১ম পর্ব পড়ুন
২য় পর্ব বেলা পড়ে আসছে । ঘরে ঢুকতেই সে দেখলো সুনসান নীরবতা । সব কোথায়? পশ্চিমের ঢালে দাদাজানের হুজরা, সেখান থেকে জিকিরের শব্দ ভেসে আসছে । হেতু কি? ওদিকটায় এগোয় সামছু কাকা এবং দেখতে পায় পরিবারের সবাই ওখানে বিদ্যমান । এরই মাঝে হুঙ্কার ছাড়েন কুতুবি গজনবী, 'হারামজাদা খু ফু দানদান, আজ সন্ধ্যার মধ্যেই তোকে হাজির করবো এখানে । শুনেই সরে আসে সামছু কাকা, ভাণ্ডার ঘর থেকে তুলে নেয় কোদাল আর একটা দেশলাই । এখন মরা কাণ্ড যেখানে পড়ে আছে সেখানকার মাটি খুঁড়ে তুলে আনতে হবে খু ফু দানদানের বন্দি আত্মা, তারপর সেটা পোড়াতে হবে । একটু খুঁড়তেই - কিম্ভুত সব হিজিবিজি লেখা এক ফর্দ সাইজ কাগজ । পুড়িয়েই দিলো ওটা । হঠাৎই সামছু কাকা টের পেলো অসুরের মত খিদে পেয়েছে তার ।
একটা মাগনা জামাই, মুই খাই তার কামাই
(দেলার বাপের দিনগঞ্জী)
খু ফু দানদান যে কত দিলদরিয়া বন্ধু, দেলার বাপ তা রক্তে রক্তে টের পায় আজকাল । জুয়া তার জীবন ঘুরিয়ে দিয়েছে, তার ওপর ঘাটের নগদানগদ কাঁচা কামাই । এখন সে বস্তির আড়াই রুমের সবচেয়ে বড় ঘরটায় থাকে । বাচ্চুকে সরিয়ে দেয়ার পর এখন সে সর্দারের নিকট ডানহাত । আফিমের চালান, গাঁজার ধান্ধা, মাছের ঝুঁড়ি এ দিক ও দিক, আরিব্বাস আরো কত কি! মাঝে মাঝে সর্দার তাকে ফরেন খাওয়ায়, 'খা ব্যাডা, আঙ্গুরের জুস । পঁচা মাড়ের দোচোয়ানি খাইয়া প্যাডেরে তো ঢোল বানাইছো!' দেলার বাপ উড়তে থাকে এবং প্রতিরাতেই খু ফু দানদানের উদ্দেশ্যে এক পাইট উৎসর্গ করে । কিছুকাল আগেও সে সাহেবজাদা কাগমারী পীরের মুরিদ ছিলো । সেখান থেকে সরে এসে এখন সে দেবাদিদেব খু ফু দানদানের মুরীদ । তারই কৃপায় জুয়ার আসরে মোলাকাত সোনার ছেলে জহের আলির সাথে । জহের আলি পাংশা গ্রামের ছেলে, সাতকানি জমির মালিক । শহরের বড় নেতার কোষাধক্ষ্য সে, সারামাসে বড়বড় প্রতিষ্ঠান থেকে চান্দা তোলার দায়িত্ব তার ।
মাথায় এক দূর্দান্ত ফন্দি খেলে যায় দেলার বাপের । সেই রাতেই টালমাটাল দেলার বাপ বাঁশঝোপের নীচে অত্যন্ত আদবের সঙ্গে ধ্যানে বসে খু ফু কে ডাকতে থাকে, আজ তার গোলাপি জামা ও চেকলুঙ্গি যথাস্থানে বর্তমান । জিকিরের দাপটে যখন মুখে ফেনা ওঠার উপক্রম তখন হাজির হয় খু ফু দানদান । আজ খু ফু কিঞ্চিৎ চিন্তিত, তার মাথায় কোহকাফে প্রবেশের চিন্তা । সাধারণ জ্বিনেরা পঞ্চম মাত্রা পর্যন্ত অদৃশ্য হতে পারে, সুফি জ্বিনেরা ষষ্ঠ মাত্রা