এক মুঠো প্রলাপে আজ আমরা মুখোমুখি হয়েছি , মিলিত হতে পেরেছি এই দুই বাংলার উদীয়মান কবি / গল্পকার - ফারহানা খানমের সাথে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ রাজধানী ঢাকা ‘র অন্তর্গত মিরপুর থানার উপকণ্ঠে কবির নিবাস। স্কুল কলেজের গণ্ডি পেড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল এবং পরিবেশ বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠশেষে সাহিত্য - সংস্কৃত চর্চার পাশাপাশি কর্মে ঢাকা শহরেই তার শিক্ষকতা। কলেজ জীবনের দেওয়াল পত্রিকা থেকে দু বাংলা জুড়ে বিভিন্ন সাহিত্য মাগাজিন , মুদ্রিত বই’তে কবির শব্দের আল্পনা বহুল প্রশংসিত । বিশিষ্ট সাহিত্যিক সন্মানিয়া কৃষ্ণা বসুর কথায় – ফারহানা খানমের কবিতা আবেগের সততা ও মন কে স্পর্শ করে। যার সজল সবুজ সজীব পৃথিবী ধরা পড়ে – পরম আন্তরিকতায় স্তবকে স্তবকে। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি কবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “ইছামতী’ সম সমাদৃত।
স্বাগত কবি আন্তর্জাতিক শব্দের মিছিলে।
ধন্যবাদ সাথী।
বাংলাদেশ। যে নামটির সাথে যুক্ত ২১শে ফেব্রুয়ারি , মুক্তিযুদ্ধ। যার অধিকার প্রতিষ্ঠা , দেশাত্মবোধ , সৌহার্দ্য – সম্প্রীতি সাড়া বিশ্বে এতো আলোচিত সেখানে আপনি মাতৃভূমির জন্য কতটা অহংকারী ? বা আপনার জীবন এবং সমাজ বোধে কতটা সহায়ক ?
ভাষা আন্দোলন , মুক্তিযুদ্ধ ও আরও অনেক আন্দোলনে সমৃদ্ধ আমার মাতৃভূমি নিয়ে আমি ততোটাই অহংকারী যতোটা তার মাকে নিয়ে সন্তান অহঙ্কার করতে পারে।
দারুন। সুন্দর বললেন কবি। মর্মগ্রাহি’তে মাতৃভূমি’ই আমাদের মা – ঐশ্বরিক এই লালনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চৈতন্যে প্রসারিত হয়। ......একটা দেশ ও সমাজ কতটা সভ্য তা নির্ণয়ের প্রধান সূচক ‘ই হচ্ছে – সেই সমাজে বা দেশে সকল ধর্ম , সকল বর্ণ, জাতিসত্তা , ভাষা , লিঙ্গ , বিত্ত নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান অধিকার ও মর্যদা নিশ্চিতকরণ। জাগরণ ও উত্তরণের একমাত্র পথ হলো ইতিহাস এবং শিক্ষা। যার মাধ্যমেই গড়ে তোলা যায় সচেতনতা। সচেতনাতার প্রসারে আজকের প্রজন্মদের উদ্দেশ্যে আপনার অভিমত কি ?

অতীত কে জানতে হবে ,পড়তে হবে আর শিকড়ের সন্ধান করতে হবে। সেই থেকে অর্জিত শিক্ষায় নিজেকে মেলে ধরতে হবে দেশ এবং জাতির আশু কল্যাণে।
বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের উপচে পড়া ভালোবাসার অবস্থান তখনই উপলব্ধি করা যায় যখন দেখি , প্রায়ই আলোচনা বা সাহিত্যে বা অন্তরঙ্গে অর্ধেক বাংলা অর্ধেক ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় বাক্য সম্পন্ন করি। যেমন ধরুন – প্রিয়তমা আই লভ য়্যু ... বা আরও হীরক খচিত আধো বাংলা আধো ভিন্ন ভাষায় সমৃদ্ধ বাক্য । এই রূপান্তর’কে আপনি ঠিক নকশার উপর ডিজাইন নাকি বাক্যকে আন্তর্জাতিক সৌহার্দের স্তবক ভাবছেন ? নাকি এখানেও লুকিয়ে যথাবিহিত অন্তর্নিহিত অর্থ ?
কোনটাই নয়।
তাহলে আমরা ধরে নিতেই পারি , অধিক ভাষার সমন্বয়ে বাক্য গঠন মানেই তথাকথিত স্মার্ট নয় বরং বলা যেতেই পারে ফলহীন গাছ অথবা ফুলহীন পুষ্পস্তবক।...... রাষ্ট্র সবার , ধর্ম যার যার। মূলত এই শ্লোগান কিছুদিন আগেও তরঙ্গে , রাজপথে আমরা শুনেছি আমরা উপলব্ধ করেছি। আজকের ২০১৪ তে দাড়িয়ে ধর্মকে আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করেন অথবা প্রকৃত ধর্ম বলতে কি বোঝায় ? শুধুমাত্র রাজনৈতিক গিমিকের জন্যই কি মূল ধর্ম আজ পরাজিত ?

