মোঃ আবু জাফর




খোকা, তুই কেমন আছিস? বউমা আর আমার ছোটো দাদুভাই সবাই ভালো আছে তো? জানি, তোদের তিন জনকে নিয়ে সাজানো ছোট্ট সুখের সংসার, সবাই ভালো থাকারই কথা। জানিস খোকা, তোর বাবা যেদিন আমাদের রেখে ওপারে চলে গিয়েছিল, তখন তুই খুব ছোট ছিলি। তোকে বুকে জড়িয়ে তোর বাবার ভালোবাসার তপ্ত ওমে আগলিয়ে রেখেছিলাম। তুই ছিলি আমার একমাত্র অবলম্বন, বেঁচে থাকার ঢাল। ঝড়-ঝঞ্জা, আগুন-পানি অসুখ-বিসুখ থেকে নিরাপদে রেখে; কত কষ্টে এতগুলো বছর ধরে তিলেতিলে তোকে বড় করে তুলেছিলাম। এখন  তোর কত নাম, যশ, কত সুখ্যাতি। আজ তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস। 

জানি তোরা খুব ব্যস্ত; তবুও তোদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ: একদিন একটু সময় করে এই বুড়িটাকে দেখতে আয়...না! কিরে, আসবি না? নাকি আমার পরে বউমার রাগটা এখনো কমেনি? আমার সাথে মাঝে মাঝে বউমার ঝগড়া হতো, দাদু ভাইকে আমি যখন গল্প শুনিয়ে ঘুম পড়াতাম, বউমা আমাকে খুব বকা-ঝকা করতো। আমি নাকি গেঁয়ো ভাষায় সেকেলে গল্প শুনিয়ে ওর মাথাটা নষ্ট করে দিতাম। আমার কোন কাজ-কাম ওর পছন্দ ছিলনা। তোরা সে সব কথা ভুলে যা, বাবা। আর আমার কথা ভাবিস না, আমি খুব ভালো আছি! কেনই-বা ভালো থাকব না বল? তোরা তো আমার ভালো থাকবারই বন্ধবস্ত করে দিয়েছিস। আর যেদিন থেকে আমি বুঝতে পেরে গেছি: আমাকে এই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে তোরা বেঁচে গেছিস; ভুল করেও সাত জন্ম আর এ পথ মাড়াবিনা; সেদিন থেকে আরো ভালো আছি।

খোকা, গত কাল রাতে তোর বাবাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম। সেই মুখ, সেই হাসি, আমাকে বলে; সরিষা ইলিশ খাবে। বাবা, তোর বাবার জন্য দু'একজন ফকির খাওয়াতে পারবি? আমার তো কোন সাধ্য নেই, আশ্রমে আমরা সবাই ফকির, তাই দুহাত তুলে অশ্রু জল ছাড়া দেবার মত কিছুই নেই। আজ আমি অনেক কিছুই হারিয়েছি, তোর গায়ের গন্ধটাও ভুলে গেছি। এখন আর আগের মত মনে থাকে না কিছুই। অনেক স্মৃতিও মনে নেই। হয়তো সে কারনেই বেঁচে আছি। তবে একটা কথা: আমার কথা যদি তোর কখনো-কোনদিন মনে পড়ে; তখন যেন নিজেকে তুই শেষ করে দিস না। আমি তো মা; তোর জন্য কত সয়েছি! এর পরেও সয়ে যাবো। তুই এখনো একশ বছর বেঁচে থাক, বাবা। আল্লাহ তোর ভালো রাখুক, এই কামনা করি। 

ইতি, তোর মা।


- যশোর - 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.