পর্যন্ত, কিন্তু খুফু অদৃশ্যের সপ্তম মাত্রায় যেতে পারে । কয়েক মাস সাধনায় এটা সে রপ্ত করেছে । সে সাধারণ জ্বিন নয়, মানবী ও জ্বিনের মিশ্র এক অতি শক্তিমান । সপ্তম স্তরে অদৃশ্য হয়ে সে কোহকাফে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে, জ্বিনকুল টের পাবে না । এমন সময় দেলার বাপ বলে ওঠে 'হুজুর, মুই যা ভাবতেয়াছি হেয়া কি আমনেও ভাবেন?' খু ফু দানদান অন্যমনস্ক স্বরে বলে ওঠে, 'একটা মাগনা জামাই, মুই খাই তার কামাই ।' আপ্লুত দেলার বাপ খু ফু কে জড়িয়ে ধরতে যায় কিন্তু ততক্ষণে সে অদৃশ্য হয়ে গেছে ।
পরদিনই জহের আলি কে বাসায় নিয়ে আসে দেলার বাপ । দেলা দেখতে অত্যন্ত্য সুশ্রী, উঠতি বয়সের রঙঢঙ জানে, ঠারেঠোরে চোখের বাণ মারে । দেলাকে পছন্দ হয়ে যায় জহের আলির, সে তখুনি বলে বসে, কবুল| তবে দেলার বাপ তালে ষোল আনা সেয়ান, জহির আলি আর দেলা কে মুখোমুখি কথা বলতে দিলেও দরজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকে । তিনদিনের মাথায় মাইকে গান বাদ্য বেজে ওঠে, 'হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ...' এবং সারা বস্তিতে আলোড়ন তুলে দেলা ও জহের আলির বিয়ে হয়ে যায় । বিয়ের দিন মাঝরাতের পর খু ফু দানদান নাকি এগার কেজি মিস্টি, সাত হাঁড়ি দই এবং ঊনিশ টা ইলিশ মাছ ভাজা খেয়েছিলো! বিয়ে করে ঘরজামাইয়ের পদ দখল করে জহের আলি । কদিন পর দেখা যায়, কানা রাতে জামাই শ্বশুর গলা জড়াজড়ি করে বাসায় ফিরছে, মাথায় লুঙ্গি বাঁধা ।
ডরের মাইরে আসলো জ্বর
তোর লাইগা কি ছাড়বো ঘর?
( সামছু কাকার কথা )
আমি শুনেছিলাম খু ফু দানদান অত্যন্ত ভদ্র প্রকৃতির জ্বিন, কার্যত তার উল্টা দেখলাম । এই শনিবার দিবাগত রাতে, গরুর হাঁটের ইতিহাস হয়ে যাওয়া আম বাগানের মধ্য দিয়ে বাড়ী ফিরছিলাম, খই ফোটা গরম, গাছগুলো ভুসভুস করে অক্সিজেন ছাড়ছে, মনিপিসির ছোট ছেলেটা একটা হারিকেন হাতে এগিয়ে দিচ্ছিলো আমাকে| কিছুদুর আসার পর হতভাগা বলে উঠলো, 'মেয়াভাই প্রেকিতি (প্রকৃতি) বোলায় ।' দুর হ বদ, বলতে না বলতেই ব্যাটা হাওয়া, সেই যে গেলো আর উদিস নাই । শেষতক এই আন্ধারে একাই হাঁটা শুরু করলাম, মনটা সাংঘাতিক খারাপ| কেন আমি দেলার বাপের শরণ নিলাম? সাহসের সিনা চুয়াল্লিশ বানাইতে গন্ধজল খেলাম! আজন্ম ব্রক্ষ্মচার পালন করে আজ এই ঘুরঘুট্টি গলা কাটা অমাবশ্যার রাতে ভাণু মেথরের সঙ্গে বসে তাড়ি আর গাঁজা খেলাম!
