মশিয়ুর রাহমান খোকন





আজ সকাল থেকেই নিতুর মেজাজটা ফোরটি নাইন হয়ে আছে। মনটাও খিটখিটে। তাঁর কিছুই ভালো লাগেনা। কোন কিছুতেই শান্তি পায় না নিতু। বার বার হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল দেখে কোন এস এম এস আসছে কিনা।
না, কোন এস এম এস আসেনি। গত তিন মাস ধরে প্রতিদিন সকালে নিতুর মোবাইলে, আননোন নাম্বার থেকে একটা করে এস এম এস আসে। কিন্তু আজ আসেনি। 

নিতু ঘুম থেকে উঠেই আগে এস এম এস পড়ে। প্রথম প্রথম এস এম এস গুলি নিতু পাত্তা দিতো না। রাগ উঠতো। 
কিন্তু এখন এমন হয়েছে যে, কোন দিন এস এম এস আসতে দেরি হলে নিতুর মেজাজের টেম্পার বাড়তে থাকে। 
''কারেন্টের তারে বসে কাক ডাকে, সকালের রোদ তোমার বিছানায়। রোদের আলোয় ঘুম ভাঙে, এক কাপ চা সাথে টাটকা পেপার। পেপার ভরা হাজারো খবর, তোমার আজকের সব খবর শুভ হোক। এই কামনায় শুভ সকাল।''
আরেকদিন আসে,
''দূরে থেকে ভেসে আসে রেওয়াজের সুর, সুর শুনে তোমার ঘুম ভাঙে। নতুন সুর, নতুন দিন, নতুন সকাল, নতুন তুমি। তোমার আজকের সব সুর, নতুনের মতই চমৎকার হোক। এই কামনায় শুভ সকাল।''
নিতু এখন ঘুম ভেঙ্গেই আগে শুভ সকাল পড়ে। তারপর বিছান থেকে নামে। অনেক সময় ভুল করে রাত তিনটা চারটার দিকে ঘুম ভেঙে গেলে, ঘুমের ঘোরেই আগে মোবাইল দেখে শুভ সকাল আসছে কি না। 
এই প্রথম শুভ সকালের কোন এস এম এস আসে না। তাতেই নিতুর মেজাজ ফোরটি নাইন। শুভ সকাল কোন দিনই নিতুকে ফোন করেনা বা মিস কল দেয়না। এমন কি সারা দিন আর কোন এস এম এস ও দেয় না। শুভ সকাল তাঁর নিজের নাম পরিচয় বা নিতুর নাম কি তাও জানতে চায় না। 
কিন্তু নিতুর খুব ইচ্ছা করে শুভ সকালের কাছে থেকে, শুভ দুপুর, শুভ বিকাল, শুভ সন্ধ্যা, শুভ রাত্রি, শুভ জন্ম দিন, পয়লা বৈশাখ, ঈদ মোবারক, সব এস এম এস পেতে।
নিতু কোন দিনই কোন এস এম এস এর রিপ্লাই দেয়নি। কিন্তু নিতুর খুব ইচ্ছা করে শুভ সকালের এস এম এস এর রিপ্লাই দিতে। কিন্তু পারে না, না পাওয়ার অনেক কারণ আছে। নিতু অনেক দিন রিপ্লাই লিখেও সেন্ড করে না। সেভ করে রাখে।
কদিন আগে নিতু তাঁর আব্বুর মোবাইল দিয়ে এই নাম্বারে একবার কল করে, 
-হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম, আপনার নাম্বার টা আমার মোবাইলে সেভ করা নাই, আমাদের কথা বলার সুবিধার জন্য আমি কি জানতে পারি আপনি কে?