রাষ্ট্র সবার , ধর্ম যার যার'' এটাই সত্যি ,আর কিছু কিছু গোষ্ঠী ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে যখন ব্যাবহার করে তখনই মূল ধর্ম আহত হয় অনেখানি। মাথা নুইয়ে আসে সহজ সরল সখ্যতা ও সভ্যতাপ্রেমী মানুষদের। এখানেও শিক্ষা অতি জরুরী। জরুরী আত্ম বিশ্লেষণের।
সহমত কবি। রাজনৈতিক দোসরদের পদপিষ্টে আজ প্রায় বাস্তুহারা , লক্ষ্য’হারা সহজ সরল সখ্যতা ও সভ্যতাপ্রেমী মানুষেরা। ... ভৌগলিক সীমারেখায় পাশাপাশি আমাদের অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যেখানে অধিকার স্বতন্ত্র এবং মুক্তি স্বাধীনতা। অথচ জাতপাতের ভিত্তিতে আমরা প্রায়ই সংখ্যালঘু শব্দে এক শ্রেণীর মানুষ কে ইঙ্গিত করি। এটাকে তথাকথিত রাষ্ট্রের ই পেশি প্রদর্শন বা রাষ্ট্র বা গণতন্ত্রের দ্বি চারিতা বলাই যায়। দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন “আমি গ্রীসের নই পুরো বিশ্বের”, ঠিক গনতন্ত্রের মসনদে যারা সংবিধান রচনা করেন তারা কেন বলতে পারেন না ‘’ এই সংবিধান সমগ্র জাতির স্তম্ভ – এই বিধান আমাদের সকলের দম্ভ। আপনার অভিমত কি ?
আমার মনে হয় তারা পুরোপুরি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়।
প্রিয় – এই ‘’তারা‘’তেই কিন্তু আমরা সাধারণ নাগরিক সর্বহারা কবি। এর পাশাপাশি রয়েছেন তাদের পশ্চাদপ্রেমী গৃহপালিত কিছু ভাবালু বুদ্ধিজীবী। এদের হাত থেকে প্রকৃত ভাবেই মানুষ কবে মুক্ত হবেন জানেন ঈশ্বর। ...... আজকাল অধিকাংশ কবিতার বিষয়ই গতানুগতিক। শুধুই `আমি’আর `তুমি! এই আমি - তুমির কোনও দেশ নেই, কাল নেই , সঠিক দিশা নেই , উত্তরণের পথ নেই , জোরালো বক্তব্য নেই। আবার যদি বক্তব্য থেকেও থাকে সেখানে কদর নেই। আবার এই তুমি আমি’র মধ্যেই কত লুকিয়ে থাকা বিষ দাঁত , কত প্রবঞ্চক , কত প্রতারক। অথচ এদের রূপের এবং অর্থের পেশি শক্তিতে মূল ভালোবাসা পরাজিত কেননা আমরা শতাংশে রূপের গুণগ্রাহী যতটা , গুনের বা হৃদয়ের মর্মগ্রাহি নই। কবি আপনি কি বলবেন ?

আমি তুমি শাশ্বত সত্য , সবকিছুরই বিপরীত রূপ থাকে এর মধ্যেও আছে প্রবঞ্চক , প্রতারক তাই বলে শব্দদুটো দোষী নয় – কর্মে ভূষিত হয়। আর হ্যাঁ আপনার শেষ বক্তব্যের সাথে আমি একমত।
ধন্যবাদ পুনঃ সহমত প্রদানে।
নিপাট ছন্দের মিল নয় , অথবা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রকৃত আকর্ষণেই মধুমেহ ভাব নয় - একটি কবিতা জীবন দর্শনে বা সমাজ সহায়কে কতটা ভূমিকা পালন করে ?

আমরা জেনেছি একটি ভালো বই একটা প্রকৃত ভালো বন্ধুর সমান। তাই সাহিত্য এবং সেই থেকে কবির পারিপার্শ্বিকতা , কবির দর্শন ও চিন্তা চেতনার প্রতিফলনে জীবন দর্শনে এবং সমাজ শোধনে অতান্ত্য সহায়ক।
গোঁড়া বা আধুনিক ভাবালুমুখি প্রশ্নে নয় – ধরুন আপনি নারী বলেই আপনার প্রতি কোমল আচারন , আপনার প্রতি আইনের নিরুঙ্কুশ অধিকার , আপনার প্রতি চোখ বন্ধ করা বিশ্বাস , আপনার প্রতি সুনির্দিষ্ট দুর্বলতায় - আপনার দর্শনে আপনি নিজেকে একজন মানুষ নাকি নিছকই নারী ভেবে সমাজের কোঠা ‘ প্রথায় সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হয়ে থাকবেন ?