সব কিছু নষ্টের মুল এই দেলার বাপ । আমাকে নষ্ট বানিয়ে আজ সে মহারাজ । দেদারসে কামাচ্ছে হারামীটা, আবার মাইক বাজিয়ে দেলার বিয়েও দিয়েছে । কষ্ট বুকে নিয়ে হাঁটি রাতকানার মত; বিভ্রান্ত পথিক । খেলাম এক উষ্ঠা (হোঁচট) কিন্তু একি, পড়ে গেলাম না কেন! আমার তো বিশ্রীভাবে পড়ে ব্যাথা পাওয়ার কথা, ছিলেছুলে যাওয়ার কথা! সুতোয় টানা পুতুলের মত কিম্বা স্প্রিং এর বক্সিং হাতের মত সটান দাঁড়িয়ে গেলাম আমি, এক আজদাহা ভালুকের মত জন্তুর পেটের উপর পড়ে পতন রোধ করা গেছে, লোমে আমার দুই হাত মাখামাখি । আরে খু ফু এসেছে? জ্বিনদের শরীর রোমশ হয়, আনন্দে চীৎকার করে উঠি, 'খু ফু, মেরা ইয়ার!' অমনি বিকট থাবা, আরে এটা কে? আঠার ফুট লম্বা এক দেউ, ছয় ইঞ্চি লোমে ভরা শরীর; সফেদ দেউ! এখুনি আমার আত্মা চুরি করবে শয়তানটা! চিক্কুর আসে, গলা বন্ধ । এমন সময় খনখন শব্দে হেসে ওঠে দেউ, 'আবার এইসব গু মুত খাইছো?' খু ফু! এই রূপ নিয়ে আমার সামনে! বিস্ময়ে স্থানুর হওয়ার আগেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি ।
কয় দিন কয় রাত জ্বরের ঘোরে ছিলাম জানি না । হারামজাদা জ্বিন মানব খু ফু দানদান, একদিন আমিই তোকে দাদাজানের বান কেটে উদ্ধার করেছিলাম, তোর গুপ্তকথা জেনেও কাউকে বলি নি । হতভাগ্য মিশ্র রক্তের জ্বিন মানব, আজ বলে দিচ্ছি সবাইকে, তুই সাদি করলেও সন্তানের বাপ হতে পারবি না কোনদিন । আসলে তুই একটা খচ্চর প্রজাতি; অশ্বতের, নপুংসক, দোজখের হিজরা । দেলার বাপের শুঁড়িখানায় আতর মেখে নূরাণী চেহারায় যাস, আমার আলোহীন কারখানায় আর আসিস না! উল্টা আমাকে প্রেত সেজে ভয় দেখাস, নিমকহারাম! সারাজীবনের সাধনা আর মানত ব্যর্থ হলো, মোহর পেলাম না । হতাশায় ভেঙ্গে পড়ছি, স্বিদ্ধান্ত নিলাম পবিত্র মদিনায় চলে যাবো । ওখানে কেউ মৃত্যুবরণ করলে কবর আজাব হবে না, বিনা বিচারে বেহেস্ত হাসিল হবে । এই কথা দাদাজান বলতেন । গতরাতে স্বপ্নে এসেও বলে গেছেন, 'খু ফু কো নিকাল দে তেরি দেমাগ ছে, বাচ্চে । উয়ো বড়া খতরনক হাইব্রিড হ্যায় । ইসি লিয়ে উসে ম্যায়নে মন্ত্র ছে কব্জা কিয়া থা । তু যো কিয়া সো কিয়া, আব মদিনা চলা যা ।' আমি মদিনায় যাওয়ার যোগারযন্ত শুরু করি।
জয়নাল মামা কুপোকাত
আরেক অমাবশ্যা রাত
(আমার কথা)
জয়নাল মামা অত্যন্ত নিরীহ মানুষ, কাকিমার দুর সম্পর্কের ভাই। মকবুল কাকা মানে তার দুলাভাইর ছাতার দোকানের ম্যানেজার । মাসান্তের হাতখরচ আর বোনের বাসায় ফ্রি থাকা খাওয়া , মন্দ নয় । বেচারা বারোমাসি পেটের পীড়ায় তড়পায় উপরন্তু পাইলসের সমস্যায় প্রায় রক্তশুন্য । এই কাহিনীতে তার উপস্থিত হওয়ার কোন দরকার ছিলো না । কিন্তু গড়বড়টা করে ফেললো সে শনিবার রাতে । দোকান বন্ধ করে বেশ ফিরছিলো, দোরগোড়ায় পৌঁছুনোর দেড়’শ কদম আগেই বেগ এসে গেলো । মুন্সিদের বাঁশ ঝাড়েই বসে পড়লো প্রাকৃতিক কর্মে । ঘরে ফিরলো সে আরেক মানুষ, রক্তজবার মত চোখ, সাত চড়ে রা করে না এমন মানুষটার মুখে অবিরাম অশ্রাব্য সব খিস্তি ।