নিতু সাথে সাথে লাইন টা কেটে দেয়। লাইন কেটে দিলেও গেঁথে যায় ছেলেটার কণ্ঠ। নিতুর কল্পনায় শুভ সকাল খুবই ভদ্র, নম্র, মার্জিত, স্মার্ট, দেখতে সুন্দর, গায়ের রং ফর্সা, ঘনো কালো চুল, টানা টানা চোখ, খারা নাক। নিতু আননোন নাম্বার টা শুভ সকাল নামেই নিজের মোবাইলে সেভ করে রাখে।
নিতুর কোন ছেলে বন্ধু নাই। সে কোন ছেলেদের সাথেই মিশে না। শুধু ছেলে বন্দু বল্লে ভুল হবে, পৃথিবীর কোন পুরুষ মানুষকেই নিতু পছন্দ করে না। নিতুর কাছে সব পুরুষ মানুষই নেকড়ে বাঘ। নেকড়ে বাঘের কথা এই পৃথিবীতে তৃতীয় কোন মানুষ জানে না। দ্বিতীয় মানুষটা হোল নিতুর দুলাভাই।
নিতুর বড় বোন মিতু। মিতু যখন এ বাড়ীতে আসে, সারাক্ষণ শুধু দুলাভাইয়ের গল্প নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। তোর দুলাভাইয়ের মতো ভালো মানুষ দুনিয়াতে নাই, তোর দুলাভাই জীবনে কোন মেয়েদের সাথে মিশে নাই, কতো মেয়েরা তোর দুলাভাইকে বিরক্ত করে, কিন্তু তোর দুলাভাই ওদের পাত্তাই দেয় না, তোর দুলাভাই একটা অসম্ভব রকম ভালো মানুষ, ইত্যাদি ইত্যাদি। 
অসম্ভব ভালো জামাই নিয়ে মিতু মহা সুখী। মিতুর সুখীতে নিতুর সুখ।
ছয় বছর আগে নিতু তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। মিতুর তখন প্রথম বাচ্চা হবে। মিতু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকে। নিতুও সকাল থেকে বোনের পাসে। 
বিকালে মিতুর ভালো মানুষটা অফিস থেকে হাসপাতালে আসে। নিতু হাসপাতাল থেকে মিতুদের বাসায় যায়। মিতুর জন্য খাবার, কাপড়, ফ্লাক্স, দুধ, এই সব গুছিয়ে রান্না করে রাখে হাসপাতালে জন্য।
কাজ সেরে নিতু টিভি দেখতে বসে। দুলাভাই আসে রাত এগারোটায়। নিতু টেবিলে ভাত বেড়ে দেয়। ভাত খাওয়া শেষ হলে, নিতুর সাথে টিভির সামনে বসে। নতুন বাচ্চার কি নাম রাখা হবে এই নিয়ে ওরা কথা বলে আর টিভি দেখে।
-সারা দিন শরীরের উপর খুব ধকল গেলো নিতু। খুব টায়ার্ড লাগছে। তুমি চা বানাতে পারো নিতু?
-ওমা, পারবো না কেন দুলাভাই?
-একটু কষ্ট করে আমাকে এক কাপ চা করে দিবা নিতু। রান্না ঘরে দুধ চিনি সবই আছে। তুমিও এক কাপ খাও।
-ঠিক আছে, আপনি টিভি দেখেন। আমি বানিয়ে নিয়ে আসি।
নিতু চা বানাতে রান্না ঘরে যায়। দুলাভাই এই ফাঁকে, সিডি প্লেয়ারে একটা সিডি ঢুকিয়ে প্লে দিয়ে রাখে।
নিতু দুই কাপ চা নিয়ে আসে। চা খেতে খেতে ওরা টিভি দেখে। হটাৎ করে দুলাভাই রিমোট চেপে এভি চ্যানেল দেয়। খুব কঠিন নীল ছবি চলতে থাকে। নিতুর চোখ আটকিয়ে যায়। নিতুর জীবনে প্রথম এই ধরনের ছবিতে চোখ পড়ে। 
নিতু চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু দৃশ্য গুলি চোখে আটকিয়ে থাকে। দুলাভাই ভলিউম বাড়িয়ে দেয়। নিতু কান বন্দ করতে পারে না। নিতুর জবান বন্দ হয়ে যায়। সে এক দৃষ্টিতে নিচে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-দুলাভাই, এই সব কি দিয়েছেন? বন্দ করেন। ঐ নাটক টা দেন।

নিতু চোখ বন্দ করে রাখে। সে নিতুর ঘড়ের উপর হাত রাখে। নিতু নিজেকে ছাড়ানোর প্রচণ্ড যুদ্ধ করে। যুদ্ধে নিতু হেরে যায়। 