আমি একজন মানুষ বলেই মনে করি নিজেকে। সেই ক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধাই একান্ত কাম্য – কোন ধরণের কোঠা প্রথায় নিজেকে আবদ্ধ করতে চাইনা । রাষ্ট্র এবং তার সংবিধান যদি স্ব মহিমায় এগিয়ে যায় – ভোগবাদী রাজনীতি বা তার রণনীতি , সুশীল এবং সৃষ্টিশীল মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারবে না ।
শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড ‘ এই সত্যবাক্য আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে বয়ে যাবো। কিন্তু যদি বলি ‘ নারীতেই নারীর আশু মৃত্যুদণ্ড’ এই বাক্য'কে কিভাবে আপনি মিথ্যাবাক্যে ভূষিত করবেন।

নারীই মা হয়ে জন্ম দেয় ও গড়ে তোলে শিক্ষিত প্রজন্ম। আপনার প্রশ্নে তির্যক ইঙ্গিত আছে বৈকি , কিন্তু সকল নারী’ ই কিন্তু মা হতে পারেন না অথবা সকল নারী ঈশ্বর প্রদত্ত নারীত্ব ধারন করলেও নারীর মমত্ব বোঝেন না ।
স্বাভাবিক কবি। ইঙ্গিত পূর্ণ প্রশ্ন’ই রেখেছিলাম।
ফেসবুকের অন্তরজালে বহু লেখকের বহু সাহিত্য সৃষ্টি রয়েছে – যা ঈর্ষানীয়। অথচ এরা কখনোই প্রকাশক বা নামি সাহিত্য সংস্থায় ঠাই পান না। প্রতিষ্ঠিত লেখকের সংজ্ঞা বলতে কি বোঝেন। কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়।

এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি লেখক লেখেন আপন আনন্দে। প্রতিষ্ঠার চিন্তা করলে সত্যিকার শাশ্বত লেখনি ব্যাহত হবে তাই সে চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের আনন্দেই লিখে যেতে হবে সময়ই একদিন এর মূল্যায়ন করবে। আমরা অনেক কবিদের জানি যাদের শুরুতে কোন মুল্যায়ন হয়নি। অথচ তাদের অদম্য সাহিত্য ভালোবাসা , মানুষের জন্য সাহিত্য রচনা আজ পাঠ্য বইতে পর্যন্ত অন্তর্গত। প্রকাশকের নিকট তদ্বির নয় বা তৈলমর্দন নয় – জাতির মঙ্গলেই তারা আজ ধ্রুবতারা ।
আত্মার সান্নিধ্যে যারা ফেসবুক গ্রুপ , সংশপ্তক , শব্দের মিছিলের মতো অনেক সাহিত্য ধর্মীয় মঞ্চ রয়েছে। তরঙ্গের এই সাহিত্য চর্চা আপনাকে কতটা প্রাণিত করে ?

অনেক... অনেক। কেননা এর মাধমে আমি পরিচিত হই দুই বাংলার ভাবনার সাথে, আন্তর্জাতিক শিক্ষা এবং সংস্কৃতি স্তরের সাথে । এখানে যেন মুক্ত আকাশ ... কালো বিন্দু বিন্দু দিয়ে অঙ্কিত হয় লক্ষ লক্ষ অক্ষর , এখানেই সমাজ এখানেই রাজনীতি , এখানেই মানবতা ধর্মে গড়ে আত্মবোধে নিজ নিজ সাক্ষর।
মূল কথা শিক্ষাই আমাদের ঐকান্তিক জরুরী। এই শিক্ষা যেমন ইতিহাস থেকে – তেমনি সমাজ ভাবনা থেকে অর্জন করতে হবে। সন্মিলিত অর্জিত শিক্ষাই আমাদের মুক্তি দিতে পারে ভোগবাদী রাজনীতি থেকে , জাতির মেরুকরণের আগ্রাসন থেকে , সাহিত্য সংস্কৃতি এমন কি নারীতে পুরুষে বা পুরুষে নারীতে চির বিভেদ থেকে। সর্বপরি মানুষকে সবুজ সমাজ দিতে মুক্ত অরণ্যে।
পরিশেষে , আবারো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সন্মানিয়া কবি ফারহানা খানম কে আন্তর্জাতিক শব্দের মিছিলের পক্ষ থেকে। আপনি আরও লিখুন ভালোবাসার সংজ্ঞা , মানুষের সংজ্ঞা , বিবেক চেতনা এবং প্রেরনার লক্ষ্যে।
সুচিন্তিত মতামত দিন