রত্নদীপা দে ঘোষ













মাঝরাতে অনিন্দকে ফোন করে জাগালুম ... শোনো , শোনো তুমি , আমি কিন্তু এই ট্রেনটার প্রেমে পড়েছি ... উচ্চকিত হেসে উঠলো অনিন্দ , তাই বুঝি ? আচ্ছা , তুমি প্রেমে পড়ার জন্য কখনই কোন মানুষ পাও না ? নাকি কোনো মানুষই তোমাকে খুঁজে পায় না ? তা এই প্রেমটি বৈধ না অবৈধ ? ... খুব রাগ হয়ে গেল ... প্রেম আবার অবৈধ হয় নাকি ? নেশা ছাড়া সিগারের কথা কেউ শুনেছে ? মদ ছাড়া লিকারের বরফ ? খোলাচুল আর জোড়াশালিখে কেউ বাঁশী গড়িয়েছে কোনোদিন ? 

ট্রেনটি চাকার পাততাড়ি গুটিয়ে নিয়েছে ততক্ষণে , খুলে ফেলেছে ট্র্যাকস্যুট ... ফিসপ্লেটের জুম দিয়েছে ফেলে  ... তারপর ... একটার পর একটা ডানা ... পাখি হয়ে যাচ্ছে খুলেয়াম... আমি সেই পাখির ভেতরে ডুবে যাচ্ছি ... ক্রুজের পাঠশালা ... নামতাবেলার ভোরের মতো ... জানালা ফোটার সময় যেমন খুব মেঘ ডাকাডাকি ... যেন জ্বরের ঘোর নামছে মেধাবী পারদে  ... আমি যেন পালকের শ্রাবণে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না ... আহা! প্রেমে পড়ে বুঝি সময়ের সমস্ত হিসেব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার ... এখন শ্রাবণ কোথায় ? ... কথায় কথায় জ্যৈষ্ঠের ক্রুশো এক হাত সূর্যের রবিন্সন হয়ে যাচ্ছে ... 

কতোটা রাস্তা এলাম জানতেও পারছি না ... বি কোয়ায়েট ...শান্ত হও ... শান্ত হও ... অগ্নুৎপাতের ছায়া ফেলছে মুখে শিমুল কৃষ্ণচূড়া পলাশ ...সেক হ্যান্ড ... হাত মেলাচ্ছি ... একবেলা সারাটি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছি ... রোদের গোলাপি কার না অক্সিজেন লাগে ... যুবতী কাপসাইজে আটকে আছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অহঙ্কার ... নিভিয়ার এই হঠাৎ দ্রবণ কতখানি নীল দিয়েছে আমায় ... 

ট্রেনকে বলছি , এখন তবে তোমার কথাই বলো ... কৃষকের ভেতরে তোমার ডাহুক জেগে উঠেছে বুঝি  ? এত লাঙল চারদিকে গ্রিনারি আঁকা ... ঝর্ণার রাবারক্যাপ  ... মনরে , তুমি কৃষিকাজ জানো তো ? প্রতিমার বীণা থেকে দৃশ্য দেখাচ্ছে ট্রেন ... সাদা অলটীট্যুড এগিয়ে আসছে । অই দ্যাখো রত্নদীপা ... ওই যে বাঁ দিকে ... করোনারি সানশাইন  ... হলুদনির্জন অক্ষলসিকা  ... আর এই দ্যাখো আমাদের মাথার ঠিক ওপরে রিখটার ... রাত বাড়ছে যত , মুনস্টোনটা রাসায়নিক চাঁদ হয়ে যাচ্ছে ... এসো কড়ে আঙুলে কমিয়ে দিই পোখরাজের ভ্যলুম ... 

এই যাত্রায় খুব নিষ্ঠুর হয়ে পড়ছি যেন , থামিয়ে দিচ্ছি গানপ্রিয় ধানহংসীদের । মুখ ঢেকে রাখছি কিশোরীলজ্জার কৃষ্ণানদীতে ... ট্রেন হাসছে খুব ... কৃষ্ণা কোথায় ? এতো গোদাবরী নদী ...  কি সাঙ্ঘাতিক রূপসী , দেখেছ ? ... খুব খুব হিংসে হচ্ছে আমার ... ঝাঁপিয়ে পড়ছি ক-অক্ষরের ক্যানভাসে । নিয়ম-নিয়তির গিরগিটি আর মানছি না... তারার জাদুঘর চকচক করছে রাগে  ... আমার রাগ দেখে ট্রেন হাসছে । আমি কাঁদছি । আমি দুলছি । ট্রেন নাচছে । 

  রূপোর মিনার্ভা । সোনার পালঙ্ক বুলিয়ে আমাদের জাগিয়ে দিয়েছে.  রূপকথার আকাশে ডুবছে  পা । খুনসুটি হয়ে যাচ্ছে চোখ ... মিল অমিলের পরবর্তী পুরবী , ষোড়শকলায় বাঁধা পড়ছে আমাদের চৌষট্টি পূর্ণিমা ... কতখানি আলো হতে পারো তুমি ... আর আমি কতটুকু তিলক-কামোদের পরকীয়া ...পর ? পর কোথায় ? ... এত নিকট তবে আর কে কোথায় ?  এই যে ত্বকের আড়ালে ফলে আছে বীজমুদ্রা  ... বীজের আড়ালে সেরে নিচ্ছি ডেনিম... পথ আর সাথে নিলো না আমাদের ? ছেড়ে চলেই গেল ? বয়েই গেল ... 

কেউ জানতে পারছে না কিছুই । কিভাবে প্রতিরাতে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে শূন্যতার বৃত্ত আঁকা পায়রার ক্যাপ্রি  ... কিভাবে , ঠিক কিভাবে ... কৃত্তিম প্রজননে খিলখিলিয়ে উঠছে ফোঁটা ফোঁটা রত্নদীপা ... 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.