খুব ভোর বেলা খবর আসে। হাসপাতালে মিতুর একটা মেয়ে বাচ্চা হয়। দুলাভাই হাসপাতালে চলে যায়। নিতু অনেক কষ্টে বাসায় চলে আসে। নিতুর সারা শরীর প্রচণ্ড ব্যাথা আর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। এই জ্বর থাকে টানা দশ দিন।
ঐ ঘটনার পর থেকে নিতু পৃথিবীর সব পুরুষ মানুষকেই ঘৃণা করে। নিতুর কাছে পুরুষ মানুষ মানেই নেকড়ে বাঘ। নেকড়ে বাঘ সুযোগ পেলেই থাবা বসিয়ে দেয়। তাই সে আজ পযন্ত কোন পুরুষ মানুষের সাথে মিশে না, বা কথা বলে না। এমনকি কোন আত্মীয় স্বজনদের বাসাতে পযন্ত সে সহজে যায় না।

আজ ছয় বছর পর শুভ সকাল কে নিতুর ভালো লাগতে শুরু করে। তাঁর এস এম এস এর জন্য কষ্ট পায়। বার বার মোবাইল দেখে। এখন বিকাল চারটা বাজে। কেন আজ শুভ সকাল আসেনি, তাঁর কিছু কারণ মনে মনে ঠিক করে নিজেকে সান্তনা দেয়। 
প্রথম কারণ, শুভ সকালের মোবাইল টা হয়তো হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, শুভ সকাল আর কোন এস এম এস দিবে না। কারণ আমি তাঁর কোন এস এম এস এর রিপ্লাই দেই নাই। তৃতীয় কারণ... 
হটাৎ নিতুর মোবাইলে রিং বাজতে থাকে। একটা আননোন নাম্বার। নিতু অচেনা নাম্বারের ফোন কখনই ধরে না। ফোনটা ধরবে কিনা ভাবতে থাকে। নিতু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিং হতে হতে লাইন টা কেটে যায়। 
একটু পড় ঐ একই নাম্বার থেকে আবার ফোন আসে। নিতু সাত পাঁচ না ভেবে রিসিভ বাটুনে চাপ দেয়।
-হ্যালো
-স্লামালাইকুম
-অলাইকুম আস সালাম, কে বলছিলেন?
-আমি ডঃ কামরুন নাহার বলছি, স্কয়ার হসপিটাল থেকে।
-জি বলুন
-আপনি কি একটু আমাদের হসপিটালে আসতে পারবেন?
-কেন বলুন তো?
-একটু দরকার ছিলো। টেলিফোনে তো সব কথা বলা সম্ভব না। আপনি আসলে, আমাদের জন্য, একটা প্রেসেন্টের জন্য, এবং আপনাদের জন্য হয়তো ভালো হতো।
-টিক আছে। আমি আসছি।
-রিসিপসনে এসে আমার নাম বল্লে, ওরা আমার রুমটা আপনাকে দেখিয়ে দিবে।
নিতু সাথে সাথে জামাটা চেঞ্চ করে বেড়িয়ে পড়ে। নিজে ড্রাইভ করে যায়। সে ড্রাইভার নেয় না। ধানমণ্ডি থেকে স্কয়ার হাসপাতালে যেতে বড় জোর দশ মিনিট লাগে। রাস্তায় জ্যাম থাকায় নিতুর লাগে চল্লিশ মিনিট। 
-স্লামুয়ালাইকুম ম্যাডাম। আপনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন।
-হ্যাঁ বসুন।
-আপনাকে ফোন দিয়েছি কারণ, আজ ভোরে আমাদের হাসপাতালে একটা রুগী আসে। ৩/৪জন পথচারী তাঁকে ইমারজেন্সিতে রেখে চলে যায়। যতদূর জানা যায় সকালে মর্নিং ওয়াক করার সময় ছেলেটা ব্রেন হেমারেজ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। যারা হাসপাতালে রেখে যায়, তাদের আমরা আর খুঁজে পাই না। 
আমরা ছেলেটার ট্রিটমেন্ট শুরু করে দেই। এম আর আই রিপোর্ট দেখে জানা যায়, ছেলেটার মাথায় একটা রগে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। তাঁকে আই সি ইউ তে রাখা হয়। তাঁর একটা জরুরী অপারেশন করতে হবে। 
অপারেশনটা যত তাঁরাতাড়ি করা যায় ততই ভালো। ছেলেটা এখন কোমায় আছে। কখন জ্ঞ্যান ফিরবে আমরা জানি না।
-আমাকে কেন ডেকেছেন?
