বৃষ্টির কাছে এক জোড়া চিঠি
সুপ্রিয়েষু,
একরাশ মল্লিকার ভালোবাসা নিও, বৃষ্টি। তোমাকে আজ এক নতুন নামে ডাকলাম। জানো তো এ আমার খুব পুরানো ভালোলাগার খেলা। নিত্য নতুন নামে তোমায় ডাকা আর নিত্য নতুন রূপে তোমায় নিজের করে ভাবা, নিত্য নতুন করে তোমার প্রেমে পড়া। আজ বর্ষার ভরা দুপুরে টুপটুপ বৃষ্টি দেখতে দেখতে কেন যে তোমাকে মনে পড়ল আর মাত্র একটিবার তোমায় দেখার জন্য মনটা আকূল হয়ে উঠলো, কে জানে। সত্যি বলতে কি, ইচ্ছা থাকলেই জানার উপায় তো নেই কি তুমি কেমন আছো । আমাদের দেখা সাক্ষাৎ নেই আজ কত বছর। আঙ্গুল গুনে আঠারো বছর, আট মাস, বারো দিন। জানি-আমার এ লেখা তুমি পড়বে না, তোমার পড়ার বা দেখার সুযোগ হবে না। আমি তোমার সেই দুখবিলাসী বন্ধু। যাকে হারিয়েছো অনেকদিন আগে।
তবু জানো কি, তুমি আমার একাকী জীবনের একটা এক কবিতা, একটা ভালোলাগা, একটা অভ্যেস , একটা বন্ধুত্ব ... এটাই বোধহয় ভালোবাসা ! কে জানে ।তোমার হাত ছুঁইনি ,গালে গাল ঠেকাইনি, কোলে মাথা রেখে শুইনি, নরম গোলাপী ভেজা ভেজা ঠোঁটদুটোতে আলতো করে চুমু খাইনি,এমনটা নয় । তার শব্দে , গন্ধে আজও আজও আমার হাতের চেটো , বুক তলপেট শিরশির করে ভারী হয়ে ওঠে ।তারপরেও আমার কানে বাজে তোমার অস্ফুট হাসি, নেশা ধরানো মিষ্টি স্বর। স্পষ্ট শুনতে পাই তোমার গুনগুন গানের চেনা সুর., নিশ্বাস ভরে ওঠে তোমার সুগন্ধী মেয়েলি ঘামে , তোমার আদরের স্পর্শগুলো গুটি গুটি পায়ে চুপিসাড়ে ফিরে আসে আলো আঁধারে, আমি বেশ বুঝি তখন ,আমার নেশা ধরে গেছে ।
জানো তো তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লেখার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। কিন্তু আমি তো ভালো কবিতা লিখতে পারি না। তাই আর লেখা হয়ে ওঠে নি। কিন্তু তোমার কথা মনে পড়লেই আমার শুধু লিখতে ইচ্ছে করে। আমি যে বড় অন্তর্মুখী বৃষ্টি। কোনদিনও তোমায় আমার মনের কথা বলতে পারিনি। সারাদিন তোমার সাথে মনেমনে কথা বলাই সার আমার। তুমি জানতেও পারোনি কোনদিন ঠিক কি বলতে চাই তোমায়। তাই, চার দেয়ালের একান্ত অবসরে আমার এই চিঠি লেখা , আমার চিঠি লেখার খেলাও বলতে পারো। বড্ড অলস আমি। এই সেদিনও একটি চিঠি অর্ধ সমাপ্ত লিখে রেখে দিয়েছি। আজও পোস্ট করা হয় নি।
ভালো থেকো বৃষ্টি। তোমার সমস্ত চেয়েও না পাওয়ার দুঃখ, পেয়েও না চাওয়ার কষ্টগুলো আমায় দিয়ে খুব ভালো থেকো। এ জীবনে হয়ত আর আমাদের দেখা হবে না, তাই মনে করে মাঝে মধ্যে আমার স্বপ্নে আমার কল্পনায় এসে দেখা করো। তোমার অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি,
তোমার, শুধু তোমারই,
সমীর।
সুমিতেষু,