পেরেশান হয়ে পড়লেন কাকি মা । কি হলো তার ভাইটির! কাকা ঐ মাঝরাতেই ছুটলেন সুফি সাহেবের বাড়িতে । এতো যে সে বিষয় নয়! সন্ধ্যায় দোকান থেকে ফেরার আগে তিনি জয়নাল মামাকে বলে এলেন, 'দোকানে ঠিকঠাক তালা মারিস, ক্যাশের টাকা আমি নিয়া যাই । আরো বিক্কিরী হইলে টাকা তুই লইয়া আইস । খবরদার বিড়ি কিন্যা আমার টাকার সব্বনাশ করিস না ।' তখনো তো ছেলেটা দিব্যি সুস্থ! প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন জয়নাল মামা নেশা ভাং করে এসেছে । পরে শুঁকেটুকে দেখেন তা না, কাহিনী অন্য জায়গায় প্যাঁচ খাচ্ছে । কাকা যখন সুফি সাহেবের বাসায় পৌঁছুলেন রাত তখন সোয়া বারোটা । সুফি সাহেব তার বারো রাজ্যের দলিল দস্তাবেজ নিয়ে বসেছেন । দখলি সম্পত্তি, টিপসই দেয়া সম্পত্তি, মামলাদার সম্পত্তি । কাকা কে দেখে বিরক্ত হলেন তিনি, বললেন, 'হালারে রাইতে বাইন্ধা থো, মুই সকালে যামুয়ানে । আর সামছু মেয়ারে খবর দে, খু ফু বেডার হেল্ফ লাগতে পারে ।'
রাতে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হলো জয়নাল মামাকে । তখনও সে আক্রোশে ফুঁসছে । সামছু কাকার কাছে এত রাতে আর যান নি মকবুল কাকা, সকালেই খবর দেবেন । এদিকে দুঃশ্চিন্তায় নুয়ে পড়েছেন কাকি মা । জয়নালের বাবারও এমন হয়েছিলো । কখনও সুস্থ থাকতো কখোনো বা বেহাংড়া ভুতগ্রস্ত । তামাম কলসকাঠির যত ওঝা, কবরেজ আর ফকিরও কিছু করতে পারলো না । শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হতো । একদিন ভোরে তিন রাস্তার মোড়ের খবিশা তেতুল গাছে তাকে গলায় দড়ি দেয়া অবস্থায় পাওয়া গেলো । শেকল ছিঁড়লো কেমনে! তবে কি এই তেতুল গাছের খবিসটা তাকে উড়িয়ে এনে গলায় ফাঁস পড়িয়ে দিয়েছে! এত তন্ত্রমন্ত্রে ক্ষেপে গিয়েছিলো পিশাচটা? তাই হবে, শিঁউরে উঠলো গ্রামবাসি । এসব মনে পড়তেই অজানা আতংক গ্রাস করলো কাকি মা কে ।
সকালে সুফি সাহেবের আগেই হাজির হলো কুটনী ফতি, পাগলা ফয়া, ছফুরার মা, কিসসা বুড়ি, ঝন্টু দালাল, দেলার মা এবং মকবুল কাকার উঠোনে এক জনসভা বসে গেলো । জয়নাল মামা তখন মুড়ি দিয়ে চা খাচ্ছেন, রাতের আচরণের ছিটেফোঁটাও নেই তার মধ্যে । বেলা বাড়তে এলো সামছু কাকা তারপর সুফি সাব । তারা জয়নাল মামাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এইটুকুই জানলো, রাতে বাঁশঝাড়ে প্রাকৃতিক কর্মটি করার সময় তার হঠাৎ মাথায় ঘুরানি দিলো, তারপর খালি কুয়াশা আর কুয়াশা । চিন্তিত সুফি সাহেব সামছু কাকা কে প্রশ্ন করলেন খু ফু কোন্মে? তার খবর জানো? সামছু কাকা বিরস বদনে বসে রইলেন, সে খু ফু দানদানের খবর জানে না, খু ফু এখন দেলার বাপের দোস্ত । এই কথা শুনে গর্বে ফুলে ওঠে দেলার মা । -দেলার বাপ রে বোলাইয়া আন । -হেরে এহন পামু কই? হ্যায় ঘাডে গেছে । দেলার মা উত্তর দেয় । বহুত তেলেসমাতি করে দেলার বাপকে হাজির করা হয় কাকার উঠানে ।
শুরু হয় সুফি সাব ও দেলার বাপের কথোপকথন:
- খু ফু দানদান তোর দোস্ত?