-হ্যাঁ বলছি। দেখুন, প্রতিটা হাসপাতালের একটা নিজস্ব নিয়ম কানুন আছে। মানবিক দিক দিয়ে যতটুকু করা সম্ভব আমরা করেছি। কিন্তু এমন কিছু বিষয় থাকে তাঁর দায়িত্ব কেউ এড়াতে পারে না। আমরা ছেলেটার পকেটে একটা মানিব্যগ আর একটা মোবাইল পাই।
মানিব্যগে ঊনত্রিশো টাকা আর একটা ব্যাংক কার্ড আছে। আজ ব্যাংক বন্ধ, তাই তাঁর ইনফরমেশন আমরা নিতে পারিনি বা কাছের মানুষদের জানাতে পারিনি।
নিতু ডঃ কামুরুন নাহারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। 
-তাঁর মোবাইলে আমরা আপনার নাম্বারটা পাই। নামটা ''আমার স্বপ্নে'' নামে সেভ করা। আমাদের বিশ্বাস, আপনি তাঁর খুব কাছের মানুষ। হয়তো তাঁর ওয়াইফ। এইযে এই মোবাইলটা।
নিতু মোবাইলটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে যায়। ছেলেটার মোবাইল আর নিতুর মোবাইল দুইটা একই মোবাইল। আই ফোন ফাইভ। কালার ব্ল্যাক। ছেলেটার মোবাইলে দুইটা হলুদ গোলাপের অয়াল পেপার। নিতুর মোবাইলে দুইটা লাল গোলাপ। 
নিতু ছেলেটার মোবাইলের এস এম এস ফোল্ডারে যায়। ইন বক্স খালি। আউট বক্সে নিতুকে পাঠানো সব এস এম এস। নিতু ফোন লিস্টে যায়। সেখানে ''আমার স্বপ্নে'' নিতুর নাম্বার টা বাংলায় সেভ করা। নিতুর মোবাইলে ''শুভ সকাল'' বাংলায় সেভ করা। 
নিতু ছেলেটার মোবাইল থেকে নিজের মোবাইলে একটা রিং করে। সাথে সাথে ছেলেটার মোবাইল ভেসে উঠে ''আমার স্বপ্নে'' নিতুর মোবাইলে ভেসে উঠে ''শুভ সকাল''।
-ছেলেটা এখন কোথায়?
-তাঁকে আই সি ইউ তে রাখা হয়। 
-আমাকে কি করতে হবে?
ছেলেটার অপারেশনের জন্য এই কাগজে একটা সই দিতে হবে। আর হাসপাতালের একটা বিল আছে। একত্রিশ হাজার আটশো ষাট টাকা। বিলটা জমা হলেই আমরা অপারেশনের ব্যবস্থা নিতে পারি।
-আমি কি একটু ছেলেটাকে দেখতে পারি?
-অবশ্যই, আসুন আমার সাথে।
নিতু আই সি ইউ রুমে ঢুকে থমকে দাঁড়ায়। কল্পনায় শুভ সকালের যে ছবি নিতু এঁকেছিলো, ছেলেটা তাঁর থেকেও সুন্দর। গায়ের রং ফর্সা, টানা টানা চোখ, খারা নাক, ঘন কালো চুল। 
শুভ সকালের মুখে অক্সিজেন মাক্স, হাতে স্যালাইন, নাকে পাইপ ঢুকানো, বুকে পালস সেন্সর লাগানো আছে। শুভ সকাল ঘুমিয়ে আছে, নিতুর খুব ইচ্ছা করে শুভ সকালের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে। 
-ওর জ্ঞ্যন ফিরবে কখন?
-অপারেশনের পর আমরা বুজতে পারবো। এর আগে কিছু বলা যাবে না। ও এখন কোমায় আছে। আপনি কি পেপারে সই করবেন?
