালহরণ , খালি ঘাটে বসে থাকা আনমনা ... দিনের শেষে ঘুমের দেশে খেয়া
বাইব কবে যে ... কতবার যে মরণ চেয়ে ফ্যালা এই স্টেজে , কতবার যে
যন্ত্রনায় কঁকিয়ে ওঠা , ‘উফফ , এবার মরণ হলেই বাঁচি !’সেটাই শেষ মুক্তি ,
শেষ বার উপভোগ এর অতীত চূড়ান্ত স্বাধীনতা । শান্তি শান্তি শান্তি । ন
হন্যতে হন্যমানে শরীরে ...
- রায়গঞ্জ / উত্তর দিনাজপুর -
সুচিন্তিত মতামত দিন