-হয় ।
- হেরে বোলা ।
- হ্যায় এহন আইবে না ।
- কা?
-হ্যায় রাইতের কালে আয়, মুই যহন মাল খাই হেইকালে ।
- হে তর লগে মাল খায়!
-না, হ্যায় তো নূরাণী জ্বিন ।
- তয় কইছো কা হে তর লগে মাল খায়?
- দোস্তি বুঝাইতে কইছি । আম্নে তারে খোঁজেন কা? হ্যায় জয়নাল মেয়ার কি হরছে! তিনি তো ব্যাডা জ্বিন, ব্যাডা জ্বিনে কি ব্যাডাগো আছর হরবে?
-না হ্যায় আছর করে নাই । কোহকাফ গোনে বদ আওরত আমদানী করছে ।
- বদ আওরত!
- হয় এক জেনানা বদ পরী, হে ই মোগো জয়নাল মেয়ার ওপর ভর করছে ।
ততক্ষণে বেলা বেড়েছে অনেক, বেড়েছে উৎসাহি মানুষের ভীড় ।
জয়নাল মামার খিচুনি শুরু হলো বেলা তিনটার পর , ক্রমশ লালচে হতে শুরু করলো চোখ, মুচড়ে উঠলো শরীর, মুখ দিয়ে লালা ঝরছে আর বিচিত্র সব গোঙানী বেরুচ্ছে । সুফি সাবও তৈরী, একদরে কেনা একটি পাটিতে বসে আছেন, সামনে আগুনের কুণ্ড, পাশে চেনা অচেনা হরেক সামগ্রী । শুকনা মরিচ, ধুনো, পশুর করোটি, গরুর শিং, সিঁদুর, পেল্লাই এক নারকেল শলার ঝাড়ু আরও কি সব তা আমার জ্ঞানের বাইরে । সুফি সাব মরিচ পোড়াচ্ছেন, ধুনো ছুঁড়ছেন আগুনে, আরও কি সব ঢালছেন আর জয়নাল মামাকে তুমুল পেটাচ্ছেন ঝাড়ু দিয়ে । হুংকার ছাড়ছেন থেকে থেকে, যাবি না? ছেড়ে দে ওকে বদ আওরাত । ক্রমাগত গোঙাচ্ছেন জয়নাল মামা । চীৎকার করছেন ব্যথায়, ‘ও মা, ও বাপজান, আমি তোমার কাছে যামু ।‘ যাহ, আবারও হুংকার ছাড়লেন সুফি সাব । নাকে খত দে, ঐ আমড়া গাছের ডাল দাঁত দিয়া ভাইঙ্গা মুখে লইয়া উড়াল দে, সোজা কোহকাফে যাবি , এই সীমানায় আইলে বোতলে ভরমু তোরে । জয়নাল মামা তখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন । হঠাৎ চীৎকার করে ওঠেন সুফি সাব, ‘ঐ যায় বদ পরী, ঐ যে ডাইল লইয়া ওড়তেয়াছে।‘ আমি সূক্ষ দৃষ্টি নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, আমার চোখে একটা বুভুক্ষ চিলের ওড়াওড়ি ছাড়া আর কিছুই ধরা পড়ে না। ( আগামী সংকলনে ৩য় পর্ব )
- ঢাকা -
সুচিন্তিত মতামত দিন