-হ্যাঁ চলুন।
নিতু বন পেপারে সই করে। সইতে নিজের নাম লিখে না। ইংরেজিতে সংক্ষেপে শুভ সকাল সই করে। ডঃ কাম রুন নাহার কিছুই বুঝতে পারে না। নিতু নিজের ব্যাংক কার্ড দিয়ে বত্রিশ হাজার টাকা হাসপাতালে জমা দেয়। 
-থ্যাংকস আপনাকে, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি। বাকিটা উপর অয়ালার হাতে।
-আমি একটা কথা বলতে চাই।
-হ্যাঁ বলেন।
-আপনি তাঁর মোবাইলে থাকা অন্য নাম্বার গুলিতে ফোন করে খোঁজ নেন। তাঁর কাছের মানুষদের পাওয়া যায় কিনা। আমি তাঁর পরিবারের কাউকেই চিনি না।
-আপনি উনার কে?
-কেউ না। 
ডঃ কামড় রুন নাহার নিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিতু বেড়িয়ে যায়।
বাসায় আসার পর নিতুর কিছু ভালো লাগে না। মনটা খুব অস্থির লাগে। নিতুর খুব ইচ্ছা করে শুভ সকালের হাত টা নিজের গালের সাথে লাগিয়ে ধরে রাখতে। তাঁর মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে। 
পরদিন খুব ভোরে নিতু আবার হাঁসপাতাল যায়। আই সি ইউ রুমের সামনে এসে নিতুর খুব ভালো লাগে। রুমের সামনে অনেক মানুষ। শুভ সকালের মা বাবা, ভাই বোন, চাচা ফুপু সবাই। দুয়েক জন করে ভিতরে যায় আর আসে। 
নিতু শুভ সকালের মাথায় হাত ভুলাতে পারে না। তাঁর হাতে হাত রাখতে পারে না। দরজার বাইরে কাঁচের ভিতর দিয়ে আলছোট একটু চোখ পড়ে। নিতু বাসায় চলে আসে। 
নিতু নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে রাখে, রাতে সে কিছুই খায় না। অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লার কাছে শুভ সকালের জন্য দোয়া করে। নিতুর ঘুম ভাঙ্গে ভোর সাড়ে পাঁচ টায়। 
সে সাথটার দিকে আবার হাঁসপাতাল যায়। আজ নিতু শুভ সকালের মাথায় হাত ভুলাবে। শুভ সকালের হাত গালের সাথে লাগিয়ে ধরে বসে থাকবে। যত মানুষই থাকুক নিতু তা করবেই।
আই সি ইউ দরজার সামনে এসে নিতু থমকে দাঁড়ায়। রুমে শুভ সকাল নাই। অন্য একজন রুগী শুয়ে থাকে। একটা নার্স স্যালাইন লাগায়। নিতু মনে মনে খুব খুশী হয়। শুভ সকালকে কেবিনে নেয়া হয় বলে। নার্সটা আই সি ইউ থেকে বের হলে।
-শুনুন
-জ্বি বলেন
-এই রুমে কাল একটা প্রেসেন্ট ছিলো। তাঁকে কতো নাম্বার রুমে নেয়া হয়েছে একটু বলবেন?
-আপনি ঐ রুগীর কে হন?
-আমি তাঁর বন্ধু।
-ওহ, ছেলেটা কাল রাত এগারোটার দিকে মারা যায়।
সাথে সাথে নিতুর পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়। অন্ধকার হয়ে যায় সারা হাসপাতাল। আই সি ইউ রুমের সামনে থাকা বেঞ্চে নিতু বসে পড়ে। নিতু তাঁর হাতে থাকা মোবাইলে শুভ সকালের শেষ এস এম এস টা পড়ে।
''জন্ম মৃত্যু তাঁর হাতে। আমার হাতে স্বপ্ন। স্বপ্নের রং নীল। নীল আকাশের প্রজাপতি। প্রজাপ্রতির মতো সারা আকাশ জুড়ে উরে বেড়াক তোমার মন, আমার স্বপ্নের রং দিয়ে। এই কামনায় শুভ সকাল।''
ঝর ঝর করে নিতুর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে...।


-ঢাকা -


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.