সৌমিত্র চক্রবর্তী



খুব সামান্য হলেও মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ, যারা শিল্প বা সৃষ্টির যে কোন শাখায় এক্সপেরিমেন্ট এর নামে শুধুমাত্র অশ্লীল কিছুর আমদানি করে বাজীমাত করতে চাইছেন।
আমি জানি শ্লীল বা অশ্লীলতার সঠিক মাপকাঠি এখনও তৈরি হয়নি আর হবেওনা কখনও। কিন্তু এক্সপেরিমেন্টের নামে আমাদের শরীরের গোপন যৌন অঙ্গ গুলোর নাম আর সেগুলো নিয়ে নিজেদের অসফল বিকৃত চাহিদাগুলো শব্দের মাধ্যমে মেটানোর ইচ্ছে নিয়েই আমার আপত্তি। যৌন অঙ্গ কবিতাতে আসতেই পারে, যদি কবিতার বিষয় সেই দাবী জানায়, যদি কবিতার অন্তরলীন ছন্দ তাতে বিঘ্নিত না হয়, তবে পাঠক ও সেখানে কোন অস্বস্তি ছাড়াই সাবলীল বিচরণ করতে পারেন। কিন্তু সম্পূর্ণ গায়ের জোরে এবং বিশৃঙ্খল তারুণ্যের দোহাই দিয়ে, সর্বোপরি নতুন পথের সন্ধানের অজুহাতে ঐ সংখ্যালঘু তথাকথিত কবির দল এই ধরনের কাজ করেই চলেছেন। এতে যে কবিতারই ক্ষতি হয়ে চলেছে তা কি আমরা বুঝবো না?

শ্রদ্ধেয় উৎপল দত্ত তাঁর “জপেন দা জপেন যা” বই তে শিল্পের আরেক ধারা থিয়েটারে ঘটে চলা বিকৃতি সম্পর্কে যা বলেছেন তা আজকের ঐ কবিতার সম্পর্কেও প্রযোজ্য। তিনি বলেছেন যে এই ধরনের কিছু মানুষ অন্য কোন শাখায় কিছুটা পড়াশোনা করেই নিজেদের সব বিষয়েই পন্ডিত ভাবতে শুরু করেন। এক্সপেরিমেটের নামে এরা সেই মাধ্যম সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হয়েই সংশ্লিষ্ট মাধ্যম বহির্ভূত এমন সব উদ্ভট কিছু সংযোজন করতে থাকেন যাতে দর্শক থিয়েটার বিমুখ হয়। কি মনে হচ্ছে, কবিতা সম্পর্কে কথাটা কি প্রযোজ্য নয়?

চল্লিশের দশকে শুরু হয়ে ষাটের দশকে একদল মার্কিনী ড্রাগ সেবি বিমূর্ত শিল্পের নামে যৌন অঙ্গের বিকৃত ব্যাবহার করতে থাকেন, যা পরবর্তী কালে হিপি কালচারে পর্যবেশিত হয়। সেখানকার তথা সমগ্র পৃথিবীর মানুষ এই বিকৃতকামী সংস্কৃতি প্রত্যাখ্যান করলেও, সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনে যে তার সুদূরপ্রসারী বিকৃত প্রভাব রয়ে গেছে তার প্রমান আজকের এইসব তথাকথিত কবিরা।

তাই বলে নতুনের বিরোধী আমি নই। সেই চর্যাপদের সময় থেকেই বারেবারে কবিরা নতুনের সন্ধান করেই চলেছেন। তাই মঙ্গলকাব্য-বিভিন্ন চরিত কাব্য-পালা গান-রবীন্দ্রকাব্য-দিন বদলের কাব্যের সিঁড়ি বেয়ে আমরা আজকের এই সময়ের কবিতায় পা রাখতে পেরেছি। দিন যত এগোবে কবিতা তার নতুন পথ ঠিকই খুঁজে নেবে, আপন গতিতে তৈরি করবে নতুন গতিপথ, খনন করবে নতুন গিরিখাত। কিন্তু তার সঙ্গে যে বিকৃত কাম চরিতার্থ করতে চাওয়ার অশুভ প্রচেষ্টার কোন সম্বন্ধ থাকবে না তাতে দ্বিমত পোষণ কেউ করতেই পারেন, কিন্তু তাতে কবিতার অগ্রগতি ঘটবে এ প্রমাণ দিতে পারবেন কি?
কবিতার পাঠক এমনিতেই কম, দ্রুত পাঠকের সংখ্যা আরো কমে আসছে। এ সময়ে এই ধরনের বিধ্বংসী প্রচেষ্টা হয়ত কবিতাকে নির্বাসনে পাঠাতে পারবে না, কারন সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের কবিরা এখনো ভালো কবিতা লিখে চলেছেন, কিন্তু পিছিয়ে যে দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

কবিতা নিয়ে বাগবিতন্ডার চেয়ে কবিতা পড়া অনেক বেশি মনোরম। কবিতার পোস্টমর্টেম আমার সবচেয়ে বেশী নাপসন্দ্। তাই সেই কবিতায় এসেই থামি, কিম্বা সেই থামার থেকেই শুরু করি। জয় হো কবিতা।

কবিতার আমি
------------
কবিতা কখনো ছাড়েনা আমাকে
কবিতা দেয়না ডিভোর্স,
কখনো সে করে বসন্তালাপ
কখনো কামান বোফর্স।
ডিপ্রেশনের কালো মেঘ এলে
গর্ত খুঁজে লুকায়,
রোদেলা আকাশে কোতোয়াল সেজে
আমাকে হাজতে ঢুকায়।
কথা নাকথায় কবিতার বাস
মাঝরাতে ঝরে রক্ত,
কবিতা আমার আমি কবিতার
পারস্পরিক ভক্ত।
কখনো প্রাচীন রীতিতে সেজে
চিরায়ত সুর দোতারায়,
পলকপাল্টে উদ্দাম জ্যাজ
ডাল লেকে ভাসে শিকারায়।
কবিতাকে যত ভালোবাসি তত
আই হেট হার কুঁড়েমি,
দাড়ি বেড়ে যায় টাক পড়ে যায়
কবিতা দিয়েছে বুড়োমি।
রাতদিন চলে লুকোচুরি খেলা
ভুলভুলাইয়া গলিতে,
কবিতা আমার আমি কবিতার
অক্ষর আঁকি তুলিতে।

- বীরভূম - 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. Apnar lekha pore bughte parlam na ato rege gachen kano-mane hoi kichu kobir upor apnar abhiman hoache-kobitar sarthe abhiman dhuye phalun-kam,lalosha,bhalobasha neai to kobita-Michi michi apni kamer dohai diye raag korchi-kam chara to manushi asampurno kobita sampurno hobe ki kore-gulti diye bhabun raag pore jabe-chip chipe kobita chande bhasay godyer jukti te bachar ashai-kinchu mone korben na apnar godye julti kom tai apnar kobita na hoache chip chipe na peyeche se bachar asha

    উত্তরমুছুন

সুচিন্তিত মতামত দিন