এক গুচ্ছ কদম ফুলের শুভেচ্ছা নিও। কদমফুল দেখলেই তোমার কথা মনে পড়ে। মনে আছে সেই কুড়ি বছর আগে আমাদের প্রথম দেখা হবার দিনটা? দিনটা ছিল আষাঢ়ের প্রথম শনিবার, আমি তোমার অপেক্ষায় দাঁড়ানো ছিলাম কলেজ স্কোয়ারের গেটের সামনে। আকাশীনীল রঙের হাজারবুটি তাঁতটা সেদিনই প্রথম পরেছিলাম। মেঘলা আকাশ , ভ্যাপসা গরমে ঘামতে ঘামতে ভাবছিলাম না এলেই হত।তখনই তুমি অটো রিক্সা থেকে নেমে এসে আমার সামনে দাঁড়ালে, তোমার হাতে বর্ষার রোমান্সের চিরায়ত স্মারক এক জোড়া কদম ফুল। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমার সামনে এসেই বললে, - -কেমন আছো। এ নাও তোমার ফুল। তুমি যে দেখি আমার ফুলেশ্বরী , ফুলের মতই সুন্দর,নির্মল, পেলব।’ আমি তোমার হাত থেকে ভেজা, টাটকা ছিঁড়ে আনা কদমফুল দুটো নিলাম। বুঝলাম, ও ফুল দুটো শুধু ফুল নয়, ওরা দুটি মনের ভালোবাসার আর্দ্র অনুভবের প্রতীক। আমার গায়ে হালকা কাঁপুনি দোলা দিয়ে গেছিল সেদিন।।
অবাক হচ্ছো তো? আজ আঙ্গুল গুনে আঠারো বছর, নয় মাস, তিন দিন পর আমার চিঠি পেয়ে? আমায় লেখা তোমার প্রথম চিঠি পেয়েছি কাল। চিঠিটা পাঠিয়েছিলে আমার সেই পুরানো লেডিস হস্টেলের ঠিকানায়, যা আমি ছেড়ে এসেছি আঠারো বছর আগে। ভাবছ তো, কি করে পেলাম তোমার চিঠি? এও এক দৈব যোগ বৈকি। সুনন্দাকে মনে আছে? আমার রুমমেট? ওই তো এখন ওই হস্টেলের সুপার। ওর ননদ আবার আমার কলিগ। অতএব দেরী হলেও তিন হাত ঘুরে যার চিঠি তার কাছে পৌঁছে গেছে ঠিকই।
তোমার ফিরে আসার জন্য একটা ধন্যবাদ তোমার প্রাপ্য। না বললে হবে না। ধন্যবাদ তোমাকে নিতেই হবে। জানো তো, সবাই কিন্তু কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না, কিংবা এমনিই রাখে না। সবাই বলে প্রমিস করা হয় তা ভেঙ্গে ফেলার জন্য ! তাই হয়তো ! কিন্তু তুমি বলেছিলে তুমি ফিরে আসবে। নিজের বিশ্বাস অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব যেদিন ঘোচাতে পারবে, যেদিন ভুলে যেতে পারবে আমার ওপর তোমার একক অধিকার সঙ্কীর্ণ গন্ডী, যেদিন আমি তুমি সম্পর্কের বেড়াজালটা ভেঙে ফেলতে পারবে সেদিন ঠিক ফেরত আসবে তুমি। আর ঠিক সেটাই করেছ তুমি। কথা দিয়ে শেষ অবধি কথা রেখেছ। তাই শেষ হয়েছে আমার শবরীর প্রতীক্ষা, ধুয়ে গেছে আমার মনের সমস্ত অভিমান, রাগ, ক্লান্তি, দুঃখ, কষ্ট সব। সবকিছু ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে গেছে আজ। তুমি কি জানো আমার কেমন অনুভূতি হচ্ছে? খানিকটা নিরমলেন্দু গুনের সেই কবিতাটার মতোই …
শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন।
শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
অহংকারে মুছে যাবে সকল দীনতা।
শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
স্পর্শসুখে লিখা হবে অজস্র কবিতা।
শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
শুধু একবার পেতে চাই অমৃত আস্বাদ। শু
ধু তোমাকে একবার ছোঁব,
অমরত্ব বন্দী হবে হাতের মুঠোয়।
শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
তারপর হব ইতিহাস।
আজ শুধু ভালোবাসা ছাড়া আমার আর কিছুই দেবার নেই তোমায়। ভালো থেকো। ভালোবাসা নিও।
ইতি,
তোমারই বৃষ্টি।
- কলকাতা -
সুচিন্তিত মতামত দিন